পিরিয়ড চলাকালে স্বাস্থ্যসম্মত পণ্য থেকে বঞ্চিত দেশের তিন চতুর্থাংশ নারী
Published: 7th, February 2025 GMT
বাংলাদেশে মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় সমস্যা ও সুযোগ নিয়ে ‘ওয়াটারএইড বাংলাদেশ’ এর গবেষণায় দেখা যায়, পিরিয়ড চলাকালে স্বাস্থ্যবিধি পণ্য থেকে বঞ্চিত দেশের তিন চতুর্থাংশ নারী। যার অন্যতম কারণ, ক্রয়ক্ষমতা, সচেতনতার অভাব, মাসিক নিয়ে কুসংস্কার এবং নিরাপদ ও সঠিক মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর অভাব।
বুধবার রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ওয়াটারএইড বাংলাদেশ পরিচালিত গবেষণার ফলাফল ও পর্যালোচনায় এসব তথ্য জানানো হয়। গবেষণায় নিম্ন আয়ের নারী এবং মেয়েদের জন্য উল্লেখযোগ্য অসুবিধাগুলো তুলে ধরা হয়।
দেশের ৩ জেলার নারীদের ওপর পরিচালিত গবেষণায় জানা গেছে, বাংলাদেশে ৭১ শতাংশ নারী এবং মেয়ে তাদের শেষ তিনটি মাসিকে অন্তত একবার স্যানিটারি প্যাড ব্যবহার করেছেন। এদের অনেক বলেছেন, তারা বাইরে যাওয়ার সময় প্যাড ব্যবহার করলেও ঘরে থাকার সময় কাপড় ব্যবহার করেন, কারণ স্যানিটারি প্যাডের উচ্চমূল্যের কারণে এটি অনেকের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। ৯১ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, তারা স্যানিটারি পণ্যের উচ্চ খরচের কারণে এখনও মাসিকের সময় কাপড় ব্যবহার করেন।
গবেষণাটি আরও দেখিয়েছে, বিকল্প মাসিক ব্যবস্থাপনা পণ্য সম্পর্কে সচেতনতার অভাব রয়েছে। মাত্র ২৭ শতাংশ মহিলা পুনঃব্যবহারযোগ্য স্যানিটারি প্যাড সম্পর্কে জানেন এবং ১৩ শতাংশ মেনস্ট্রুয়াল কাপ সম্পর্কে জানেন। কিন্তু এই বিকল্প পণ্যের ব্যবহার খুব কম, যেখানে সচেতনতার অভাব, উচ্চ খরচ এবং সীমিত প্রাপ্যতা প্রধান প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করছে।
এছাড়াও সরকারের সহায়ক নীতিমালার অভাব এবং এই শিল্পে বিনিয়োগের অভাব, এই বিকল্প পণ্যগুলির পণ্যের বাজার বৃদ্ধির পথে বাধা সৃষ্টি করছে। কাঁচামালের অভাব, আমদানি সীমাবদ্ধতা এবং স্থানীয় উৎপাদনের সীমিত সক্ষমতার কারণে সাশ্রয়ী এবং পরিবেশবান্ধব পণ্য উৎপাদন আরও কঠিন হচ্ছে।
গবেষণায় দেখা যায়, কুসংস্কার এবং অপর্যাপ্ত অবকাঠামো মহিলাদের জন্য মাসিক পণ্য পাওয়া আরও কঠিন করে তোলে। ৭৭ শতাংশ নারী সামাজিক নিয়মকানুন, অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ এবং স্কুল ও কর্মস্থলে সঠিক সুবিধার অভাবের কারণে এমএইচএম পণ্য পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হন। এছাড়াও, স্যানিটারি প্যাডের ব্যাপক ব্যবহারের কারণে পরিবেশগত উদ্বেগ সৃষ্টি হচ্ছে। অপর্যাপ্ত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির কারণে পরিবেশের ক্ষতি ও স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে।
