পরিবেশবান্ধব পরিষেবায় নতুন উদ্যোগ
Published: 2nd, February 2025 GMT
দেশে প্রথম পরিবেশবান্ধব গ্রাহকসেবা কেন্দ্র স্থাপন করেছে গ্রামীণফোন। সিলেটের আম্বরখানায় কেন্দ্রটি ইতোমধ্যে গ্রাহকসেবায় নিয়োজিত। কারিগরি মাধ্যমে টেকসই ব্যবস্থাপনায় নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করল অপারেটরটি। এমন উদ্যোগে একদিকে যেমন পরিবেশ সুরক্ষিত থাকবে, অন্যদিকে গ্রাহক পরিষেবায় যুক্ত হবে নতুন অভিজ্ঞতা।
পরিবেশবান্ধব ভবিষ্যৎ গড়ার লক্ষ্যে নির্মিত পরিষেবা কেন্দ্রটি টেলিযোগাযোগ খাতে অগ্রগামী পদক্ষেপ, যেখানে ৯৯ দশমিক ৯ শতাংশ কার্যক্রমই হবে কাগজহীন ও প্লাস্টিকমুক্ত। নির্মাণ থেকে শুরু করে কেন্দ্রের ভেতরের সাজসজ্জা ও দৈনন্দিন কার্যক্রমের প্রতিটি ধাপে পরিবেশের ছোঁয়া নিশ্চিত করা হয়েছে। নির্মাণে ব্যবহৃত প্রতিটি উপাদানই টেকসই উপকরণ দিয়ে তৈরি। প্রচলিত উপকরণের বদলে টেকসই ও পুনর্ব্যবহারযোগ্য উপাদান ব্যবহৃত হয়েছে। গ্রাহক পরিষেবা হবে কাগজহীন। ফলে ডিজিটাল উদ্ভাবনের সহায়তায় সেবায় গতি আসবে। অন্যদিকে, পরিবেশের ক্ষতিও কম হবে।
জানা গেছে, দেয়াল বাগান (ভার্টিক্যাল গার্ডেন) ও পরিবেশবান্ধব দৃশ্যের (ল্যান্ডস্কেপিং) সমন্বয়ে সেবাকেন্দ্রের আবহ তৈরি। নকশায় যুক্ত হয়েছে সিলেটের ঐতিহ্যবাহী শীতল পাটি। উদ্ভাবন ও প্রকৃতির সমন্বয়ে এমন পদক্ষেপ প্রথম।
উদ্যোগ প্রসঙ্গে গ্রামীণফোনের চিফ মার্কেটিং অফিসার ফারহা নাজ জামান বলেন, আমরা যা কিছু করি, তার কেন্দ্রে থাকেন গ্রাহক। যখন সেটি হয় টেকসই পদক্ষেপ, তখন তা আরও অর্থবহ হয়। সিলেটের গ্রিন গ্রাহকসেবা কেন্দ্রটি পরিবেশবান্ধব ও টেকসই ভবিষ্যৎ গড়তে সংকল্পের প্রতিফলন। দ্রুত ও মানোন্নত গ্রাহকসেবা নিশ্চিত করবে এমন কেন্দ্র। উদ্ভাবন, স্থায়িত্ব ও স্থানীয় ঐতিহ্যেকে আমরা কাজে লাগিয়েছি, যা শিল্প খাত ও সমাজকে পরিবেশবান্ধব ভবিষ্যৎ উদ্যোগ গ্রহণে উৎসাহিত করবে।
শুধু পরিবেশগত দায়িত্ব পালন নয়, এমন উদ্যোগ কার্বন নিঃসরণ হ্রাসের লক্ষ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ও বৈশ্বিক টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য পূরণে সহায়ক। নিজস্ব সংস্কৃতিকে সম্মান জানিয়ে স্থানীয়দের ক্ষমতায়নে অপারেটরটি কাজ করবে। পরিবেশবান্ধব এ সেবাকেন্দ্র পরিবেশের সুরক্ষায় বিশেষ উদাহরণ হবে বলে উদ্যোক্তারা জানান।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: পর ষ ব পর ব শ ট কসই
এছাড়াও পড়ুন:
চা শ্রমিকদের ক্লান্তি দূর করে ‘পাতিচখা’
চায়ের সবুজ বাগানে গাছ থেকে পাতা কুঁড়ি তোলার কাজ সবচেয়ে বেশি করেন নারী শ্রমিকরা। রোদে পুড়ে এবং বৃষ্টিতে ভিজে চায়ের বাগানের টিলায় পাতা কুঁড়ি সংগ্রহ করতে হয় তাদের।
ক্লান্ত দুপুরে নিজ হাতে তৈরি ‘পাতিচখা’ বা কাঁচা চা পাতির ভর্তা খেয়ে দুর্বল স্নায়ুকে আবার সবল করেন তারা। এরপর আবারো শুরু করেন কর্মযজ্ঞ। পড়ন্ত বিকেলে ওজন ধারের কাছে তোলা পাতার হিসাব দিয়ে ঘরে ফেরেন এই নারীরা।
