ট্রাম্পের বাণিজ্যযুদ্ধে বাংলাদেশের কী হবে
Published: 6th, February 2025 GMT
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের ভালো লাগুক আর মন্দ লাগুক এমনটাই কিন্তু আশঙ্কা করা হয়েছিল—ট্রাম্প মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভালো দেখতে পুরো বিশ্বব্যবস্থাকেই ওলট-পালট করে দিতে পারেন। ইতিমধ্যে জলবায়ু তহবিল আর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় অর্থায়ন থেকে তিনি সরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
ইউএসএআইডি অর্থায়িত প্রকল্প কাটছাঁট করছেন। চীন, মেক্সিকো, কানাডার বিরুদ্ধে বিরাট শুল্ক–বাধা সৃষ্টি করতে যাচ্ছেন। এমনকি ইউরোপের ২৭টি দেশের বিরুদ্ধেও একই কাজের হুমকি দিচ্ছেন। নিদেনপক্ষে সারা বিশ্ব যেন এক বাণিজ্যযুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আর এর হোতা হচ্ছেন স্বয়ং ট্রাম্প।
এভাবে বড় অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে শুল্ক নিয়ে লড়াইয়ে বিশ্ববাণিজ্য কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে সন্দেহ নেই। তবে এ শঙ্কা বড় ধরনের সম্ভাবনা তৈরি করেছে বাংলাদেশের সামনে বলে অনেকেই বলছেন। মনে হচ্ছে, তৈরি পোশাকসহ বিভিন্ন পণ্যের রপ্তানিতে নতুন করে বাড়তি চাহিদা তৈরি হবে। তুলনামূলক কম শুল্ক সুবিধায় চীন মেক্সিকোর পণ্যের চেয়ে বাংলাদেশের পণ্য পশ্চিমা ভোক্তাদের কাছে দামে সাশ্রয়ী হবে।
ধারণা করা হচ্ছে, কম শুল্কের সুবিধা নিতে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, কানাডাসহ অনেক দেশই বাংলাদেশে প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ (এফডিআই) বাড়াতে পারে। বড় অর্থনীতির দেশগুলোর পারস্পরিক শুল্ক লড়াই যত তীব্র হবে, ততই কপাল খুলতে পারে বাংলাদেশের। এসব কথা বলেছেন ব্যবসা–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও বিশেষজ্ঞরা। তবে তাঁরা এটাও বলছেন, সঠিক কৌশল নিয়ে এগোতে না পারলে সুযোগ হাতছাড়া হবে।
আমাদের প্রতিযোগী কিছু দেশ নতুন নতুন নীতিসহায়তা নিয়ে আসছে। তাই সুযোগ আর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমাদেরও আটঘাট বেঁধেই নামতে হবেঅন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রবেশের ক্ষেত্রে কানাডার পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপের পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে একই হারে মার্কিন পণ্যেও শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছে কানাডা সরকার। ধারণা করা হচ্ছে, কানাডার অনুসরণে মেক্সিকো ও চীন একই ধরনের পাল্টা পদক্ষেপ নিতে পারে। ইউরোপও এমনটা ভাবছে। বড় অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে এ শুল্ক লড়াইয়ে কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হবে বিশ্ববাণিজ্য। তবে তৈরি পোশাকের মতো মৌলিক চাহিদার পণ্য ব্যবহার ব্যাপক হারে কমানোর সুযোগও তেমন নেই।
অনেকেই মনে করেন, বড় দেশগুলোর শুল্ক লড়াই বাংলাদেশের রপ্তানি এবং এফডিআইয়ের ক্ষেত্রে বড় সুবিধা তৈরি করবে এতে কোনো সন্দেহ নেই। অন্যদিকে বিপদের কথা হচ্ছে, বিশ্ব অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হলে ইউরোপেও রপ্তানি কমতে পারে। তেলসমৃদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যে অভিবাসন বাধাগ্রস্ত হবে। রেমিট্যান্সপ্রবাহ কমতে পারে। এমনটাও আশঙ্কা করা হচ্ছে, চীন ও মেক্সিকো থেকে অনেকেই বিনিয়োগ স্থানান্তর করবেন।
