জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতন, পরে অন্তর্বর্তী সরকারের দেশ পরিচালনা– এর কিছুই অনুধাবন করতে পারছেন না আওয়ামী লীগের শীর্ষ নীতিনির্ধারক নেতা তোফায়েল আহমেদ। স্ট্রোক-পরবর্তী শরীরের একাংশ প্যারালাইজড হয়ে যাওয়া ও স্মৃতিভ্রষ্ট হওয়ায় তিনি জাগতিক কোনো কিছু বুঝে ওঠার মতো পরিস্থিতিতে নেই। কাউকে চিনতেও পারেন না তিনি।

তোফায়েল আহমেদের জামাতা ও সাবেক এমপি তৌহিদুজ্জামান তুহিন সমকালকে জানিয়েছেন, স্ট্রোকে আক্রান্ত তোফায়েল আহমেদ চলমান কোনো কিছুই বোঝার মতো পরিস্থিতিতে নেই। গণঅভ্যুত্থানের পর তাঁর বিরুদ্ধে ভোলায় মামলা হয়েছে। স্থগিত করা হয়েছে ব্যাংক হিসাবও। কিন্তু এসব তাঁকে জানানোর কিছু নেই।

ডা.

তৌহিদুজ্জামান তুহিন বলেছেন, তোফায়েল আহমেদকে অধিকাংশ সময় বিছানায় শুয়ে থাকতে হচ্ছে। তিনি প্রতিদিন গড়পড়তা প্রায় ১৮ ঘণ্টাই ঘুমিয়ে থাকেন। হাঁটতে পারেন না। কাউকে চেনেনও না। স্মৃতিশক্তি নেই। এখন রাজধানীর বনানীর বাসায় থাকলেও প্রায় সময়ই তাঁকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে দেশের বাইরে নেওয়ার কোনো পরিস্থিতিও নেই। 
তোফায়েল আহমেদের একমাত্র মেয়ে তসলিমা আহমেদ জামান মুন্নী ও তাঁর স্বামী তৌহিদুজ্জামান তুহিন পেশায় চিকিৎসক। মূলত তারাই তোফায়েল আহমেদকে সার্বক্ষণিক দেখভাল করছেন। তোফায়েল আহমেদের পরিবারের কয়েকজন সদস্য জানিয়েছেন, প্রায় তিন বছর আগে প্রথম দফায় মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের পর করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন বর্ষীয়ান এই নেতা। এরপর তিনি আরেক দফায় করোনা আক্রান্ত হন। সেই সঙ্গে কমপক্ষে দু’দফায় তাঁর মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের ঘটনা ঘটে। একসময় তিনি স্মৃতিশক্তি হারান। 

বর্তমানে তোফায়েল আহমেদের শরীরের বাঁ হাত ও পা একেবারেই অবশ হয়ে আছে। ফলে তিনি চলাফেরায় একেবারেই অক্ষম। মাঝেমধ্যে গৃহকর্মীরা হুইলচেয়ারে বসিয়ে ঘুরিয়ে আনলেও সেটি বোঝার শক্তি নেই তাঁর। তিনি কথাও বলতে পারেন না। খাবার কম খান। ফলে তিনি বেশ শুকিয়ে গেছেন। আত্মীয়স্বজন ও পরিচিতদের কেউ দেখতে এলে শুধুই নির্বাক তাকিয়ে থাকেন।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তাঁর বিরুদ্ধে ভোলায় দাঙ্গা-হাঙ্গামা, ভাঙচুর, অস্ত্র প্রদর্শন ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ এনে মামলা হয়েছে। বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) তাঁর ব্যাংক হিসাব স্থগিত করেছে। 

 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ত ফ য় ল আহম দ ত ফ য় ল আহম দ র পর স থ ত

এছাড়াও পড়ুন:

শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরে মামলা মোকাবিলার চ্যালেঞ্জ মির্জা ফখরুলের

গণঅভ্যুত্থানের মুখে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরে মামলা মোকাবিলার চ্যালেঞ্জ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। 

মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) বিকালে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার চিলারং ইউনিয়নে দলীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে গণসংযোগের সময় দেওয়া বক্তব্যে এই আহ্বান রাখেন তিনি।

শেখ হাসিনার শাসন আমলে বিএনপি নেতাকর্মীদের নির্যাতনের শিকার হওয়ার কথা তুলে ধরেন মির্জা ফখরুল। গুম, খুন, ভিত্তিহীন মামলা, লুটপাট, টাকা পাচার, বাকস্বাধীনতা হরণ ও ভোট চুরিসহ নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেন তিনি। 

আরো পড়ুন:

