জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) ও হল ছাত্র সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার পর ছাত্রসংগঠনগুলোর মধ্যে নির্বাচনের সময় নিয়ে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, গণ-অভ্যুত্থান রক্ষা আন্দোলন, ইসলামী ছাত্রশিবির, ছাত্র ইউনিয়ন (একাংশ), ছাত্র অধিকার পরিষদসহ কয়েকটি সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা রোডম্যাপ অনুযায়ী যথাসময়ে নির্বাচন চান। তবে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, ছাত্র ইউনিয়ন (একাংশ), ছাত্র ফ্রন্টসহ (মার্ক্সবাদী) কয়েকটি সাংস্কৃতিক সংগঠন গঠনতন্ত্রসহ বেশ কিছু বিষয়ে সংস্কার এনে তারপর নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানাচ্ছে।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই জাকসুর দাবি জোরালো হয়। অভ্যুত্থানের পর জাকসুর দাবিতে মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল, অনশনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা। এরই ধারাবাহিকতায় গত ৩০ ডিসেম্বর জাকসুর রোডম্যাপ ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সর্বশেষ জাকসু নির্বাচন হয়েছিল ১৯৯২ সালে। সে হিসাবে দীর্ঘ ৩৩ বছর পর অচল জাকসু সচল হতে চলেছে।

জাকসু নির্বাচন উপলক্ষে ইতিমধ্যে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। কমিশনের পক্ষ থেকে খসড়া ভোটার তালিকাও প্রস্তুত করা হয়েছে। জাকসু নির্বাচনের ব্যাপারে পরামর্শ নিতে সোমবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন উপাচার্য। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হয়ে যাবে আগামী ১ ফেব্রুয়ারি।

আরও পড়ুনজাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা ১ ফেব্রুয়ারি৩০ ডিসেম্বর ২০২৪ভোটার নিয়ে সমালোচনা

১১ জানুয়ারি জাকসুর খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। ওই দিন বিজ্ঞপ্তিতে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে যেসব শিক্ষার্থী স্নাতক (সম্মান) শ্রেণিতে ৬ (৪ +২) বছর অথবা স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে ২ (১ +১) বছর অধ্যয়নরত আছেন, শুধু তাঁদের নাম জাকসুর ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

জাকসুর গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থীই জাকসুর সদস্য হতে পারেন। তবে সম্প্রতি উপাচার্য মো.

কামরুল আহসান গঠনতন্ত্রের ১৯ ধারাবলে, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ছাড়া বাকিদের সদস্য হওয়ার বিষয়টি বাতিল করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ছাড়াও এমফিল, পিএইচডি ও উইকেন্ড কোর্সের শিক্ষার্থী আছেন। এর বাইরে স্নাতক-স্নাতকোত্তরে অনিয়মিত শিক্ষার্থী আছেন। তাঁদেরও ভোটার তালিকায় রাখা হয়নি। যদিও গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নির্ধারিত চাঁদা দিয়ে তাঁরা সদস্য হতে পারতেন।

জাকসুর গঠনতন্ত্রের ১ ধারায় বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলের সদস্য ও যাঁদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রত্যক্ষভাবে শিক্ষাদান করে থাকে, সেসব ছাত্রই জাকসুর সদস্য হবেন। অন্যদিকে, ১৯ ধারায় বলা হয়েছে, এই গঠনতন্ত্রে অনুল্লেখিত এমন কোনো বিষয়ের সম্মুখীন হলে, সে বিষয়ে সভাপতি (উপাচার্য) সিদ্ধান্ত নেবেন এবং তাঁর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে।

জাকসুর নির্বাচন কমিশনের এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, এমফিল, পিএইচডি ও উইকেন্ডের শিক্ষার্থীদের হলে সংযুক্ত করা হলেও তাঁরা আবাসিক হলে থাকতে পারেন না। কিন্তু তাঁরা প্রত্যক্ষভাবে ক্লাস করেন, আবার হলের চাঁদাও দেন। এ বিষয়ে গঠনতন্ত্রে অস্পষ্টতা থাকায় উপাচার্য তাঁদের ভোটার তালিকায় রাখেননি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও নির্বাচন কমিশনের সদস্যসচিব রাশিদুল আলম বলেন, শুধু স্নাতক এবং স্নাতকোত্তরের নিয়মিত শিক্ষার্থীরাই নির্বাচনের বৈধ ভোটার। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী যেসব বিষয়ে অস্পষ্টতা রয়েছে সেসব বিষয়ে উপাচার্য ক্ষমতাবলে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

