‘আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করেই ছাড়ব’ এ শপথ করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ। বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) রাত ৯টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হামলায় মৃত্যু আবুল কাশেমের জানাজায় এ শপথ করেন তিনি। 

এর আগে গাজীপুরে সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাড়িতে ভাঙচুরের সময় স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হামলায় আহত হন আবুল কাশেম। পরে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়। সেখানে আজ বিকেল ৩টায় হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) ১৬ নম্বর বেডে মারা যান আবুল কাশেম।  

হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, ‘‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আমরা আহ্বান জানাচ্ছি, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার জন্য আপনাদের আর কী কী প্রয়োজন। দীর্ঘ ৪ দশকেরও বেশি সময় ধরে মানুষের অধিকার লুণ্ঠিত হয়েছে। গুম, খুন, হত্যা, ধর্ষণ, নির্বিচারে মানুষ হত্যা এগুলোই আওয়ামী লীগের ক্যালেন্ডার। আপনারা দ্রুততম সময়ের মধ্যে আইনগত প্রক্রিয়ায় আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করুন। কাসেমের লাশকে সামনে রেখে শপথ করছি, কাসেমের রক্তের দায় আমাদের। আমরা আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করেই ছাড়ব।’’    

তিনি আরো বলেন, ‘‘ছয় মাস পরেও আমাদের জুলাই বিপ্লবের সৈনিকদের আওয়ামী লীগের দোসরদের হাতে নিহত হতে হয়। আমাদের গণতন্ত্রকামী, ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দলের এটি হচ্ছে আমাদের কানেকটিভ ফেইলিউর। আমাদের ফ্যাসিবাদবিরোধী যেসব রাজনৈতিক দলগুলো রয়েছে, এটি আমাদের কানেকটিভ ফেইলিউর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে। আমরা এতদিন পর্যন্ত আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে পারিনি। আমরা দেখছি, ইতোমধ্যেই আওয়ামী লীগ অপরাধের বৈধতা উৎপাদন করেছে।’’

‘‘আমরা স্পষ্ট করতে চাই, ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে আমাদের সার্বভৌম ও স্বাধীনতা বিকিয়ে দিয়ে আওয়ামী লীগ তার ক্ষমতা টিকিয়ে রেখেছে। ৫ আগস্টের পরে এই ভূখণ্ড আমরা বাংলাদেশিদের হাতে তুলে দিতে পেরেছি। এই ভূখণ্ডের মধ্যে হয় আওয়ামী লীগ থাকবে, না হয় আমরা থাকবো’’ বলে জানান তিনি।

প্রসঙ্গত, গত ৭ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ৯টার দিকে গাজীপুর মহানগরের ধীরাশ্রমের দক্ষিণখানে সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাড়িতে হামলা চালায় একদল বিক্ষুব্ধ ছাত্রজনতা। এ সময় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের হামলায় অন্তত ১৫ জন আহত হন। পরে ওইদিন দিবাগত রাত দেড়টার দিকে আহতদের মধ্যে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ৫ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়। সেখানে বিকেল ৩টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) ১৬ নম্বর বেডে মারা যান আবুল কাশেম।

ঢাকা/এনএইচ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ন ষ দ ধ কর য় আওয় ম আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

নড়াইলে সরকারি গাছ বিক্রির অভিযোগে চেয়ারম্যানসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা

নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ ইউনিয়নে সড়কের পাশে সরকারি গাছ চুরি করে বিক্রির অভিযোগে মামলা হয়েছে। গতকাল বুধবার রাতে শাহবাদ ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মশিউর রহমান বাদী হয়ে সদর থানায় মামলাটি করেন।

