জাবিতে ছাত্রদলের ব্যানার ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগ, প্রতিবাদে বিক্ষোভ
Published: 10th, February 2025 GMT
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) আসন্ন ভর্তি পরীক্ষা উপলক্ষে আগত ভর্তিচ্ছু পরীক্ষার্থীদের শুভেচ্ছা জানানো ছাত্রদলের ব্যানার ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেছে শাখা ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা।
আজ সোমবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ রাসেল হলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের নাম সংবলিত ‘ভর্তিচ্ছু পরীক্ষার্থীদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন’ টানানো ব্যানার ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগ আনে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। এর প্রতিবাদে বিকেল ৪টার দিকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ওই হলে অবস্থান নিয়ে পুনরায় ব্যানারটি টানিয়ে দেন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা।
ছাত্রদল সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেদের ১১টি আবাসিক হলে তারা ব্যানার টানিয়েছেন। শেখ রাসেল হলে ছাত্রদলের টানানো ব্যানার ওই হলের এক শিক্ষার্থী ছিঁড়ে ফেলেছেন বলে জানান শাখা ছাত্রদল নেতারা। ওই শিক্ষার্থী নাম শাকিল আলী। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের ৪৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহত যোদ্ধাদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতকরণ ও শহীদ পরিবারের পুনর্বাসন বিষয়ক সেলের সদস্য।
অভিযোগের বিষয়ে শাকিল আলী বলেন, ‘ক্যাম্পাস থেকে ছাত্রলীগকে বিতাড়নের পর আমরা হলের সাধারণ শিক্ষার্থীরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, কোনো রাজনৈতিক দলের কার্যক্রম চলতে দেওয়া হবে না। এ কারণেই আমি ও কয়েকজন শিক্ষার্থী মিলে ছাত্রদলের ব্যানারটি খুলে রেখেছিলাম। যে দলই হোক না কেন, হলের অভ্যন্তরে আমরা কোনো রাজনৈতিক কার্যক্রম চলতে দেব না।’
এ বিষয়ে শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন মোহাম্মদ বাবর বলেন, ‘আমরা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সব রাজনৈতিক দলের সহাবস্থানে বিশ্বাসী। যারা ছাত্রদলের ব্যানার ছিঁড়েছে তারা গর্হিত কাজ করেছেন। এ ব্যাপারে আমরা হল প্রভোস্ট এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ জানিয়েছি।’
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক রাশিদুল আলম বলেন, ‘ব্যানার ছিঁড়ার কাজটি উচিৎ হয়নি। আমি ছাত্রদল নেতাদের উত্তেজিত না হয়ে হল প্রভোস্ট বরাবর লিখিত অভিযোগ দিতে বলেছি। লিখিত অভিযোগের পর আমরা ব্যবস্থা নেব।’
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ছ ত রদল ছ ত রদল র ব য ন র ছ ত রদল র ন
এছাড়াও পড়ুন:
পরিবারের মামলা নেয়নি পুলিশ, অপরাধীদের আড়াল করার অভিযোগ
জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলায় চোর সন্দেহে পিটুনিতে এক যুবকের মৃত্যুর ঘটনায় মামলা হয়েছে। তবে মামলার বাদী গ্রাম পুলিশের এক সদস্য ও আসামি অজ্ঞাতনামা। নিহত যুবকের পরিবারের অভিযোগ, প্রকৃত অপরাধীদের আড়াল করার চেষ্টা করছে পুলিশ। এ জন্য হত্যা মামলায় পরিবারের কাউকে বাদী করা হয়নি।
নিহত রিপন মিয়া (৪০) উপজেলার ঝাউগড়া ইউনিয়নের রেহাই পলাশতলা এলাকার মোজাম্মেল হকের ছেলে। তিনি পেশায় ট্রাকচালক ছিলেন। ৫ সেপ্টেম্বর রাতে চোর সন্দেহে গাছের সঙ্গে বেঁধে তাঁকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। পরদিন সকালে ওই ইউনিয়নের রেহাই পলাশতলা এলাকা থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
এ ঘটনায় ৬ সেপ্টেম্বর স্থানীয় গ্রাম পুলিশের সদস্য খোকন রবিদাস বাদী হয়ে মেলান্দহ থানায় ২০০ থেকে ২৫০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা করেন। এ দিকে ৯ সেপ্টেম্বর নিহত ব্যক্তির বাবা মোজাম্মেল হক আদালতে হত্যা মামলার আবেদন করেন। মামলার আরজিতে ১৪ জনের নাম উল্লেখসহ সাত থেকে আটজনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।
