জেনারেল এডুকেশন ডিপ্লোমা (জিইডি) নিয়ে অস্বস্তিতে পড়েছে সরকার। মাত্র ছয় মাসের এই আমেরিকান ডিপ্লোমা করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। তবে বাদ সেধেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। তাদের ভাষ্য, দুই বছরের উচ্চ মাধ্যমিকে ১২ বিষয় শেষ করে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পান। কিন্তু জিইডিতে মাত্র ছয় মাসে পড়ানো হয় চার বিষয়। তাই এ কোর্সকে উচ্চ মাধ্যমিক সমমান দেওয়ার সুযোগ নেই। জিইডির ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি না করাতে নির্দেশনাও দিয়েছে ইউজিসি।

মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের বিভিন্ন বিদেশি ডিগ্রির সমমান সনদ দেয় ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের একটি ইকুইভ্যালেন্স কমিটি। সেখানেও ইউজিসির প্রতিনিধি জিইডি ডিগ্রির উচ্চ মাধ্যমিক সমমানে আপত্তি জানিয়েছেন।

রাজধানীর ধানমন্ডির অভিভাবক এম এ মতিন ও তাঁর স্ত্রী মরিয়ম ইয়াসমিন তাদের ছেলে শাহরোজ ফারহানকে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ দিতে হাইকোর্টে রিট করেন। পরে তাকে কেন ভর্তির সুযোগ দেওয়া হবে না, তা জানতে চার সপ্তাহের রুল জারি করেন আদালত।

বিত্তবান পরিবারের সন্তানরা ছয় মাসের জিইডি কোর্স করে বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্ডার গ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামে ভর্তির চেষ্টা করে। দেশে সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে দুই বছরের উচ্চ মাধ্যমিক সনদ দরকার। তবে বেশ কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় জিইডি কোর্সের শিক্ষার্থী আন্ডার গ্র্যাজুয়েট গ্রোগ্রামে ভর্তি করলে প্রথমে ২০১৮ সালের এপ্রিলে ভর্তি না করাতে নির্দেশনা দেয়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখালে ২০২৩ সালের জুনে আবারও একই নির্দেশনা দেয় ইউজিসি।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিশ্ববিদ্যালয় উইংয়ের কর্মকর্তারা জানান, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের মৌখিক অনুমোদনের ভিত্তিতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো জিইডি শিক্ষার্থীদের ভর্তি করে আসছে। তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদন দিতে চাইলেও শেষ পর্যন্ত ইউজিসির আপত্তির কারণে পারেননি। বিশ্বের স্বীকৃত অ্যাক্রিডিটেশন বোর্ড ব্রিটিশ পিয়ারসন ও এডেক্সেল জিইডি ডিগ্রির পরীক্ষা ও সনদ দিলে বাংলাদেশে উচ্চ মাধ্যমিক সমমান দিতে আপত্তি নেই বলে জানান তারা।

ইউজিসির গত ৪ নভেম্বরের সভায় বিষয়টি সুরাহায় পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করেন চেয়ারম্যান অধ্যাপক এস এম এ ফায়েজ। ইউজিসির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে কমিটির সদস্য হলেন– ইউজিসির পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান, পরিচালক সুলতান মাহমুদ ভূঁইয়া, ম্যানেজমেন্ট বিভাগের পরিচালক জামিনুর রহমান ও অতিরিক্ত পরিচালক মহিবুল আহসান। গত ২৮ নভেম্বর কমিটি তাদের প্রতিবেদন চেয়ারম্যানের কাছে জমা দেয়।

এতে বলা হয়, আমেরিকান কাউন্সিল ফল এডুকেশন অনুমোদিত হায়ার স্কুল ইকুইভ্যালেন্ট ডিপ্লোমা হলো জিইডি। এর পরীক্ষা হয় মূলত রাইটিং স্কিলস, লিটারেচার, সোশ্যাল স্টাডিজ, সায়েন্স ও ম্যাথমেটিক্স বিষয়ের সমন্বয়ে। যুদ্ধবিগ্রহ, ঝড়-জলোচ্ছ্বাস ও মহামারির কারণে পড়ালেখার স্বাভাবিক পরিবেশ না থাকলে, সেখানে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগ সম্প্রসারণে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে জিইডি ডিগ্রির সুযোগ দেওয়া হয়।

বাংলাদেশে এখন সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা এবং স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এখানে এইচএসসি পর্যায়ে দুই বছরের কোর্সের সঙ্গে মাত্র তিন থেকে ছয় মাসের কোর্সের সমমান মর্যাদা দেওয়া সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে চরম বৈষম্যের শামিল বলে মনে করে কমিটি।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা সরকার অনুমোদিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ে শিক্ষা বোর্ডের মাধ্যমে একটি নিয়মতান্ত্রিকভাবে পরীক্ষা দিয়ে ডিগ্রি অর্জন করে। অন্যদিকে, জিইডির শিক্ষার্থীরা এক দিনের জন্যও সরাসরি শ্রেণিকক্ষে পাঠ গ্রহণ করে না। অনলাইনে পড়াশোনা করে সনদ অর্জন করে। এ কোর্স কারিকুলাম ও পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়ে সরকার এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় অবগত নয়। কে পরীক্ষা নিচ্ছে, কে মূল্যায়ন করছে তাও অস্পষ্ট।