আগে সংস্কার, পরে নির্বাচন চায় ছাত্রদল ও বামপন্থীদের একাংশ

ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা বলছেন, তাঁরাও জাকসু নির্বাচন চান। তবে নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের যাঁরা প্রশাসনের দায়িত্বে আছেন, তাঁদের অপসারণ করতে হবে। একই সঙ্গে জুলাই আন্দোলনে হামলাকারীদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের আমলে ছাত্রদলের যাঁরা নির্যাতিত হয়ে পড়াশোনা শেষ করতে পারেননি, তাঁদের ছাত্রত্ব ফিরিয়ে দিতে হবে। এসব বিষয়ে বেশ কিছু প্রস্তাবনা তাঁরা আগামী বৃহস্পতিবার উপাচার্য বরাবর দেবেন। বিষয়গুলো সংস্কার করেই তারপর নির্বাচন চায় ছাত্রদল।

এ বিষয়ে ছাত্রদলের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক জহির উদ্দিন বাবর প্রথম আলোকে বলেন, ছাত্রদল সব সময় ছাত্র সংসদ কার্যকর রাখার পক্ষে। সব ছাত্র সংগঠনের প্রতিনিধিদের নিয়ে প্রশাসন জাকসু নির্বাচনের বিষয়ে একটি সাধারণ সভা করেছিল। ওই সভায় নির্বাচনের আগে অনেকগুলো সংস্কারের দাবি আসে। সেসব বিষয়ে সংস্কার করে নির্বাচনী তফসিল দিতে হবে। ছাত্রশিবিরকে নির্বাচনে চান না জানিয়ে ছাত্রদল আহ্বায়ক বলেন, ‘ক্যাম্পাসে ২২টি সংগঠন ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল। ওই তালিকায় জাকসুও ছিল। যেহেতু গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, জাকসুর সিদ্ধান্ত জাকসুকেই (নির্বাচিতরা) নিতে হয়। তাই এই নির্বাচনে শিবির অংশগ্রহণ করুক, আমরা চাই না। জাকসু নির্বাচন হলে নির্বাচিত সদস্যরা শিবিরের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। তার আগে শিবিরের উপস্থিতি চাই না।’

আরও পড়ুনছাত্রশিবিরের উপস্থিতি নিয়ে হট্টগোল, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে মতবিনিময় সভা স্থগিত১৯ নভেম্বর ২০২৪

একই কথা বলছেন বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীরা। তাঁরা বলছেন, জাকসুর যে গঠনতন্ত্র আছে, তার বেশ কিছু বিষয় সংস্কার করা জরুরি। সেসব বিষয় সংস্কার করে তারপর নির্বাচন দেওয়া হোক। বিশেষ করে পদাধিকারবলে উপাচার্যের জাকসুর সভাপতি হওয়ার যে নিয়ম, সেটি নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন তাঁরা। এ ছাড়া ছাত্রশিবিরের অংশগ্রহণের বিষয়টি নিয়েও তাঁদের আপত্তি আছে।

ছাত্র ইউনিয়ন বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের (একাংশের) সভাপতি অমর্ত্য রায় বলেন, ‘আমরা জাকসুর তফসিল ঘোষণার আগে শেখ হাসিনার একজন বিশ্বস্ত ভ্যানগার্ড প্রোভিসি সোহেল আহমেদের অপসারণ চাই। জাকসুর গঠনতান্ত্রিক কিছু জটিলতা বিদ্যমান, যেহেতু জাকসুর গঠনতন্ত্রের বয়স পঁয়তাল্লিশ বছরেরও বেশি। সেই গঠনতন্ত্র এই বাস্তবতায় অনেকটুকুই অপ্রাসঙ্গিক। গঠনতন্ত্রের সংস্কার করে দ্রুতই জাকসুর তফসিল ঘোষণা করা হবে বলে আশা রাখছি আমরা।’

আগে জাকসু, পরে সংস্কার চায় বৈষম্যবিরোধী, শিবির, অধিকার পরিষদ

রোডম্যাপ অনুযায়ী নির্বাচন চায় বেশ কয়েকটি সংগঠন। ছাত্র সংসদ বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কারেরই অংশ, জাকসু হলে সংস্কারের পথ আরও সহজ হবে বলে মনে করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জাবি শাখার সদস্যসচিব তৌহিদ সিয়াম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রশাসন জাকসু নিয়ে যে উদ্যোগ নিয়েছে, তা সাধুবাদ জানাই। জাকসু আমাদের যৌক্তিক দাবি। জাকসু নির্বাচনকে কেউ বানচাল করতে চাইলে ছাত্র-জনতা তা রুখে দেবে। রূপরেখা অনুযায়ী সব দল-মত নির্বিশেষে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। যাতে ছাত্র প্রতিনিধিরা শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে কাজ করতে পারেন।’