মামলার বাদী গ্রাম পুলিশ শ্রী খোকন রবিদাস বলেন, ‘স্থানীয় মেম্বারের মাধ্যমে খবর পাই, একজনকে গণধোলাই দিয়ে মাইরে ফালাইয়্যা রাখছে। ঘটনাস্থলে গিয়ে পুলিশকে খবর দিলাম। পরে পুলিশ লাশ নিয়ে গেল। এ সময় তদন্ত ওসি স্যার আমাকে থানায় যেতে বলেন। আমি থানায় যাওয়ার পর ওসি স্যার আমাকে মামলার বাদী হতে বলেন।’ খোকন রবিদাস জানান, তিনি পুলিশকে নিহত যুবকের পরিবারের সদস্যদের বাদী করার কথা বলেছিলেন। তবে ওসি তখন বলেছিলেন, ‘আচ্ছা অভিযোগ বানিয়ে দিলাম, তোমার কোনো সমস্যা নাই।’ মামলার এজাহারে কী লেখা আছে, এমন প্রশ্নে রবিদাস বলেন, ‘এজাহারের বিষয়টি আমি সঠিকভাবে বলতে পারি না। মামলার এজাহার লেখা সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না।’
এই বিষয়ে মেলান্দহ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) স্নেহাশীষ রায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাদী স্থানীয় গ্রাম পুলিশ। তাঁকে তো বাই–ফোর্স করে বাদী করার সুযোগ নেই। বাদীর কথাগুলো সত্য নয়। আর নিহত ব্যক্তির পরিবার যে বলছে তাঁদের আদালতে মামলা করতে পরামর্শ দিয়েছি—এই বিষয়ও সত্য নয়। ওই সময় নিহত ব্যক্তির পরিবার নাম উল্লেখ করে মামলা করতে চেয়েছিল। যেহেতু বিষয়টি একটা গণপিটুনি ছিল। ফলে অজ্ঞাতনামা আসামিদের নামে মামলা হয়েছে।’
খোকন রবিদাসের করা মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, রিপন মিয়া ওই এলাকার বোরহান উদ্দিনের বাড়িতে গরু চুরি করতে ঢোকেন। এ সময় বাড়ির লোকজন রিপন মিয়াকে দেখতে পেয়ে ডাকাত বলে চিৎকার করতে থাকেন। এতে এলাকার ২০০ থেকে ২৫০ জন লোক ওই বাড়িতে গিয়ে রিপনকে এলোপাতাড়ি কিল–ঘুষি, লাথি ও লাঠি দিয়ে পিটান। পরে এই পিটুনিতে তিনি মারা যান।
এদিকে মোজাম্মেল হকের আরজিতে উল্লেখ হয়েছে, একই এলাকার মো. মাওলানা তিন বছর ধরে সৌদি আরবে থাকার সময় তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে রিপন মিয়ার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হয়ে যায়। মাওলানা বিষয়টি জানতে পেরে দেশে চলে আসেন। ওই বিষয়ে রিপনের সঙ্গে মাওলানার তর্কাতর্কি হয়। এর পর থেকে মাওলানা রিপনকে মারধর ও হত্যার হুমকি দিয়ে আসছিল। ৫ সেপ্টেম্বর রাত ১১টার দিকে রিপন একই এলাকার নুর ইসলামের বাড়িতে যান। পরে দিবাগত রাত একটার দিকে রিপন বাড়ির উদ্দেশে রওনা হন। রাস্তার মধ্যে মাওলানা ও তাঁর লোকজন রিপনকে টানাহেঁচড়া করে বাড়িতে নিয়ে গাছের সঙ্গে বেঁধে ব্যাপক মারধর করেন। এ সময় রিপন ডাক-চিৎকার করতে চাইলে তাঁরা (মাওলানা) চোর ধরেছে বলে চিৎকার শুরু করেন। এ সময় আরও লোকজন গিয়ে রিপনকে পিটিয়ে হত্যা করেন।
মোজাম্মেল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘সকালে যখন শুনছি, আমার ছেলেকে মাইরে ফেলছে। তখন আমি থানায় গিয়েছি। তখন পুলিশ বলে, “আপনারা বসেন, আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ নিয়ে আসি।” পরে সেখান থেকেই লাশ মর্গে পাঠিয়ে দেয় পুলিশ। তাঁরা থানায় এসে আমাকে বলে, “আপনারা আগে মর্গে যান।” আমি মর্গে চলে যাই। সেখান থেকে আবারও থানায় যাই। তখন পুলিশ আমার মামলা নেয়নি। তখন পুলিশ আমাকে আদালতে মামলা করার পরামর্শ দেয়। পরে শুনি থানায় মামলা হয়েছে। দুই দিন পর মামলার কপি পাই। তখন দেখি, মামলার বাদী একজন গ্রাম পুলিশ। পরে আমি আদালতে মামলা করছি।’ মোজাম্মেল হক অভিযোগ করেন, প্রকৃত আসামিদের আড়াল করতেই পুলিশ এই কাজ করেছে।
মোজাম্মেল হকের আইনজীবী মো. তাজউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ৯ সেপ্টেম্বর আদালতে ১৪ জনের নাম উল্লেখসহ ৭ থেকে ৮ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলার আবেদন করা হয়। পরদিন বিচারক অভিযোগ আমলে নিয়ে মেলান্দহ থানাকে এফআইআর করার নির্দেশ দিয়েছেন।
মেলান্দহ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘অজ্ঞাতনামা আসামি হলেও ইতিমধ্যে ঘটনার সঙ্গে জড়িত অনেকের নাম আমরা পেয়েছি। তাঁদের গ্রেপ্তারের চেষ্টাও চলছে। নিহত ব্যক্তির স্বজনেরা যে অভিযোগ করেছেন, কাউকে আড়াল করার চেষ্টা চলছে। বিষয়টি সেই রকম নয়। এই ঘটনার সঙ্গে যাঁরাই জড়িত, তাঁদের আইনের আওতায় অবশ্যই আনা হবে।’
থানায় করা মামলায় নিহত ব্যক্তির পরিবারকে বাদী না করার বিষয়ে ওসি শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘নিহত ব্যক্তির পরিবারকে বাদী না করার বিষয়টি ঠিক হয়নি, এটি আমি বলব না। বাদী বা তথ্যদাতা যে কেউ বাদী হতে পারেন। বাদী যে–ই হোক না কেন, অপরাধীদের পার পাওয়ার সুযোগ নেই।’