মামলায় ওই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমানসহ ১৩ জন আসামি করা হয়েছে। অন্য আসামিরা হলেন প্রশিকা নড়াইল উন্নয়ন এলাকা ব্যবস্থাপক শাহাব উদ্দিন ও প্রশিকার গঠিত সংগঠন প্রভাতী যুব সংঘের সভাপতি নড়াইল সদর উপজেলার তুজরডাঙ্গা এলাকার মুজিবুর রহমান, সদস্য একই এলাকার জরিনা বেগম, রজব আলী, মো. আজিবর, মো. ইলিয়াছ, ইমান আলী, মো. ওমর, মো. হায়দার, আবু সাঈদ, মো. এনামুল ও মো. শরিফুল।

এ বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার সকালে নড়াইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারি গাছ চুরি করে বিক্রির অভিযোগে একটি মামলা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

মামলার এজহারে বাদী অভিযোগ করেছেন, গত ২৯ এপ্রিল নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ বাজার থেকে হাজির বটতলা পর্যন্ত সরকারি রাস্তার জায়গা থেকে গাছ কাটা ও চুরি করে বিক্রির সংবাদ পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে যান। উপস্থিত হয়ে দেখেন, কাটা গাছবোঝাই একটি ট্রাক এবং নছিমন জব্দ করেছেন নড়াইল সদর উপজেলা ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার দেবাশীষ অধিকারী। তখন ঘটনাস্থলে শ্রমিকদের জিজ্ঞাসাবাদ ও খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, মামলার আসামিরা কোনো ধরনের অনুমতি ছাড়াই খাসজমি থেকে গাছ কেটে বিক্রি করেছেন। এর আগেও একবার তাঁরা ওই জমি থেকে গাছ বিক্রি করেছিলেন। জব্দ করা গাছের লগ, ডালপালা এবং আগে কাটা গাছের অবশিষ্ট ভূমিসংলগ্ন গুঁড়ি পর্যবেক্ষণ করে বোঝা গেছে, ওই স্থান থেকে আনুমানিক পাঁচ লাখ টাকার অধিক গাছ চুরি করে কাটা ও বিক্রি হয়েছে।  

প্রশিকা নড়াইল উন্নয়ন এলাকার ব্যবস্থাপক শাহাব উদ্দিন বলেন, ২০০৯ সালে প্রশিকা, ইউনিয়ন পরিষদ ও প্রভাতী যুব সংঘের যৌথ উদ্যোগে একটি চুক্তির মাধ্যমে সড়কের পাশে গাছগুলো রোপণ করেছিল। সে সময় সড়কটি খাস খতিয়ানভুক্ত ছিল না। বর্তমানে তা সরকারের আওতায় পড়ায় গাছ কাটার অনুমতি চেয়ে ইউএনওর কাছে আবেদন করা হয়েছিল, তবে প্রশাসন কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি।  কিছুদিন আগে ইউপি সদস্য ইব্রাহিম তাঁকে ফোনে জানান, বিদ্যুৎ বিভাগের কাটা ডালপালা বিক্রি করতে চান চেয়ারম্যান। বিদ্যুৎ বিভাগের কাটা ডালপালাগুলো পড়ে থেকে নষ্ট হবে ভেবে তিনি বিক্রিতে সম্মতি দেন। পরে গাছ কীভাবে বা কারা কেটেছে, তা তিনি জানেন না।

মামলা করার আগে অবৈধভাবে গাছ কাটার অভিযোগের ব্যাপার জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান বলেছিলেন, প্রশিকার সঙ্গে চুক্তির একটি পক্ষ ছিল ইউনিয়ন পরিষদ। সেই হিসেবে গাছ কাটার অনুমতি নিতে ইউএনও বরাবর প্রশিকার আবেদন তিনি চেয়ারম্যান হিসেবে সুপারিশ করেছিলেন। তবে গাছ কেটেছে প্রশিকা আর তাদের সংগঠন। এখানে চেয়ারম্যান-মেম্বরের কিছু নেই।

নড়াইল সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) দেবাশীষ অধিকারী বলেন, প্রশিকার চুক্তির সময় সড়কটি ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিতে ছিল, পরে ২০১৫ সালে এটি খাস খতিয়ানভুক্ত হয়। খাসজমি থেকে গাছ কাটা বেআইনি। এ কারণে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