তবে আরেকটি নির্মম সত্য হচ্ছে, বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিধিবিধানের যে পাকাপোক্ত শিকল আছে, তা মুক্ত করতে না পারলে সুযোগ কাজে লাগানো যাবে না। পাঁচটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলকে (এসইজেড) উপযুক্ত করা এবং এক ছাদের নিচে সব সেবা নিশ্চিত করা গেলে সেই সম্ভাবনা কাজে লাগানোর সুযোগ রয়েছে। ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ভালো সম্পর্ক। এ রকম অনেক দেশই বিনিয়োগ সুবিধা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত।
তৈরি পোশাক বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য। মোট রপ্তানি আয়ের ৮০ শতাংশের ওপর আসে এ পণ্যটি থেকে। আবার একক রাষ্ট্র হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র পোশাকের প্রধান রপ্তানি বাজার। মোট রপ্তানি আয়ের ২০ থেকে ২২ শতাংশ আসে দেশটি থেকে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে চীনের প্রভাব বেশি। দেশটিতে পোশাক রপ্তানিতে চীনের হিস্যা ২১ শতাংশ।
বাংলাদেশের হিস্যা ৯ শতাংশের কিছু বেশি। যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি সংস্থা অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলের (ওটেক্সা) সর্বশেষ প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রে শীর্ষ ১০ পোশাক রপ্তানিকারক দেশের মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ভিয়েতনাম। বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়। মেক্সিকোর অবস্থান ষষ্ঠ।
শুল্ক লড়াই কোথায় গিয়ে ঠেকে, তা নিয়ে দেশগুলোর মধ্যে একটা অস্থিরতাও তৈরি হয়েছে। এ কারণে ক্রেতারা বিকল্প দেশ হিসেবে বাংলাদেশে নজর বাড়াবে বলেই মনে হয়। কারণ, তৈরি পোশাকের দ্বিতীয় রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের ভিত্তি অনেক মজবুত। এটা বাংলাদেশের জন্য অবশ্যই একটা বড় সুযোগ।
এ সুযোগ কতটা কাজে লাগানো যায়, সেটাই দেখার বিষয়। কারণ, হঠাৎ আবারও গ্যাসের দাম বৃদ্ধির মতো নীতি সিদ্ধান্ত উৎপাদন ব্যয় বাড়াবে। ব্র্যান্ড-ক্রেতারা এখনই এ বিষয়ে কৌশল নিচ্ছে। এ কারণে বাংলাদেশের সুযোগ হাতছাড়াও হতে পারে। সুবিধা চলে যেতে পারে প্রতিযোগী ভিয়েতনাম ও ভারতে।
অন্যদিকে কম শুল্ক–সুবিধায় বাংলাদেশি পণ্য ওই দেশগুলোতে দামে সাশ্রয়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ ছাড়া সরাসরি রপ্তানি উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ানোর সুযোগ ছাড়াও প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ (এফডিআই) আসবে বাংলাদেশে।
যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানিতে বাংলাদেশের পণ্যে গড়ে সাড়ে ১৫ শতাংশ শুল্কারোপ রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানিতে কম হারের এ শুল্কসুবিধা নিতে চীন ও মেক্সিকোর উদ্যোক্তারা বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়াবেন।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, সমাপ্ত ২০২৪ ক্যালেন্ডার বছরে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে ৭২০ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে, যা বছরের মোট পোশাক রপ্তানির প্রায় ১৯ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে একসময় বাংলাদেশের ৯৭ শতাংশ পণ্যে শুল্কমুক্ত বা জিএসপি সুবিধা পাওয়া যেত। অবশ্য তৈরি পোশাক এ সুবিধার আওতায় ছিল না।
২০১৩ সালে রানা প্লাজা ধসের পর আন্তর্জাতিক মানের শ্রম পরিবেশ না থাকার কারণ দেখিয়ে জিএসপি স্থগিত করে যুক্তরাষ্ট্র। এর পরই আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তা উন্নয়নে ব্যাপক বিনিয়োগ করে বাংলাদেশ। পোশাকশিল্পে নিরাপদ কর্মপরিবেশের রোল মডেল হিসেবে বাংলাদেশকে বিবেচনা করা হয় এখন। এ সুবিধায় চীনাদের জন্য বাংলাদেশে বিনিয়োগ আরও সহজ হবে বলে মনে করেন উদ্যোক্তারা।
