অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থাৎ ইনক্লুসিভ সমাজ গঠনের ডাক দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। দোষীদের শাস্তি দেওয়ার নিশ্চয়তা দিয়ে ভুল করা মানুষদের শুধরে নিয়ে সবাই মিলে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য জনগণের প্রতি উদাত্ত আহ্বান রেখেছেন তিনি।

প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, “আমরা অন্যায় করব না। যারা আইন ভঙ্গ করেছে, তারা শাস্তি পাবে। কিন্তু যারা করেনি, তাদের আমরা বলব যে তুমি আমাকে কষ্ট দিয়েছ, কিন্তু আমি তোমাকে দেব না। এই দেশ তোমারও, এই দেশ আমাদের সবার। আমরা সবাই এই মাটির সন্তান।”

মুহাম্মদ ইউনূস সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদ ও আহতদের পরিবারের সঙ্গে এক বৈঠকে দেশবাসীর প্রতি এই আহ্বান জানান। এসময় তিনি ঘোষণা দেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর জন্য অন্তর্বর্তী সরকার আর্থিক সহায়তা অব্যাহত রাখবে।

আরো পড়ুন:

রাজনৈতিক দলগুলোর চাওয়ার ওপর নির্ভর করবে নির্বাচন: প্রেস সচিব

‘রাষ্ট্র মেরামতে এখনো সফলতা দেখাতে পারেনি অন্তর্বর্তী সরকার’ 

জুলাই বিপ্লবের ২১টি শহীদের পরিবার এবং সাতজন আহত ব্যক্তির হাতে আর্থিক সহায়তার চেক তুলে দেন প্রধান উপদেষ্টা।

অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে ইনক্লুসিভ সমাজ গঠনের বিষয়ে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “যারা ভুল করেছে তাদের সঠিক পথে আনতে হবে। তাদের বোঝাতে হবে যে, তারা যা করেছে তা ভুল ছিল।”

“তাদের বোঝাতে হবে যে তাদের পথ ভুল এবং তারা যা করেছে তার জন্য ক্ষমা চাওয়া উচিত। এভাবেই আমাদের দেশ এগিয়ে যাবে। স্থায়ী সংঘাত আমাদের কেবল পিছিয়ে দেবে।”

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ১৫ বছরের স্বৈরাচারী শাসন ও হত্যাযজ্ঞের অবসান ঘটানো জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর বিরোধ মীমাংসার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমাদের দেশের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে সংঘাত কাটিয়ে ওঠার সক্ষমতার ওপর। আমাদের সবাইকে একসঙ্গে এ (অবস্থা) থেকে বেরিয়ে আসার পথ খুঁজে বের করতে হবে।”

প্রধান উপদেষ্টা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পাশাপাশি দেশের জনগণকে আশ্বস্ত করে বলেছেন, “সব হত্যাকাণ্ড ও গুমের তদন্ত করা হবে এবং দোষীদের বিচারের আওতায় আনা হবে।”

তিনি একইসঙ্গে পরিবারগুলোকে ও দেশবাসীকে সতর্ক থাকতে বলেন, যেন কোনো মহল পুনরায় সহিংসতা বা রক্তপাত ঘটাতে না পারে।

“বিচারের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো তা যেন ন্যায়সঙ্গত হয়, যেন অন্যায় না হয়। আমরা এই সংগ্রাম করেছি, এই ত্যাগ স্বীকার করেছি; কারণ আমরা অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছি। যদি আমরা নিজেরাই অন্যায়ে জড়িয়ে পড়ি, তবে আমাদের ও তাদের মধ্যে তফাত কোথায়,” প্রশ্ন রেখে বলেন প্রধান উপদেষ্টা।

ঢাকা/হাসান/রাসেল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর সরক র গণঅভ য ত থ ন পর ব র আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরে মামলা মোকাবিলার চ্যালেঞ্জ মির্জা ফখরুলের

গণঅভ্যুত্থানের মুখে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরে মামলা মোকাবিলার চ্যালেঞ্জ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। 

মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) বিকালে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার চিলারং ইউনিয়নে দলীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে গণসংযোগের সময় দেওয়া বক্তব্যে এই আহ্বান রাখেন তিনি।

শেখ হাসিনার শাসন আমলে বিএনপি নেতাকর্মীদের নির্যাতনের শিকার হওয়ার কথা তুলে ধরেন মির্জা ফখরুল। গুম, খুন, ভিত্তিহীন মামলা, লুটপাট, টাকা পাচার, বাকস্বাধীনতা হরণ ও ভোট চুরিসহ নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেন তিনি। 

আরো পড়ুন:

