‘আমার বাবা কারও সঙ্গে কোনো দিন দুর্ব্যবহার করেনি। কারও সঙ্গে কথা কাটাকাটিও হয়নি তার। আমিও কোনো দিন কারও ক্ষতি করিনি। ওরা কেন আমার ছেলেকে এভাবে হত্যা করলো। কার কাছে বিচার দেবো আমি?’- এসব কথা বলছিলেন গুলিতে নিহত খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র অর্ণবের বাবা নীতিশ কুমার সরকার।

গতকাল শুক্রবার রাত ৯টার দিকে খুলনা নগরীর তেঁতুলতলা মোড় গুলি করে হত্যা করা হয় খুবি ছাত্র অর্ণব কুমার সরকারকে (২৬)। তিনি খুবির ব্যবসায় প্রশাসন ডিসিপ্লিনের মাস্টার্সের ছাত্র। অর্ণব সোনাডাঙ্গা থানার আবু আহম্মেদ সড়কের বাসিন্দা ঠিকাদার নীতিশ চন্দ্র সরকারের ছেলে।

অর্ণবকে হত্যার ঘটনায় গতকাল রাতভর নগরীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালায় সোনাডাঙ্গা থানা পুলিশ। অভিযানে সন্দেহভাজন ৩ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়। দিনভর তাদেরকে থানায় রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও এখন পর্যন্ত তেমন কোনো তথ্য মেলেনি। তবে পুলিশ তাদের নাম-পরিচয় প্রকাশ করছে না। এ ঘটনায় হত্যা মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে আজ শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে অর্ণবের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। এরপর মরদেহ হস্তান্তর করা হলে নগরীর বানগরগাতী এলাকার বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। মরদেহ বাড়িতে পৌঁছানোর পর আহাজারি শুরু করেন অর্ণবের মা চন্ডী রানী, বাবা নীতিশ কুমার সরকার, চাচা তুষার সরকার ও সুকুমার সরকার, ছোট ভাই অনিক কুমার সরকারসহ আত্মীয় স্বজনরা। 

সোনাডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম জানান, হত্যার ঘটনায় সন্ধ্যা পর্যন্ত মামলা হয়নি। তবে তার পরিবারের সদস্যরা মামলা করতে আসবে বলে জানিয়েছে। 

খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (সাউথ) শেখ মনিরুজ্জামান মিঠু বলেন, অর্ণবের মেয়েলি কোনো বিরোধ ও তার বাবার ব্যবসায়িক কোনো বিরোধ আছে কিনা, কোনো সন্ত্রাসীর সঙ্গে দ্বন্দ্ব আছে কিনা সে বিষয়গুলো তারা খোঁজখবর নিয়ে দেখছেন। ঘটনাস্থলের আশপাশের ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। সেগুলো পর্যালোচনা করা হচ্ছে। হত্যার কারণ উদঘাটন ও হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের জন্য তারা সর্বাত্মক চেষ্টা করছেন।  

প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার রাতে নগরীর তেতুলতলা মোড়ে মোটরসাইকেলের ওপর বসে চা খাচ্ছিলেন অর্ণব। এসময় মোটরসাইকেলে করে আসা ১০ থেকে ১২ জনের একদল সন্ত্রাসী তাকে গুলি করে ও কুপিয়ে পালিয়ে যায়। স্থানীয় লোকজন তাকে বেসরকারি সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ক ম র সরক র নগর র

এছাড়াও পড়ুন:

শত্রুতার জেরে সাত গরুকে বিষ প্রয়োগের অভিযোগ, মারা গেছে ৩টি

গোপালগঞ্জে পূর্ব শত্রুতার জেরে খাবারের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে তিনটি গরু হত্যার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় আরো চারটি গরু অসুস্থ হয়ে পড়েছে। ফলে দুই কৃষক পরিবারের অন্তত পাঁচ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। গত শনিবার (১ নভেম্বর) মধ্যরাতে সদর উপজেলার সিংগারকুল পূর্বপাড়া গ্রামে ঘটনাটি ঘটে।

জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ ও পুলিশ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। কীভাবে গরুগুলো মারা গেছে তা খতিয়ে দেখতে নমুনা সংগ্রহ করেছে প্রাণিসম্পদ বিভাগ। পুলিশ বলছে, তারা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে।

আরো পড়ুন:

‎নামাজরত বাবাকে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ, ৩ পুলিশ আহত

গাইবান্ধায় ৩ জনকে পিটিয়ে হত্যা: মামলা দায়ের 

এলাকাসাসী জানান, সিংগারকুল পূর্বপাড়া গ্রামের দুই ভাই মো. রাসুল গাজী ও হাসিব গাজী কৃষি কাজ করে সংসার চালান। তারা খামার করে কয়েকটি গরু লালন-পালন করছেন। শনিবার মধ্যরাত সাড়ে ১২টার দিকে গরুর গোঙানির শব্দ শুনে পাশের বাড়ির এক আত্মীয় ছুটে গিয়ে ঘুম থেকে ডেকে তোলেন দুই ভাইকে। তারা স্থানীয় পশু চিকিৎসককে খবর দেন। সকাল হওয়ার আগেই তিনটি গরু মারা যায়। একই গোয়াল ঘরে থাকা একটি বড় ষাঁড়, একটি বাছুর ও অপর গোয়ালে থাকা দুটি ষাঁড় এখনো অসুস্থ। 

ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক মো. রাসুল গাজী জানান, শত্রুতা করেই খাবারের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে তাদের গরুগুলোকে হত্যা করা হয়েছে। রাতেই টের পেয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করলেও বাঁচানো যায়নি গরুগুলো। দুই ভাইয়ের আরো চারটি গরু অসুস্থ রয়েছে। এতে তাদের অন্তত ৫-৭ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। 

তিনি জানান, এ ঘটনায় সদর থানায় অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। দ্রুত দোষীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।

কারা তাদের গরু হত্যা করেছেন এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাসুল গাজী বলেন, “ঘর থেকে বের হয়ে কয়েকজনকে দৌঁড়ে যেতে দেখেছি। তাদের চেহারা দেখতে পারিনি। ফলে কাউকে চিনতে পারিনি।” 

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক হাসিব গাজী বলেন, ‍“কারো সঙ্গে আমাদের শত্রুতা থাকতেই পারে। এই অবলা পশুগুলো কার কী ক্ষতি করেছে। কোন অপরাধে এদের হত্যা করা হলো। আমরা সঠিক তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের গ্রেপ্তার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।”

এলাকাবাসী মো. ইমদাদ শেখ বলেন, “গত শনিবার রাতে বৃষ্টি হয়। এই সুযোগে গরুগুলোকে বিষ খাইয়ে হত্যা করা হয়েছে। আমরা চাই দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক।”

গোপালগঞ্জ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. গোবিন্দ চন্দ্র সর্দার বলেন, “সিংগারকুল পূর্বপাড়া গ্রামে কয়েকটি গরুকে বিষ খাওয়ানো হয় এমন খবর পেয়ে সকালে উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে যান। তিনি অসুস্থ গরুগুলোকে চিকিৎসা দেন। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, পয়জনজনিত কারণেই গরুগুলো মারা গেছে। মারা যাওয়া গরুর নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট পেলেই গরু তিনটির মৃত্যুর আসল কারণ জানা যাবে।”

গোপালগঞ্জ সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. শাহ আলম বলেন, “আমি ঘটনাস্থলে যাই। সেখানে গিয়ে তদন্ত শুরু করি। মারা যাওয়া গোরুগুলোর নমুনা সংগ্রহ ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

ঢাকা/বাদল/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