তবে এই সম্ভাবনা কাজে লাগাতে গেলে আমাদের ভাবতে হবে, আমাদের পক্ষে উৎপাদন কতটা বাড়ানো সম্ভব, সে ক্ষেত্রে আবার কী কী নতুন উপকরণ বা যন্ত্রপাতি প্রয়োজন। আমাদের শ্রমিকদের দক্ষতা এখানে বাধা হয়ে দাঁড়াবে না তো? বর্তমান আইনশৃঙ্খলা ও জ্বালানি পরিস্থিতি কতটুকু সহায়ক হবে? নতুন উৎপাদন বা সক্ষমতা বৃদ্ধি কার্যক্রমের অর্থায়ন আসবে কোত্থেকে? অন্যদিকে আবার আমাদের প্রতিযোগী কিছু দেশ নতুন নতুন নীতিসহায়তা নিয়ে আসছে। তাই সুযোগ আর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমাদেরও আটঘাট বেঁধেই নামতে হবে।
মামুন রশীদ অর্থনীতি বিশ্লেষক
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
স্বপ্নে হলো দেখা
কারও স্বপ্নে আপনি প্রবেশ করেছেন বা অন্য কেউ আপনার স্বপ্নে এসেছেন, তাও তখন, যখন আপনি স্বপ্নে নিজের ইচ্ছায় পরিচালিত হচ্ছেন– এমনটা কি কখনও ভেবেছেন? বিজ্ঞানীদের দাবি– একটি নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে এমনটিই করেছেন তারা, যেখানে দু’জন মানুষের মধ্যে স্বপ্নের ভেতরে যোগাযোগ সম্ভব হয়েছে। এমনটি সত্যি হয়ে থাকলে এটিই হবে প্রথমবারের মতো ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন দেখার সময় একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগের প্রমাণ– যা এখনও বিজ্ঞানের কাছে এক রহস্য।
ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক নিউরোটেক কোম্পানি রেমস্পেস, যারা মূলত লুসিড ড্রিমিং (স্বপ্নের মধ্যে সচেতন থাকা) ও ঘুমের বিকাশ নিয়ে কাজ করে। তারা জানিয়েছে, ইতোমধ্যে দু’বার দু’জন ব্যক্তিকে লুসিড ড্রিমে প্রবেশ করিয়ে একটি সাধারণ বার্তা আদান-প্রদান করাতে পেরেছে।
কল্পকাহিনির মতো এক স্বপ্নপরীক্ষা
রেমস্পেসের গবেষকরা দাবি করেন, তারা এমন এক প্রযুক্তি তৈরি করেছেন; যার মাধ্যমে দু’জন ব্যক্তি লুসিড ড্রিম অবস্থায় একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পেরেছেন। স্বপ্ন এখনও মানবতার জন্য এক বিশাল রহস্য। ঘুমের সময় আমাদের মস্তিষ্কে বিভিন্ন উজ্জ্বল ভাবনা, দৃশ্য, অনুভূতি ও কল্পনা গঠিত হয়। আমরা প্রায় সবাই স্বপ্ন দেখি, যদিও ঘুম ভাঙার পর তা মনে থাকে না। বিজ্ঞানীরা বলেন, স্বপ্নের মাধ্যমে মস্তিষ্ক আমাদের অনুভূতি ও চিন্তা প্রক্রিয়া করে, স্মৃতি দর্শন করে এবং বাস্তব জীবনে এর প্রস্তুতি নেয়।
স্বপ্নের মাধ্যমে যোগাযোগ
রেমস্পেসের দাবি, গত ২৪ সেপ্টেম্বর, গবেষণায় অংশগ্রহণকারীরা নিজ নিজ বাড়িতে ঘুমাচ্ছিলেন, তখন রেমস্পেসের তৈরি বিশেষ যন্ত্র ওয়াইফাইয়ের মাধ্যমে দূর থেকে তাদের মস্তিষ্কের তরঙ্গ, রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা, হৃদস্পন্দন ও শ্বাস-প্রশ্বাস রেকর্ড করে। যখন তাদের সার্ভার শনাক্ত করে যে, একজন অংশগ্রহণকারী লুসিড ড্রিমে প্রবেশ করেছে, তখন তারা একটি র্যানডম শব্দ তৈরি করে সেটি কানে দেওয়া ইয়ারবাডের মাধ্যমে তাকে শুনিয়ে দেয়। কোম্পানি শব্দটি প্রকাশ করেনি– এটি শুধু ওই ব্যক্তি জানতেন এবং স্বপ্নে পুনরায় উচ্চারণ করেন বলে দাবি করা হয়েছে। এরপর সেই প্রতিক্রিয়া সার্ভারে সংরক্ষণ করা হয়। আট মিনিট পরে, দ্বিতীয় অংশগ্রহণকারী লুসিড ড্রিমে প্রবেশ করলে, সার্ভার থেকে তাঁকে সেই রেকর্ডকৃত বার্তা পাঠানো হয়, যা তিনি ঘুম থেকে উঠে বলেন এভাবেই স্বপ্নে প্রথমবারের মতো একটি ‘যোগাযোগ’ সম্পন্ন হয়। রেমস্পেস জানায়, ‘আমরা একটি ঐতিহাসিক মাইলফলক অর্জন করেছি, এতে লুসিড ড্রিমের মাধ্যমে মানবযোগাযোগ ও সম্ভাবনার এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হতে পারে।’
লুসিড ড্রিম কী?