জানতে চাইলে কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন সমকালকে বলেন, ‘জিইডি ডিপ্লোমার উচ্চ মাধ্যমিক সমমান দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এর আইনগত কোনো ভিত্তিও নেই।’ কমিটির সদস্য সচিব মহিবুল আহসান বলেন, জিইডি কোর্সের শিক্ষার্থীরা সরাসরি কোনো শিক্ষকের ক্লাসরুম শিক্ষা পায় না। স্বাভাবিক পড়ালেখার পরিবেশে এ সুযোগে বৈষম্য দেখা দেবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: সরক র র সদস য ইউজ স র ব সরক র ছয় ম স পর চ ল পর ক ষ

এছাড়াও পড়ুন:

কথিত সংস্কার কাদের জন্য, কিসের জন্য: মাহমুদুর রহমান মান্না

‘এরা সংস্কারের কথা বলে, কিন্তু বাজেটে তার প্রতিফলন নেই। অর্থনীতিতে নেই, পুলিশের কোনো সংস্কার হচ্ছে না, শিক্ষায় নেই, কোথাও নেই। তাহলে এই সংস্কারটা কী?’ এ প্রশ্ন তুলেছেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না।

অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার প্রচেষ্টা নিয়ে আরও প্রশ্ন তুলে মান্না বলেছেন, ‘টাস্কফোর্স আছে, কিন্তু তার কোনো মূল্য নেই। পুলিশ বা প্রশাসনে কী সংস্কার হচ্ছে, সেটাও জানানো হচ্ছে না। কোনো কমিটি পর্যন্ত নেই। তাই প্রশ্ন জাগে, এই কথিত সংস্কার কাদের জন্য, কিসের জন্য?’

আজ সোমবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে আয়োজিত এক সেমিনারে এসব কথা বলেন মান্না। ‘বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং কল্যাণ রাষ্ট্রের ভাবনায় বাজেট ২০২৫-২৬’ শীর্ষক এ সেমিনারের আয়োজন করে নাগরিক ঐক্য।

আলোচনায় বাজেট নিয়ে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বৈষম্য নিরসনের কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেই। বাজেট না হয়ে এটা রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রতিফলন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকে এমন কোনো কথা হয়েছে কি না, যেটা বাইরে বলা যাবে না, সেই প্রশ্ন করেছেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি। এরপরও নির্বাচনের তারিখের বিষয়ে দুই পক্ষ সম্মত হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন মান্না।

নির্বাচন ছাড়া যাওয়ার কোনো পথ নেই উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, আন্তর্জাতিক বা ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি যদি হঠাৎ কিছু ঘটিয়ে দেয়, সেটা বলা যায় না। কিন্তু আমরা তো জানি, সেই ঘটনা ঘটলেও নির্বাচন ছাড়া কোনো পথ নাই। সেই অর্থে মাইনাস নির্বাচন-এমন ধারণার কোনো ভিত্তি নেই। নির্বাচন ইস্যুতে বরফ জমে ছিল, এখন সেটি গলতে শুরু করেছে।

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মান্না বলেন, ‘বিএনপি বলেছিল ওই তারিখে নির্বাচন হতে পারবে না। সরকার বলেছিল একমাত্র ওই দল বিরোধিতা করছে। এখন যেভাবে কথা হচ্ছে, মনে হচ্ছে বরফ গলছে। আমি এটা ইতিবাচক মনে করি। আমি গণতন্ত্র চাই, সেই জন্যই নির্বাচনের ওপর এত জোর দিচ্ছি।’

পাচার করা অর্থ ফেরত আনার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ঘাটতি দেখছেন মাহমুদুর রহমান মান্না। তিনি বলেন, ‘আমরা পৃথিবীর যেখানেই যাই কেউ তো আমাদের ফেরত দিচ্ছে না। সবাই আমাদের ডাকছে আসো, তোমাদের কী লাগে সংস্কারের জন্য, কী করতে হবে, দেশটা বদলাবার জন্য কী করতে হবে, একদম সর্বোচ্চ জায়গা থেকে বলা হয়েছে। অথচ দেখলেন এই পাচার করা অর্থ ফিরিয়ে আনবার জন্য ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী (যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার) কী আচরণ করলেন। উনি ঠিক করেছেন নাকি আমরা কোনো কথাবার্তা না বলে গেছি?’

সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। সেখানে লিখিত বক্তব্য দেন নাগরিক ঐক্যের সাংগঠনিক সম্পাদক সাকিব আনোয়ার। সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ কায়সার, গণসংহতি আন্দোলনের নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান, বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, বাংলাদেশ শিক্ষক ইউনিয়নের সভাপতি আবুল বাসার হাওলাদার প্রমুখ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