চা সংশ্লিষ্টরা জানান, চায়ের কাঁচা পাতায় রয়েছে ক্যাফেইন নামক উপাদান। হাতের মলায় ক্যাফেইন তৈরি হয়। যা খেলে শরীরে উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়। পাতিচখা বা চা পাতির ভর্তা চা শ্রমিকদের প্রিয় খাবার। দুপুর হলেই তারা গাছের ছায়ায় গোল হয়ে বসে চানাচুর, সিদ্ধ করা আলু, মরিচ, রসুনসহ অন্যান্য উপাদানের সঙ্গে চা পাতার কচি কুঁড়ি দিয়ে হাতের তালুতে ডলে তৈরি করেন পাতিচখা।
আরো পড়ুন:
পিয়াইন নদীতে নিখোঁজ বালু শ্রমিকের মরদেহ উদ্ধার
গাজীপুরে বকেয়া বেতনের দাবিতে শ্রমিকদের মহাসড়ক অবরোধ
বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) মৌলভীবাজারের বিভিন্ন চা বাগান গিয়ে শ্রমিকদের পাতিচখা খাওয়ার দৃশ্য চোখে পড়ে।
কথা হলে চা শ্রমিকরা জানান, নারী শ্রমিকদের সর্দারনি সবার কাছ থেকে রুটি, পেঁয়াজ, মুড়ি, রসুন, চানাচুর, সিদ্ধ আলুসহ পাতিচখার উপকরণ সংগ্রহ করেন। একটি পাত্রে সব উপকরণ জমা করে সব শেষে চা পাতার কচি কুঁড়ি হাতের তালুতে ডলে সবাই মিলে তৈরি করেন পাতিচখা। সর্দারনি আবার সকলের হাতে হাতে তা বন্টন করেন।
মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার করিমপুর চা বাগানের নারী শ্রমিক বাসন্তি মুন্ডার বলেন, “আমরা ক্লান্তি দূর করার জন্য পাতিচখা খাই। এটা আমাদের নিজস্ব খাবার।”
বসন্তি মুন্ডার কাছে বসে থাকা অপর নারী শ্রমিক সুমা কর্মকার বলেন, “ক্লান্ত দুপুরে গাছের শান্ত ছায়ায় বসে আমরা পাতিচখা খেয়ে কাজে যায়। আমরা এ থেকে শক্তি পাই।”
বাগানের শ্রমিক উর্মিলা তাপসী বলেন, “আমাদের দুপুরের নাস্তা পাতিচখা খেলে শক্তি আসে।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, চা জনগোষ্ঠীর আদি পেশা হলো কৃষি। কৃষি কাজ করে তাদের জীবন চলত। ১৮৪০ সালের দিকে ভারতবর্ষের বিভিন্ন অঞ্চলে চায়ের চাষ বৃদ্ধি পায়। কর্মক্ষেত্র ক্লান্তি দূর করায় চায়ের কদর বাড়তে থাকে।
বাংলাদেশের চট্টগ্রামে প্রথম কর্ণফুলী চা বাগানের মাধ্যমে চায়ের চাষাবাদ শুরু হয়। মাটি, আবহাওয়া ও জলবায়ু অনুকূলে থাকায় সিলেট ও চট্টগ্রামে চা বাগান গড়ে ওঠে। ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে চা গাছ পরিচর্যার জন্য এখানে শ্রমিক আনা হয়। কাজের ক্লান্তি দূর করার জন্য মধ্যাহ্ন বিরতিতে রুটি খাওয়া ছিল তাদের পুরানো প্রথা। মনের খেয়ালে চা-গাছের কচি পাতা হাতের তালুতে ডলে রুটির সঙ্গে খেতে শুরু করেন তারা।
শরীরে উদ্দীপনা সৃষ্টি হওয়ার পর থেকে তারা দুপুরে রুটির সঙ্গে চায়ের কচি পাতা খাওয়ার প্রথা শুরু করেন। এর সঙ্গে যোগ হয় চানাচুর, সিদ্ধ করা আলু, মরিচ, রসুনসহ অন্যান্য উপাদান। শ্রমিকদের ভাষায় চাপাতি ভর্তা। এর বর্তমান নাম পাতিচখা।
চা বাগানের শ্রমিকদের সকাল থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত বাগানে কাজ করতে হয়। দুপুরে ঘরে ফেরার সুযোগ নেই তাদের।
কথা হলে করিমপুর চা বাগানের শ্রমিক নেতা জাবেদ খান বলেন, “নারী শ্রমিকরা দুপুরে খাবার জন্য দুইটি রুটি সঙ্গে নিয়ে যান। এর সঙ্গে যোগ হয় চানাচুর, সিদ্ধ করা আলু, মরিচ, চায়ের কচি পাতা রসুন, পেঁয়াজসহ অন্যান্য উপাদান। ভর্তা খাওয়ার প্রথা আদিকাল থেকে চলে আসছে।”
ওই চা বাগানের সাবেক পঞ্চায়েত সভাপতি ৮০ বছর বয়সী কতুব আলী বলেন, “পাতিচখা এটি আদিকাল থেকে চলে আসছে। নাস্তা খাওয়ার পর শরীরে এনার্জি আসে, সেটি খেয়ে আবার কাজে মন দেন শ্রমিকরা।”
ঢাকা/মাসুদ