দু’দিনে বিদ্রোহী ১৮ ফুটবলারের কথা শুনেছে বাফুফের বিশেষ কমিটি। যাকে নিয়ে আপত্তি মেয়েদের, সেই পিটার বাটলার মঙ্গলবার ৩০ মিনিট নিজের বক্তব্য তুলে ধরেছেন। ছয় থেকে সাত ফুটবলারের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলা ভঙ্গসহ নানা অভিযোগ কমিটিকে জানিয়েছেন ব্রিটিশ এ কোচ। বুধবার অনুশীলন শেষে সংবাদমাধ্যমের সামনে দাঁড়িয়ে বাটলার করলেন বিস্ফোরক মন্তব্য, ‘কোনো সমঝোতা নয়, হয় ওই ফুটবলাররা থাকবেন, না হয় আমি।’
তদন্ত চলাকালে বাটলারের এমন মন্তব্যে রীতিমতো ঝড় বইছে দেশের ফুটবলাঙ্গনে। বৃহস্পতিবার বিশেষ কমিটির রিপোর্ট জমা দেওয়ার আগের দিন বাটলারের হুঙ্কারে মেয়েরাও নিজেদের ঐক্যকে আরও মজবুত করেছেন বলে জানা গেছে। দলের সাত ফুটবলারের কোনো একজনকে বাদ দিলে গণহারে অবসরের আগের সিদ্ধান্তেই অনড় থাকবেন নারী সাফজয়ীরা। মঙ্গলবার সমকালের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে মাতসুশিমা সুমাইয়া জানিয়েছেন, ‘ফাইট করে তার পর ছাড়বেন।’ দু’পক্ষের মুখোমুখি অবস্থানের কারণে নারী ফুটবলে চলমান অস্থিরতার সংকট নিরসনের সম্ভাবনা খুব কমই। এই সমস্যার সমাধানের পথ এখন বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়ালের কোর্টে। পুরো দেশ তাকিয়ে দেশের ফুটবল নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রধানের দিকে।
বাটলারের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তোলা মেয়েরা সভাপতি তাবিথ বরাবর ইংরেজি এবং সংবাদমাধ্যমের কাছে বাংলায় চিঠি লেখেন। যেটা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। বাইরের কোনো ইন্ধনে মেয়েরা আন্দোলন করছে কিনা, সেটা জানতে গিয়ে চিঠির বিষয়টি সামনে আনে বিশেষ কমিটি। বিদ্রোহী ১৮ ফুটবলারের সবারই এক কথা, ‘বাটলার থাকলে তারা অনুশীলন করবেন না।’
শুধু তাই নয়, সভাপতি তাবিথ আউয়াল অনুরোধ করলেও এই আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়াবেন না মেয়েরা। একই সঙ্গে কয়েকজন ফুটবলার দলে থাকলে কোচের চাকরিও ছেড়ে দেওয়ার কথা বলেছেন ইংলিশ কোচ। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাদের কারও নাম প্রকাশ না করলেও বাফুফের একটি সূত্রের মাধ্যমে জানা গেছে, অধিনায়ক সাবিনা খাতুন, সানজিদা আক্তার, কৃষ্ণা রানী সরকার, মাসুরা পারভীন, মারিয়া মান্দা, শামসুন্নাহার সিনিয়র এবং নীলুফার ইয়াসমিন নীলাকে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় রাখতে চান না। শুধু তাই নয়, এই মেয়েরা নাকি বাফুফের ক্যাম্পে থেকে সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন।
বিশেষ কমিটির কাছে এই মেয়েদের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলা ভঙ্গ, অনুশীলনে মনোযোগ না দেওয়াসহ অনেক বিষয়েই অভিযোগ উপস্থাপন করেছেন বাটলার। বাফুফের এই সূত্র জানিয়েছে, খেলোয়াড় এবং কোচের মতামত জানার পর তদন্ত কমিটির কাছে মনে হয়েছে, মেয়েরা কারও দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছেন। মেয়েরা চিঠিতে যা লিখেছেন আর কমিটির সামনে মুখে যা বলেছেন, তার মধ্যে ৯০ ভাগের সত্যতা মেলেনি। বিদ্রোহী ১৮ মেয়ের মধ্যে আট থেকে ১০ জনের সঙ্গে কোচের কোনো দিন কিছুই হয়নি। সিনিয়রদের চাপেই আন্দোলনে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন বলে জানিয়েছে ওই সূত্রটি।