লুসিড ড্রিম তখন হয়, যখন কোনো ব্যক্তি স্বপ্ন দেখার সময় সচেতন থাকেন যে, তিনি স্বপ্ন দেখছেন। ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক জানায়, এটি সাধারণত ঘুমের ‘র্যাপিড আই মুভমেন্ট’ ধাপে ঘটে, যেখানে সবচেয়ে প্রাণবন্ত স্বপ্ন দেখা যায়। এ অবস্থায় মানুষ নিজের ইচ্ছেমতো স্বপ্নে কাজ করতে পারেন, পরিকল্পিতভাবে কিছু করতে পারেন।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক কামাল চৌধুরী বলেন, ‘যে কোনো বৈজ্ঞানিক গবেষণার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো– যে তথ্যগুলো পাওয়া যাচ্ছে, তা কতটা নির্ভরযোগ্য। অর্থাৎ, এই গবেষণা অন্য কেউ অন্য কোনো জায়গায় করলে একই ফল দেবে কিনা। ঘুমের মধ্যে যোগাযোগের বিষয়টা নিশ্চিত হতে আরও গবেষণার দরকার।’ তিনি আরও বলেন, ‘বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে, মোটা দাগে ঘুমের দুইটা ভাগ আছে– এক. ননরেম ঘুম, যখন আমাদের চোখের মণি নড়ে না; দুই. রেম ঘুম, এ পর্বে আমাদের চোখের মণি নড়াচড়া করে। এ সময়ে মানুষ স্বপ্ন দেখে। এই স্বপ্নও দুই রকমের। লুসিড ড্রিম; যে স্বপ্নগুলো একদম বাস্তবের মতো জলজ্যান্ত। এমন এক স্বপ্ন যা দেখার পর ঘুম থেকে উঠে মনে হবে আসলেই এমনটি ঘটেছে, এটি বাস্তব। আরেকটি স্বপ্ন হলো নন লুসিড ড্রিম। এ স্বপ্নগুলো অবাস্তব। ঘুম ভাঙার পর বেশির ভাগ সময়েই আমরা স্বপ্নের কথা মনে করতে পারি না। লুসিড ড্রিমের ক্ষেত্রে আমরা তা মনে রাখতে পারি।’
প্রথম পরীক্ষার সাফল্যের পর, রেমস্পেসের সিইও মাইকেল রাদুগা (৪০) দাবি করেন, গত ৮ অক্টোবর আরও দু’জনের সঙ্গে একই ধরনের যোগাযোগ সম্ভব হয়। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘আগে স্বপ্নে যোগাযোগ ছিল বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি, আগামী দিনে এটা এতটাই স্বাভাবিক হয়ে যাবে যে, আমাদের জীবনে এটি ছাড়া কল্পনাই করা যাবে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, র্যাপিড আই মুভমেন্ট বা আরইএম ঘুম এবং এর সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয়, লুসিড ড্রিম আগামী দিনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার পর বড় শিল্প হতে যাচ্ছে।’
যদিও রেমস্পেস এখনও জানায়নি তাদের প্রযুক্তি কীভাবে কাজ করে, তবে তারা সম্প্রতি ফেসবুকে জানিয়েছে, ‘লুসিড ড্রিমে যোগাযোগ’ নিয়ে একটি গবেষণাপত্র প্রস্তুত হয়েছে এবং তা একটি বৈজ্ঞানিক জার্নালে পর্যালোচনার জন্য জমা দেওয়া হয়েছে– প্রকাশ হতে সময় লাগবে দুই থেকে ছয় মাস। তবে এখনও এই প্রযুক্তির কোনো বাহ্যিক বৈজ্ঞানিক পর্যালোচনা হয়নি এবং অন্য কেউ এ পরীক্ষা পুনরাবৃত্তি করতে পারেননি।
