ইবি শিক্ষার্থী সাজিদ হত্যা: সিসি ক্যামেরা ফুটেজ নিয়ে ধোঁয়াশা, প্রতিবাদে মানববন্ধন
Published: 4th, August 2025 GMT
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থী সাজিদ আব্দুল্লাহকে শ্বাসরোধে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় আইসিটি সেল থেকে প্রাপ্ত সিসি ক্যামেরার একটি অংশের ফুটেজ পায়নি বলে দাবি করেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃক গঠিত ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. এমতাজ হোসেন।
সোমবার (৪ আগস্ট) বেলা সাড়ে ১২ টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাজিদ হত্যায় জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনকালে তিনি এ তথ্য জানান।
সূত্র জানায়, লাশ উদ্ধারের আগেরদিন ১৬ জুলাই বিকেল সাড়ে ৩টায় সাজিদ ফুটবল মাঠে ফুটবল খেলে। ৪টার পর তারা খেলা শেষ করেন বলে জানিয়েছেন অন্য খেলোয়াড়রা। আইসিটি সেল নিয়ন্ত্রিত ক্যাম্পাসের ডায়না চত্ত্বরের সিসি ক্যামেরা ফুটবল মাঠ সংলগ্ন রাস্তাটি দেখা যায়। তবে আইসিটি সেল থেকে প্রাপ্ত ফুটেজে বিকেল ৫টা থেকে রাত ১১টার ভিডিও নেই বলে জানিয়েছে ফ্যাক্ট ফাইন্ডিংস কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড.
ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. এমতাজ হোসেন বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্পটে সিসি ক্যামেরা আছে, সে সমস্ত প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে। আবার আইসিটি সেলের সিসি ক্যামেরা ছাড়াও চিকিৎসা কেন্দ্রে, প্রকৌশল ভবনসহ বিভিন্ন হলে সিসি ক্যামেরা আছে। এসব সিসি টিভির ফুটেজ আমরা দেখেছি। আর আইসিটি সেল প্রাপ্ত ১৬ তারিখ বিকাল ৫টা থেকে রাত ১১টার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ আমরা পাইনি। এজন্য আমরা আমাদের সুপারিশমালায় এটা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছি যে আইসিটি সেল যেন এ বিষয়টি জানান।”
আইসিটি সেলের পরিচালক অধ্যাপক ড. শাহজাহান আলী বলেন, “ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটি যে কপি দিয়েছে, তার মধ্যে হয়তো টেকনিক্যাল কিছু সমস্যার কারণে তারা দেখতে পাননি ওই অংশটুকু। এতে রেকর্ড বা সময় নিয়ে কোনো সমস্যা হতে পারে। এমন হলে বিষয়টি যান্ত্রিক ত্রুটি ছাড়া আর কিছু নয়। সেদিনের আগে পরেসহ কোনো ধরনের ডেটা লস নেই। আমাদের কাছে সকল ফুটেজ রয়েছে, চাইলে আমরা আবারও কর্তৃপক্ষকে দেখাতে পারবো।”
উপাচার্য বলেন, “আইসিটি সেলের পরিচালকের সঙ্গে কথা বলেছি। ওই সিসি ক্যামেরা ফুটেজ কেন পাওয়া যাচ্ছে না তা জানার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে চিঠি প্রদান করা হয়েছে। ফুটেজের বিষয়ে অধিকতর তদন্তে বিষয়টি জানা যাবে।”
এদিকে, সোমবার (৪ আগস্ট) সন্ধ্যা ৬টার দিকে প্রশাসন ভবনের সামনে সাজিদ হত্যার ঘটনায় রাতের সিসিটিভি ফুটেজ গায়েবের দাবি করে এর প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে একদল শিক্ষার্থী। তারা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আইসিটি সেল, নিরাপত্তা প্রশাসন ও ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটিকে সিসি টিভি ফুটেজ না পাওয়ার কারণ নিয়ে বিবৃতি না দিলে আইসিটি সেল ঘেরাও কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দেন।
বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাজিদ হত্যায় জড়িতদের বিচারের দাবিতে আল কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রশাসন ভবন চত্বরে অবস্থান কর্মসূচি করে শিক্ষার্থীরা। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিয়াশীল সকল ছাত্রসংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন বিভাগের শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
গত ১৭ জুলাই বিকেলে শাহ আজিজুর রহমান হল পুকুর থেকে আল-কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০২১-২২ বর্ষের শিক্ষার্থী সাজিদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ১৮ জুলাই সাজিদের মৃত্যুর ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। ৩ আগস্ট সাজিদের মৃত্যুর প্রকাশিত ভিসেরা রিপোর্ট অনুযায়ী সাজিদকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে বলে জানানো হয়।
ঢাকা/তানিম/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স জ দ হত য আইস ট
এছাড়াও পড়ুন:
কুমিল্লা-৯ আসন পুনর্বহালের দাবিতে বিএনপি নেতা–কর্মীদের মানববন্ধন, স্মারকলিপি