বাটলারের বিস্ফোরণের পর ক্যাম্পে থাকা মেয়েরা আরও বেশি কঠোর হচ্ছেন। তাদের দাবি, যেহেতু ১৮ জন একসঙ্গে আন্দোলনে নেমেছেন, তাই কাউকে বাদ দিলে তা মেনে নেবেন না তারা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নারী ফুটবলার সমকালের কাছে নিজেদের কর্মপরিকল্পনা জানান, ‘তিনি (বাটলার) যেহেতু বলেছেন, আমরা থাকলে তিনি চলে যাবেন, আমরাও তাঁর আন্ডারে প্র্যাকটিস করব না।’
যদি কাউকে বাদ দেওয়া হয়, তখন কী করবেন?– ‘সেটা সময়েই বলে দেবে। অবশ্যই একজনকে ছাড়াও আমরা মাঠে নামব না।’ আগের দিন সমকালের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে সুমাইয়াও শেষ পর্যন্ত লড়াই করার কথা বলেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ শেষে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বাফুফে ক্যাম্পে ফিরতে গিয়েও বাধার সম্মুখীন হয়েছেন জাপানপ্রবাসী এ ফুটবলার। ধর্ষণ ও হত্যার হুমকি পাওয়া সুমাইয়াকে ক্যাম্প ছেড়ে বাসায় মায়ের কাছে চলে যেতে বলেছেন বাফুফের এক কর্মকর্তা। সুমাইয়া কর্মকর্তাকে সাফ জানিয়ে দেন, সতীর্থদের ছেড়ে তিনি যাবেন না। বিদ্রোহ করলেও মানসিক ট্রমায় থাকা মেয়েদের জন্য ক্যাম্পে গতকাল মনোবিদ এনেছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন।
বাটলারের বিরুদ্ধে মেয়েদের আন্দোলনের সময় সভাপতি তাবিথ আউয়াল যুক্তরাজ্যে চলে যান। গতকাল ঢাকায় ফিরেই ফেডারেশনের এক সহসভাপতির কাছে মেয়েদের আন্দোলন নিয়ে পুরো বিষয়টি শোনেন। এসব শোনার পর গতকাল রাতেই বিশেষ কমিটির রিপোর্ট নিয়ে পর্যালোচনা করার কথা সভাপতি তাবিথের। আজকে রিপোর্ট জমা দেওয়ার সময়ই হয়তো কোনো একটা সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিতে পারেন তাবিথ।
আবার এমনও হতে পারে, রাজনৈতিক কৌশল অবলম্বন করে আরেকটু ভেবে-চিন্তে দু’পক্ষের সঙ্গে বসে সুন্দর সমাধানের পথে হাঁটতে পারেন দেশের ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রধান। এসব ব্যাপারে জানতে তাবিথকে ফোন দিলেও তিনি লাইন কেটে দেন। তবে তাঁর একটি ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে, প্রথমে দু’পক্ষকে সব ভুলে মিলে যাওয়ার অনুরোধ করবেন তাবিথ। সেখানে কাজ না হলে হাঁটবেন বিশেষ কমিটির দেওয়া রিপোর্টের ভিত্তিতে। যে রিপোর্টে আছে বেশ কয়েক নারী ফুটবলারের শাস্তির সুপারিশ।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ন র ফ টবল ব শ ষ কম ট র ফ টবল র র বল ছ ন করব ন
এছাড়াও পড়ুন:
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইসরায়েলের হামলা
রবিবার বিকেল থেকে ইরানজুড়ে নতুন করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। সামরিক স্থাপনার পাশাপাশি ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেও লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।
রবিবার রাতে ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইদ খাতিবজাদেহ ইসরায়েলি হামলার তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে তিনি জানান, রবিবার রাজধানী তেহরানে ইসরায়েলি হামলায় ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খবর তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাদোলুর।
