বীর মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার মোশাররফ হোসেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য। দীর্ঘদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগে শিক্ষকতা করেছেন; লেখক হিসেবেও পরিচিত। তিনি বিএনপির মনোনয়নে কুমিল্লা-২ আসন থেকে চারবার জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন; একাধিকবার মন্ত্রীও ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিশ্বজনমত সৃষ্টির লক্ষ্যে তিনি ১৯৭১ সালে ব্রিটেনে প্রবাসীদের সংগঠিত করেন এবং ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক হিসেবে নেতৃত্ব দেন। খন্দকার মোশাররফ হোসেন ১৯৬৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ১৯৭০ সালে লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজ থেকে স্নাতকোত্তর এবং ১৯৭৩ সালে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভূতত্ত্ব বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। তাঁর জন্ম ১৯৪৬ সালে কুমিল্লা জেলায়। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সমকালের সহকারী সম্পাদক সাইফুর রহমান তপন।

সমকাল: বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে আপনাদের দল বিএনপির সম্পর্ক কেমন যাচ্ছে?

খন্দকার মোশাররফ হোসেন: অন্তর্বর্তী সরকার সম্পর্কে আমাদের অবস্থান এই সরকার শপথ নেওয়ার পরপরই পরিষ্কার করেছি। মিডিয়াতেও আমরা বারবার তা তুলে ধরেছি। সরকারটি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ফসল। ওই আন্দোলনটি গত বছর জুলাই মাসে শুরু হয় সরকারি চাকরিতে কোটা প্রথা সংস্কারের দাবিতে। আগস্টে এটা নতুন মোড় নেয়। যেখানে তৎকালীন ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পাশাপাশি দেশে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং জনগণের অধিকার ফেরত দানের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলো যুক্ত হয়। আপনারা জানেন, এগুলো আমরা গত ১৫ বছর লাগাতার বলেছি; এ নিয়ে আন্দোলন করেছি। আমরা আরও বলেছিলাম, গুম-খুন ইত্যাদি বন্ধ এবং এগুলোর নির্দেশদাতাসহ সংঘটকদের বিচার, ব্যাংক খাতে লুটপাট ও অর্থ পাচার বন্ধ এবং অপরাধীদের বিচার করতে হবে। শেখ হাসিনা আমাদের সেই আন্দোলনকে কী নির্মম পদ্ধতিতে দমন করতে চেয়েছে, তা আপনারা জানেন। এমনকি তিনি নিজে একাধিক জনসভায় বক্তৃতা দানকালে বিএনপিকে নির্মূল করার অঙ্গীকার করেছিলেন। তারই অংশ হিসেবে তারা আমাদের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় শাস্তি দিয়ে কারারুদ্ধ করেছে। তারই জেরে তাঁর সঠিক চিকিৎসা না হওয়ায় তিনি গুরুতর অসুস্থ হন। যে কারণে এখন তাঁকে বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা করাতে হচ্ছে। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে বহু ভুয়া মামলায় সাজানো বিচারের মাধ্যমে সাজা ঘোষণা করেছিল সেই সরকার। আমাদের স্থায়ী কমিটির দু’একজন বাদে সবার বিরুদ্ধে বানোয়াট মামলা দেওয়া হয়; বারবার জেলে নেওয়া হয়। আমাকেও সেই সরকারের আমলে ভিত্তিহীন ১৭টি মামলায় কয়েক দফায় মোট প্রায় পাঁচ বছর জেলে থাকতে হয়েছে। আমাদের তৃণমূলের নেতাকর্মীও এই নির্যাতন থেকে রেহাই পায়নি।

সমকাল: আপনি বলতে চাচ্ছেন, বর্তমান সরকার আপনাদেরও আন্দোলনের ফসল?

খন্দকার মোশাররফ হোসেন: অবশ্যই। আমাদের ১৫ বছরের ধারাবাহিক আন্দোলনই ছাত্রদের আন্দোলনের ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছে। জনগণের কাছে আওয়ামী লীগ সরকারের স্বৈরতান্ত্রিক চেহারা পরিষ্কার হয়েছে। তা ছাড়া জুলাই আন্দোলনে বিএনপিও সর্বশক্তি নিয়োগ করেছিল, যা না হলে আন্দোলনটি চূড়ান্ত রূপ পেত না। স্মরণ করুন, ওই আন্দোলনের সময়ও আমাদের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা গ্রেপ্তার হয়েছেন। আন্দোলনে শহীদ ও আহতদের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ বিএনপির নেতাকর্মী।

সমকাল: কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের কথাবার্তায় তো এর বিশেষ স্বীকৃতি মেলে না।

