ডোনাল্ড ট্রাম্প গত ২০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেন। অর্থাৎ দ্বিতীয় দফায় তাঁর দায়িত্ব গ্রহণের এক মাসও হয়নি।

ট্রাম্প একসময় ‘দ্য অ্যাপ্রেনটিস’ নামের টেলিভিশন রিয়েলিটি শো উপস্থাপনা করতেন। এই শোতে তিনি একটি বাক্য বলতেন। আর তা হলো, ‘তুমি বাদ’।

রিয়েলিটি শোতে আওড়ানো জনপ্রিয় এই বাক্যের সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইতিমধ্যে ২০০ জনের বেশি কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করেছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতায় নতুন প্রেসিডেন্ট এলে প্রশাসনে কিছুটা ওলটপালট, রদবদল সাধারণ বিষয়। কিন্তু ট্রাম্প ক্ষমতায় এসে তাঁর দায়িত্বের প্রথম সপ্তাহগুলোতে মার্কিন সরকারের প্রশাসনে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরিচ্যুতিসহ ব্যাপক রদবদল এনেছেন।

ট্রাম্প লাখো সরকারি কর্মচারীকে আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে স্বেচ্ছায় পদত্যাগের প্রস্তাব দিয়েছেন। তিনি মার্কিন সরকারে বৈচিত্র্য, ন্যায্যতা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক (ডিইআই) কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছেন।

গত শুক্রবার ট্রাম্প দেশটির শীর্ষ রেকর্ড-রক্ষক কোলিন শোগানকে বরখাস্ত করেন। একই দিন রাতে তিনি জন এফ কেনেডি সেন্টার ফর দ্য পারফর্মিং আর্টসের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যদের বরখাস্তের অঙ্গীকার করেন। একই সঙ্গে তিনি নিজেকে এই বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে নিযুক্ত করবেন বলে জানান।

ট্রাম্পের দায়িত্বের প্রথম সপ্তাহগুলোতে বড় কিছু চাকরিচ্যুতির তথ্যের দিকে নজর দেওয়া যাক—

স্বেচ্ছায় পদত্যাগের প্রস্তাব

ট্রাম্পের নতুন রিপাবলিকান প্রশাসন অর্থের বিনিময়ে সরকারি কর্মচারীদের চাকরি ছাড়ানোর কার্যক্রম হাতে নেয়।

হোয়াইট হাউস ২০ লাখের বেশি ফেডারেল কর্মচারীদের পদত্যাগের প্রস্তাব দেয়। কেন্দ্রীয় সরকারের আকার কমানোর প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে এই প্রস্তাব দেওয়া হয়। তবে একজন বিচারক সাময়িকভাবে ট্রাম্পের পরিকল্পনাটি স্থগিত করেছেন। ট্রাম্প তাঁর প্রস্তাবে ফেডারেল কর্মীদের ৬ ফেব্রুয়ারির মধ্যে চাকরি ছেড়ে দেওয়ার বিনিময়ে আট মাসের বেতনের প্রস্তাব দিয়েছিলেন।

হোয়াইট হাউসের দাবি, ইতিমধ্যে ৪০ হাজারের বেশি সরকারি কর্মচারী প্রস্তাবটি গ্রহণ করেছেন।

ট্রাম্প নির্দিষ্ট সরকারি কর্মকর্তাদেরও নিশানা করেছেন। তিনি ফেডারেল ইলেকশন কমিটির (এফইসি) চেয়ার এলেন ওয়েইনট্রাবকে বরখাস্ত করেছেন। এই ডেমোক্র্যাট অনলাইনে এ-সংক্রান্ত একটি চিঠি পোস্ট করেছেন। তাঁর অভিযোগ, তাঁকে চাকরিচ্যুত করাটা বৈধ নয়।

নির্বাচনী প্রচারাভিযানে অর্থসংক্রান্ত আইন প্রয়োগের দায়িত্ব এফইসির। ফেডারেল নির্বাচন তত্ত্বাবধান করে এফইসি।

ন্যাশনাল লেবার রিলেশনস বোর্ডে কাজ করা প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ নারী গোয়েন উইলকক্সকেও বরখাস্ত করেছেন ট্রাম্প। গোয়েন এখন ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে মামলা করছেন।

