অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনের ডাক প্রধান উপদেষ্টার
Published: 10th, February 2025 GMT
অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থাৎ ইনক্লুসিভ সমাজ গঠনের ডাক দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। দোষীদের শাস্তি দেওয়ার নিশ্চয়তা দিয়ে ভুল করা মানুষদের শুধরে নিয়ে সবাই মিলে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য জনগণের প্রতি উদাত্ত আহ্বান রেখেছেন তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, “আমরা অন্যায় করব না। যারা আইন ভঙ্গ করেছে, তারা শাস্তি পাবে। কিন্তু যারা করেনি, তাদের আমরা বলব যে তুমি আমাকে কষ্ট দিয়েছ, কিন্তু আমি তোমাকে দেব না। এই দেশ তোমারও, এই দেশ আমাদের সবার। আমরা সবাই এই মাটির সন্তান।”
মুহাম্মদ ইউনূস সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদ ও আহতদের পরিবারের সঙ্গে এক বৈঠকে দেশবাসীর প্রতি এই আহ্বান জানান। এসময় তিনি ঘোষণা দেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর জন্য অন্তর্বর্তী সরকার আর্থিক সহায়তা অব্যাহত রাখবে।
আরো পড়ুন:
রাজনৈতিক দলগুলোর চাওয়ার ওপর নির্ভর করবে নির্বাচন: প্রেস সচিব
‘রাষ্ট্র মেরামতে এখনো সফলতা দেখাতে পারেনি অন্তর্বর্তী সরকার’
জুলাই বিপ্লবের ২১টি শহীদের পরিবার এবং সাতজন আহত ব্যক্তির হাতে আর্থিক সহায়তার চেক তুলে দেন প্রধান উপদেষ্টা।
অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে ইনক্লুসিভ সমাজ গঠনের বিষয়ে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “যারা ভুল করেছে তাদের সঠিক পথে আনতে হবে। তাদের বোঝাতে হবে যে, তারা যা করেছে তা ভুল ছিল।”
“তাদের বোঝাতে হবে যে তাদের পথ ভুল এবং তারা যা করেছে তার জন্য ক্ষমা চাওয়া উচিত। এভাবেই আমাদের দেশ এগিয়ে যাবে। স্থায়ী সংঘাত আমাদের কেবল পিছিয়ে দেবে।”
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ১৫ বছরের স্বৈরাচারী শাসন ও হত্যাযজ্ঞের অবসান ঘটানো জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর বিরোধ মীমাংসার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমাদের দেশের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে সংঘাত কাটিয়ে ওঠার সক্ষমতার ওপর। আমাদের সবাইকে একসঙ্গে এ (অবস্থা) থেকে বেরিয়ে আসার পথ খুঁজে বের করতে হবে।”
প্রধান উপদেষ্টা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পাশাপাশি দেশের জনগণকে আশ্বস্ত করে বলেছেন, “সব হত্যাকাণ্ড ও গুমের তদন্ত করা হবে এবং দোষীদের বিচারের আওতায় আনা হবে।”
তিনি একইসঙ্গে পরিবারগুলোকে ও দেশবাসীকে সতর্ক থাকতে বলেন, যেন কোনো মহল পুনরায় সহিংসতা বা রক্তপাত ঘটাতে না পারে।
“বিচারের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো তা যেন ন্যায়সঙ্গত হয়, যেন অন্যায় না হয়। আমরা এই সংগ্রাম করেছি, এই ত্যাগ স্বীকার করেছি; কারণ আমরা অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছি। যদি আমরা নিজেরাই অন্যায়ে জড়িয়ে পড়ি, তবে আমাদের ও তাদের মধ্যে তফাত কোথায়,” প্রশ্ন রেখে বলেন প্রধান উপদেষ্টা।
ঢাকা/হাসান/রাসেল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর সরক র গণঅভ য ত থ ন পর ব র আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
৩৬ জুলাইকে জাতীয় মুক্তি দিবস ঘোষণাসহ ১৩ দাবি ইনকিলাব মঞ্চের
ছাত্র আন্দোলনের ৩৬ জুলাইকে জাতীয় মুক্তি দিবস ঘোষণাসহ ১৩ দফা দাবি জানিয়েছে ইনকিলাব মঞ্চ।
সোমবার (১৬ জুন) বেলা সাড়ে ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবির কথা জানায় সংগঠনটি।