জুলাই গণহত্যা: শেখ হাসিনাসহ ৪০৮ জনের বিরুদ্ধে আরেক মামলা

হাসিনা-রেহানাসহ ২২ জনের গ্রেপ্তার-সংক্রান্ত প্রতিবেদন ১২ মে

শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‍“আমাদের নেতাকর্মীদের গুম করা হয়েছে। লাখ লাখ নেতাকর্মীকে মিথ্যা মামলা দিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে, তাদের ঘরে থাকতে দেননি আপনি। আমরা তো কোথাও পালিয়ে যাইনি। আদালতে মিথ্যা মামলা আইনের মাধ্যমে ফেইস (মোকাবিলা) করেছি। উকিল ধরে জামিন নিয়েছি। আপনি (শেখ হাসিনা) পালিয়ে আছেন কেন? আপনিও মামলা লড়েন। আপনি দেশে এসে দাড়ান না দেখি।”

জনগণের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আপনারা অনেকে মনে করেন শেখ হাসিনা আবারো দেশে ফিরে আসবেন। তিনি তো ১৫ বছর দেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তার বাবা শেখ মুজিবুর রহমান একজন বিখ্যাত মানুষ ছিলেন। তার তো দেশ থেকে পালানোর কথা ছিল না। তিনি পালালেন কেন? কারণ তিনি একজন ডাইনি ছিলেন। জনগণের ওপর এমন নির্যাতন করেছেন যে, তিনি পালাতে বাধ্য হয়েছেন। জনগণ যদি সেদিন তাকে পেত, তাহলে ছিঁড়ে খেত।” 

দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, “হাসিনা দেশে ফিরে রাজনীতি করলে আমাদের কিছু করতে হবে না, জনগণই তাকে দেখে নেবে।” 

আওয়ামী লীগের শাসনামলের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, “বিএনপির নেতাকর্মীরা যেন আওয়ামী লীগের মতো অন্যায় না করে; এতে মানুষ ভালোবাসবে না। দলের কোনো নেতাকর্মীরা অন্যায় করলে যেন জেলার নেতারা তাদের শক্ত হাতে দমন করেন; তারা যেন অন্যায়কারীদের পুলিশের হাতে তুলে দেন। তাই অপকর্ম বন্ধ করুন, না হলে আওয়ামী লীগের মতো অবস্থা হবে।” 

ত্রোদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দৃষ্টি রেখে জনসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি। মির্জা ফখরুলসহ দলটির শীর্ষ নেতারা সভা-সমাবেশ করছেন। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণের সুযোগ রাখা, না রাখা নিয়ে ব্যাপক মতপার্থক্য রয়েছে; সেই সঙ্গে আইনি ঝক্কিও সামনে আসছে।

গণহত্যার দায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের একাধিক মামলায় আসামি করা হয়েছে শেখ হাসিনাকে। এ ছাড়া কয়েক শত ফৌজদারি মামলায় তিনি আসামি। অনেক মামলায় তাকে গ্রেপ্তারে পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। তবে ভারতের আশ্রয়ে থাকা শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরানোর কোনো নিশ্চয়তা এখনো তৈরি হয়নি। 

গণঅভ্যুত্থানের মুখে ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে ছোট বোন রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে ভারতে চলে যান শেখ হাসিনা। সেদেশে উচ্চনিরাপত্তা শৃঙ্খলে বসবাস করছেন বলে আন্তর্জাতিক সাংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়ে থাকে। সেখান থেকে দেশে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে অনলাইনে তার কথোপকথনের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে, যা নিয়ে অস্বস্তির কথা ভারতকে জানিয়ে রেখে অন্তর্বর্তী সরকার। 

ঢাকা/মঈনুদ্দীন/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সংস্কারের একাল-সেকাল
  • তরুণ সমাজ দেশপ্রেমে উত্তীর্ণ হয়েছে, বাংলাদেশ উচ্চস্থানে উন্নীত হবে : ডিসি
  • শামীম ওসমানের ছেলে অয়নের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা
  • শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরে মামলা মোকাবিলার চ্যালেঞ্জ মির্জা ফখরুলের
  • গণঅভ্যুত্থানের তরুণ নেতৃত্ব ও রাজনীতিতে প্রাণপ্রবাহ
  • জুলাই বিপ্লবী মেয়েরা আজ নিরাপদ বোধ করছে না: ফরহাদ মজহার
  • আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানোর ঘটনায় জড়িত দুজন শনাক্ত  
  • ড. ইউনূস অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র দেননি, আমাদের হাতে বিপ্লবের দলিল নেই: ফরহাদ মজহার
  • ড. ইউনূস গণঅভ্যুত্থানের ফসল, নেতা নন: ফরহাদ মজহার
  • গণঅভ্যুত্থানে শহীদ রিজভীর ভাইকে কুপিয়ে জখম, গ্রেপ্তার ৩