Samakal:
2025-08-01@21:55:46 GMT

কুইনাইন সারাবে কে

Published: 17th, January 2025 GMT

কুইনাইন সারাবে কে

খবরটি পড়ে বিস্মিত হবো, নাকি অভিভূত হবো বুঝতে পারিনি। বিএনপির কর্মীরাও যে এতটা সাহসী (?) হতে পারেন, ধারণায় ছিল না। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের ১৫ বছরে তাদের লুকোচুরির আন্দোলন দেখে সে রকম মনে হওয়াই স্বাভাবিক। খবর হলো, মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর থানার পুলিশকে মারধর করে হাজত থেকে এজাহারভুক্ত এক আসামিকে ছিনিয়ে নিয়ে গেছেন স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মী। গত ১৯ নভেম্বর সংঘটিত একটি মারামারির ঘটনায় এজাহারভুক্ত আসামি ছিলেন শ্রীনগর উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক তরিকুল ইসলাম। ১০ জানুয়ারি পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে। এরপর স্থানীয় বিএনপির প্রায় ২০০ নেতাকর্মী থানা ঘেরাও করে রাত ১০টার দিকে ‘জিয়ার সৈনিক এক হও, লড়াই করো’ স্লোগান দিয়ে আসামি তরিকুলকে হাজত থেকে বের করে নিয়ে যান। তবে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ঘটনা অস্বীকার করেছেন। তিনি এও বলেছেন, ‘থানা থেকে আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা বিশ্বাসযোগ্য নয়। এমন হতে পারে, যে আসামিকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছিল, সে রাস্তা থেকে পালিয়ে গেছে।’ 
রাজনৈতিক নেতাকর্মীর কাছ থেকে মানুষ আইনের প্রতি শ্রদ্ধা ও সহনশীল আচরণ প্রত্যাশা করে। গ্রেপ্তার যুবদল কর্মীকে মুক্ত করার সোজা পথ ছিল পরদিন আদালত থেকে তাঁকে জামিনে ছাড়িয়ে আনা। স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মী সে সোজা পথে না হেঁটে পেশিশক্তি ব্যবহারের বাঁকা পথেই হেঁটেছেন। এ ধরনের ঘটনা আমরা ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের শাসনামলে দেখেছি। তখন থানা-পুলিশ ছিল ক্ষমতাসীনদের হুকুমবরদার। তাদের হুকুমে পুলিশ নড়াচড়া করত। সেই  যুগাবসানের পর দেশবাসী এই ভেবে স্বস্তি পেয়েছিল যে, এবার দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হবে; মানুষ ন্যায়বিচার পাবে। বাস্তবতা ভিন্ন।

গত ১০ জানুয়ারি জাতীয় জাদুঘরে এক অনুষ্ঠানে দেশের বর্ষীয়ান বুদ্ধিজীবী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড.

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, ‘সরকারের পতন হয়, কিন্তু ব্যবস্থার পতন হয় না। সেটা আগের মতোই রয়ে যাচ্ছে। সত্য কথা তো এই যে, অপরাধীদের শাস্তি হয় না। অসুস্থ সমাজে বাস করছি আমরা।’ জাতির বিবেক ও জাতীয় মুরুব্বি হিসেবে সর্বজনস্বীকৃত সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী অবান্তর কথা বলেননি; এ বিষয়ে দ্বিমতের অবকাশ নেই। লক্ষণীয়, তিনি যখন রাজধানীতে ওসব কথা বলছিলেন, ঠিক তখনই তাঁর জন্মস্থান বিক্রমপুরের শ্রীনগরে থানা হাজত থেকে আসামি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে।