সাবেক মিত্রদের বরখাস্ত

একসময় ট্রাম্পের মিত্র ছিলেন, এমন কর্মকর্তাদেরও চাকরিচ্যুত করছেন তিনি।
ট্রাম্প তাঁর ট্রুথ সোশ্যাল নামের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে লিখেছেন, প্রেসিডেন্টের কাউন্সিল অন স্পোর্টস, ফিটনেস অ্যান্ড নিউট্রিশনের জোসে আন্দ্রেস, ন্যাশনাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার অ্যাডভাইজরি কাউন্সিলের মার্ক মিলে, উইলসন সেন্টার ফর স্কলারসের ব্রায়ান হুক ও প্রেসিডেন্টের এক্সপোর্ট কাউন্সিলের কেইশা ল্যান্স বটমসকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।

ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে ইরানবিষয়ক যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত ছিলেন ব্রায়ান হুক।
জেনারেল মার্ক মিলেকে ট্রাম্প তাঁর প্রথম মেয়াদে জয়েন্ট চিফ অব স্টাফ হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন।

পেন্টাগন জেনারেল মার্ক মিলে নিরাপত্তা সুরক্ষা প্রত্যাহার করেছেন ট্রাম্প। মার্ক মিলে অতীতে ট্রাম্পের কঠোর সমালোচনা করেছিলেন।

ট্রাম্পের দ্বিতীয় দফার অভিষেকের কয়েক ঘণ্টার মাথায় তাঁর প্রশাসনের কর্মকর্তারা মার্কিন প্রতিরক্ষা সদর দপ্তর পেন্টাগন থেকে মার্ক মিলের একটি প্রতিকৃতি সরিয়ে ফেলেন।

ডিইআই নিয়ে অঙ্গীকার

নির্বাচনী প্রচারের সময় ট্রাম্প ডিইআইয়ের কার্যক্রম বন্ধ করার বিষয়ে অঙ্গীকার করেছিলেন।

ডিইআইয়ের কার্যক্রমের লক্ষ্য সরকারি কর্মক্ষেত্রে বিভিন্ন পটভূমির লোকদের অংশগ্রহণ বাড়ানো।

ডিইআইয়ের সমর্থকেরা বলছেন, এই কার্যক্রম সরকারি কর্মক্ষেত্রে ঐতিহাসিক বা বিদ্যমান বৈষম্য ঘোচাতে সহায়ক। এই কার্যক্রম সরকারি কর্মক্ষেত্রে জাতিগত সংখ্যালঘুসহ নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর অপ্রতুল প্রতিনিধিত্বের বিষয়টি নিয়ে কাজ করে।

তবে সমালোচকদের দাবি, খোদ এই কার্যক্রমই বৈষম্যমূলক হতে পারে।
ডিইআইয়ের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে ট্রাম্প নির্বাচনী প্রচারাভিযানে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তা পূরণে তিনি তাঁর দায়িত্বের দ্বিতীয় দিনই উদ্যোগী হন। এ-সংক্রান্ত প্রকল্পে কাজ করা সব কর্মীদের চাকরিচ্যুত করার জন্য তিনি ফেডারেল এজেন্সিগুলোকে নির্দেশ দেন।

ট্রাম্প প্রশাসন হাজারো ফেডারেল কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ই–মেইল করেছে। এ ই–মেইলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তাঁদের এজেন্সিগুলোতে বৈচিত্র্যসংক্রান্ত যেকোনো ‘ছদ্মবেশী’ উদ্যোগ নিয়ে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। অন্যথায় কঠোর পরিণতির বিষয়ে সতর্ক করা হয়।

প্রসিকিউটরদের বরখাস্ত

যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ গত মাসে বলে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা তদন্তের সঙ্গে জড়িত বেশ কয়েকজন প্রসিকিউটরকে বরখাস্ত করা হয়েছে।

দুটি ফেডারেল মামলায় ট্রাম্পকে অভিযুক্ত করা হয়েছিল। তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর এই মামলা খারিজ হয়।

ট্রাম্প তাঁর নির্বাচনী প্রচারাভিযানে অঙ্গীকার করেছিলেন, তিনি নির্বাচিত হলে সরকারি সংস্থাকে কারও বিরুদ্ধে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করার ধারার অবসান ঘটাবেন।

মার্কিন বিচার বিভাগ গণমাধ্যমকে বলেছে, প্রসিকিউটরদের বরখাস্ত করার এই পদক্ষেপ ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস ভবনে (ক্যাপিটল হিল) দাঙ্গা হয়েছিল। তখন প্রেসিডেন্ট ছিলেন ট্রাম্প। তিনি নির্বাচনে জো বাইডেনের কাছে হেরেছিলেন। বাইডেনের জয়ের সত্যায়ন ঠেকাতে ট্রাম্পের উসকানিতে তাঁর উগ্র সমর্থকেরা ক্যাপিটল হিলে রক্তক্ষয়ী হামলা চালিয়েছিলেন।