খন্দকার মোশাররফ হোসেন: আপনি জানেন, ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে তৎকালীন বিরোধী সব রাজনৈতিক দল ও সংগঠন যুক্ত ছিল, যেখানে সামনের সারিতে ছিল ছাত্রনেতারা। একটা গণঅভ্যুত্থানে যখন বিভিন্ন শক্তি সক্রিয় থাকে তখন তার কৃতিত্ব নিয়ে এ ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হয়। তবে অভ্যুত্থানের লক্ষ্য পূরণের স্বার্থে বিএনপি ঐক্য ধরে রাখার পক্ষে। তাই কারও সঙ্গে যেন কোনো বিরোধে জড়িয়ে না পড়ি, সে বিষয়ে আমরা সতর্ক। আপনার মনে থাকার কথা, প্রধান উপদেষ্টা শপথ গ্রহণের পর প্রথম বিএনপির সঙ্গেই বৈঠক করেছিলেন। আমরাও আন্তরিকতার সঙ্গে তাঁর সঙ্গে রাষ্ট্র পরিচালনা নিয়ে কথা বলেছি।

সমকাল: আপনারা তখন প্রধান উপদেষ্টাকে কী বলেছিলেন?

খন্দকার মোশাররফ হোসেন: আমরা স্পষ্ট ভাষায় তাঁকে বলেছিলাম, গণতন্ত্র এবং জনগণের অধিকার নিশ্চিত ও টেকসই করতে হলে রাষ্ট্রের বিভিন্ন খাতে সংস্কার করা দরকার। তবে তার জন্য দেশ দীর্ঘদিন একটা অনির্বাচিত সরকারের অধীনে থাকতে পারে না। জরুরি কিছু সংস্কার করে তাদের উচিত হবে স্বল্প সময়ের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন করা, যেখানে জনগণ অবাধে ভোট দিয়ে নিজেদের প্রতিনিধি নির্বাচিত করবে। একমাত্র সেই জনগণের সরকারই কার্যকর সংস্কার করতে পারবে।

সমকাল: আপনারা এখনও সেই বক্তব্যে অটল?

খন্দকার মোশাররফ হোসেন: হ্যাঁ। আমরা মনে করি, পতিত স্বৈরাচার বিদেশে বসে নানা ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের মাধ্যমে দেশের অস্থিতিশীলতা বাড়িয়ে দিতে পারে। সেটা মোকাবিলার জন্যও একটা জনগণের নির্বাচিত সরকার প্রয়োজন। এ মুহূর্তে নির্বাচনের দিন-তারিখ ঘোষিত হলে জনগণ নির্বাচনমুখী হবে। আর নির্বাচনমুখী জনগণের সামনে যে কোনো চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র টিকবে না। অর্থনীতিসহ দেশে বর্তমানে যেসব সংকট দেখা যাচ্ছে, সেগুলো নিরসন করতে হলেও নির্বাচিত সরকার দরকার। ইতোমধ্যে দেশের ৬৪ জেলায় সভা-সমাবেশ করার যে কর্মসূচি আমরা নিয়েছি, সেখানেও আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য দ্রুত নির্বাচনের গুরুত্ব জনগণের সামনে তুলে ধরা এবং এর মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকারকে স্পষ্ট বার্তা দেওয়া।

সমকাল: কিন্তু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা স্পষ্ট করেই বলছেন, সরকার উৎখাত না হলে বিএনপিকে আরও অন্তত সাড়ে চার বছর অপেক্ষা করতে হতো। এখন বিএনপি নির্বাচন নিয়ে এত তাড়াহুড়া করছে কেন?

খন্দকার মোশাররফ হোসেন: এ কথা তারা বলতে পারে। বাস্তবতা হলো, সেই সরকারের পতন ঘটেছে এবং আমরা সবাই মিলেই তা সম্ভব করে তুলেছি। আর গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে এলেও এটা কোনো নির্বাচিত সরকার নয়; পুরো অনির্বাচিত সরকার। রাজনৈতিক দলগুলো তাকে সমর্থন দিচ্ছে, এটা সত্য। কিন্তু এ সরকার যদি দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, জানমালের নিরাপত্তা বিধানসহ জনগুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয় তখন সত্যিকার অর্থে জনসম্পৃক্ত কোনো দল কি ওই সমর্থন অব্যাহত রাখতে পারবে? ছাত্ররাও তো নিজেরা এখন আর ঐক্যবদ্ধ নয়। বিভিন্ন গ্রুপে তারা বিভক্ত। কোথাও কোথাও তারা নিজেরাই সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছে। এগুলো বাড়তে থাকলে তার প্রভাব জনগণের মধ্যে কী হবে, তারা কি তা ভেবেছে? এর সুযোগ পতিত স্বৈরাচার নেবে না, তাও তো বলা যায় না। আমি যতটুকু জানি, এসব বিষয় উপদেষ্টামণ্ডলীর বহু সদস্যও ভাবছেন। তারাও বিশ্বাস করেন, দ্রুত জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা দিয়ে বিদায় নিলেই কেবল তারা তাদের সম্মান-মর্যাদা অক্ষুণ্ন রাখতে পারবেন। দেশের জন্যও তা মঙ্গলজনক। হ্যাঁ, তারা প্রকাশ্যে তা বলছেন না। কারণ এই না বলার জন্য তাদের ওপর এখনও কিছু চাপ কাজ করে। আমার বিশ্বাস, খুব শিগগির সরকারই নির্বাচনের দিন-তারিখ ঘোষণা দেবে।