এ দেশের শান্তিপ্রিয় মানুষের প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটিয়ে গত বছরের ৫ আগস্ট পতন হয়েছে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারের। ১৫ বছরের একাধিপত্যে আওয়ামী লীগ হয়ে উঠেছিল হাতি সমতুল্য। কোনো রাজনৈতিক দলই তাদের টলাতে পারছিল না। এমন সময়ে ঠোঁটে কঙ্কর (নুড়ি পাথর) নিয়ে আবাবিল পাখির মতো হাজির হয় বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীরা। নিমেষেই ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় আওয়ামী লীগের হাতিবাহিনী।

আওয়ামী লীগের পতনের পর মানুষ যখন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছিল, তখনই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসতে থাকে নতুন উপদ্রবের খবর। আওয়ামী লীগের অনুপস্থিতিতে দেশের বড় রাজনৈতিক শক্তি বিএনপির বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মী একের পর এক ন্যক্কারজনক ঘটনার জন্ম দিতে থাকে। বাসস্ট্যান্ড, লেগুনাস্ট্যান্ড, লঞ্চঘাট, মাছঘাট, মাছের আড়ত, রাজধানীর ফুটপাত, গ্রাম-গঞ্জের বাজার ও রাস্তার পাশের টং দোকান– সবখানে তারা থাবা বিস্তার করে লিপ্ত হয় দেদার চাঁদাবাজিতে। পত্রপত্রিকায় সেসব খবর প্রকাশিত হতে থাকে। দলটির একজন যুগ্ম মহাসচিব (নারী) আওয়ামী লীগের পতনের এক দিন পরেই বরিশালে একটি পুকুর দখল করে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেন। এসব ঘটনায় প্রমাদ গোনেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি কঠোর অবস্থান নেন এসব অপকর্মের বিরুদ্ধে। বরিশালের ওই নেত্রীর দলীয় পদ স্থগিতসহ গত পাঁচ মাসে সারাদেশে দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের প্রায় দেড় হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তারপরও তাদের অপ্রতিরোধ্য গতি থামানো যাচ্ছে না। কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন, সরকারে না আসতেই দলের নেতাকর্মীকে নিয়ন্ত্রণ করতে পাঁচ মাসে যদি দেড় হাজার কর্মীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হয়, তাহলে সরকারে এলে পাঁচ বছরে কতজনকে সাংগঠনিক ব্যবস্থার গিলোটিনে দিতে হবে? তখন আবার ‘ঠগ বাছতে গাঁ উজাড়’ হবে না তো?

শ্রীনগর থানায় যে ঘটনাটি ঘটেছে, তা দেখে ওই এলাকার পরিচিত অনেকেই ফোন করে বলেছেন, ‘আমরা রাজনৈতিক দলের অনেক অপকর্মের সাক্ষী। থানা থেকে আসামি ছিনতাইয়ের ঘটনা আমাদের এলাকায় আগে কখনও ঘটেনি।’ ‘এটা কীসের আলামত’– এ প্রশ্নও করেছেন তারা। তাদের সে প্রশ্নের জুতসই কোনো জবাব দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব হয়নি। আমার শুধু মনে হচ্ছে প্রখ্যাত সাহিত্যিক সৈয়দ মুজতবা আলীর কথা। তাঁর বিখ্যাত ভ্রমণকাহিনি ‘দেশে-বিদেশে’ গ্রন্থে উল্লেখ আছে– প্রচণ্ড জ্বরে আক্রান্ত মুজতবা আলীকে ‘কুইনাইন’ খাওয়ার পরামর্শ দিলেন তাঁর এক বন্ধু। জ্বরে কাতরাতে কাতরাতে সৈয়দ মুজতবা আলী বললেন, ‘কুইনাইন তো জ্বর সারাবে, কিন্তু কুইনাইন সারাবে কে?’ কুইনাইন প্রচণ্ড তেতো, ম্যালেরিয়া জ্বরের ওষুধ। 

দুঃশাসন-দুরাচারিত্বে দেশবাসীকে অতিষ্ঠ করেছিল আওয়ামী লীগ। গণঅভ্যুত্থান তাদের হটিয়ে মুক্তি দিয়েছে জাতিকে। এখন যাদের আবির্ভাব ঘটতে যাচ্ছে এবং তারা হাতের যে পেশি দেখাতে শুরু করেছেন, তা থেকে পরিত্রাণের উপায় কী? 

