প্রথম সন্তান জন্ম নেবে, তাই বাড়তি উচ্ছ্বাস ছিল থৈইচিং মারমার (২২)। অনাগত সন্তানকে নিয়ে নানা আলাপে মেতে থাকতেন তিনি। তবে সন্তানের মুখ দেখার আগেই গুলিতে প্রাণ হারান থৈইচিং। পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে হয় তাঁকে। তাঁর মৃত্যুর তিন সপ্তাহ পর গতকাল রোববার তাঁর স্ত্রী টুনি মারমা একটি কন্যাসন্তানের জন্ম দিয়েছেন।

গত ২৭ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ির গুইমারার রামেসু বাজারে গুলিতে নিহত হন থৈইচিং মারমা। প্রথম সন্তান জন্মের পর তাঁর ঘর আনন্দে ভরে ওঠার কথা। তবে থৈইচিংয়ের অনুপস্থিতির কারণে এমন আনন্দের মুহূর্তেও শোকে স্তব্ধ ঘরটি।

আমার ছেলেটা সন্তানের মুখ দেখে যেতে পারল না। তার সন্তানটাও বাবাকে দেখল না। বিষয়টি ভাবতেই কষ্টে বুক ফেটে যাচ্ছে।হলাচেই মারমা, নিহত থৈইচিংয়ের বাবা

পাহাড়ি এক কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠার পর এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ২৭ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়িতে ‘জুম্ম ছাত্র-জনতা’র ব্যানারে অবরোধ কর্মসূচি ডাকা হয়। এই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে রামেসু বাজারে বিক্ষোভ ও সহিংসতার ঘটনা ঘটে। সহিংসতার আগুনে পুড়ে যায় বাজার এলাকার অর্ধশত বসতবাড়ি ও ৪০টির মতো দোকান। সেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে অবরোধকারীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে ছিল স্থানীয় একটি পক্ষ। এ সময় গুলিতে থৈইচিংসহ ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর তিনজন নিহত হন। আহত হন সেনাবাহিনীর ১ মেজরসহ অন্তত ২০ জন।

থৈইচিং রামেসু বাজার এলাকারই বাসিন্দা। সাজেক রুটে জিপ চালিয়ে সংসার চালাতেন তিনি। মা, বাবা, ভাই ও স্ত্রীকে নিয়ে বসবাস করতেন। তিন বছর আগে টুনি মারমাকে বিয়ে করেন থৈইচিং।

থৈইচিংয়ের বাবা হলাচেই মারমা গতকাল বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার ছেলেটা সন্তানের মুখ দেখে যেতে পারল না। তার সন্তানটাও বাবাকে দেখল না। বিষয়টি ভাবতেই কষ্টে বুক ফেটে যাচ্ছে। ’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের বয়স হয়েছে, কদিন বাঁচি ঠিক নেই। বউমার বয়স খুব কম। তার একটি চাকরির ব্যবস্থা যদি হতো, সন্তানটাকে নিয়ে সে অন্তত কিছুটা নিশ্চিন্তে থাকতে পারত।’

থৈইচিং নিহত হওয়ার ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে চোখ টলমল হয়ে ওঠে হলাচেই মারমার। তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে কোনো রাজনীতি করত না। সেদিন বেলা সোয়া ১১টার দিকে বাজারে যাওয়ার জন্য বের হলো, কিছুক্ষণ পরই খবর পেলাম ওর গায়ে গুলি লেগেছে। এরপর শুনলাম, আমার ছেলে আর নেই।’

টুনি মারমা বলেন, ‘সন্তানকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল থৈইচিংয়ের। বলত, যেকোনোভাবে সন্তানকে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করবে। তার সেই স্বপ্ন পূরণ হলো না। আমার মেয়েটা জন্মের আগেই বাবাকে হারাল।’ তিনি আরও বলেন, ‘বাড়ি থেকে বের হওয়ার ৫ থেকে ১০ মিনিট পরই শুনি ও গুলি খেয়েছে। এভাবে আমার স্বামীর মৃত্যু হবে, কখনো স্বপ্নেও ভাবিনি। আমি চাই আমার সন্তানের মতো কোনো শিশু বাবাহারা না হোক।’

খাগড়াছড়িতে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর এক কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগটি ওঠে গত ২৪ সেপ্টেম্বর। ওই দিন রাত ১১টার দিকে অচেতন অবস্থায় তাকে একটি খেত থেকে উদ্ধার করেন স্বজনেরা। রাতেই তাকে খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় শয়ন শীল নামের একজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তবে কিশোরীর শারীরিক পরীক্ষায় ধর্ষণের আলামত মেলেনি বলে জানায় মেডিকেল বোর্ড।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সন ত ন র ম আম র ছ ল র সন ত ন

এছাড়াও পড়ুন:

বন্দরে ইউএনও ও ওসির বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত  

ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে রদবদল শুরু হয়েছে। এর অংশ হিসেবে  বন্দর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো.মোস্তাফিজুর রহমান ও বন্দর থানার অফিসার ইনচার্জ মো.লিয়াকত আলীকে বদলী করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) দুপুরে বন্দর উপজেলা অফিসার্স ক্লাবের আয়োজনে উপজেলা অডিটোরিয়ামে উল্লেখিত দুই কর্মকর্তার বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বিদায়ী সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সহকারী কমিশনার(ভুমি) রহিমা আক্তার ইতি, প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা.সরকার আশ্রাফুল ইসলাম, নৌ পুলিশের পরিদর্শক সালেহ আহমেদ,নির্বাচন অফিসার শেখ ফরিদ,প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুল আলম জাহিদ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন সিদ্দিকী, প্রকৌশলী সামিন ইশরাক,মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার কাইয়ুম খান, সমাজসেবা কর্মকর্তা ফয়সাল কবির, যুব উন্নয়ন অফিসার মো.শাহেন শাহ, খাদ্য নিয়ন্ত্রক মুশফিকুর রহমান সহ অন্যান্য কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, শিক্ষক ও বিভিন্ন  শ্রেনী পেশার প্রতিনিধিবৃন্দ।

অনুষ্ঠানে বিদায়ী দুই অফিসারের কার্যকালে জনস্বার্থে বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপের স্মৃতিচারন করে বক্তারা বলেন,চরম টালমাটাল অবস্থায় ইউএনও মো. মোস্তাফিজুর রহমান  এবং ওসি লিয়াকত আলী কর্মস্থলে যোগদান করেন।দু’জনেই স্ব-স্ব দায়িত্ব গ্রহণের পরপর গণ অভ্যুত্থান পরবর্তী পরিস্থিতিতে জনমনে স্বস্তি ফেরাতে নিরলস কাজ করেছেন।অনেকাংশেই তারা সফলভাবে কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছেন। স্বল্প সময়ের মধ্যে উপজেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বন্দরের মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত ও পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সক্ষম হয়েছেন। 
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আসন্ন নির্বাচন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য অ্যাসিড টেস্ট: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • সামনের নির্বাচন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য বড় টেস্ট: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • ভারত-সমর্থিত সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর ৯ সদস্যকে হত্যার দাবি পাকিস্তান নিরাপত্তা বাহিনীর, অভিনন্দন শাহবাজের
  • ৩৩ বছর পর মুর্শিদাবাদে ‘বাবরি মসজিদের’ ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন শনিবার
  • বন্দরে ইউএনও ও ওসির বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত