হালদায় আবারও সাড়ে ১৩ কেজি ওজনের মা মৃগেল মাছের মৃত্যু
Published: 4th, August 2025 GMT
প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজননকেন্দ্র হালদায় আবারও কার্পজাতীয় মা মাছের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। জোয়ারের পানিতে ভেসে আসা মা মৃগেল মাছটির ওজন প্রায় সাড়ে ১৩ কেজি বলে জানিয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হালদা গবেষণাগার কর্তৃপক্ষ। মাছটি পচেগলে যাওয়ায় ময়নাতদন্ত ছাড়াই নদীর পাড়ে মাটিচাপা দেন নৌ পুলিশ সদস্যরা।
আজ সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে হাটহাজারীর দক্ষিণ মাদার্শা ইউনিয়নের শাহ মাদারী হ্যাচারি এলাকা থেকে নৌ পুলিশের একদল কর্মী মাছটি উদ্ধার করেন।
রামদাস মুন্সির হাট নৌ পুলিশ ফাঁড়ির সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মুহাম্মদ রমজান আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা নিয়মিত টহলের সময় জোয়ারে ভেসে আসা মরা মৃগেল মাছটি নদীর মাঝখানে ভাসতে দেখি। পরে সেটি বোটে তুলে ডাঙায় নিয়ে এসে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করি।’
এর আগে গত ২২ জুন নদীর হাটহাজারী অংশের উত্তর মাদার্শা ইউনিয়নের রামদাস মুন্সির হাট থেকে ১২ ও ১৩ কেজি ওজনের দুটি মরা মা কাতলা উদ্ধার করে নৌ পুলিশ। গত ১৫ মে রাউজানের পশ্চিম গুজরা ইউনিয়নের আজিমের ঘাট এলাকা থেকে ১০ কেজি ওজনের মরা মা মৃগেল উদ্ধার করা হয়। সেটির পেট ডিমে ভরা ছিল বলে জানায় মৎস্য অধিদপ্তর। মাছটির শরীরে ধারালো কিছুর আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গিয়েছিল। একই স্থান থেকে গত ৪ মে ৫ কেজি ওজনের আরেকটি মরা মা কাতলা মাছ উদ্ধার করেছিলেন স্বেচ্ছাসেবকেরা। এ ছাড়া গত বছরের জুন ও জুলাই মাসে ১২ দিনে ৬টি বড় মা মাছ ও ৩টি ডলফিন মরে ভেসে ওঠার ঘটনা ঘটেছিল।
মৎস্য অধিদপ্তর ও হালদার স্বেচ্ছাসেবীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বেশ কিছু দিন ধরে নদীতে একের পর এক মরা মা মাছ ভেসে যেতে দেখা যাচ্ছে। তবে ভেসে যাওয়া সব মা মাছ উদ্ধার করা সম্ভব হয় না। কারণ, সব সময় স্বেচ্ছাসেবীরা থাকেন না। প্রায় সময় মৃত মাছ জোয়ারে ভেসে চলে যায়। হালদার মা মাছ ও জীববৈচিত্র্য সুরক্ষায় ১০ কিলোমিটারজুড়ে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা (সিসিটিভি) বসানো হয়েছে। এ ছাড়া নদীর হাটহাজারীর রাম দাশ মুন্সিরহাট অংশে একটি নৌ পুলিশ ফাঁড়িও রয়েছে। তবে এরপরও মা মাছের মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, নৌ পুলিশের তেমন তৎপরতা না থাকায় নদীতে জাল পাতা, মাছ শিকারসহ নানা অবৈধ কার্যক্রম চলছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে হাটহাজারীর উত্তর মাদার্শা ইউনিয়নের রামদাশ মুন্সিরহাটের হালদা নৌ পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, উপজেলা প্রশাসন, মৎস্য অধিদপ্তর সপ্তাহে কয়েকবার অভিযান চালায়। তারা নিরাপত্তা দিয়ে সহযোগিতা করেন। সিসিটিভি ফুটেজে কোনো অবৈধ কার্যক্রম চোখে পড়লে তাঁরা নদীতে নামেন। তবে শতভাগ হালদাকে সুরক্ষিত রাখতে গেলে স্পিডবোটের জ্বালানি বরাদ্দ ও জনবল বাড়াতে হবে।
এদিকে হালদায় গত ৩০ ও ২৭ মে দুই দফায় নদীতে ডিম ছাড়ে মা মাছ। এবার মোট ১৪ হাজার কেজি ডিম সংগ্রহ করেন ডিম আহরণকারীরা। নদীতে মা মাছ মরার এমন সংবাদে উদ্বিগ্ন নদী গবেষকেরা। তাঁরা বলছেন, গত বছরের মতো একের পর এক মা মাছ মরা উদ্বেগের। কারণ, হালদার একেকটা মা মাছের ডিম থেকে কয়েক কোটি টাকার মাছের উৎপাদন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
হালদার ডিম সংগ্রহকারী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক রোশাঙ্গীর আলম প্রথম আলোকে বলেন, নদীতে মা মাছ মরে ভেসে যেতে দেখা যায় প্রায় সময়। প্রজনন মৌসুমে মা মাছের মৃত্যু তুলনামূলক বেশি দেখা যায়। তবে সব মরা মাছ উদ্ধার করা যায় না। তাঁদের চোখে যেগুলো পড়ে, সেগুলো তাঁরা উদ্ধার করে প্রশাসনকে জানান।
নদী গবেষক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান মনজুরুল কিবরিয়া প্রথম আলোকে বলেন, মাছটি পচেগলে যাওয়ায় উদ্ধারকারী পুলিশদের মাটিচাপা দিতে বলা হয়েছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হালদা রিসার্চ অ্যান্ড ল্যাবরেটরির কর্মীরা গিয়ে সেটির সুরতহাল প্রতিবেদন করেছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রথম আল ক মৎস য ওজন র
এছাড়াও পড়ুন:
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোতে হঠাৎ দুদকের অভিযান
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) প্রধান কার্যালয়ে আজ রোববার হঠাৎ অভিযান পরিচালনা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ইপিবির আয়োজনে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন মেলায় অংশগ্রহণকারীদের কাছ থেকে ডলারে ঘুষ নিয়েছেন সংস্থাটির এক উপপরিচালক, এমন অভিযোগে ২০২৪ সালের ৮ সেপ্টেম্বর প্রথম আলোয় ‘ডলারে ঘুষ নেন ইপিবির এক কর্মকর্তা’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ঘটনা তদন্ত করতে এরপর তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে ইপিবি। কমিটির প্রতিবেদনে অভিযোগের সত্যতা ওঠে আসে।
তবে এক বছরের বেশি সময় পার হলেও এ ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি ইপিবি। দুদক সম্প্রতি এ বিষয়ে অনুসন্ধান করার জন্য একটি দল গঠন করে এবং ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ আমলে নিয়েই দুদক আজ অভিযান পরিচালনা করেছে বলে জানা গেছে।
জানতে চাইলে ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হাসান আরিফ মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের এক উপপরিচালকের বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ ছিল। এ অভিযোগ খতিয়ে দেখতেই দুদকের তিন সদস্যের একটি দল আমাদের কার্যালয়ে আসে। আমরা তথ্য-উপাত্ত দিয়ে সহায়তা করেছি। বিষয়টি অনুসন্ধান পর্যায়ে আছে।’
ইপিবি গঠিত কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘ইপিবির অনুমোদন ছাড়া ১৪টি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে জামানত বাবদ ১৫০ ডলার করে নেওয়া ঠিক হয়নি।’ আরও বলা হয়, চীনের কুনমিংয়ে ২০২৩ সালের আগস্টে অনুষ্ঠিত একটি মেলায় অংশগ্রহণকারীদের কাছ থেকে জামানত নেওয়া হয়েছে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া।
দুদকের সূত্রগুলো বলছে, ২০১৭ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন পরিমাণের পে–অর্ডার দিয়েছেন মেলায় অংশগ্রহণকারীরা, ইপিবির এক উপপরিচালক আত্মসাতের উদ্দেশ্যে এত দিন সেগুলো নিজের জিম্মায় রেখে দিয়েছিলেন। দুদক সরেজমিন ইপিবি কার্যালয়ে এসে পে-অর্ডারগুলো উদ্ধারের চেষ্টা করেছে, তবে কিছু উদ্ধার হয়েছে কি না, তা জানা যায়নি।