নোয়াখালী জেলা পুলিশের তালিকাভূক্ত দক্ষিণাঞ্চলীয় উপজেলা সুবর্ণচরের শীর্ষ সন্ত্রাসী বনদস্যু ও ভূমি দস্যু আবুল কালাম ওরপে সফি বাতাইন্নাকে (৬০) গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বুধবার ভোরে সুবর্ণচর উপজেলার চরজুবিলী ইউনিয়নের জিয়ার চর এলাকায় তার আস্তানা সফি নগর থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। একই সঙ্গে তার চতুর্থ স্ত্রী হাসিনা বেগমকে (৫০) ও গ্রেপ্তার করে যৌথ বাহিনী। তার কাছ থেকে একটি দেশীয় রামদা ও একটি চাকু পাওয়া যায়। তার বিরুদ্ধে ছয়টি মামলা রয়েছে। চরজব্বর থানার ওসি মো.

শাহীন মিয়া বুধবার দুপুরে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

চরজব্বর থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, আবুল কালাম সফি প্রকাশ সফি বাতাইন্না দুই যুগের বেশি সময় ধরে নোয়াখালীর দক্ষিণাঞ্চল সুবর্ণচর ও মেঘনা নদী এলাকায় রাজনৈতিক ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় অপরাধের স্বর্গরাজ্য গড়ে তুলেছিলেন। ২০০০ সালের দিকে নোয়াখালীর দক্ষিণাঞ্চলের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল উজাড় করে গড়ে তুলেছিল অপরাধের সাম্রাজ্য। চুরি, ডাকাতি, খুন, ধর্ষণ, খাস জমি দখল করে বিক্রিসহ অসামাজিক কর্মকাণ্ড ছিল তার নিত্যদিনের কাজ। ২০০৩ সালের দিকে তিনি গ্রেপ্তার হলেও পরবর্তীতে জামিনে এসে আবার সংগঠিত হয়ে রাজনৈতিক আশ্রয়ে হয়ে উঠেন ভূমিহীন নেতা। এতে তার সঙ্গে প্রধান কমান্ডার হিসেবে যুক্ত ছিলেন তার জামাতা কুখ্যাত সন্ত্রাসী একাধিক হত্যা, ধর্ষণ, ডাকাতির মামলার আসামি জসিম উদ্দিন রায়হান প্রকাশ রানা বাহিনী। পরবর্তীতে স্থানীয় লোকজনকে জিম্মি করে রানা হয়ে যান ইউপি মেম্বার। শ্বশুর জামাই মিলে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক আশ্রয়ে গড়ে তুলেন নিজেদের আধিপত্যের মসনদ। গত ১৫ বছরে তাদেকে গ্রেপ্তার করতে সাহস করেনি পুলিশ, তাদেরকে ধরতে পুলিশ তার এলাকায় গেলেই মসজিদের মাইকে ডাকাত ডাকাত বলে ঘোষণা দিয়ে পুলিশের ওপর হামলে পড়তো। আবার আওয়ামী লীগের নেতাদের হুমকিও মোকাবিলা করতে হতো প্রশাসনকে। 

উপজেলার ভুক্তভোগী খামার মালিক জয়নাল আবেদীন জানান, ২০০২ সালে আমাদের তিল তিল করে গড়ে তোলা গরুর খামার থেকে ৩৮টি গরু ছিনিয়ে নিয়ে যায়। তার কাছে গরুগুলো ফেরত আনতে গেলে আমাদের আটকে রেখে উল্টো নগদ টাকা আদায় করে আমাদের ছেড়ে দেয় এবং প্রাণনাশের ভয় দেখায়। প্রাণের ভয়ে আর গরুর জন্য যেতে পারিনি। আমরা তার উপযুক্ত শাস্তি কামনা করছি।

চরজব্বর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা মো. আবদুল্যাহ ওরপে আবদুল্যা চেয়ারম্যান বলেন, সফি বাতাইন্না সুবর্ণচর উপজেলার চিহিৃত ভূমিদস্যু ও ডাকাত সর্দার। তিনি এলাকায় খুন, ধর্ষণ ও চাঁদাবাজি করত। তার অন্যতম সহযোগী ছিলেন প্রয়াত নুব্বা ছোরা ও বশর মাঝি। ওই দুইজনকে সঙ্গে নিয়ে তিনি মেঘনা নদীতে ডাকাতি করতেন। সফির জামাতা রায়হান মেম্বার তার অন্যতম সহযোগী ছিল। আবদুল্যাহ চেয়ারম্যান আরও বলেন, গত বছর সফি বাতাইন্না নোয়াখালী-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক একরামুল করিম চৌধুরীকে মোটা অংকের টাকা দিয়ে তার সহযোগিতা নিয়ে স্থানীয় চর জুবলী ইউনিয়নের চর মহি উদ্দিন এলাকায় ২০০ একর জমি দখল করে ভূমিহীনদের কাছে বিক্রি করেন। সফি বাতাইন্না শ্রমিকদল কর্মী হত্যা মামলার আসামি। 

সাবেক সাংসদ একরামুল করিম চৌধুরী গত বছর ১ অক্টোবর চট্টগ্রামের খুলশী থানা পুলিশের হাতে দেশি বিদেশি বিপুল পরিমাণ মুদ্রাসহ গ্রেপ্তার হন। বর্তমানে তিনি কারাগারে থাকায় এই ব্যাপারে তার বক্তব্য নেওয়া যায়নি। 

এ ব্যাপারে চরজব্বার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাহীন মিয়া বলেন, ৬ মামলার আসামি সফিকে গ্রেপ্তারের জন্য মঙ্গলবার রাতে তার আস্তানায় অভিযান পরিচালনা করা হলে তার অনুসারীরা মসজিদের মাইকে ডাকাত ডাকাত বলে যৌথ বাহিনীকে হামলা করার চেষ্টা করে। পরবর্তীতে তাকে সুকৌশলে তার স্ত্রীসহ গ্রেপ্তার করা হয়। তার বিরুদ্ধে হত্যা, ডাকাতি, ভূমিদখল, আগ্নেয়াস্ত্র ও বন মামলা রয়েছে। 

ওসি শাহীন মিয়া আরও বলেন, চরজব্বার থানা ছাড়াও একাধিক থানায় মামলা রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তার বিরুদ্ধে একটি অস্ত্র মামলা করা হয়েছে। তাকে ও স্ত্রী হাসিনা বেগমকে অস্ত্র মামলায় আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: গ র প ত র কর ব ত ইন ন এল ক য় উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

‘ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স’ নিয়ে রায় পুনর্বিবেচনার আবেদনের পরবর্তী শুনানি বুধবার

রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ‘ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স’ নিয়ে আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে করা আবেদনের (রিভিউ) ওপর পরবর্তী শুনানির জন্য আগামীকাল বুধবার দিন রেখেছেন আপিল বিভাগ। আজ মঙ্গলবার শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের বেঞ্চ পরবর্তী ওই দিন ধার্য করেন।

এর আগে গত ১৮ মে শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগ শুনানির জন্য ১ জুলাই দিন ধার্য করেছিলেন। ধার্য তারিখে বিষয়টি শুনানির জন্য রিভিউ আবেদনকারী পক্ষের আইনজীবীর সময়ের আরজির পরিপ্রেক্ষিতে আপিল বিভাগ ১৫ জুলাই পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেন। আজ বিষয়টি শুনানির জন্য আপিল বিভাগের কার্যতালিকার ৭ নম্বর ক্রমিকে ওঠে।

ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স সংশোধন করে ২০১৫ সালের ১১ জানুয়ারি আপিল বিভাগ রায় দেন। পরে ২০১৬ সালের ১০ নভেম্বর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। রায়ে রাষ্ট্রের সাংবিধানিক পদধারীদের পদক্রম ওপরের দিকে রাখা ও অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলা হয়। পাশাপাশি জেলা জজদের পদক্রম আট ধাপ উন্নীত করে সচিবদের সমান করা হয়।