লেখক: সাংবাদিক ও রাজনীতি বিশ্লেষক 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র জন ত ন ত কর ম র জন ত ক ব যবস থ ব এনপ র শ র নগর কর ম র র পতন র ঘটন সরক র আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ চলবে: হামাস

স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়ার প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া এক ঘোষণাপত্রের অস্ত্র ত্যাগের আহ্বানের জবাবে সংগঠনটি এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।

বৃহস্পতিবার হামাসের সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দখলদারির অবসান এবং জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সম্পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ থামবে না তারা।

মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে (এই উপত্যকায়) তার শাসনের অবশ্যই অবসান ঘটাতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের সঙ্গে এটি সংগতিপূর্ণ।’

সৌদি আরব, কাতার, ফ্রান্স ও মিসরসহ ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ ঘোষণাপত্রটি সমর্থন করেছে। এটি ‘দ্য নিউইয়র্ক’ ঘোষণাপত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

বৃহস্পতিবার আলাদা এক বিবৃতিতে প্রতি শুক্রবার, শনিবার ও রোববার বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও তাদের মিত্র দেশগুলোর দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা।

অনাহারে মৃত্যু ১৫৪

গাজায় কর্মরত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, উপত্যকাটিতে অনাহারে আরও দুই শিশু এবং এক তরুণ মারা গেছে। এ নিয়ে সেখানে অনাহারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫৪ জনে। তাদের মধ্যে শিশু ৮৯টি।

গাজায় প্রায় ২১ লাখ মানুষের বসবাস। উপত্যকাটিতে গত মার্চ থেকে নতুন করে অবরোধ শুরু করে ইসরায়েল। ফলে সেখানে ত্রাণবাহী কোনো ট্রাক প্রবেশ করতে পারছিল না। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সম্প্রতি কিছুদিন ধরে গাজায় সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইসরায়েল। এই ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য।

ত্রাণ নিতে প্রাণহানি ১৩৭৩

জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, গাজায় গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ আনতে গিয়ে মোট ১ হাজার ৩৭৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৮৫৯ জন মারা গেছেন বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে। গত মে মাসের শেষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাটি ইসরায়েলি সেনাদের সহায়তায় গাজার কয়েকটি স্থানে ত্রাণ দিচ্ছে।

বাকি ৫১৪ জন মারা গেছেন ত্রাণবাহী ট্রাকের আশপাশে। তাঁরা ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অধিকাংশই ইসরায়েলের সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।

আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকালে গাজায় অন্তত আরও ৪২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ত্রাণ আনতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। এই নিয়ে প্রায় ২২ মাসের সংঘাতে গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের হামলা নিহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার ৩৩২ জন।

গাজায় স্টিভ উইটকফ

শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গাজা সফর করেছেন। তিনি উপত্যকাটির রাফা এলাকায় জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রও ঘুরে দেখেন। এ সময় ইসরায়েলে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হুকাবি তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাজায় ছিলেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে উইটকফ নিজেই এই কথা জানিয়েছেন। আগের দিন তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উইটকফ বলেছেন, ‘মাঠের পরিস্থিতি বুঝতে ও তথ্য সংগ্রহ করতে আমরা গাজায় গিয়েছিলাম। গাজার মানবিক পরিস্থিতির একটি স্পষ্ট ধারণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পৌঁছে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য, যাতে করে গাজাবাসীর জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছাতে পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করা যায়।’

গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশেষ দূত ও আবাসন খাতের সাবেক আইনজীবী উইটকফের আন্তর্জাতিক নীতি ও মানবিক সহায়তা-সংক্রান্ত কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তা সত্ত্বেও তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সংকট সমাধানের চেষ্টার পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধেও কূটনীতি চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