সমকাল: আপনাদের দীর্ঘদিনের মিত্র জামায়াতে ইসলামীও তো আপনাদের মতো নির্বাচন দাবি করছে না। দলটির আমির স্পষ্ট করেই বলেছেন– বিগত প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর সহযোগীদের অপরাধের বিচার হওয়ার আগে দেশে কোনো নির্বাচন হবে না।

খন্দকার মোশাররফ হোসেন: এটা একটা অবাস্তব যুক্তি, অযৌক্তিক বক্তব্য। কোন বিচার কখন শুরু হবে, কখন শেষ হবে, তা সম্পূর্ণ নির্ভর করে সংশ্লিষ্ট আদালতের সিদ্ধান্তের ওপর। এটা আদৌ কোনো সরকারের সিদ্ধান্ত নয়। ন্যূনতম আইনের শাসন ও কার্যকর বিচার ব্যবস্থা আছে, এমন একটা দেশে সরকার বিচারে সহযোগিতা করতে পারে। কিন্তু তা শুরু ও শেষ হওয়ার দিন-তারিখ ঠিক করে দিতে পারে না। এ ক্ষেত্রে যে কোনো সরকারি হস্তক্ষেপ বিচারকে শুধু বিদেশে নয়, দেশেও প্রশ্নের মুখে ফেলবে। জুলাই-আগস্টে দেশে যে সংখ্যক হত্যাকাণ্ড ও আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে, এখন পর্যন্ত সরকার তার বিতর্কমুক্ত একটা তালিকাই করতে পারেনি। এ কারণে এসব ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলা নিয়ে বহু প্রশ্ন উঠেছে। তারপর একটা মামলায়ও কি চার্জশিট জমা পড়েছে? তদন্তই তো কোনোটার শেষ হয়নি। এ অবস্থায় তারা কীভাবে বলেন, বিচার না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচন হবে না? বিচার হবে বিচারের নিয়মে। তার সঙ্গে নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক নেই, বিরোধও নেই।

সমকাল: তারা কী কারণে এগুলো বলছেন বলে আপনাদের ধারণা?

খন্দকার মোশাররফ হোসেন: সেটা আমি বলতে পারব না। এ প্রশ্ন সুযোগ হলে তাদের করতে পারেন। দেখুন, কোনো সদুত্তর দিতে পারেন কিনা। আমরা শুধু এটুকুই বলি, নির্বাচন বিলম্বিত করার জন্য এসব কথা যারা বলছেন তারা অযৌক্তিক ও অবাস্তব ভাবনার মধ্যে আছেন। একটা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অনির্দিষ্টকাল ক্ষমতায় থাকতে পারে না– এটা তারা যেমন বোঝেন, তেমনি জনগণও বোঝে, আমরাও বুঝি। তাই আমি আবারও জোর দিয়ে বলতে চাই, সম্মান নিয়ে বিদায় নিতে হলে সরকারকে দ্রুত নির্বাচন দিতে হবে।

সমকাল: আমরা দেখেছি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্রনেতারা যখন রাষ্ট্রপতির অপসারণ দাবি করলেন, তখন আপনারা তার বিরোধিতা করেছেন। বলেছেন, এর ফলে নির্বাচন পিছিয়ে যেতে পারে। এর পর জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়েও একটা টানাপোড়েন দেখলাম। এখন যে ৩২ নম্বরসহ সারাদেশে আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়িঘরে ধ্বংসযজ্ঞ চলছে, সেটাও নির্বাচন বিলম্বিত করার পরিকল্পনার ফসল বলে আপনারাও মনে করছেন। এর শেষ কোথায় বলে আপনি মনে করেন?