আপিল বিভাগের রায়ের পর্যবেক্ষণে প্রধান বিচারপতির পদক্রম এক ধাপ উন্নীত করে জাতীয় সংসদের স্পিকারের সমান এবং রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের (স্বাধীনতা পুরস্কার, একুশে পদক ও মহান স্বাধীনতাসংগ্রামে অংশগ্রহণ করে যে মুক্তিযোদ্ধারা বীর উত্তম খেতাব পেয়েছেন) পদক্রমে যথাযথভাবে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত বলে উল্লেখ করা হয়।

ওই রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) তৎকালীন চেয়ারম্যান ২০১৭ সালে পৃথক আবেদন করেন। রিভিউ আবেদনে রাষ্ট্রের ৯০ জন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল পক্ষভুক্ত হন। পুনর্বিবেচনা চেয়ে করা আবেদনের ওপর গত ২৭ এপ্রিল শুনানি শুরু হয়।

আজ আদালতে রিভিউ আবেদনকারী মন্ত্রিপরিষদ সচিবের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সালাহ উদ্দিন দোলন শুনানি করেন। রিট আবেদনকারী পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী প্রবীর নিয়োগী এবং ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলদের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আহসানুল করিম শুনানিতে অংশ নেন।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ রুলস অব বিজনেস অনুযায়ী, ১৯৮৬ সালে ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স তৈরি করে। রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের পর একই বছরের ১১ সেপ্টেম্বর তা জারি করা হয়। পরে বিভিন্ন সময়ে তা সংশোধন করা হয়।

সর্বশেষ সংশোধন করা হয় ২০০৩ সালের ডিসেম্বরে। সংশোধিত এই ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স তৈরির ক্ষেত্রে সাংবিধানিক পদ, সংবিধান কর্তৃক স্বীকৃত ও সংজ্ঞায়িত পদগুলো প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের নিচের ক্রমিকে রাখা হয়েছে—এমন উল্লেখ করে এর বৈধতা নিয়ে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের তৎকালীন মহাসচিব মো. আতাউর রহমান ২০০৬ সালে রিট করেন।

রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১০ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট আট দফা নির্দেশনাসহ ১৯৮৬ সালের ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স (সংশোধিত) অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করে রায় দেন। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ ২০১১ সালে আপিল করে। এ আপিলের ওপর শুনানি শেষে ২০১৫ সালের ১১ জানুয়ারি আপিল বিভাগ রায় দেন। এ রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে ২০১৭ সালে করা আবেদনের ওপর শুনানি চলছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আসামির কাঠগড়ায় সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হকের ৪৫ মিনিট
  • পরবর্তী সরকারের পক্ষে এত সহজে সংস্কার আকাঙ্ক্ষাকে উপেক্ষা করা সম্ভব হবে না: আসিফ নজরুল
  • বিসিআইসির নিয়োগ পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ
  • এলডিসি উত্তরণের পরবর্তী প্রস্তুতি নিতে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন
  • ৪৪তম বিসিএস: মনোনীত প্রার্থীদের তথ্য চেয়ে পুনরায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ
  • ‘আগামীর বাংলাদেশে মিডিয়াকে দালাল হিসেবে দেখতে চাই না’ 
  • ‘ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স’ নিয়ে রায় পুনর্বিবেচনার আবেদনের পরবর্তী শুনানি বুধবার
  • মাইলস্টোনে দগ্ধ ৩৩ জন এখনো ভর্তি, আইসিইউতে ৩
  • শেখ হাসিনার অডিওগুলো শুনলে বোঝা যায়, তাঁর এখনো প্রতিশোধ নেওয়ার ইচ্ছা আছে: আইন উপদেষ্টা
  • দ্বিতীয় প্রান্তিকে ব্র্যাক ব্যাংকের মুনাফা বেড়েছে