জুলাই গণহত্যা: শেখ হাসিনাসহ ৪০৮ জনের বিরুদ্ধে আরেক মামলা

হাসিনা-রেহানাসহ ২২ জনের গ্রেপ্তার-সংক্রান্ত প্রতিবেদন ১২ মে

শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‍“আমাদের নেতাকর্মীদের গুম করা হয়েছে। লাখ লাখ নেতাকর্মীকে মিথ্যা মামলা দিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে, তাদের ঘরে থাকতে দেননি আপনি। আমরা তো কোথাও পালিয়ে যাইনি। আদালতে মিথ্যা মামলা আইনের মাধ্যমে ফেইস (মোকাবিলা) করেছি। উকিল ধরে জামিন নিয়েছি। আপনি (শেখ হাসিনা) পালিয়ে আছেন কেন? আপনিও মামলা লড়েন। আপনি দেশে এসে দাড়ান না দেখি।”

জনগণের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আপনারা অনেকে মনে করেন শেখ হাসিনা আবারো দেশে ফিরে আসবেন। তিনি তো ১৫ বছর দেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তার বাবা শেখ মুজিবুর রহমান একজন বিখ্যাত মানুষ ছিলেন। তার তো দেশ থেকে পালানোর কথা ছিল না। তিনি পালালেন কেন? কারণ তিনি একজন ডাইনি ছিলেন। জনগণের ওপর এমন নির্যাতন করেছেন যে, তিনি পালাতে বাধ্য হয়েছেন। জনগণ যদি সেদিন তাকে পেত, তাহলে ছিঁড়ে খেত।” 

দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, “হাসিনা দেশে ফিরে রাজনীতি করলে আমাদের কিছু করতে হবে না, জনগণই তাকে দেখে নেবে।” 

আওয়ামী লীগের শাসনামলের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, “বিএনপির নেতাকর্মীরা যেন আওয়ামী লীগের মতো অন্যায় না করে; এতে মানুষ ভালোবাসবে না। দলের কোনো নেতাকর্মীরা অন্যায় করলে যেন জেলার নেতারা তাদের শক্ত হাতে দমন করেন; তারা যেন অন্যায়কারীদের পুলিশের হাতে তুলে দেন। তাই অপকর্ম বন্ধ করুন, না হলে আওয়ামী লীগের মতো অবস্থা হবে।” 

ত্রোদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দৃষ্টি রেখে জনসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি। মির্জা ফখরুলসহ দলটির শীর্ষ নেতারা সভা-সমাবেশ করছেন। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণের সুযোগ রাখা, না রাখা নিয়ে ব্যাপক মতপার্থক্য রয়েছে; সেই সঙ্গে আইনি ঝক্কিও সামনে আসছে।

গণহত্যার দায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের একাধিক মামলায় আসামি করা হয়েছে শেখ হাসিনাকে। এ ছাড়া কয়েক শত ফৌজদারি মামলায় তিনি আসামি। অনেক মামলায় তাকে গ্রেপ্তারে পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। তবে ভারতের আশ্রয়ে থাকা শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরানোর কোনো নিশ্চয়তা এখনো তৈরি হয়নি। 

গণঅভ্যুত্থানের মুখে ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে ছোট বোন রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে ভারতে চলে যান শেখ হাসিনা। সেদেশে উচ্চনিরাপত্তা শৃঙ্খলে বসবাস করছেন বলে আন্তর্জাতিক সাংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়ে থাকে। সেখান থেকে দেশে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে অনলাইনে তার কথোপকথনের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে, যা নিয়ে অস্বস্তির কথা ভারতকে জানিয়ে রেখে অন্তর্বর্তী সরকার। 

ঢাকা/মঈনুদ্দীন/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সংস্কারের একাল-সেকাল
  • তরুণ সমাজ দেশপ্রেমে উত্তীর্ণ হয়েছে, বাংলাদেশ উচ্চস্থানে উন্নীত হবে : ডিসি
  • শামীম ওসমানের ছেলে অয়নের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা
  • শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরে মামলা মোকাবিলার চ্যালেঞ্জ মির্জা ফখরুলের
  • গণঅভ্যুত্থানের তরুণ নেতৃত্ব ও রাজনীতিতে প্রাণপ্রবাহ
  • জুলাই বিপ্লবী মেয়েরা আজ নিরাপদ বোধ করছে না: ফরহাদ মজহার
  • আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানোর ঘটনায় জড়িত দুজন শনাক্ত  
  • ড. ইউনূস অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র দেননি, আমাদের হাতে বিপ্লবের দলিল নেই: ফরহাদ মজহার
  • ড. ইউনূস গণঅভ্যুত্থানের ফসল, নেতা নন: ফরহাদ মজহার
  • গণঅভ্যুত্থানে শহীদ রিজভীর ভাইকে কুপিয়ে জখম, গ্রেপ্তার ৩