ক্যাপিটল হিল দাঙ্গার ঘটনা তদন্তে জড়িত যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (এফবিআই) আটজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করেছে ট্রাম্প প্রশাসন।

ট্রাম্প প্রশাসন এফবিআইকে ৬ জানুয়ারির ঘটনা তদন্তের সঙ্গে জড়িত সব এজেন্টদের একটি তালিকা তৈরি করতে বলেছে।

ট্রাম্প ইতিমধ্যে বেশ কিছু ফেডারেল সংস্থার কমপক্ষে ১২ জন মহাপরিদর্শককে বরখাস্ত করেছেন। ফেডারেল সংস্থাগুলোর মধ্যে প্রতিরক্ষা, জ্বালানি ও পররাষ্ট্র দপ্তর রয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: চ কর চ য ত কর র বরখ স ত ত কর ছ ন র প রথম সরক র তদন ত

এছাড়াও পড়ুন:

একজন চা শ্রমিকের দিনে আয় ১৭৮ টাকা

হবিগঞ্জে ছোট-বড় মিলেয়ে চা বাগানের সংখ্যা প্রায় ৪১টি। এসব বাগানের বাসিন্দা প্রায় দেড় লাখ। এর মধ্যে, স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলে ৩২ থেকে ৩৫ হাজার মানুষ চা পাতা উত্তোলনে জড়িত।

চা বাগানে একজন শ্রমিককে প্রতিদিন ২৩ কেজি পাতা তুলতে হয়। এর বিনিময়ে মজুরি পান ১৭৮ টাকা ৫০ পয়সা। অভিযোগ রয়েছে, কোনো কোনো বাগানে নিয়মিত এই মজুরিও দেওয়া হয় না।

শ্রমিকদের দাবি, দৈনিক মজুরি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা করতে হবে। বর্তমানে যে মজুরি পাওয়া যায় তা দিয়ে সংসার চলে না। প্রতিদিনই নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে। সেই সঙ্গে চা শ্রমিকদের নৈমিত্তিক ছুটির ব্যবস্থা করতে হবে।

আরো পড়ুন:

বৈষম্য কেন? নারী শ্রমিকেরা পান না সমান মজুরি

ধান কাটায় আধুনিক যন্ত্রের ব্যবহার, পেশা বদলাচ্ছেন কৃষি শ্রমিকেরা

সরেজমিনে কয়েকটি বাগান ঘুরে দেখা যায়, শ্রমিকরা ছোট্ট কুঠুরিতে গাদাগাদি করে পরিবারের সবাইকে নিয়ে বসবাস করেন। পুষ্টিকর খাবার তো দূরের কথা, দু-বেলা পেটভরে খেতে পারেন না।

শ্রমিকদের দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পাল বলেন, ‘‘দুই বছর অন্তর চা শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবি ও সমস্যা নিয়ে চা বাগান মালিক পক্ষের সংগঠনের সঙ্গে চা শ্রমিক ইউনিয়ন প্রতিনিধির বৈঠক হয়। সর্বশেষ গত বছরের আগস্টে বৈঠক হয়েছে। সে সময় ৮ টাকা ৫০ পয়সা বৃদ্ধি পেয়ে মজুরি ১৭৮ টাকা ৫০ নির্ধারিত হয়েছে।’’

শ্রমিকদের কষ্টের কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘‘দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে এই টাকায় চলা যায় না। দেশের কোথাও এতো সস্তা শ্রমের দাম নেই। বর্তমানে একজন কৃষিশ্রমিক দিনে ৫০০-১০০০ টাকা আয় করেন, একজন  রিকশাচালকের প্রতিদিনের আয় ৭০০ থেকে ৯০০ টাকা। সেখানে একজন চা শ্রমিক পান ১৭৮ টাকা ৫০ পয়সা। এজন্য তাকে প্রতিদিন ২৩ কেজি পাতা তুলতে হয়।’’

চা শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে নাটক ও গানের মাধ্যমে দাবি জানিয়ে আসা জেলার চুনারুঘাট উপজেলার দেউন্দি প্রতীক থিয়েটারের সভাপতি সুনীল বিশ্বাস বলেন, ‘‘দৈনিক ১৭৮ টাকা ৫০ পয়সা মজুরিতে শ্রমিকদের চলা কঠিন হয়ে পড়েছে। অচিরেই মজুরি ৬০০ টাকা নির্ধারণ করা হোক। এছাড়া, শ্রমিকদের আরো সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।’’

ঢাকা/রাজীব

সম্পর্কিত নিবন্ধ