এখন দেখছি নতুন প্রতারকের জন্ম হয়েছে: কায়সার কামাল
Published: 1st, November 2025 GMT
বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল বলেছেন, ‘বর্তমান সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রমে দেশের মানুষ সন্দিহান হচ্ছে। দেশের প্রতিটি ক্রিয়াশীল রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে যে জুলাই সনদ স্বাক্ষরিত হয়েছিল, সেটিকে বর্তমানে উপস্থাপন করা হয়নি। আমরা এর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। আমরা দেখেছি, শেখ হাসিনা জাতিকে প্রতারিত করেছিল, কিন্তু এখন দেখছি নতুন প্রতারকের জন্ম হয়েছে—এটা লজ্জাজনক।’
আজ শনিবার দুপুরে ময়মনসিংহ জেলা আইনজীবী সমিতির কার্যালয়ে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে এ কথা বলেন কায়সার কামাল।
জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব কায়সার কামাল বলেন, ‘জুলাই সনদের কিছু অনুচ্ছেদ বলা হয়েছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ২৬০ দিনের মধ্যে যদি সংবিধানে সন্নিবেশিত করা না হয়, তাহলে সেগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে সন্নিবেশিত হয়ে যাবে। কিন্তু বাংলাদেশসহ বিশ্বের কোথাও এ ধরনের নজির নেই। তাই প্রতারণা বন্ধ করে অবিলম্বে স্বাক্ষরিত জুলাই সনদ জাতির সামনে উপস্থাপন করেন। বিগত সময়ে আমরা দেখেছি, বাংলাদেশের মানুষ ছাড় দেয়, কিন্তু ছেড়ে দেয় না। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা এর উৎকৃষ্ট নজির।’
নির্বাচন প্রসঙ্গে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে কায়সার কামাল বলেন, ‘যে ভোটের জন্য মানুষ জীবন দিয়েছিল, সেই ভোট অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু বর্তমান সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রমে দেশের মানুষ সন্দিহান হচ্ছে। অবিলম্বে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করুন। নির্বাচনের তারিখ নিয়ে টালবাহানা করলে আইনজীবী সমাজ মেনে নেবে না।’
আইন উপদেষ্টার উদ্দেশ্যে কায়সার কামাল বলেন, ‘দেশের মানুষ আইনের শাসনে বিশ্বাসী। কিন্তু বর্তমান আইন উপদেষ্টা মাঝেমধ্যেই জুডিশিয়ারি বিষয়ে তির্যক মন্তব্য করছেন। দেশের আইনজীবী সমাজ এটা ভালোভাবে নিচ্ছে না, থামুন। না হলে আইনজীবী সমাজ রাস্তায় নামতে বাধ্য হবে।’
সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক এনায়েতুর রহমানের সভাপতিত্বে সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সদস্যসচিব মমরুজুল হাসান, আইনজীবী নেতা নূরুল হক, রেজাউল করিম চৌধুরী, মাসুদ তানভীর তান্না প্রমুখ।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আইনজ ব
এছাড়াও পড়ুন:
তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিলে ধ্বংস হয় গণতন্ত্র, শুরু হয় গুম-খুন: শুনানিতে জয়নুল আবেদীন
দেশে গণতন্ত্র ধ্বংস হয়ে গুম-খুনের শুরুর জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলকে কারণ হিসেবে আদালতে উপস্থাপন করেছেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন। এ সংকটের জন্য তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের পাশাপাশি দায়ী করেছেন সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হককে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে বিএনপির মহাসচিবের করা আপিল–সংক্রান্ত শুনানিতে আজ বুধবার অংশ নেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি জয়নুল আবেদীন। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের আপিল বেঞ্চে আজ এ মামলার পঞ্চম দিনের শুনানি হয়। পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী রোববার দিন রাখা হয়েছে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা প্রবর্তন করে আনা ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করে ১৪ বছর আগে সংখ্যাগরিষ্ঠমতে দেওয়া রায় সর্বোচ্চ আদালতের অন্য সব রায়কে লঙ্ঘন করেছে দাবি করে জয়নুল আবেদীন বলেন, বিশেষ করে অষ্টম সংশোধনী মামলা, মাসদার হোসেন মামলাসহ অন্য সব মামলার রায়। সংবিধানের অভিভাবক সুপ্রিম কোর্ট। এই ক্ষমতাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যায় না, যা ত্রয়োদশ সংশোধনীর মামলায় ব্যবহৃত হয়েছে।
জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়ে সবাই কথা বলে। আগের যে সরকার, ফ্যাসিস্ট সরকার, সে–ও বলেছে, বিচার বিভাগের সব স্বাধীনতা দিয়ে দিয়েছে। কিন্তু এমন স্বাধীনতা পেয়েছি যে “রাতের বেলায় কুপিবাতি জ্বালিয়ে” বিচার হয়েছে।’
১৯৯৬ সালে সংবিধানে যোগ হওয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ২০১১ সালে আওয়ামী লীগ সরকার আমলে বাদ পড়ে। তার ঠিক আগে বিচারপতি খায়রুল হক নেতৃত্বাধীন তৎকালীন আপিল বিভাগ তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা অবৈধ বলে রায় দিয়েছিলেন।
বিএনপির সাবেক আইনবিষয়ক সম্পাদক জয়নুল আবেদীন তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা প্রবর্তনের পটভূমি শুনানিতে তুলে ধরেন। আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হওয়ার আগেই সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের বিষয়টি নিয়ে তিনি বলেন, বিচারপতি খায়রুল হক সংক্ষিপ্ত রায় বদলে সরকারের ইচ্ছা অনুযায়ী সংবিধান সংশোধন অনুসারে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেন, যা অনৈতিক।
জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘এ বি এম খায়রুল হক তাঁর রায়ে বলেছেন, সেখানে (তত্ত্বববধায়ক ব্যবস্থায়) কোনো বিচারপতি থাকতে পারবে না, তারা লাভবান হবে। কিন্তু সেই ক্রিমটা নিজে নিয়েছেন। তিনি আইন কমিশনের চেয়ারম্যান হয়েছিলেন। বিচার বিভাগের ওপর জনগণের আস্থার জায়গাটা যিনি ধ্বংস করেছেন।’
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের এক বছর পর গত আগস্টে বিচারপতি খায়রুল হক গ্রেপ্তার হন। তিনি এখন কারাগারে রয়েছেন।
এদিকে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ১৪ বছর আগের ওই রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তি, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার ও নওগাঁর রানীনগরের নারায়ণপাড়ার বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মোফাজ্জল হোসেন পৃথক আবেদন (রিভিউ) করেন। সেন্টার ফর ল গভর্ন্যান্স অ্যান্ড পলিসি নামের একটি সংগঠন ইন্টারভেনার (পক্ষ) হিসেবে যুক্ত হয়।
রিভিউ আবেদনের ওপর শুনানি শেষে গত ২৭ আগস্ট লিভ মঞ্জুর (আপিলের অনুমতি) করে আদেশ দেন আপিল বিভাগ। বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তি এবং বিএনপির মহাসচিবের করা রিভিউ আবেদন থেকে উদ্ভূত আপিলের সঙ্গে অপর রিভিউ আবেদনগুলো শুনানির জন্য যুক্ত হবে বলে আদেশে উল্লেখ করা হয়। এ অনুসারে পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তির করা আপিলের সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেলের করা রিভিউসহ অপর রিভিউ আবেদন এবং বিএনপির মহাসচিবের আপিল শুনানির জন্য আদালতের কার্যতালিকায় ওঠে।
পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তির করা আপিলের ওপর ২১ অক্টোবর শুনানি শুরু হয়। এরপর ইন্টারভেনার হিসেবে যুক্ত সংগঠনের পক্ষে শুনানি করেন সংশ্লিষ্ট আইনজীবী। এরপর জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেলের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির শুনানি করেন। এরপর বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মোফাজ্জল হোসেনের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এম বদরুদ্দোজা বাদল এবং এ এস এম শাহরিয়ার কবির শুনানি করেন। শাহরিয়ার কবিরের বক্তব্য উপস্থাপনের পর হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির (রিভিউ আবেদনকারী) পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ইমরান এ সিদ্দিক শুনানি করেন। এরপর বিএনপির মহাসচিবের পক্ষে জয়নুল আবেদীন শুনানি শুরু করলেন, সঙ্গে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. রুহুল কুদ্দুস।