এক্স-পোস্টে সাইদ বলেছেন, “ইসরায়েলের অপরাধী শাসকগোষ্ঠী রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক গবেষণা ইনস্টিটিউটের ঠিক বিপরীতে অবস্থিত ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ভবনে ইচ্ছাকৃত এবং নির্মম হামলা চালিয়েছে।”
আরো পড়ুন:
ইসরায়েলের নতুন হামলায় ইরানের আইআরজিসির গোয়েন্দা প্রধান নিহত
ইসরায়েলে ৫০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ল ইরান, তেল আবিব ও হাইফাতে সরাসরি আঘাত
উপ-মন্ত্রী আরো বলেন, “এই হামলায় বেশ কয়েকজন বেসামরিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন, আমার বেশ কয়েকজন সহকর্মীও আহত হয়েছেন, যাদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।”
সাইদ বলেন, “এটি আরো একটি স্পষ্ট যুদ্ধাপরাধ, ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি শাসকগোষ্ঠীর চলমান ও নিয়মতান্ত্রিক আগ্রাসন অভিযানের অংশ।”
এর আগে শনিবার ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তরে হামলা চালিয়েছিল ইসরায়েল।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা তেহরানের অস্ত্র উৎপাদন ক্ষমতা ধ্বংস করার লক্ষ্যে ইরানের আইআরজিসি ও সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে রবিবার নতুন করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, এই হামলায় ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি), গার্ডস কুদস ফোর্স এবং ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর অবকাঠামো লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী আরো জানিয়েছে, ইরানজুড়ে অসংখ্য অস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্রে হামলা চালানো হয়েছে।
ইরানি বার্তাসংস্থা তাসনিম নিউজ জানিয়েছে, ইসরায়েলের এই হামলায় আইআরজিসিরি গোয়েন্দা প্রধান মোহাম্মদ কাজেমি এবং তার সহকারী হাসান মোহাকিক নিহত হয়েছেন। এছাড়া মোহসেন বাঘারি নামে আইআরজিসির আরো একজন জেনারেল নিহত হয়েছেন। এর প্রতিশোধ নিতে রবিবার রাতে ইসরায়েলে ৫০টি ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও শতাধিক ড্রোন ছুড়েছে ইরান।
ইসরায়েলের ফায়ার ও রেসকিউ সার্ভিসের বরাত দিয়ে টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, উত্তর ইসরায়েলে দুটি এবং হাইফায় একটি আবাসিক ভবনে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হানার খবর পেয়েছে তারা।
ইসরায়েলি জাতীয় জরুরি সেবা সংস্থা জানিয়েছে, হাইফায় ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে সাতজন আহত হয়েছেন। এছাড়া কিরিয়াত গাটের কাছে দক্ষিণাঞ্চলীয় একটি শহরে একজন আহত হয়েছেন।
এ ঘটনায় ইসরায়েলি সেনাপ্রধান ইয়াল জামির ইরানের ওপর আক্রমণ আরো তীব্র করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। একটি বিবৃতি জারি করে ইসরায়েরি সেনাপ্রধান বলেছেন, “আমরা আমাদের অভিযান তীব্রতর করে যাব এবং এটি করে, আগামী বছরগুলোতে আমাদের নিরাপত্তা জোরদার করব। আমরা জানতাম এর একটি মূল্য দিতে হবে এবং এটিই বোঝায় যে, আমরা কেন এখনই পদক্ষেপ নিয়েছি, তা অনেক দেরি হওয়ার আগেই।”
ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শুক্রবার থেকে ইসরায়েলি হামলায় ২২৪ জন নিহত এবং ৯০০ জন আহত হয়েছেন।
ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কমপক্ষে ১৩ জন নিহত এবং ৩৭০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন।
ঢাকা/ফিরোজ