ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্তকে আটকের পর মাত্র দেড় লাখ টাকার বিনিময়ে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে আদালতে পাঠানোর গুরুতর অভিযোগ উঠেছে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও থানার ওসি মো. আব্দুল বারীর বিরুদ্ধে। 

রোববার (২৬ জানুয়ারি) ধর্ষিতা নিজে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি)’র কমপ্লেইন মনিটরিং সেলে লিখিত এ অভিযোগ (সিরিয়াল নং ৪৮) করেন। 

অভিযোগে নির্যাতিতা ওই নারীর বাড়ি সোনারগাঁও উপজেলার ইলিয়াসদী উল্লেখ করে নিজেকে বিবাহিত এবং স্বামী প্রবাসে থাকার কথা জানান। 

অভিযোগে তিনি জানান, তার স্বামী বিদেশ থাকার সুযোগে বিগত ৬ মাস যাবত একই গ্রামের শাহাবুদ্দিনের ছেলে লম্পট হাসান তাকে বিভিন্ন সময় কুপ্রস্তাব দিয়ে আসছিল। সে প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় তাকে দেখে নেবে বলে হুমকি দিয়ে আসছিল লম্পট হাসান। 

এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৭ জানুয়ারি দুপুরে ওই নারী মোগরাপাড়া চৌরাস্তা যাওয়ার উদ্দেশ্যে গাড়ির জন্য রাস্তার পাশে অপেক্ষা করাকালীন একটি প্রাইভেটকার থেকে নেমে কিছু বুঝে উঠার আগেই তার নাকে-মুখে কিছু একটা স্প্রে করে তাকে জোর করে প্রাইভেটকারে তুলে অপহরণ করে নিয়ে যায় অভিযুক্ত হাসান। 

দুই দিন পর জ্ঞান ফিরলে তিনি নিজেকে একটি অন্ধকার ঘরে দেখতে পান। পরে জানতে চাইলে হাসান তাকে নিয়ে সাভারে আছে বলে জানায়। এমন কথা শুনে অপহৃতা নারী কান্নাকাটি শুরু করলে হাসান তাকে ধাঁরালো ছুরি দিয়ে মেরে ফেলার ভয় দেখিয়ে উপর্যুপরি ধর্ষণ করে। 

এভাবে টানা ৬ দিন লম্পট হাসান তাকে আটকে রেখে ধর্ষণ করে। পরে গত শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) ওই নারী কৌশলে সেখান থেকে পালিয়ে অপরিচিত এক ব্যক্তির মোবাইল থেকে তার ভাইকে ফোনে ঘটনা জানান এবং ঠিকানা দিলে তার ভাই সাভার থেকে তাকে উদ্ধার করে সোনারগাঁও নিয়ে আসেন। 

ওই দিনই তিনি তার অভিভাবকদের নিয়ে সোনারগাঁও থানায় যান এবং সোনারগাঁও থানার ওসি এম এ বারীকে অপহরণ ও ধর্ষণের ঘটনায় মামলা নিতে অনুরোধ করেন। 

কিন্তু ওসি বারী মামলা না নিয়ে তাকে একটি অভিযোগ করে যেতে বলেন। ধর্ষিতা যেনেও ওসি ওই নারীর মেডিকেল টেস্টের জন্য হাসপাতালে পাঠাননি এবং মামলার আবেদনটিও গ্রহণ করেননি। 

পরে শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) রাতেও থানায় গিয়ে ওই নারী ওসিকে মামলাটি গ্রহণের জন্য আবারো অনুরোধ করেন। কিন্তু তাতেও তিনি (ওসি) কর্ণপাত করেননি। শুক্রবার রাতে বিবাদী লম্পট হাসানকে পুলিশ ধরে থানায় নিয়ে যায়। 

খবর পেয়ে পরের দিন শনিবার সকালে ওই নারী সোনারগাঁও থানায় গিয়ে দেখেন ধর্ষণ মামলা না দেয়ার জন্য ওসি এম এ বারীকে ৩টি ৫০ হাজার টাকার বান্ডেলে মোট দেড় লাখ টাকা ঘুষ দিচ্ছে হাসানের লোক। 

এমন কি ওই সময় নির্যাতিতা ওসিকে আসামি পক্ষের লোকদেরকে বলতে শুনেছেন, ‘পুলিশ যখন ধরে এনেছে এমনিতে তো আর ছাড়া যাবে না। হাসানকে তারা সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে কোর্টে চালান দেবেন, যাতে আসামিকে বিকালের মধ্যেই জামিন করিয়ে বাড়ি নিয়ে আসতে পারেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করেন।

নির্যাতিতা ওই নারী পুলিশের মহা-পরিদর্শক অভিযোগে উল্লেখ করেন, আসামির কাছ থেকে ঘুষ নিয়ে অবশেষে ধর্ষণ ও অপহরণ মামলার আসামিকে সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে চালান করেন ওসি এম এ বারী।

আসামিকে শনিবার সকালে কোর্টে চালান করলে বিকালেই খালাস পেয়ে বাড়ি ফিরে তার বিরুদ্ধে থানায় করা অভিযোগ তুলে নিতে হুমকি দিচ্ছে। নইলে হাসান সপরিবারে হত্যা করে গুম করার হুমকি দিয়েছে ধর্ষিতা ও তার পরিবারের সদস্যদের।

সোনারগাঁও থানার ওসি এম এ বারীর কাছে মুঠোফোনে জানতে চাইলে টাকার বিনিময়ে ধর্ষণ মামলা না নেওয়ার বিষয়টি মিথ্যা দাবি করেন এবং প্রমাণের জন্য ওই নারীর প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেন। 

তিনি বলেন, ওই নারীর বিরুদ্ধে এর আগেও এই ধরনের ঘটনার তথ্য তিনি (ওসি) পেয়েছেন বলে দাবি করেন এবং সাংবাদিক হিসেবে মিথ্যা কিছু প্রকাশ না করার অনুরোধ করলে তিনি খুশি হবেন বলেও জানান। 

এ সময় সাংবাদিকরা বস্তুনিষ্ঠ সংবাদই প্রচার করে জানালে, তার বিরুদ্ধে করা ওই নারীর মিথ্যা অভিযোগ (ওসির ভাষ্যমতে) বস্তুনিষ্ঠতার মধ্যে পড়ে না বলে দাবি করেন ওসি এম এ বারী।
 

.

উৎস: Narayanganj Times

কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ অপহরণ এম এ ব র র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

আড়াইহাজারে শীর্ষ মাদক কারবারি সন্ত্রাসী সোহেল সহযোগীসহ গ্রেপ্তার

আড়াইহাজার উপজেলার শীর্ষ মাদক কারবারি ও সন্ত্রাসী সোহেল মেম্বার ওরফে ফেন্সি সোহেল ও তার সহযোগী ফজলুল হক ওরফে ফজুকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব-১১। 

শুক্রবার (১৩ জুন) ভোরে কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি থানার দাউদকান্দি ব্রিজের টোল-প্লাজা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত সোহেল মেম্বার ওরফে ফেন্সি সোহেল (৩৮) আড়াইহাজারের বালিয়াপাড়া এলাকার মোঃ মকবুল হোসেনের পুত্র। অপরদিকে ফজলুল হক ওরফে ফজু (৩০) একই এলাকার আউয়ালের পুত্র।  

গ্রেপ্তারকৃত আসামীদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা সূকৌশলে দীর্ঘদিন যাবৎ মাদক ক্রয়-বিক্রয়সহ সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে জড়িত ছিল মর্মে স্বীকার করে। গ্রেপ্তারকৃত আসামী সোহেল মেম্বার ফেন্সি সোহেল এর বিরুদ্ধে নারয়ণগঞ্জ জেলার বিভিন্ন থানায় সন্ত্রাসী ও মাদক, অপহরণ, চুরি, হত্যা চেষ্টাসহ ১৪-১৫টি মামলা রয়েছে।

এছাড়া গ্রেপ্তারকৃত আসামি ফজলুল হক ফজু এর বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জ জেলার বিভিন্ন থানায় সন্ত্রাসী, অপহরণ, ছিনতাইসহ ৪-৫টি মামলা রয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত আসামিদ্বয়কে পরবর্তী আইনানুগ কার্যক্রমের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

শুক্রবার বিকেলে র‌্যাব-১১ এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার থানার ব্রাহ্মন্দী ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের বালিয়াপাড়ার মকবুল হোসেনের ছেলে সোহেল মেম্বার ফেন্সি সোহেল বিগত ইউপি নির্বাচনে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে ইউপি সদস্য নির্বাচিত হয়। নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে সে আরও বেপোরোয়া হয়ে উঠে। 

পরবর্তীতে সে অবৈধ মাদক সেবন ও ক্রয়-বিক্রয়ের সাথে জড়িয়ে পরে। পরবর্তিতে এক সময় সে এলাকায় শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিতি পায়। তখন থেকে সবাই ফেন্সি সোহেল হিসাবে ডাকে। দীর্ঘদিন ধরে মাদক বিক্রির সঙ্গে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করে আসছে। তার পুরো পরিবার মাদকের সঙ্গে জড়িত। প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে মহড়া দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

ফজলুল হক ফজু এই শীর্ষ সন্ত্রাসী-মাদক ব্যবসায়ী সোহেল মেম্বার ফেন্সি সোহেল এর একান্ত সহযোগী। তাদের ভয়ে এলাকাবাসী ভীত-সন্ত্রস্ত। যারাই তাদের এই সন্ত্রাসী কার্যক্রম ও মাদক ব্যবসার বিরোধিতা করে তাদেরকেই সোহেল ও তার সহযোগীরা নির্মমভাবে নির্যাতন করে।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কক্সবাজারে অপহৃত রোহিঙ্গা উদ্ধার, আটক ৩
  • র‌্যাব পরিচয়ে অপহরণ: চক্রের মূল হোতা গ্রেপ্তার
  • কল্পনা চাকমার অপহরণের বিচার চেয়ে ফেরার পথে হামলার অভিযোগ, গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির নিন্দা
  • আড়াইহাজারে শীর্ষ মাদক কারবারি সন্ত্রাসী সোহেল সহযোগীসহ গ্রেপ্তার