সংগঠনটির মুখপাত্র শরিফ ওসমান বিন হাদী বলেন, “আমাদের স্বাধীনতা দিবস আছে, বিজয় দিবস আছে, কিন্তু আমাদের মুক্তি ঘটেনি। তাই ঐতিকহাসিক ৩৬ জুলাইকে জাতীয় মুক্তি দিবস ঘোষণা করতে হবে। এ ছাড়াও জুলাই সনদ চূড়ান্ত করার আগে জনগণের মতামতের জন্য তা ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে।”
আরো পড়ুন:
বেগম রোকেয়া পদকের জন্য আবেদনপত্র আহ্বান
নিরাপদ খাদ্য দিবস শনিবার: ‘নিরাপদ খাদ্য উচ্চ রক্তচাপ ঝুঁকি কমায়’
তিনি বলেন, “গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা, মৌলিক সংস্কার এবং ২০২৪ সালের গণহত্যার বিচার নিশ্চিত না করে দেশে যদি নির্বাচন আয়োজন করা হয়, তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ‘গাদ্দার’ হিসেবে ঘোষণা করা হবে। এই সনদে ঐতিহাসিক জুলাই গণঅভ্যুত্থানের স্পিরিটের নিরিখে বৈষম্যবিরোধী ইনসাফভিত্তিক কল্যাণ রাষ্ট্র বিনির্মাণের সুস্পষ্ট রূপরেখা প্রণয়ন করতে হবে।”
তিনি আরো বলেন, “সংবিধান থেকে জনবিরোধী ও জুলাই সনদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক সব ধারা উপধারা বাতিল করে জুলাই সনদকে সাংবিধানের তফসিলে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ঐতিহাসিক জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী সব দল, মত এবং লিঙ্গের ন্যায্য শরিকানা নিশ্চিত করতে হবে। যেখানে বলা হবে- আমরা বাংলাদেশের জনগণ এই ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থান সম্পল্প করেছি।”
সংবাদ সম্মেলনে ইনকিলাব মঞ্চ ১৩টি প্রস্তাবনা তুলে ধরে, যা জুলাই সনদের কার্যকর প্রয়োগ ও জাতীয় ঐক্যের ওপর গুরুত্বারোপ করে।
প্রস্তাবনাগুলোর মধ্যে রয়েছে- ১৯৪৭, ১৯৭১ ও ২০২৪ সালের ঐতিহাসিক সংগ্রামে জীবন উৎসর্গ করা সব শহীদকে রাষ্ট্রের শ্রেষ্ঠ সন্তান ঘোষণা করতে হবে; যেসব জুলাই যোদ্ধার স্থায়ী অঙ্গহানি হয়েছে, তাদের জন্য পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে; ফ্যাসিবাদী আমলে সংঘটিত ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের ভোটারবিহীন অবৈধ নির্বাচন বাতিল করে সংশ্লিষ্ট দোষীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।
এছাড়া ফ্যাসিবাদী আমলের সকল মন্ত্রী, এমপি ও দোষী আমলাসহ রাষ্ট্রীয় কর্মচারীদের বিচারের আওতায় এনে অবৈধভাবে উপার্জিত সম্পদ জব্দ করে তা শহীদ ও আহতদের কল্যাণে ব্যয় করতে হবে; দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, অখণ্ডতা রক্ষায় ভারতীয় আধিপত্যবিরোধী ঐক্যবদ্ধ অবস্থান নিশ্চিত করতে হবে; জুলাই, পিলখানা ও শাপলা গণহত্যার বিচার নিশ্চিত করে দেশি-বিদেশি অপশক্তি চিহ্নিত করতে হবে; রাষ্ট্র কাঠামোর মৌলিক সংস্কার করতে হবে যাতে ফ্যাসিবাদ আর স্বৈরতান্ত্রিকতা কখনও ফিরে না আসে; ৩৬ জুলাইকে জাতীয় মুক্তি দিবস ঘোষণা করতে হবে।
বাকি দাবিগুলো হলো- জুলাই গণঅভ্যুত্থানের স্পিরিটের ভিত্তিতে বৈষম্যবিরোধী কল্যাণ রাষ্ট্রের রূপরেখা প্রণয়ন করতে হবে; সংবিধান থেকে জনবিরোধী ও জুলাই সনদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক সব ধারা বাতিল করে জুলাই সনদকে সংবিধানের তফসিলে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে; ঐতিহাসিক জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী সব দল, মত ও লিঙ্গের ন্যায্য অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে; জুলাই সনদের ভাষাগত দুর্ব্যবহার পরিহার করে জনসাধারণের জন্য সহজ ভাষায় উপস্থাপন করতে হবে এবং সনদ চূড়ান্ত করার পূর্বে জনগণের মতামতের জন্য তা ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে।
আগামী ২৫ জুনের মধ্যে জুলাই সনদ ঘোষণা করা না হলে রাজধানীর শাহবাগ মোড় থেকে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ অভিমুখে ‘লাল মার্চ’ করার ঘোষণাও দিয়েছে ইনকিলাব মঞ্চ।
ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী