অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছেন, “বিগত সরকারের সময়ে আমাদের ব্যাংকগুলো থেকে টাকা চুরি হয়েছে। এটা কিন্তু ঘটনাক্রমে হয়নি। সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে উৎসাহিত করা হয়েছে বলেই এটা পেরেছে।”

বুধবার (২৯ জানুয়ারি) বিকেলে সমন্বিত অনলাইন সত্যায়ন ব্যবস্থাপনার (এপোস্টিল কনভেনশন ১৯৬১ বাস্তবায়নের প্রথম ধাপ) উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

মো.

তৌহিদ হোসেন বলেন, “সবাই বলাবলি করছে, ওমুক ব্যাংকটাকে ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে। কারণ, একটা ভালো ব্যাংক থেকে সমানে খারাপ ঋণ দেওয়া হচ্ছে ইচ্ছাকৃতভাবে। সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে যদি সমর্থন না থাকত, তাহলে এটা সম্ভব হতো না।”

সমন্বিত অনলাইন সত্যায়ন ব্যবস্থাপনার মতো অন্যান্য পদ্ধতিতেও যেন দুর্নীতি করার সুযোগ না থাকে, সে বিষয়ে জোর দেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা।  

তিনি বলেন, “এটা একটা ছোট পদক্ষেপ। এ ধরনের ছোট ছোট পদক্ষেপ আমাদের অনেক দূর নিয়ে যেতে পারে। দুর্নীতির সুযোগ যেখানে থাকে, সেখানে দুর্নীতি একেবারে বন্ধ করা খুব কঠিন। কাজেই সুযোগ যাতে না থাকে, সেটা আনতে হবে। দুর্নীতির সুযোগ যাতে কমে যায়, সেভাবে আমরা এগোবো।”

ইতালিতে ৬০ হাজার বাংলাদেশির পাসপোর্ট আটকানোর তথ্য তুলে ধরে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “৬০ হাজার পাসপোর্ট আটকা আছে ইতালিতে। কেন আটকা আছে? কারণ, কাগজ-পত্রের বিশ্বাসযোগ্যতার জন্য। প্রতিটা কেসে কিছু না কিছু সমস্যা আছে। আমাদের এক দালাল ওখানকার একটা প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন নিয়ে এসেছে, কিন্তু আসলে তার ওখানে কাজ করার মতো অবস্থা নেই।”

বিদেশে বাংলাদেশের ইমেজ নিয়ে কথা বলেন মো. তৌহিদ হোসেন। এ সময় তিনি বাংলাদেশি সংসদ সদস্যদের বিদেশে গ্রেপ্তারের উদাহরণ দেন। 

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “ইমেজ একদিনে সৃষ্টি হয় না। একদিনে শেষও হয় না। যারা ভূ-মধ্যসাগর পাড়ি দিতে গিয়ে ডুবে মারা যায়, তাদের মধ্যে যখন আমাদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি হয়ে যায়, তখন ভালোভালো কথা বলে ইমেজ রক্ষা করতে পারবেন না। আবার যখন আপনার একজন ট্যাক্সিচালক টাকা পেয়ে ফেরত দেয়, তখন কিন্তু অটোমেটিক্যালি আপনার ইমেজ ওপরে ওঠে। আপনার এমপি যখন দুর্নীতির দায়ে আরেক দেশে গিয়ে জেলে যায়, আপনার ইমেজ রক্ষা করা সেখানে কঠিন। সার্বিকভাবে আমরা যা করব, সেটা নিয়ে আমাদের ইমেজ হবে, হুট করে কিছু হবে না।”

বিদেশে বাংলাদেশি মিশনগুলোতে লোকবল সংকটের কথা তুলে ধরেন মো. তৌহিদ হোসেন। তিনি কাতারের উদাহরণ দিয়ে বলেন, “যে মিশন ৩০০ পাসপোর্ট বিতরণ করবে, তার পক্ষে অন্য কোনো সার্ভিস দেওয়া সম্ভব? আমাদের এখান থেকে নাইডগার্ড হিসেবে যিনি যান, তাকে দিয়েও পাসপোর্টে সিল মারাতে হয়। এটা হতে পারে না। এটার জন্য একটা বুদ্ধি বের করতে হবে। একটা সিদ্ধান্ত হয়েছে, মিশনে লোকবল বাড়ানো। আমাদের ডিজিটাইলড কিছু করতে হবে। পাসপোর্টের জন্য মিশনে আসতে হবে না। পাসপোর্ট সেবাগ্রহীতার কাছে পৌঁছে যাবে সঠিক কাগজপত্রসহ।”

অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সংস্কারবিষয়ক সচিব মাহমুদুল হোসাইন খান, আইসিটি মন্ত্রণালয়ের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী, পররাষ্ট্র সচিব মো. জসীম উদ্দিন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পূর্ব) নজরুল ইসলাম।

ঢাকা/হাসান/রফিক

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর পরর ষ ট র উপদ ষ ট আপন র

এছাড়াও পড়ুন:

শুধু ঘোষণা নয়, বাস্তবে প্রতিফলিত হোক

রাজধানী শহরসহ দেশের বড় শহরগুলোয় শব্দদূষণের অসহনীয় মাত্রার বিষয়টি কারও অজানা নয়। এটি এখন শুধু শব্দদূষণ নয়, শব্দসন্ত্রাস বলেও অভিহিত হচ্ছে। অতীতে ও বর্তমানে সরকারগুলো বিভিন্ন পদক্ষেপ নিলেও কার্যকর হচ্ছে না। অতীতের ধারাবাহিকতায় রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশান, বনানী, বারিধারা ও নিকেতনকে ‘নীরব এলাকা’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। সিদ্ধান্তটি নিঃসন্দেহে প্রশংসার যোগ্য। এখন এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করাই হচ্ছে বড় চ্যালেঞ্জ।

শহরের শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে নীরব এলাকা ঘোষণা একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এটি অবশ্যই সরকারের সদিচ্ছার প্রকাশ। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এই ঘোষণা বাস্তবে কার্যকর হবে, নাকি এটিও অতীতের মতো কেবল কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ থাকবে? এর আগে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং এর আশপাশের এলাকাকে নীরব এলাকা ঘোষণা করা হয়েছিল, কিন্তু তার ফল তেমন একটা ভালো পাওয়া
যায়নি। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ঘোষণার পর কিছু এলাকায় শব্দ কিছুটা কমলেও সার্বিকভাবে পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। এই অভিজ্ঞতা থেকে বোঝা যায়, শুধু ঘোষণা যথেষ্ট নয়, বরং এর কঠোর বাস্তবায়ন অপরিহার্য।

শব্দদূষণের ক্ষেত্রে আগের তুলনায় সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে বলতেই হয়। যার কারণে সাউন্ডবক্স বা মাইক বাজানোর বিষয়গুলো তুলনামূলকভাবে কমে এসেছে। তবে গাড়ির হর্ন এতটা বিভীষিকাময় পরিস্থিতি তৈরি করছে, যা অকল্পনীয়। এটিই এখন রাজধানীসহ বড় শহরগুলোর শব্দদূষণের সবচেয়ে বড় আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, অতিরিক্ত শব্দ হৃদ্‌রোগ, উচ্চ রক্তচাপ এবং মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে। চিকিৎসকেরা বলছেন, এটিতে শ্রবণশক্তি হ্রাস পায়, মেজাজ খিটখিটে হয়, মানুষ অনিদ্রায় ভোগে এবং শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় বিঘ্ন ঘটায়। তাই শুধু অভিজাত এলাকা নয়, পুরো শহরে ধাপে ধাপে কীভাবে নীরব এলাকা ঘোষণা করা যায়, সেই লক্ষ্যে পরিকল্পিতভাবে এগোতে হবে।

তবে এ উদ্যোগ সফল করতে হলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে কঠোর হতে হবে। হর্ন বাজানোর বিরুদ্ধে আইন আছে। তা যদি আইনভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে কঠোরভাবে প্রয়োগ না করা হয়, এ ঘোষণা কখনোই সফল হবে না। কেবল প্রশাসনের ওপর নির্ভর না করে নীরব এলাকা–ঘোষিত এলাকাগুলোর বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, যেমন মসজিদ, মন্দির এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকেও এখানে গণসচেতনতার কাজে যুক্ত করতে হবে।

গাড়ির হর্ন বাজানো সীমিত করতে পরিবহনের বিভিন্ন ধরনের সমিতি–সংগঠনগুলোর যুক্ততাও এখানে গুরুত্বপূর্ণ। গাড়ির চালকদের অভ্যাসগত পরিবর্তনের জন্য শব্দদূষণের ক্ষতিকর দিকটি নিয়মিতভাবে তাঁদের কাছে উপস্থাপন করতে হবে। হাইড্রোলিক হর্নসহ উচ্চমাত্রার যেকোনো হর্ন উৎপাদন, আমদানি ও ব্যবহারের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রয়োগ করতে হবে। এ ব্যাপারে ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই।

সম্পর্কিত নিবন্ধ