অভিযুক্ত ধর্ষককে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে আদালতে পাঠালেন ওসি
Published: 26th, January 2025 GMT
ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্তকে আটকের পর মাত্র দেড় লাখ টাকার বিনিময়ে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে আদালতে পাঠানোর গুরুতর অভিযোগ উঠেছে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও থানার ওসি মো. আব্দুল বারীর বিরুদ্ধে।
রোববার (২৬ জানুয়ারি) ধর্ষিতা নিজে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি)’র কমপ্লেইন মনিটরিং সেলে লিখিত এ অভিযোগ (সিরিয়াল নং ৪৮) করেন।
অভিযোগে নির্যাতিতা ওই নারীর বাড়ি সোনারগাঁও উপজেলার ইলিয়াসদী উল্লেখ করে নিজেকে বিবাহিত এবং স্বামী প্রবাসে থাকার কথা জানান।
অভিযোগে তিনি জানান, তার স্বামী বিদেশ থাকার সুযোগে বিগত ৬ মাস যাবত একই গ্রামের শাহাবুদ্দিনের ছেলে লম্পট হাসান তাকে বিভিন্ন সময় কুপ্রস্তাব দিয়ে আসছিল। সে প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় তাকে দেখে নেবে বলে হুমকি দিয়ে আসছিল লম্পট হাসান।
এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৭ জানুয়ারি দুপুরে ওই নারী মোগরাপাড়া চৌরাস্তা যাওয়ার উদ্দেশ্যে গাড়ির জন্য রাস্তার পাশে অপেক্ষা করাকালীন একটি প্রাইভেটকার থেকে নেমে কিছু বুঝে উঠার আগেই তার নাকে-মুখে কিছু একটা স্প্রে করে তাকে জোর করে প্রাইভেটকারে তুলে অপহরণ করে নিয়ে যায় অভিযুক্ত হাসান।
দুই দিন পর জ্ঞান ফিরলে তিনি নিজেকে একটি অন্ধকার ঘরে দেখতে পান। পরে জানতে চাইলে হাসান তাকে নিয়ে সাভারে আছে বলে জানায়। এমন কথা শুনে অপহৃতা নারী কান্নাকাটি শুরু করলে হাসান তাকে ধাঁরালো ছুরি দিয়ে মেরে ফেলার ভয় দেখিয়ে উপর্যুপরি ধর্ষণ করে।
এভাবে টানা ৬ দিন লম্পট হাসান তাকে আটকে রেখে ধর্ষণ করে। পরে গত শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) ওই নারী কৌশলে সেখান থেকে পালিয়ে অপরিচিত এক ব্যক্তির মোবাইল থেকে তার ভাইকে ফোনে ঘটনা জানান এবং ঠিকানা দিলে তার ভাই সাভার থেকে তাকে উদ্ধার করে সোনারগাঁও নিয়ে আসেন।
ওই দিনই তিনি তার অভিভাবকদের নিয়ে সোনারগাঁও থানায় যান এবং সোনারগাঁও থানার ওসি এম এ বারীকে অপহরণ ও ধর্ষণের ঘটনায় মামলা নিতে অনুরোধ করেন।
কিন্তু ওসি বারী মামলা না নিয়ে তাকে একটি অভিযোগ করে যেতে বলেন। ধর্ষিতা যেনেও ওসি ওই নারীর মেডিকেল টেস্টের জন্য হাসপাতালে পাঠাননি এবং মামলার আবেদনটিও গ্রহণ করেননি।
পরে শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) রাতেও থানায় গিয়ে ওই নারী ওসিকে মামলাটি গ্রহণের জন্য আবারো অনুরোধ করেন। কিন্তু তাতেও তিনি (ওসি) কর্ণপাত করেননি। শুক্রবার রাতে বিবাদী লম্পট হাসানকে পুলিশ ধরে থানায় নিয়ে যায়।
খবর পেয়ে পরের দিন শনিবার সকালে ওই নারী সোনারগাঁও থানায় গিয়ে দেখেন ধর্ষণ মামলা না দেয়ার জন্য ওসি এম এ বারীকে ৩টি ৫০ হাজার টাকার বান্ডেলে মোট দেড় লাখ টাকা ঘুষ দিচ্ছে হাসানের লোক।
এমন কি ওই সময় নির্যাতিতা ওসিকে আসামি পক্ষের লোকদেরকে বলতে শুনেছেন, ‘পুলিশ যখন ধরে এনেছে এমনিতে তো আর ছাড়া যাবে না। হাসানকে তারা সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে কোর্টে চালান দেবেন, যাতে আসামিকে বিকালের মধ্যেই জামিন করিয়ে বাড়ি নিয়ে আসতে পারেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করেন।
নির্যাতিতা ওই নারী পুলিশের মহা-পরিদর্শক অভিযোগে উল্লেখ করেন, আসামির কাছ থেকে ঘুষ নিয়ে অবশেষে ধর্ষণ ও অপহরণ মামলার আসামিকে সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে চালান করেন ওসি এম এ বারী।