খন্দকার মোশাররফ হোসেন: দেখুন, আমরা কিন্তু যেচে পড়ে সরকারকে কোনো পরামর্শ দিতে যাইনি। আমাদের ডাকলেই আমরা সরকারের সঙ্গে কথা বলতে গিয়েছি। যে রাষ্ট্রপতিকে একজন উপদেষ্টা অবৈধ বললেন, তাঁর কাছেই তো সরকার শপথ নিয়েছে; তাই না? তাহলে কি সরকারেরই বৈধতা প্রশ্নের মুখে পড়ে না? আসলে আমরা কোনো বাধা দিইনি। এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেনি বলেই তারা চুপ করে গেছে। আমাদের পরামর্শ হলো, এ ধরনের কোনো কিছু বলার আগে দশবার চিন্তা করা উচিত। রাষ্ট্র পরিচালনা কোনো সহজ বিষয় নয়। এটা নিয়ে ছেলেখেলা করা যায় না।

সমকাল: বলা হচ্ছে, বিচারের আগে নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে চলে আসতে পারে। আপনি কী মনে করেন?

খন্দকার মোশাররফ হোসেন: কে নির্বাচন করতে পারবে, কে করতে পারবে না– সে ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন একটা ঘোষণা দিতে পারে। আর সরকার এর আইনগত দিক তৈরি করতে পারে। এগুলো কোনো কঠিন বিষয় নয়। আন্তরিক হলে সরকার এখনই তা করতে পারে। আমি শুধু এটুকু বলতে চাই, কোনো অজুহাতেই নির্বাচন বিলম্বিত করা যাবে না। করলে জনগণের মধ্যে যে প্রতিক্রিয়া হবে তা মোকাবিলার জন্য সরকারকে প্রস্তুত থাকতে হবে।

সমকাল: আপনার দলের স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ আরও কয়েকজন তো বলেছেন, বিএনপি কোনো দল নিষিদ্ধের পক্ষে নয়। তারা চান জনগণ সিদ্ধান্ত নিক– রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের অবস্থান কী হবে। তারা এমন কথাও বলেছেন, আমরা ভোটের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে গুঁড়িয়ে দিতে চাই।

খন্দকার মোশাররফ হোসেন: এ বিষয়ে আমার বক্তব্য হলো, নির্বাচন বিষয়ে আমরা সরকারের কাছ থেকে এখনও কোনো পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাব পাইনি। সেটা পেলে তা নিয়ে আমাদের নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটিতে আলোচনা করব। তারপর আপনাদের একটা সিদ্ধান্ত জানাতে পারব। আপনার প্রশ্নের উত্তরও তখন আপনি পাবেন। তার আগে এ বিষয়ে অন্তত দলীয় বক্তব্য হিসেবে আমি কিছু বলতে পারব না। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে আমাদের মধ্যে যিনি যা বলেছেন, তা তাঁর নিজস্ব বক্তব্য।

সমকাল: আওয়ামী লীগ না থাকলে নির্বাচনে আমরা প্রধান খেলোয়াড় হিসেবে বিএনপির বাইরে জামায়াত আর ছাত্রদের প্রস্তাবিত দলকে ধরতে পারি। ভোটারদের মধ্যে সেই নির্বাচন কেমন আলোড়ন তুলতে পারবে বলে মনে করেন?

খন্দকার মোশাররফ হোসেন: একটা নির্বাচনের ভালোমন্দ অংশগ্রহণকারীদের ওপর নির্ভর করে না। অর্থাৎ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা কাদের মধ্যে হচ্ছে, তা নির্বাচনের মান নির্ধারণ করে না। নির্বাচনের মান নির্ভর করে নির্বাচন পরিচালনা পদ্ধতির ওপর। জনগণ যদি অবাধে ভোট দিতে পারে, তাহলে তারাই ঠিক করবে কে বা কোন দল তাদের প্রতিনিধি হবেন। এ বিষয়ে আর বেশি কিছু বলতে চাই না।

সমকাল: অতীতে বিএনপি সাধারণ জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করেছে। আপনাদের ঘোষণা আছে, নির্বাচনের পর বিজয়ী হলে আপনারা জাতীয় সরকার গঠন করবেন। সামনের নির্বাচনে কি আমরা বিএনপিকে জোটবদ্ধ হতে দেখব?

খন্দকার মোশাররফ হোসেন: এটা এখনই বলা যায় না। আমরা আগেও যখন জোট করেছি তা নির্ভর করেছে তৎকালীন পরিবেশ-পরিস্থিতির ওপর। এখনও নির্বাচনে কোনো তপশিল ঘোষণা হয়নি। তাই বলতে পারছি না, নির্বাচনটা একা, না জোটবদ্ধ হয়ে করতে হবে।

সমকাল: শেষ প্রশ্ন। বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা, অর্থনীতিসহ প্রায় সর্বক্ষেত্রে যে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি চলছে, আপনারা নির্বাচিত হয়ে এলে কি তা সহজে সামাল দিতে পারবেন?