ছাত্রশিবিরের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মহিবুর রহমান বলেন, গত তিন দশক জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদের নির্বাচন হয়নি। জাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যে আমেজ তৈরি হয়েছে, তা যথাসময়ে বাস্তবায়ন করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়কে পথ দেখাবে বলে প্রত্যাশা করেন তিনি। কোনো টালবাহানায় যেন জাকসু নির্বাচনকে পিছিয়ে না দেওয়া হয়, সে ব্যাপারে প্রশাসনের সর্বোচ্চ আন্তরিকতা কামনা করেন তিনি।

নির্বাচন কমিশনের সদস্য অধ্যাপক মাফরুহী সাত্তার বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে জাকসুর একটা উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। জুলাই বিপ্লবের পরের যে প্রেক্ষাপট, সবকিছু মিলিয়ে আমি মনে করি এটি অত্যন্ত জটিল বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর অনেকগুলো আইনগত দিক এবং কতগুলো জটিলতা থাকবে। সেটা সংশ্লিষ্টরা মিলে কীভাবে দূর করবে, সেটা চ্যালেঞ্জ বলে আমি মনে করি।’

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান প্রথম আলোকে বলেন, ভোটার হওয়ার ক্ষেত্রে এমফিল, পিএইচডি ও উইকেন্ড কোর্সের শিক্ষার্থীরা ভোট দিতে পারবেন কি না, বিষয়টি নিয়ে অস্পষ্টতা আছে। গঠনতন্ত্রের ১৯ ধারাবলে একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে এই সুযোগটাও রাখা হয়েছে যদি কারও সদস্যসংক্রান্ত কোনো জিজ্ঞাসা থাকে, তাহলে ১৪ তারিখের মধ্যে আবেদন করতে বলা হয়েছে। তাঁদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এবং গঠনতন্ত্রের স্পিরিটের সঙ্গে সাংঘর্ষিক না হলে, সে ক্ষেত্রে বিবেচনা করা হবে।

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

রাকসু নির্বাচনে বামদের প্যানেলে নারী একজন, শক্তি ‘ধারাবাহিক লড়াই’

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনে বাম সংগঠনগুলোর একটা বড় অংশ এক ছাতার নিচে এসেছে। তারা যে প্যানেল দিয়েছে, তাতে জায়গা পেয়েছেন মূলত জোটে থাকা সংগঠনগুলোর শীর্ষ নেতারাই। নারী আছেন মাত্র একজন। তবে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর দুজনকে প্রার্থী করা হয়েছে। অধিকার আদায়ের লড়াইয়ের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কাছে পরিচিতি তৈরি হওয়াকে এই প্যানেলের ‘বড় শক্তি’ বলে মনে করা হচ্ছে।

রাকসুর ২৩ পদের বিপরীতে ১৬টিতে প্রার্থী দিয়েছে বাম সংগঠনগুলোর মোর্চা গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট। তাদের প্যানেলের নাম ‘গণতান্ত্রিক শিক্ষার্থী পর্ষদ’। এই প্যানেলে আছেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, ছাত্র গণমঞ্চ, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র যুব আন্দোলন, বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের নেতা-কর্মীরা। রাজনৈতিক–সংশ্লিষ্টতা নেই, এমন শিক্ষার্থী আছেন দুজন। তবে প্যানেলে থাকা দুজন সদস্য সরে দাঁড়িয়েছেন।

এই প্যানেল থেকে সহসভাপতি (ভিপি) পদে লড়বেন ছাত্র ফ্রন্টের আহ্বায়ক ফুয়াদ রাতুল। সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ছাত্র ইউনিয়নের (একাংশ) কোষাধ্যক্ষ কাউছার আহম্মেদ এবং সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে প্রার্থী করা হয়েছে ছাত্র গণমঞ্চের আহ্বায়ক নাসিম সরকারকে।

বাম জোটের নেতারা বলছেন, ক্যাম্পাসে ধারাবাহিকভাবে শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের জন্য লড়াই-সংগ্রাম করে আসছেন তাঁরা। এর মাধ্যমেই তাঁরা শিক্ষার্থীদের কাছে পরিচিত। শিক্ষার্থীদের ‘প্রধান কণ্ঠস্বর’ হিসেবে কাজ করেছেন, করছেন। তাঁদের দাবি, এটাই তাঁদের বড় শক্তি।

