২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয়েছে রোববার। এর পর মেধা ও কোটা বিতর্কে তোলপাড় শুরু হয়েছে। কোটার প্রার্থী লিখিত পরীক্ষায় ৪১ দশমিক ৬ নম্বর তুলে ভর্তির সুযোগ (চান্স) পেলেও, মেধায় ৭১ নম্বর পেয়েও সুযোগ মেলেনি। 

স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দেশের ৫৭টি সরকারি মেডিকেল এবং ডেন্টাল কলেজে আসন সংখ্যা ৫ হাজার ৩৮০। পরীক্ষায় অংশ নিতে আবেদন করেছিলেন ১ লাখ ৩৫ হাজার ২৫৩ প্রার্থী। প্রতি আসনের বিপরীতে প্রার্থী ছিলেন ২৫ দশমিক ১৪ জন। গত বছর ভর্তি পরীক্ষায় দুই শতাংশ আসন মুক্তিযোদ্ধা এবং বীরাঙ্গনার সন্তানসন্ততির জন্য সংরক্ষিত ছিল। এবার সন্ততি, তথা নাতি-নাতনির জন্য কোটা নেই। তবে মুক্তিযোদ্ধা এবং বীরাঙ্গনার সন্তানদের জন্য ৫ শতাংশ কোটা রাখা হয়। এতে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য আসন সংরক্ষণ করা হয় ২৬৯টি। পার্বত্য এলাকার বাসিন্দা এবং অন্যান্য এলাকার উপজাতিদের জন্য ২০টি আসন সংরক্ষিত। রাঙামাটি মেডিকেল কলেজে ১৯টি আসন সংরক্ষিত উপজাতির জন্য। কোটার ৩০৮ আসনের বিপরীতে ভর্তি পরীক্ষায় পাস করেছেন ১৯৩ জন। বাকি ১১৫টি আসন পূরণ করা হবে সাধারণ মেধা থেকে।

অন্যান্য বছরের মতো এবারও মেডিকেলে নৈর্ব্যক্তিক ১০০ নম্বরের পরীক্ষায় পাস নম্বর ছিল ৪০। অর্থাৎ কোটার প্রার্থী পাস নম্বর পেলেই ডাক্তারি পড়ার সুযোগ পেয়েছেন। সাধারণ শিক্ষার্থীদের যারা এসএসসি ও এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছেন, তারা লিখিত পরীক্ষায় ৭২ নম্বরের কম পেলে ভর্তি সুযোগ পাচ্ছেন না। ফল প্রকাশের পর এ খবর সামনে এলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনার ঝড় ওঠে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা একে একে কোটার বিরুদ্ধে লিখতে শুরু করেন। বিক্ষোভ হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা কলেজে। 

সরকারি চাকরিতে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহালের প্রতিবাদেই গত জুলাইয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে আন্দোলন শুরু হয়েছিল; পরবর্তী সময়ে যা অভ্যুত্থানে রূপ নিয়ে পতন ঘটায় শেখ হাসিনার সাড়ে ১৫ বছরের কর্তৃত্ববাদী শাসনের। ২১ জুলাই আপিল বিভাগ রায় দেন, সরকারি চাকরিতে সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা থাকবে। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, বিশেষ চাহিদা সম্পন্নদের জন্য ২ শতাংশ কোটা নির্ধারণ করা হয়। 

স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর এই রায়ের আলোকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ২৩ জুলাইয়ের স্মারক অনুযায়ী এবারের ভর্তি পরীক্ষায় মুক্তিযোদ্ধা কোটা ২ থেকে বাড়িয়ে ৫ শতাংশ করেছে। যদিও আদালত এবং সরকারের প্রজ্ঞাপন ছিল সরকারি চাকরির জন্য। ভর্তি পরীক্ষায় কেন একই কোটা পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছে– এ বিষয়ে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের বক্তব্য জানা যায়নি। 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা.

রুবীনা ইয়াসমিন সমকালকে বলেন, আগে সাধারণ আসনের মধ্যে জেলা কোটা ছিল। এবার তা বাদ দেওয়া হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কোটা ৫ শতাংশ। এ কোটায় কত শিক্ষার্থী আবেদন করেছিলেন, তা জানাতে পারেননি অতিরিক্ত মহাপরিচালক। 