এই সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য, গবেষণা রিপোর্টে বেশ কয়েকটি সুপারিশ করা হয়েছে। নীতিনির্ধারকদের স্যানিটারি পণ্যের দাম কমানো এবং ভর্তুকি বৃদ্ধি করা উচিত যাতে বিকল্প পণ্য সবার জন্য সাশ্রয়ী হয়। পরিবেশবান্ধব পুনঃব্যবহারযোগ্য স্যানিটারি পণ্যের প্রসারের জন্য আরও প্রচারণা চালানো দরকার, পাশাপাশি তাদের উপকারিতা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য শিক্ষামূলক প্রচারণা চালানো উচিত। স্কুল এবং কর্মস্থলে, মাসিক স্যানিটেশন ব্যবস্থাপনার জন্য নিরাপদ স্থান তৈরি করা অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত। এছাড়াও, সমাজ-ভিত্তিক প্রোগ্রামে পুরুষদের অন্তর্ভুক্ত করা উচিত যাতে মাসিক সংক্রান্ত কুসংস্কারের বিরুদ্ধে লড়াই করা যায়। সংবাদ বিজ্ঞপ্তি।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ন র জন য পর ব শ ব কল প
এছাড়াও পড়ুন:
তিনি হিমালয়ে উঠেছেন সাইকেল নিয়ে
বরফের ওপর সাইকেল নিয়ে সন্তর্পণে এগোচ্ছেন। একটু হড়কে গেলেই অবধারিত মৃত্যু, গিরিখাত বেয়ে একেবারে নিচে। কখনো সাইকেল চালিয়ে, কখনো কাঁধে নিয়ে হাঁটতে হচ্ছিল। এভারেস্ট অঞ্চলের কংমা লা পাস অতিক্রম করার সময় একটু ভয় ভয় লাগছিল। কারণ, এখানটায় এসে মৃত্যুর অনেক ঘটনা আছে। ট্রেইলটা বেশ কঠিন। ১০ কেজি ওজনের সাইকেল কাঁধে, আর ছয়–সাত কেজির ব্যাগ নিয়ে ওপরে উঠতে হচ্ছিল।
‘ভয়ের সঙ্গে আবার সুন্দর মুহূর্তও আছে। পাসগুলো থেকে নামার সময় ভালো লাগত। অপূর্ব সুন্দর সব দৃশ্য,’ বলছিলেন আরিফুর রহমান উজ্জল (৪১)। কুমিল্লার মানুষ, উজ্জল নামেই পরিচিত। গত ৭ সেপ্টেম্বর থেকে সাইকেল নিয়ে চষে বেড়িয়েছেন এভারেস্ট অঞ্চলসহ হিমালয়ের নানা ট্রেক। এসব ট্রেকে সাধারণত পর্বতারোহীরা পায়ে হেঁটে যান। উজ্জল গেছেন দ্বিচক্রযানে চেপে। গতকাল রোববার সন্ধ্যায় সর্বশেষ কথা হয় তাঁর সঙ্গে। তিনি প্রায় দুই মাসের অভিযান শেষ করে কাঠমান্ডুতে এসেছেন।
চ্যালেঞ্জিং এই অভিযানে ছিল কাদামাখা পাথুরে পথ, অতি উচ্চতা, অক্সিজেন স্বল্পতা, ভূমিধস, বরফে ঢাকা পথ, গ্লেসিয়ার ও একদম খাড়া টানা একেকবার ৩–৪ কিলোমিটার রাস্তা। অক্সিজেন স্বল্পতার কারণে রাতে না ঘুমিয়ে পরদিন ট্রেক করতে হয়েছে। বরফ ও রৌদের তাপ, জ্বর, হাতে ফ্রস্টবাইট, পায়ে মাসাল ক্র্যাম্প, বৃষ্টি মাথায় নিয়ে, বাতাসের সঙ্গে যুদ্ধ করে তাঁকে একেকটা পাস অতিক্রম করতে হয়েছে। অনেক পর্বতারোহীর কাছে এটি স্রেফ পাগলামি। এই অভিযানে উজ্জলকে কখনো সাইকেল চালাতে হয়েছে, কখনো কাঁধে বইতে হয়েছে, কখনোবা ঠেলে উপরে তুলতে হয়েছে।
মানাসলু সার্কিট ট্রেইলপর্বতারোহণ এমনিতেই কষ্টসাধ্য কাজ। নিজের শরীরটা ওপরে টেনে তোলাই যেখানে বিরাট চ্যালেঞ্জ, সেখানে উজ্জল সাইকেল নিয়ে এক অভিযানেই ঘুরেছেন এভারেস্টসহ হিমালয়ের তিনটি ট্রেইলে। তিনি ঘুরেছেন নেপালের মানাসলু ও অন্নপূর্ণা সার্কিট ট্রেইল। নেপালের পশ্চিমের এই দুটি ট্রেইলে ঘোরা শেষ করে পাড়ি দিয়েছেন ৭০০ কিলোমিটার পূর্বে এভারেস্টের তিন পাসে। পাস তিনটি হচ্ছে কংমা লা পাস, চো লা পাস এবং রেঞ্জো লা পাস।
৭ সেপ্টেম্বর থেকে অভিযান শুরু করেন এই সাইক্লিস্ট। তার আগে ঢাকা থেকে বিমানে করে গেছেন কাঠমান্ডু। শুরুতেই মানাসলু সার্কিট ট্রেইল। এটা গিরিপথ, রাস্তা। মানাসলু পর্বতকে ঘিরে যে রাস্তা সেটাকে সার্কিট বলে। এই মানাসলুর সর্বোচ্চ বিন্দু, যার উচ্চতা ১৭ হাজার ৩৯০ ফুট। সেখানে নিজের প্রিয় দ্বিচক্রযানটির চাকার ছাপ রেখে এসেছেন। ১৭৪ কিলোমিটার দীর্ঘ সার্কিট ট্রেইলটি শেষ করতে তাঁর ১১ দিন লেগেছে।
রেঞ্জো লা পাস