প্রার্থীদের প্রায় সবাই জোটের নেতা

বামদের এই প্যানেলে সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে লড়বেন বিপ্লবী ছাত্র যুব আন্দোলনের আহ্বায়ক তারেক আশরাফ। মহিলাবিষয়ক সহসম্পাদক পদে ছাত্র ফ্রন্টের শ্রেয়সী রায়, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক পদে বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর হাসান শাহরিয়ার খন্দকার আলিফ এবং তথ্য ও গবেষণা সহসম্পাদক পদে লড়বেন ছাত্র ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক মো. সজীব আলী।

এ ছাড়া সহবিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক পদে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক রিসার্চ চাকমা এবং সহপরিবেশ ও সমাজসেবা সম্পাদক পদে একই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শামীন ত্রিপুরাকে প্রার্থী করা হয়েছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক পদে ছাত্র ফ্রন্টের সদস্য মুনতাসির তাসিন, পরিবেশ ও সমাজসেবা–বিষয়ক সম্পাদক পদে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের আজমাইন আতিক ও নির্বাহী সদস্য পদে লড়বেন ছাত্র ইউনিয়নের দপ্তর সম্পাদক আহমেদ ইমতিয়াজ।

এই প্যানেল থেকে জোটের বাইরে দুজনকে প্রার্থী করা হয়েছে। তাঁরা হলেন সহমিডিয়া ও প্রকাশনা সম্পাদক প্রার্থী ফাহিম মুনতাসির এবং নির্বাহী সদস্য পদে লড়বেন আসাদ সাদিক।

দাবি আদায়ের মাঠে থাকা ‘বড় শক্তি’

শিক্ষার্থীদের দাবিদাওয়ার আন্দোলনে বাম সংগঠনের নেতা-কর্মীদের সব সময় মাঠে দেখা গেছে। বিভিন্ন জাতীয় ইস্যুতেও তাঁরা তৎপর থেকেছেন। সংখ্যায় কম থাকলেও আন্দোলনের জায়গায় পিছিয়ে ছিলেন না। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ছাত্রলীগের বিভিন্ন অপকর্ম ও শিক্ষার্থী নির্যাতনের বিরুদ্ধেও বাম নেতারা ছিলেন সোচ্চার।

শিক্ষার্থীদের আবাসন, খাদ্য, পরিবহনসংকট, ফি কমানো, নারীদের নিরাপত্তাসহ নানা ইস্যুতে আন্দোলন করে আসছে বাম সংগঠনগুলো। জুলাই আন্দোলনেও সক্রিয় ছিল তারা। এই প্যানেলের ভিপি প্রার্থী ফুয়াদ রাতুল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়কদের একজন।

বাম নেতারা বলছেন, নব্বই–পরবর্তী বাম রাজনীতির ক্রান্তিকাল চলছে। এর পর থেকে আত্মকেন্দ্রিকতা বেড়ে গেছে। সেই ছায়া পড়েছে প্রগতিশীল রাজনীতিতে। অন্য সংগঠনগুলোতে ব্যক্তিগত স্বার্থ বা লাভবান হওয়ার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু বাম রাজনীতি করলে সেই সুবিধা পাওয়া যায় না। কিন্তু শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে বাম সংগঠনগুলো যে সব সময় সক্রিয় থেকেছে, এটাকেই রাকসু নির্বাচনে একটা বড় শক্তি মনে করছেন তাঁরা।

বামদের প্যানেলের ভিপি প্রার্থী ও ছাত্র ফ্রন্টের আহ্বায়ক ফুয়াদ রাতুল প্রথম আলোকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের পক্ষে আন্দোলন করায় আমরা ক্যাম্পাসে পরিচিত। সে হিসেবে আমরা শিক্ষার্থীদের কাছে পরীক্ষিত। বিগত দিনে আমরা ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের প্রধান কণ্ঠ ছিলাম। আমাদের তারা মূল্যায়ন করবে। আমাদের এই লড়াই–ই বড় শক্তি।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শাকসু নির্বাচন সামনে রেখে একাধিক শর্তে ছাত্ররাজনীতি চালুর সুপারিশ
  • ভিন্ন পরিবেশে নির্বাচন, সবারই প্রথম অভিজ্ঞতা
  • রাকসু নির্বাচনে বামদের প্যানেলে নারী একজন, শক্তি ‘ধারাবাহিক লড়াই’
  • শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে কেমন ছাত্ররাজনীতি দেখতে চান