আওয়ামী লীগ সরকারের সর্বশেষ তালিকা অনুযায়ী, মুক্তিযোদ্ধা ২ লাখ ৮ হাজার ৮৫১ জন। গত ২৮ নভেম্বরের হিসাব অনুযায়ী জীবিত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ৯১ হাজার ৯৯৮। ন্যূনতম হিসেবে একজন মুক্তিযোদ্ধার বয়স কমপক্ষে ৬৬ বছর। মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার্থীর বয়স ১৭ থেকে ১৯ বছর। সে হিসাবে মুক্তিযোদ্ধাদের এ বয়সী সন্তানের সংখ্যা খুব বেশি নয়, দাবি করে একটি অসমর্থিত সূত্র সমকালকে জানিয়েছে, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় আবেদনকারী ছিলেন কমবেশি ৩০০ জন। আসনের চেয়ে আবেদনকারী সংখ্যা ছিল কম। আবার কয়েকজন ৭১ নম্বরের বেশি পেয়ে মেধা তালিকায় রয়েছেন। ফলে কোটার প্রার্থীদের যারাই পাস করেছেন, তারাই মেডিকেলে পড়ার সুযোগ পাচ্ছেন। 

একে ‘বৈষম্য’ আখ্যা দিয়ে জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক এবং জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম ফেসবুকে লিখেছেন, ‘ভর্তি পরীক্ষায় এখনও কীসের কোটা? আজ থেকেই এই শোষণের শেষ হতে হবে।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক মাহিন সরকার লিখেছেন, ‘৪১ পেয়ে না-কি মেডিকেলে চান্স পেয়েছে কোটার জোরে, অথচ ৭৩ পেয়েও চান্স পায়নি! ছোটরা দাঁড়িয়ে যাও, পাশে থাকবো ইনশাআল্লাহ। গণঅভ্যুত্থানের সূচনা তো কোটা থেকেই।’

মেডিকেলসহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভর্তি পরীক্ষায় কোটা বাতিল এবং মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল পুনঃপ্রকাশের দাবিতে আজ সোমবার দুপুর ১২টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচির ডাক দিয়েছেন পরীক্ষার্থীরা। 

পাসের হার ৪৬%, এগিয়ে মেয়েরা

রোববার বিকেলে সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। প্রাথমিকভাবে ৫ হাজার ৩৭২ পরীক্ষার্থী ৩৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির জন্য নির্বাচিত হয়েছেন। এর আগে শুক্রবার পরীক্ষা হয়। এবারের পরীক্ষায় ১ লাখ ৩১ হাজার ৭২৯ পরীক্ষার্থী অংশ নিয়ে পাস করেছেন ৬০ হাজার ৯৬ জন। পাসের হার ৪৬ শতাংশ। তবে ছাত্রদের চেয়ে ফলে ভালো করেছেন ছাত্রীরা। ৪০ নম্বর পেয়ে পাস করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৩৭ হাজার ৯৩৬ জন বা ৬৩ শতাংশ ছাত্রী এবং ২২ হাজার ১৫৯ জন বা ৩৭ শতাংশ ছাত্র।

সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি কার্যক্রম আগামী ২ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়ে চলবে ৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এর পর তিন পর্যায়ে এক সরকারি কলেজ থেকে অন্য সরকারি কলেজে মাইগ্রেশনের সুযোগ পাবেন শিক্ষার্থীরা। সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি শেষে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি শুরু হবে। দেশে মোট মেডিকেল কলেজ ১০৪টি। এর মধ্যে ৩৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজে আসন ৫ হাজার ৩৮০টি। অন্যদিকে ৬৭টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে আসন সংখ্যা ৬ হাজার ২৯৩।

প্রথম হয়েছেন সুশোভন

২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে এমবিবিএস প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষার সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে প্রথম হয়েছেন খুলনা মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী সুশোভন বাছাড়। তিনি ভর্তি পরীক্ষায় সর্বোচ্চ ৯০.৭৫ নম্বর পেয়েছেন।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ম ড ক ল কল জ পর ক ষ র থ পর ক ষ য় দ র জন য ব সরক র প স কর কর ছ ন আসন স আসন র

এছাড়াও পড়ুন:

যশোরে জিআই পণ্য খেজুর গুড় তৈরির রস সংগ্রহে গাছ প্রস্তুতির উদ্বোধন

যশোরের ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য খেজুর গুড় তৈরির রস সংগ্রহের জন্য খেজুরগাছ প্রস্তুতের (রস সংগ্রহের উপযোগী করা) আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়েছে। আজ রোববার দুপুরে চৌগাছা উপজেলার হায়াতপুর গ্রামে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহিনুর আক্তার।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোরের উপপরিচালক মোশাররফ হোসেন বলেন, রস-গুড় সংগ্রহের জন্য গত বছরের তুলনায় এ বছর বেশি খেজুরগাছ প্রস্তুত করা হবে। এ বছর জেলায় অন্তত তিন লাখের বেশি গাছ প্রস্তুত করা হবে। যশোরে খেজুরের রস ও গুড়ের ১০০ কোটির বেশি টাকার বাজার রয়েছে। অন্তত ছয় হাজার কৃষক এই পেশায় যুক্ত।

যশোরের খেজুর গুড় জিআই পণ্য হলো যেভাবে

২০২২ সালে চৌগাছার তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (বর্তমানে যশোরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট) ইরুফা সুলতানা খেজুর গুড়ের ঐতিহ্য সংরক্ষণে খেজুর গুড়ের মেলা, গাছিদের প্রশিক্ষণ, গাছি সমাবেশ, গাছিদের সমবায় সমিতি গঠন, খেজুরগাছ রোপণ ও সংরক্ষণের উদ্যোগ নেন। একই বছর জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতির জন্য যশোরের খেজুর গুড়ের আবেদন করেন তিনি। তাঁর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৪ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সেটি জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পায়।

শতকোটি টাকার বাজার ধরতে ব্যস্ত গাছিরা

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, যশোরের প্রায় ছয় হাজার গাছি খেজুরগাছের রস থেকে পাটালি গুড় উৎপাদনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ইতিমধ্যে খেজুরগাছ প্রস্তুতির কাজ শুরু হয়েছে। গাছ প্রস্তুতে ব্যস্ত সময় পার করছেন গাছিরা। খেজুরগাছ সংরক্ষণ, রোপণ, গাছিদের প্রশিক্ষণ, প্রণোদনাসহ নানাভাবে সহযোগিতার মাধ্যমে গুড় উৎপাদন বৃদ্ধি ও বাজার সম্প্রসারণে কাজ করছে কৃষি বিভাগ, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোর কার্যালয়ের তথ্যমতে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে যশোর জেলায় খেজুরগাছের সংখ্যা ২৩ লাখ ৩০ হাজার ৬৯৫টি। এর মধ্যে রস আহরণের উপযোগী গাছের সংখ্যা ৩ লাখ ৭ হাজার ১৩০টি। গাছ থেকে ৩ কোটি ৭১ লাখ ৩ হাজার লিটার রস ও ২ হাজার ৭৪২ মেট্রিক টন গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বাজারদর অনুযায়ী প্রতি লিটার রসের দাম ৩৫ টাকা ও গুড়ের কেজি ৩৪০ টাকা। সেই হিসাবে রস ও গুড়ের বাজার দর ৯৯ কোটি ৬৮ লাখ টাকা।

চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রামের গাছি আবদুল কুদ্দুস বলেন, ‘আমার দাদা খেজুরগাছের রস থেকে পাটালি গুড় বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। দাদার সঙ্গে বাবাও যুক্ত ছিলেন। বাবার পেশায় আমিও যুক্ত হয়েছি। বাবা আর আমি এবার ৩০০টি খেজুরগাছ থেকে রস-গুড় তৈরির প্রস্তুতি নিচ্ছি। গতবছর ভালো দাম পেয়েছি। এবারও ভালো দাম পাব বলে আশা করি।’

গাছিরা জানান, কার্তিক মাস শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই খেজুরগাছ ছেঁটে রস ও গুড় তৈরির প্রস্তুতি শুরু করেন তাঁরা। শীত মৌসুমে এ অঞ্চলের কৃষকদের অন্যতম আয়ের উৎস এটি। এখানকার কারিগরদের দানা পাটালি তৈরির সুনাম রয়েছে। পাটালি ও ঝোলা গুড় তৈরি ছাড়াও চাষিরা শীতের ভোরে ফেরি করে কাঁচা রস বিক্রি করেন। কাঁচা রস প্রতি মাটির ভাঁড় ১৫০-২০০ টাকা, দানা গুড় ৩৫০-৪০০ টাকা আর পাটালি প্রতি কেজি ৪৫০-৬০০ টাকায় বিক্রি হয়।

অনলাইন প্ল্যাটফর্ম কেনারহাটের উদ্যোক্তা তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘গত বছর আমাদের কাছে ভোক্তার চাহিদা ছিল সাড়ে ছয় হাজার কেজি পাটালি গুড়। সরবরাহ করতে পেরেছিলাম দুই হাজার কেজি। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অতিবৃষ্টি, শীত কম হওয়ায় চাহিদা অনুযায়ী পাটালি গুড় সরবরাহ করতে পারিনি। এ বছর ইতিমধ্যে অর্ডার আসতে শুরু করেছে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা
  • যশোরে জিআই পণ্য খেজুর গুড় তৈরির রস সংগ্রহে গাছ প্রস্তুতির উদ্বোধন