একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক মানিক সাহা হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের চিহ্নিত করতে বিশেষ কমিটি গঠনের দাবি জানিয়েছেন সাংবাদিক ও রাজনৈতি নেতারা। তারা বলেছেন, একের পর এক সাংবাদিক হত্যাকাণ্ড ও নির্যাতনের ঘটনায় স্বাধীন সাংবাদিকতা হুমকির মুখে পড়েছে। অথচ সাংবাদিক হত্যা ও নির্যাতনের পরিকল্পনাকারী, পৃষ্ঠপোষক, অর্থদাতাসহ অন্যান্যরা ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে।

বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সাংবাদিক মানিক সাহার সুহৃদের পক্ষ থেকে আয়োজিত মানববন্ধন ও সমাবেশে এ সব কথা বলেন তারা। সিনিয়র সাংবাদিক আশীষ কুমার দের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তৃতা করেন বাংলদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, সিপিবি সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাসান তারিক চৌধুরী সোহেল, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের কোষাধ্যক্ষ খায়রুজ্জামান কামাল ও সাবেক নির্বাহী সদস্য রফিকুল ইসলাম সবুজ, সাংস্কৃতিক সংগঠক পুলক রাহা, বাপার যুগ্ম সম্পাদক মো.

নূর আলম শেখ, সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক নিখিল চন্দ্র ভদ্র, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সাংস্কৃতিক সম্পাদক সাকিলা পারভীন, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক প্রচার-প্রকাশনা সম্পাদক সুশান্ত সাহা ও সাবেক কল্যাণ সম্পাদক তানভীর আহমেদ, হকার্স নেতা সেকান্দার হায়াৎ, সাংবাদিক সমীরণ রায় প্রমুখ।

সাংবাদিক মানিক সাহা খুনের মামলার পুনঃতদন্ত ও সুষ্ঠু বিচার দাবি করে সিপিবি নেতা মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, মানিক সাহা নিজেও জানতেন, তিনি যেভাবে সত্যের সৈনিক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তার উপর আক্রমণ আসবে। তবে তিনি কখনোই মৃত্যুর ভয়ে ভীত ছিলেন না। যারা মানিক সাহার মতো সাংবাদিকদের হত্যা করে তারা সত্যের শত্রু। 

মানিক সাহা হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পকারীদের উন্মোচন করতে সরকারের নীতি-নির্ধারকদের হস্তক্ষেপ দাবি করেন সাবেক ছাত্র নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স। তিনি বলেন, মানিক সাহা আমৃত্যু জনমুখী সাংবাদিকতা করেছেন, মুক্তিযুদ্ধ ও সমতার পক্ষে আপোষহীন ছিলেন। অথচ তার হত্যাকাণ্ড মামলার বিচারের নামে প্রহসন করা হয়েছে। ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার স্বার্থে চাঞ্চল্যকর ওই মামলার পুনঃতদন্ত হতে হবে।

সাংবাদিক নেতা খায়রুজ্জামান কামাল বলেন, সাংবাদিক হত্যার কোনো বিচার হবে না, এমনই অলিখিত নিয়ম চালু হয়েছে। শুধু মানিক সাহা নয়, সাগর-রুনিসহ অন্যান্য সাংবাদিক হত্যা ও নির্যাতনের বিচার হয়নি। এখনো সাংবাদিকরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। যে কারণে সুস্থ সাংবাদিকতা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সকল সাংবাদিক হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে জোরদার আন্দোলন গড়ে তোলার উপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।

সাংবাদিক হত্যাকাণ্ডের বিচারে বিশেষ কমিটি গঠনের আহ্বান জানিয়ে আইনজীবী নেতা হাসান তারিক বলেন, আইন অন্যায্য হলে সুষ্ঠু বিচার অসম্ভব। মানিক সাহাসহ অন্যান্য সাংবাদিক হত্যাকাণ্ডের বিচারের পেছনে আইনের সীমাবদ্ধতা ও সঠিক প্রয়োগের অভাবই দায়ী। বর্বর ওই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করতে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

উল্লেখ্য, ২০০৪ সালের ১৫ জানুয়ারি দুপুরে খুলনা প্রেস ক্লাবের সামনে দুর্বৃত্তদের বোমা হামলায় মানিক সাহা নিহত হন। সমাবেশের শুরুতে তার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়।

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

দক্ষিণ ভারতের নিষ্পেষিত মুসলিম নারীদের কণ্ঠস্বর

বানু মুশতাক বললেন, ‘মানুষ ও তার মৌলিক স্বভাব সবখানেই একই ধরনের। এটাই আমার লেখার উদ্দেশ্য। আমার বিষয়বস্তু নারী, প্রান্তিক মানুষ, কণ্ঠহীন সমাজের কণ্ঠস্বর হওয়া।’

বানু মুশতাকের মাধ্যমে এ বছরই প্রথম কোনো ছোটগল্প সংকলন বুকার জিতেছে। আবার কন্নড় ভাষাতেও এসেছে প্রথম বুকার। হার্ট ল্যাম্প ইংরেজি ভাষায় অনূদিত বানু মুশতাকের প্রথম বই। তাঁর বয়স এখন ৭৭ বছর।