রাদুগা যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম আমেরিকান ব্রডকাস্টিং করপোরেশনকে বলেছেন, তাঁর প্রত্যাশা– এ ধরনের প্রযুক্তি আগামী কয়েক বছরের মধ্যে মোবাইল ফোনের মতো সাধারণ হয়ে যাবে। ‘মানুষ নিজেদের জীবন এসব ছাড়া কল্পনা করতে পারবে না, কারণ এটি তাদের জীবনকে আরও উজ্জ্বল, আরও বৈচিত্র্যময় করে তুলবে। এটি মানুষের জীবনমান এমনভাবে বাড়িয়ে দেবে যে, তারা এটি ছাড়া নিজেদের কল্পনাই করতে পারবে না। আমাদের শুধু এগুলো উন্নত করতে হবে– এটি শুধু সময়ের ব্যাপার।’
২০০৭ সালে রাশিয়ায় প্রতিষ্ঠিত হয় রেমস্পেস এবং ছয় মাস আগে যুক্তরাষ্ট্রে স্থানান্তরিত হয়, এখন লুসিড ড্রিমিংয়ে অভিজ্ঞ বা আগ্রহী নতুন অংশগ্রহণকারীদের খুঁজছে।
স্বপ্ন-যোগাযোগের ভবিষ্যৎ
ঘুমের মধ্যে মানুষের যোগাযোগ একসময়ে নিছক কল্পবিজ্ঞান মনে হতো। এখন বিজ্ঞান এটিকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার চেষ্টা করছে। কল্পনা করুন– হাতের ফোনে মেসেজ না পাঠিয়ে, সরাসরি কারও স্বপ্নে ঢুকে তাঁর সঙ্গে ঘুমের মধ্যে সময় কাটানো, কথা বলা যাচ্ছে।
এই ভাবনা যেন স্বপ্নের মতো। ইতোমধ্যে কিছু কোম্পানি মানুষের চেতনা একটি বিকল্প পরিবেশে স্থানান্তরের প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছে। একবার তা সফল হলে, সম্ভাবনার কোনো শেষ থাকবে না– মানবসভ্যতার বিবর্তন নতুন ধাপে প্রবেশ করবে।
লুসিড ড্রিমের মাধ্যমে নানারকম প্রয়োগ সম্ভব– শরীরগত সমস্যা সমাধান থেকে শুরু করে দক্ষতা অর্জন পর্যন্ত। আগের এক গবেষণায় রেমস্পেস দেখিয়েছে, মুখের পেশিতে সূক্ষ্ম সাড়া থেকে স্বপ্নে উচ্চারিত শব্দ শনাক্ত করা সম্ভব। এখান থেকেই ‘রেমিও’ নামে এক স্বপ্ন-ভাষার জন্ম, যা সেন্সরের মাধ্যমে শনাক্ত করা যায়।
লুসিড ড্রিমে যে র্যানডম শব্দ শোনানো হয় অংশগ্রহণকারীদের, সেখানে ‘রেমিও’ স্বপ্ন-ভাষা ব্যবহার করা হয়। রেমস্পেস জানায়, এই সাফল্য এসেছে পাঁচ বছরের গবেষণা ও প্রযুক্তি উন্নয়নের পর। গবেষকরা প্রথম পরীক্ষার পর থেকে প্রতিটি পর্যায়ে প্রযুক্তি আরও উন্নত করেছেন। এবার তাদের লক্ষ্য আরও বড়– লুসিড ড্রিমে রিয়েল-টাইম যোগাযোগ। যদিও এটি অনেক জটিল, গবেষকদের আশা, আগামী কয়েক মাসেই তারা সফল হবেন।
শেষ কথা
যেখানে স্বপ্নে যোগাযোগ এতদিন ছিল সায়েন্স ফিকশন সিনেমা বা উপন্যাসের বিষয়; এই পরীক্ষা সেটিকে বাস্তবের কাছাকাছি নিয়ে এসেছে। যদি অন্যান্য বিজ্ঞানী ও প্রতিষ্ঠান একে যাচাই করে, তবে এটি আমাদের দৈনন্দিন জীবনের ধরনই বদলে দিতে পারে– যেখানে ঘুমের মাঝেও আমরা অন্যের সঙ্গে কথা বলতে পারব। এখনই অতি উত্তেজিত না হয়ে সতর্ক আশাবাদী হওয়াই ভালো– প্রযুক্তিটির সাফল্য এখনও গবেষণাগারে পর্যালোচনার অপেক্ষায়; তাতেও একে পুরোপুরি বাস্তব করতে দশককাল লেগে যেতে পারে। v