জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ছাড়া নির্বাচন হলে সরকার শহীদ পরিবারের মুখোমুখি হবে
Published: 20th, October 2025 GMT
জুলাই সনদ বাস্তবায়ন, বিপ্লবীদের নিরাপত্তা ও গণহত্যাকারীদের বিচার নিশ্চিত না করে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে অন্তর্বর্তী সরকারকে শহীদ পরিবার ও জুলাই যোদ্ধাদের মুখোমুখি হতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মূখ্য সংগঠক সারজিস আলম।
শনিবার ( ১৯ অক্টোবর) সন্ধ্যা ৭টার দিকে রংপুর নগরীর তিলোত্তমা রেস্টুরেন্টে জেলা ও মহানগর কমিটির সমন্বয় সভা শেষে এমন হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
আরো পড়ুন:
কিছু দিন পর দেখা যাবে, গণঅভ্যুত্থানটাই নাই: সারজিস
তিস্তা মহাপরিকল্পনা নিয়ে বিএনপিকে ধন্যবাদ জানালেন সারজিস
সারজিস আলম বলেন, “শুধুমাত্র বিশেষ রাজনৈতিক দলের স্বার্থে নয়, জনগণের দাবিতে সনদের আইনগত ভিত্তি নিশ্চিত করতে হবে। জুলাই যোদ্ধাদের আইনগতভাবে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে জনগণ সরকারের বিপক্ষে অবস্থান নেবে আর এর সঙ্গে থাকবে এনসিপি।”
দেশে সাম্প্রতিক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাগুলো বড় ষড়যন্ত্রের অংশ হতে পারে বলে ধারণা করেন এনসিপির এই নেতা। একই সাথে এসব ঘটনার তদন্দের দাবি জানান তিনি।
আগামীর সংগঠন গঠন প্রসঙ্গে সারজিস বলেন, “ডিসেম্বরের আগেই এনসিপি সারাদেশে সমন্বয় সভা শেষ করে জেলা পর্যায়ে কমিটি গঠন সম্পন্ন করবে। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে কাজ করা হচ্ছে।”
উত্তরাঞ্চলের বৈষম্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “রংপুরকে বিগত আমলে বছরের পর বছর বাজেটে বঞ্চিত করা হয়েছে। এবার শহীদ আবু সাঈদের রংপুরকে ন্যায্য হিস্যা দিতে হবে।”
ঢাকা/আমিরুল/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাবে এনসিপি
জুলাই সনদে সই না করলেও আইনি জটিলতা নিরসনে এবং এই সনদকে একটি যথাযথ আইনি ভিত্তি দিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আগের মতো আলোচনা চালিয়ে যাবে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। আইনি ভিত্তি ও বৈধতা–সংক্রান্ত বিষয়াবলি সম্পর্কে সুনিশ্চিত হলেই তারা সনদে সই করবে।
জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান হয়ে যাওয়ার এক দিন পর আজ শনিবার এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব (দপ্তর) সালেহ উদ্দিন সিফাত স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ কথা জানানো হয়।
গতকাল সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় আনুষ্ঠানিক আয়োজনে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের উপস্থিতিতে জুলাই জাতীয় সনদে সই করে ২৪টি রাজনৈতিক দল। জুলাই অভ্যুত্থানে সামনের কাতারে থাকা তরুণদের গড়া দল এনসিপি এই অনুষ্ঠানে যায়নি।
না যাওয়ার ব্যাখ্যায় এনসিপির বিবৃতিতে বলা হয়, জুলাই সনদের আইনগত ভিত্তি ও বৈধতা নিশ্চিত না করে এবং বাস্তবায়নপ্রক্রিয়া সম্পর্কে জাতিকে স্বচ্ছ ধারণা না দিয়েই জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান আয়োজন করে সরকার। জুলাই সনদের কোনো আইনি ভিত্তি প্রদান না করা, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশের খসড়া প্রকাশ না করা এবং সনদ বাস্তবায়ন পদ্ধতির পূর্ণাঙ্গ রূপরেখা জাতির সামনে উন্মোচন না করায় শুধু আনুষ্ঠানিকতার জন্য গতকাল জুলাই সনদে স্বাক্ষর থেকে বিরত থেকেছে এনসিপি।
প্রতিষ্ঠার দিন থেকেই এনসিপি ‘বাহাত্তরের ফ্যাসিবাদী বন্দোবস্তের’ বিলোপ ঘটিয়ে নতুন সংবিধানের জন্য সরকারসহ রাজনৈতিক দলগুলোকে আহ্বান জানিয়ে আসছে। সারা দেশে জনসংযোগসহ ঐকমত্য কমিশনেও রাষ্ট্রের কাঠামোগত সংস্কারপ্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে নিজেদের ভূমিকার কথা উল্লেখ করা হয় বিবৃতিতে।