কুমিল্লা-১০ (কুমিল্লা সদর দক্ষিণ, লালমাই ও নাঙ্গলকোট) সংসদীয় আসনকে ভেঙে ত্রিখণ্ডিত করে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) প্রকাশ করা খসড়া তালিকা বাতিল এবং বিলুপ্ত হওয়া কুমিল্লা-৯ আসন পুনর্বহালের দাবিতে মানববন্ধন করা হয়েছে। গতকাল সোমবার দুপুর ১২টায় কুমিল্লা আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন শেষে জেলা প্রশাসক ও আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার মাধ্যমে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবর স্মারকলিপিও দেওয়া হয়।
‘কুমিল্লা-৯ নির্বাচনী এলাকা পুনরুদ্ধার বাস্তবায়ন কমিটি’–এর ব্যানারে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক সংসদ সদস্য মনিরুল হক চৌধুরীর অনুসারী বিএনপির নেতা–কর্মীরা এ কর্মসূচি পালন করেন। এতে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা বিএনপি, কুমিল্লা মহানগর দক্ষিণের ৯ ওয়ার্ড ও লালমাই উপজেলা বিএনপি এবং অঙ্গসংগঠনের কয়েক শ নেতা–কর্মী অংশগ্রহণ করেন।
মানববন্ধনে বক্তব্য দেন সদর দক্ষিণ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আখতার হোসাইন, সদস্যসচিব ওমর ফারুক চৌধুরী, লালমাই উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মাসুদ করিম, সদস্যসচিব ইউসুফ আলী মীরসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা। এ সময় ‘নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত, মানি না, মানব না’, ‘আসন পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত, বাতিল করো, করতে হবে’, ‘সাবেক কুমিল্লা-৯ নির্বাচনী এলাকা, ফিরিয়ে দাও, দিতে হবে’-সহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন বিএনপির নেতা–কর্মীরা।
মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারী বিএনপি নেতা–কর্মীরা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, বৃহত্তর কুমিল্লা সদর দক্ষিণ এলাকা নিয়ে সাবেক কুমিল্লা-৯ আসনটি ফিরিয়ে দিতে হবে। নির্বাচন কমিশনের এই খসড়া বাতিল করতে হবে। যদি আসন ফিরিয়ে দেওয়া না হয়, তাহলে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক, কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়ক এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথ বন্ধ করে দেওয়া হবে।
সদর দক্ষিণ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আখতার হোসাইন বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা ও পৌরসভা (বর্তমানে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ ও লালমাই উপজেলা এবং কুমিল্লা সিটি করপোরেশন দক্ষিণের ৯টি ওয়ার্ড) নিয়ে বিলুপ্ত হওয়া কুমিল্লা-৯ আসনের সীমানা ছিল। বীর মুক্তিযোদ্ধা মনিরুল হক চৌধুরী এই আসনের সাবেক সংসদ সদস্য। ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়ে মনিরুল হক চৌধুরীর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে আসনটি বিলুপ্ত করে কুমিল্লা-৬, কুমিল্লা-৮ ও কুমিল্লা-১০ আসনের সঙ্গে যুক্ত করা হয়। চার থেকে পাঁচ দফা পরিবর্তনের পর বর্তমানে কুমিল্লা-১০ (কুমিল্লা সদর দক্ষিণ, লালমাই ও নাঙ্গলকোট) আসনে রয়েছে বিলুপ্ত হওয়া কুমিল্লা-৯ আসনটি। তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে কুমিল্লা-৯ আসন পুনর্বহালের দাবিতে আন্দোলন করছেন, আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন। কিন্তু সেই দাবি মেনে নেওয়া হয়নি।
আখতার হোসাইন বলেন, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে যেখানে কুমিল্লা-৯ আসন পুনর্বহাল করার কথা, সেখানে সেটি না করে কুমিল্লা-১০ সংসদীয় আসনকে ভেঙেচুরে ত্রিখণ্ডিত করে খসড়া তালিকা প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন। ২০০৮ সালের মতো এবারও ষড়যন্ত্র করে মনিরুল হক চৌধুরীকে আটকানোর জন্য ইসি এমন হঠকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
লালমাই উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব ইউসুফ আলী মীর বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগপর্যন্ত কুমিল্লায় ১২টি আসন ছিল, ২০০৮ সালের নির্বাচনের সময় একটি আসন কমিয়ে কুমিল্লায় হযবরল অবস্থার সৃষ্টি করেছে ইসি। সেই থেকেই তাঁরা কুমিল্লা-৯ আসন পুনর্বহালের দাবিতে আন্দোলন করছেন। ইসির ঘোষিত খসড়া তালিকা বাতিল করতে হবে। সেটি না করা হলে নেতা–কর্মীরা কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলবেন।
কুমিল্লার আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আজিজুল ইসলাম বলেন, কুমিল্লা-১০ আসনের নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত খসড়া বাতিল এবং বিলুপ্ত হওয়া কুমিল্লা-৯ আসন পুনর্বহালের দাবিতে একটি স্মারকলিপি পেয়েছেন। এটি ইসি সচিবের কাছে পাঠানো হবে।