আসামিকে শনিবার সকালে কোর্টে চালান করলে বিকালেই খালাস পেয়ে বাড়ি ফিরে তার বিরুদ্ধে থানায় করা অভিযোগ তুলে নিতে হুমকি দিচ্ছে। নইলে হাসান সপরিবারে হত্যা করে গুম করার হুমকি দিয়েছে ধর্ষিতা ও তার পরিবারের সদস্যদের।
সোনারগাঁও থানার ওসি এম এ বারীর কাছে মুঠোফোনে জানতে চাইলে টাকার বিনিময়ে ধর্ষণ মামলা না নেওয়ার বিষয়টি মিথ্যা দাবি করেন এবং প্রমাণের জন্য ওই নারীর প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেন।
তিনি বলেন, ওই নারীর বিরুদ্ধে এর আগেও এই ধরনের ঘটনার তথ্য তিনি (ওসি) পেয়েছেন বলে দাবি করেন এবং সাংবাদিক হিসেবে মিথ্যা কিছু প্রকাশ না করার অনুরোধ করলে তিনি খুশি হবেন বলেও জানান।
এ সময় সাংবাদিকরা বস্তুনিষ্ঠ সংবাদই প্রচার করে জানালে, তার বিরুদ্ধে করা ওই নারীর মিথ্যা অভিযোগ (ওসির ভাষ্যমতে) বস্তুনিষ্ঠতার মধ্যে পড়ে না বলে দাবি করেন ওসি এম এ বারী।
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ অপহরণ এম এ ব র র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
নাইক্ষ্যংছড়ি থেকে সৌদিপ্রবাসীর অপহৃত শিশুসন্তান উদ্ধার
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির বাইশারী ইউনিয়ন থেকে অপহৃত সাত বছরের একটি শিশুকে উদ্ধার করা হয়েছে। অপহরণের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে রুহুল আমিন (২০) নামের একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
পুলিশ বলছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানের মধ্যে অপহরণকারীরা গতকাল শুক্রবার গহিন জঙ্গলে মায়ের কাছে শিশুটিকে দিয়ে পালিয়ে গেছে। তবে বাইশারী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) রাঙ্গাঝির এলাকার সদস্য মো. শাহাবুদ্দিনের দাবি, তিন লাখ টাকা মুক্তিপণের বিনিময়ে অপহরণকারীরা শিশুটিকে মায়ের কাছে দিয়ে গেছে।
বান্দরবানের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল করিম এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত একটার দিকে সৌদি আরবপ্রবাসী সাইফুল ও শাহেদা বেগম দম্পতির সাত বছরের ছেলেকে বাড়ি থেকে অপহরণ করা হয়। অপহরণের পর সন্ত্রাসীরা ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। ঘটনার পর থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করে। পুলিশের অভিযানে শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়েছে।
মুক্তিপণ দিয়ে শিশুটিকে মুক্তি দেওয়ার ব্যাপারে পুলিশের কাছে কোনো তথ্য নেই বলে একজন পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
বাইশারী ইউপির রাঙ্গাঝিরি এলাকার সদস্য মো. শাহাবুদ্দিন বলেন, মঙ্গলবার রাতে রাঙ্গাঝিরি পাড়ার শিশুটি অপহৃত হওয়ার পর পরিবার থেকে অপহরণকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছিল। অন্যদিকে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকরী বাহিনীও অভিযান পরিচালনা করেছে। গতকাল শুক্রবার শিশুটির মা রাঙ্গাঝিরি থেকে আলেক্ষ্যং এলাকায় যান। সেখান থেকে তাঁর অপহৃত সন্তানসহ বিকেলে ফিরে আসেন। সন্ত্রাসীরা প্রথমে ১০ লাখ টাকা দাবি করলেও পরে তিন লাখ টাকা নিয়ে ছেড়ে দিয়েছে বলে তাঁরা জেনেছেন।
বান্দরবানের পুলিশ সুপার শহিদুল্লাহ কাওছার বলেন, অভিযানের মুখে অপহৃত শিশুটিকে মুক্তি দিয়েছে সন্ত্রাসীরা। অপহরণের ঘটনার পর থেকে অভিযান চালানো হয়েছে। উদ্ধারের পর শিশুটির পরিবার মামলা করার জন্য থানায় গেছে।