বানু মুশতাক একজন আইনজীবী, সমাজকর্মী ও লেখক। ১৯৮১ সাল থেকে তিনি গল্প লিখছেন। হার্ট ল্যাম্প তাঁর বিভিন্ন সময়ে লেখা গল্পের একটি সংকলন। তাঁর গল্পে দক্ষিণ ভারতের কর্ণাটকের মুসলিম নারীদের জীবনের গল্প ফুটে উঠেছে। সেখানে দেখানো হয়েছে, তাঁরা কীভাবে পারিবারিক রীতির জাঁতাকলে পড়েন।

বানু মুশতাক বলেন, ‘হ্যাঁ, মেয়েরা, আজও তারা অবহেলিত। আর ঘর থেকেই এর শুরু।’

তাঁর অনুবাদক দীপা ভাস্তি বলেন, ‘এই গল্পগুলো একটি সুনির্দিষ্ট অঞ্চলের সুনির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের প্রেক্ষাপটে রচিত হলেও একেবারে সর্বজনীন।’

একজন আইনজীবী ও সমাজকর্মী হিসেবে তাঁর কাজ লেখালেখিতে কী প্রভাব ফেলে—এ প্রশ্নের জবাবে বানু মুশতাক বলেন, ‘কেউ যখন কোনো আইনি সমস্যা নিয়ে আমার কাছে আসে, তখন তারা তাদের সব অনুভূতি ভাগ করে নিতে চায়। সেসব তাড়না আমার মধ্যে ক্রমাগত বাড়তে থাকে। তারপর একদিন ছোটগল্পে পরিণত হয়।’

কিন্তু আইনি মামলা নাহয় সমস্যার সমাধান করতে পারে, ছোটগল্প কি পারে? ‘অবশ্যই। কারণ নীরবতা কোনো সমাধান নয়। তারা যে পাল্টা লড়াই করতে পারে, সেই দৃষ্টিভঙ্গি আমি গল্পের মাধ্যমে দিয়েছি।’

বানু মুশতাকের ‘কালো গোখরারা’ গল্পে একজন নারীকে জানানো হয়েছে, ইসলাম নারীদের শিক্ষিত হওয়ার এবং কাজ করার কথা বলেছে। কিন্তু সমাজ সুবিধার জন্য তাদের সেই অধিকার থেকে বঞ্চিত রাখে। গল্পে আমি বলেছি, নিজের অধিকারের কথা বলো।’ বলেন বানু মুশতাক।

বানু মুশতাকের গল্পে কমেডিও আছে। তাঁর ভাষ্য, ‘এই স্টাইল ব্যবহারের কারণ আমি ক্ষমতাকাঠামোর মুখে সত্য বলছি। পিতৃতন্ত্র, রাজনীতি, ধর্ম—সব একসঙ্গে মিলিয়েই ক্ষমতাকাঠামো। খুব গম্ভীর সুরে কথাটি বললে এর পরিণতি যা–ই হোক না কেন, আমি দায়বদ্ধ থাকব। তাই আমি ব্যঙ্গাত্মক মোচড় দিই। সেলফ সেন্সরশিপের বদলে এই কৌশল ব্যবহার করি।’ 

অনুবাদক ভাস্তি বলেন, ‘নারীরা যে পুরুষদের দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে, রসিকতা করে এই গল্পে সেটাই বোঝানো হয়েছে।’

বানু মুশতাক বান্দায়া সাহিত্যের (কন্নড়ের প্রতিবাদী সাহিত্য আন্দোলন) ঐতিহ্যে লিখেছেন। ১৯৭০–এর দশকে লেখকেরা ছিলেন ‘বেশির ভাগ পুরুষ এবং উচ্চবর্ণের’। সে আন্দোলনের স্লোগান ছিল, ‘লেখক হলে আপনিও একজন যোদ্ধা’। এটি নারী ও সংখ্যালঘু লেখকদের নিজস্ব পরিচয়ে লিখতে উত্সাহিত করেছিল।

দ্য গার্ডিয়ান থেকে সংক্ষেপিত অনুবাদ 

রবিউল কমল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ঝালকাঠি জেলা আইনজীবী সমিতির ১৬ সদস্যকে অব্যাহতি
  • এক যুগ আগের ভাঙচুরের মামলা থেকে খালাস পেলেন শহীদ উদ্দিন চৌধুরীসহ বিএনপির ৯ নেতা-কর্মী
  • লক্ষ্মীপুরে আইনজীবী-কর্মচারী হাতাহাতির ঘটনায় মামলা, পরোয়ানা জারি
  • দুদকের মামলায় যশোর প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আবদুস সাত্তার কারাগারে
  • চট্টগ্রামে বিস্ফোরক মামলায় চিন্ময়কে কারাফটকে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি
  • বিস্ফোরক মামলায় চিন্ময় দাসকে কারাফটকে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ
  • জামিন দেওয়াকে কেন্দ্র করে আদালতে হাতাহাতি, স্টেনোগ্রাফার আহত
  • দণ্ডাদেশ বহালের রায়ের বিরুদ্ধে ১০ আসামির আপিল ও লিভ টু আপিল
  • যে ‘ধর্মীয় অনুপ্রেরণায়’ ইরানে এই হামলা চালাল ইসরায়েল
  • দক্ষিণ ভারতের নিষ্পেষিত মুসলিম নারীদের কণ্ঠস্বর