খন্দকার মোশাররফ হোসেন: আমরা অনেক আগেই বুঝেছিলাম– শেখ হাসিনা দেশটার দফরফা করে দেবেন। অর্থাৎ বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে আমরা আগেই আঁচ করেছিলাম। তাই একটা প্রস্তুতিও আছে আমাদের তা মোকাবিলার। আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়া বহু আগেই ভিশন-২০৩০ ঘোষণা করেছিলেন। তা ছাড়া ৩১ দফা রাষ্ট্র সংস্কারের প্রস্তাবও আছে। আমি বলতে চাচ্ছি, বিদ্যমান পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার প্রস্তুতি আমাদের আছে। অতএব, নির্বাচিত হলে তা বাস্তবায়নে সমস্যা হবে না। নির্বাচনের সময় ঘোষণা করা হলে আমরা যে ইশতেহার দেব, সেটা দেখলেই আপনারা আমার এ বক্তব্যের যথার্থতা বুঝতে পারবেন।

সমকাল: ধন্যবাদ আপনাকে অসুস্থতা ও অতি ব্যস্ততার মধ্যেও সময় দেওয়ার জন্য।

খন্দকার মোশাররফ হোসেন: আপনাকে এবং সমকালকে ধন্যবাদ।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ন র ব চ ত সরক র সরক র র স পর স থ ত আপন দ র উপদ ষ ট ই সরক র ব এনপ র জনগণ র বল ছ ন কর ছ ল র জন য ক র কর আম দ র আপন র বলছ ন র ওপর সদস য সমক ল আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

‘হাসিনার আমলই ভালো ছিল’—এটা কোন ঘরানার গান

ইদানীং কিছু ভদ্রলোক ইনিয়ে-বিনিয়ে, এমনকি সুযোগ বুঝে সরাসরিও বলে ফেলছেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ের চেয়ে শেখ হাসিনার শাসনেই দেশ ভালো চলছিল। দু–একজন এ-ও বলছেন, গত ৪০ বছরে এখনকার মতো খারাপ অবস্থা নাকি তাঁরা দেখেননি।

এই ‘মহামানবদের’ কথা মান্য করলে প্রশ্ন এসেই যায়, কী লাভ হলো গণ–অভ্যুত্থান করে, এত জীবন বিসর্জন দিয়ে, এত রক্ত ঝরিয়ে?

আওয়ামী লীগের শত্রুরা উত্তর দিক: সরকারি চাকরিতে কোটাবিরোধী আন্দোলনকে হাসিনা পতনের এক দফা দাবিতে রূপান্তরের কী প্রয়োজন ছিল? গণবিস্ফোরণ ঘটিয়ে দেড় দশকে গড়ে ওঠা এক শক্তিশালী ব্যবস্থাকে ভেঙে খান খান করে ফেলার কী এমন প্রয়োজন ছিল?

হাসিনা-পরবর্তী এই ‘ভগ্ন হৃদয়ের’ যুগে ভারতীয় শিল্পী কবির সুমনের সে গানটি ‘প্রথমত আমি তোমাকে চাই...শেষ পর্যন্ত তোমাকে চাই’ শুনি আর ভাবি, ২০২৪-এর ‘ডামি’ নির্বাচনের আগে শেখ হাসিনাকে আজীবন ক্ষমতায় দেখতে চাওয়া অলিগার্কদের কী যে আকুতি ছিল!

মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানে নেত্রীর পতন দেখে হয়তো সেদিন তাঁরা শুনেছেন কিংবা গেয়েছেন অন্য কোনো গান। হতে পারে আরেক ভারতীয় শিল্পী হৈমন্তী শুক্লার গাওয়া সেই গান তাঁরা গেয়েছিলেন, ‘চেয়ে চেয়ে দেখলাম তুমি চলে গেলে...আমার বলার কিছু ছিল না।’

আক্ষেপ কেন, কমরেড, জীবন নিয়ে পালিয়ে তো তিনি নিরাপদেই আছেন দিল্লিতে!

তবু ‘সে কি ভোলা যায়, তুমি আমারই ছিলে’ হে বাংলাদেশ সাম্রাজ্য! সত্যিই তো তাঁর এবং তাঁদের একচেটিয়া অধিকার ছিল যেভাবে খুশি যত বেশি ক্ষমতা, অর্থ, প্রতিপত্তি ভোগের।

একটি অভিজাত গোষ্ঠীকে (অলিগার্কি) হাসিনা-প্রদত্ত সেই লাভজনক স্থিতাবস্থা হারিয়ে কীভাবে চুপ করে বসে থাকবে এর ‘ভাগ্যবান’ সদস্যরা! নতুন রাজনৈতিক বিনিয়োগও কিছু দরকার হবে যদি ভবিষ্যৎ মুনাফার আশা করতে হয়।

টাকাওয়ালাদের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়, বিনা ভোটে বা জালিয়াতির মাধ্যমে সংসদ সদস্য পদ বা মন্ত্রিত্ব উপহার, তাঁর চামচাদের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ ও পদোন্নতি এবং দলীয় অনুগতদের মিডিয়ার লাইসেন্স প্রদানসহ কত ধরনের দান-দক্ষিণার ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন ‘ষোলো কোটি মানুষকে খাওয়ানোর’ দাবিদার বর্তমানে নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগপ্রধান হাসিনার সরকার।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে কর্ণফুলী টানেল, পদ্মা সেতু থেকে গভীর সমুদ্রবন্দর, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে থেকে টোল রোড, ডজন ডজন নতুন ব্যাংক থেকে শত বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমতি—এ রকম বড় বড় ব্যয়বহুল প্রকল্প গ্রহণে তাঁর কোনো তুলনাই হয় না।

একটু–আধটু দুর্নীতি হলেও অন্তত মধ্য আয়ের দেশ হওয়ার স্বপ্ন তো দেখাচ্ছিলেন তাঁর সভাসদরা। এই ধরুন, লাখো কোটি টাকার ব্যাংকঋণ জালিয়াতি, খেলাপি, দলীয় নেতা মাস্তানদের হাজার হাজার কোটি টাকার চাঁদাবাজি ও সম্পদ লুণ্ঠন, বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার পাচার ইত্যাদি বিষয় দেড় দশকের স্থিতিশীলতার তুলনায় এমনকি বাড়াবাড়ি!

যাদের ‘এতিম’ করে রেখে উনি চলে গেলেন, তাদের কারও কারও বক্রোক্তি এ রকম: এক অনাকাঙ্ক্ষিত পরিবর্তনের পর বহুত শখ করে তো ক্ষমতায় বসিয়েছিলেন নোবেল পুরস্কার বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে; তাঁর সরকার এখন পর্যন্ত কী করতে পেরেছে? নির্বাচন, সংস্কার, হত্যা ও দুর্নীতির বিচার, আইনশৃঙ্খলার উন্নতি, অর্থনীতি জোরদার—কোনটি পেরেছে?

জনগণকে কষ্ট করে ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার বিকল্প ব্যবস্থাও করে দিয়েছিলেন জনদরদি হাসিনা সরকার। ২০১৪ সালের ১৫৪ সংসদ সদস্য বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত, ২০১৮ সালে নৈশকালীন ভোট এবং ২০২৪ সালে ডামি নির্বাচন করে হাসিনা তাঁর বাবা শেখ মুজিবের তৈরি একদলীয় বাকশাল ব্যবস্থার নতুন মডেল দাঁড় করান পৃথিবীর সামনে।

যাঁরা এই আওয়ামী শাসনের ‘স্থিতিশীলতা’ নস্যাৎ করতে চেয়েছে তাদের ‘ঠ্যাং ভেঙে’ দিতে একটুও দ্বিধা করেনি হাসিনা সরকার। সরকারের ধারাবাহিকতা নষ্টের চেষ্টাকারীদের ‘উচিত শিক্ষা’ দেওয়া হয়েছে গুম, খুন, সহিংসতা, জঙ্গিনাটক, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা, প্রতিবাদ দমন ও বাক্‌স্বাধীনতা হরণের মাধ্যমে। সে জন্য আপনারা তাঁকে ফ্যাসিবাদী বলার সাহসও পাননি তখন।

জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে হাজারো তরুণ ও সাধারণ মানুষ নিহত (শহীদ) হওয়ার দায় নিতে চাননি হাসিনা। উল্টো তাঁর দাবি, ৫ আগস্ট তাঁকে মারতেই লক্ষ জনতা গণভবন অভিমুখে যাত্রা করেছিল।

আরও পড়ুন‘আমি কী অপরাধ করেছি’— সবাই জানেন শিরোনামটা...৩০ জুলাই ২০২৫

আরও রক্তপাত এড়াতেই নাকি তাঁর নিজের লোকদের মায়া ছেড়ে ‘একলা চলো’ নীতি অবলম্বন করে ভারতে পাড়ি জমান শেখ হাসিনা।

তাই আজ তাঁর ফেরার অপার ইচ্ছা যেন স্বৈরশাসক জেনারেল এরশাদের পৃষ্ঠপোষকতায় তৈরি গানের মতোই, ‘তোমাদের পাশে এসে বিপদের সাথি হতে আজকের চেষ্টা আমার।’

যাদের ‘এতিম’ করে রেখে উনি চলে গেলেন, তাদের কারও কারও বক্রোক্তি এ রকম: এক অনাকাঙ্ক্ষিত পরিবর্তনের পর বহুত শখ করে তো ক্ষমতায় বসিয়েছিলেন নোবেল পুরস্কার বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে; তাঁর সরকার এখন পর্যন্ত কী করতে পেরেছে? নির্বাচন, সংস্কার, হত্যা ও দুর্নীতির বিচার, আইনশৃঙ্খলার উন্নতি, অর্থনীতি জোরদার—কোনটি পেরেছে?

যেন এত সব বিষয় নিয়ে জনমনে কোনো ক্ষোভই ছিল না হাসিনার আমলে। এটি সেই বিস্মৃত অতীত, যেটি নিয়ে কল্পিত সংগীত রচিত হয়: ‘আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম’।

আরও পড়ুনশেখ হাসিনা স্বৈরশাসকদের টিকে থাকার দুটি মূলমন্ত্রেই ব্যর্থ২২ আগস্ট ২০২৪

তার মানে, তাঁর শাসনকালই জাতির জন্য ছিল আদর্শ। এটা প্রমাণ করার এক অদৃশ্য প্রচেষ্টা রয়েছে আজ এখানে, আমাদের চারপাশে, আশপাশে।

সত্য, মিথ্যা মিশিয়ে এমন দাবি করেন কারা এবং কেন—সেটা আমাদের একটু বোঝা দরকার।

হাসিনার চামচা ও সুবিধাভোগী, তাঁর ঘরানার অসৎ বুদ্ধিজীবী, তাঁর হত্যাকাণ্ড ও দুর্নীতি নিয়ে নির্বিকার নেতা-কর্মী-সমর্থক, বর্তমান আমলে বিশেষ কিছু না পেয়ে প্রবলভাবে হতাশ কতিপয় সুশীল অথবা পরিস্থিতি সম্পর্কে নির্বোধ ব্যক্তির পক্ষেই ফ্যাসিবাদী শাসনামলকে উত্তম বলা সম্ভব।

এতে হাসিনার লোকদের বড় লাভ হতে পারে দায় স্বীকার না করে বা ক্ষমা না চেয়েই তাঁদের হাত ও নামসমূহকে দুর্নীতি, হত্যাকাণ্ড ও নির্যাতনের রক্তের দাগ থেকে মুক্ত করা।

এ প্রচেষ্টা ঘটে যাওয়া সত্যকে অস্বীকার, শহীদদের আত্মত্যাগ অগ্রাহ্য, আহত ব্যক্তিদের প্রতি অশ্রদ্ধা এবং মজলুমদের অনুভূতির সঙ্গে মশকরা ছাড়া আর কিছুই না।

এগুলোই আবার জুলাই বিপ্লবের পক্ষের শক্তির বয়ান তৈরিতে ব্যর্থতা প্রমাণ করে।

আরও পড়ুনহাসিনা শাসনের উন্নয়নের বানোয়াট গল্প০৩ অক্টোবর ২০২৪

পরিবর্তনের পক্ষে জনগণের প্রবল আকাঙ্ক্ষার কোনো কমতি ছিল না এবং হত্যা-দুর্নীতিসহ ফ্যাসিবাদী কর্মকাণ্ডের বিচার এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান নির্মাণের লক্ষ্যে কমবেশি সংস্কারের উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। কিন্তু বুদ্ধিবৃত্তিক ও রাজনৈতিক চিন্তা, গণতান্ত্রিক ভাবনা, কিংবা আমলাতান্ত্রিক কর্মসূচিকে জনমত তৈরির জন্য সেভাবে উপস্থাপন করা সম্ভব হয়নি। একটা একটা করে ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার উত্তম বিকল্প জনগণের সামনে আনলে গণমানুষকে নতুন ধারণা ও আশাবাদ উপহার দেওয়া যেত।

কয়েকটি মডেল নির্বাচন দিয়ে, তরুণদের পরিবেশ রক্ষার মতো সামাজিক আন্দোলনে সম্পৃক্ত করে, রাজনৈতিক দলসমূহকে দুর্নীতি ও চাঁদাবাজি প্রতিরোধে অংশীদার বানিয়ে এবং গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান ঠিকঠাক করে, সাংবাদিকদের স্বাধীনতা, সুরক্ষা ও কল্যাণ নিশ্চিত করে হাসিনার কুশাসনকে যথাযথভাবে চিত্রিত করা যেত।