জুলাই সনদ বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে জাতিকে ধোঁয়াশায় রাখা হয়েছে দাবি করে এনসিপি বলেছে, এর আইনি ভিত্তি হিসেবে ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ’ এর কথা উল্লেখ নেই। অভ্যুত্থান–পরবর্তী যেকোনো বন্দোবস্তের নৈতিক ও আইনি ভিত্তি হতে হবে জুলাই অভ্যুত্থানে প্রকাশিত জনগণের ‘সার্বভৌম ও গাঠনিক ক্ষমতা’। কিন্তু জুলাই সনদে জনগণের ‘সার্বভৌম ও গাঠনিক ক্ষমতা’ সম্পর্কিত মৌলিক সত্যের কোনো উল্লেখ নাই।
সব রাজনৈতিক দল ‘গণভোট’–এ সম্মত হলেও তার আইনি কাঠামো তথা জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশের কথা সনদে না থাকায় বাস্তবায়নের নিশ্চয়তা থাকছে না বলে এনসিপি মনে করে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘জুলাই সনদে রাজনৈতিক দলগুলো সংবিধানের এমন কিছু অনুচ্ছেদ পরিবর্তনের ব্যাপারে সম্মত হয়েছে, যা বিদ্যমান সংবিধানের তথাকথিত “বেসিক স্ট্রাকচার”–এর আওতাভুক্ত। ফলে বাহাত্তরের সাংবিধানিক কাঠামোর অধীনে থেকে খোদ এর “বেসিক স্ট্রাকচার”কে লঙ্ঘন করে সংবিধান সংশোধন বা সংস্কার করলেও অদূর ভবিষ্যতে এই প্রক্রিয়া আদালতে চ্যালেঞ্জড এবং বাতিল হওয়ার সম্ভাবনা রাখে। কাজেই এই প্রক্রিয়ায় “জুলাই সনদ” পাস হলে, এটি জনগণের সঙ্গে একটি সাংবিধানিক প্রতারণা ছাড়া আর কিছু হবে না।’
তাই এনসিপি গণভোটের আগে জনগণের সার্বভৌম ইচ্ছার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে সরকারপ্রধান অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস কর্তৃক জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারির দাবি তুলেছে, যে আদেশের খসড়ায় এর আইনি ভিত্তি ও বৈধতা তথা জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের কথা স্পষ্ট উল্লেখ থাকবে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ফ্যাসিবাদবিরোধী অনেক রাজনৈতিক দল আগামী দিনে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দেওয়া হবে এমন আশাবাদ নিয়ে সনদে সই করেছে। ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ বেড়েছে। জুলাই সনদের আইনি ভিত্তিসংক্রান্ত আগামী কয়েক দিনের আলোচনায় এই রাজনৈতিক দলগুলোকে তারা পাশে পাবে।
কোনো অবস্থাতেই জুলাই সনদকে জুলাই ঘোষণাপত্রের মতো আইনি ভিত্তিহীন রাজনৈতিক সমঝোতার দলিল বা ‘জেন্টেলম্যান'স অ্যাগ্রিমেন্টে’ পর্যবসিত করা যাবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়ে এনসিপি বলেছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জুলাই অভ্যুত্থানের অভিপ্রায়কে ধারণ করে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি ও বাস্তবায়নে কার্যকর উদ্যোগ নেবে বলে তারা আশা করেছে।
‘জুলাই যোদ্ধাদের’ ওপর হামলার নিন্দাএনসিপির বিবৃতিতে গতকাল সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের আগে জুলাই যোদ্ধাদের ওপর হামলার নিন্দাও জানানো হয়।
এতে বলা হয়, জুলাইয়ের শহীদ পরিবার ও আহত ব্যক্তিরা কিছু দাবি নিয়ে সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে যান। তাঁদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে জুলাই সনদের অঙ্গীকারনামার পঞ্চম দফা সংশোধন করার ঘোষণাও দেয় ঐকমত্য কমিশন। কিন্তু কমিশন এই বিষয়টি প্রথমেই আমলে নিলে শহীদ পরিবার ও আহত যোদ্ধাদের রাজপথে নামতে হতো না।
সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধান না করে আহত ‘জুলাই যোদ্ধাদের’ ওপর হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করেছে এনসিপি। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘শহীদ ও আহতদের আত্মত্যাগের বলেই আজকের জুলাই সনদ। তাঁদের ওপর হামলা করে এবং তাঁদের অসম্মান করে “জুলাই সনদ”কে পাওয়ার এলিটদের সেটেলমেন্ট বানাতে চাওয়া হয়েছে।’
আমন্ত্রিত শহীদ পরিবারগুলোও এই অনুষ্ঠানে প্রাপ্য সম্মান পাননি অভিযোগ করে এনসিপি বলেছে, শহীদ পরিবাররাই জুলাই সনদ আয়োজন অনুষ্ঠানের মূল আকর্ষণ। মঞ্চ থেকে এক কোণে বসিয়ে তাঁদের অমর্যাদা করা হয়েছে। প্রশাসন তাঁদের সঙ্গে উচ্চবাচ্য করেছে।