ধারণা করি, জনগণের সঙ্গে যোগাযোগে ঘাটতি এবং অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্যোগগুলো সম্পর্কে জনসম্পৃক্ততার অভাব হাসিনার উপকারভোগীদের নিজস্ব গান গাওয়ার পরিসর দিয়েছে।

ফ্যাসিবাদী শাসনের জাঁতাকলে পিষ্ট রাজনৈতিক দল এবং ২০২৪-এর আন্দোলনে পুরোভাগে থাকা ছাত্র ও অন্য শক্তিগুলো পরস্পরের মধ্যে লজ্জাজনক কুতর্কে জড়িয়ে পড়ায় গণ–অভ্যুত্থান ও পরিবর্তনের এজেন্ডা এবং উপযোগী বয়ান যথেষ্ট মার খেয়েছে। দেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ নিয়ে জনগণও কিছুটা বিভ্রান্ত ও হতাশ হয়েছে।

বাংলাদেশিদের বর্তমান হতাশা ও ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা তৈরি হওয়াটাই কাম্য ছিল পরাজিত শক্তির। হাসিনা বিহনে আওয়ামী উপকারভোগী বা অন্ধ সমর্থকেরা গোপালগঞ্জ বা অন্য কোনো অঞ্চলে নিরালায় বসে যেন গুনগুন করে গাইছে গগন হরকরার গান, ‘আমি কোথায় পাব তারে আমার মনের মানুষ যে রে...।’ তারা বুঝতে পারছে না জাতির জীবনে শেখ হাসিনা এমন এক জুলুমশাহি শাসকের নাম ও ফ্যাসিবাদের প্রতিমূর্তি; যার শাসন পুরো দেশকে বানিয়ে ফেলেছিল ‘জল্লাদের উল্লাসমঞ্চ’।

নিজেদের বাইরে জনগণের অন্য যেকোনো গোষ্ঠীকে ক্ষমতার ভাগ দিতে না চাওয়া সেই ফ্যাসিবাদী ধারায় ছেদ টেনেছে জুলাই বিপ্লবের মধ্য দিয়ে অধ্যাপক ইউনূসের সরকার গঠন, যেটিও আশা করি বাংলাদেশের শেষ সরকার নয়।

বিদায় নেওয়া ফ্যাসিবাদ রাজনৈতিক মতাদর্শ হিসেবে যেকোনো দেশেই অনেকটা পুরোনো দিনের গান। এই গান অবশ্যই স্মৃতিজাগানিয়া কিন্তু চলমান বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্ন। ভবিষ্যতে আবারও ফ্যাসিবাদকে সহ্য করবে, এমন প্রজন্ম এ দেশে সেকেলে এবং অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে। তরুণেরা এবং অভিজ্ঞ বিবেকবানেরা এখন অজানা এক নতুন বাংলাদেশের অপেক্ষায়।

ফলে ‘হাসিনার আমলই ভালো ছিল’ গান বাদ দিয়ে হাসিনার মানসপুত্রদের এখন নিরালা নিঝুম ও যথাযথ ভাবগম্ভীর পরিবেশে বসে মুদ্রিতনেত্রে মন্দ্রসপ্তক কণ্ঠে ভক্তিভরে গাওয়া উচিত, ‘মা, আমার সাধ না মিটিল, আশা না পুরিল, সকলি ফুরায়ে যায় মা... ।’

খাজা মাঈন উদ্দিন সাংবাদিক

*মতামত লেখকের নিজস্ব

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জুলাই সনদে আমাদের যে সম্মতি সেটি আইনের ঊর্ধ্বে: সালাহউদ্দিন
  • সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ ও মাদকমুক্ত বন্দর গড়তে চাই : সাখাওয়াত
  • বিএনপির ৩১ দফা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে রূপগঞ্জে লিফলেট বিতরণ 
  • জুলাই আন্দোলনকে মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে জড়াবেন না: টুকু
  • সবাই অপেক্ষা করছে একটা নির্বাচনের জন্য
  • ‘হাসিনার আমলই ভালো ছিল’—এটা কোন ঘরানার গান
  • সরকারের ভুল সিদ্ধান্তে দেশে ফ্যাসিবাদ, উগ্রবাদ মাথাচাড়া দিতে পারে: তারেক রহমান
  • সরকারের একটি অংশ অপকৌশলের আশ্রয় নিচ্ছে: তারেক রহমান
  • ট্রাম্পের প্রতি মার্কিন জনগণের সমর্থন ৪০ শতাংশে ঠেকেছে
  • জাতিসংঘে সম্মেলনের ফাঁকে বাংলাদেশ-পাকিস্তান বৈঠক, ফিলিস্তিন ইস্যুতে উদ্বেগ