কমিউনিটির গল্প নিয়ে চলচ্চিত্র উৎসবের দ্বিতীয় আসর শুরু হচ্ছে
Published: 14th, February 2025 GMT
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সাংবাদিকতা, মিডিয়া ও যোগাযোগ বিভাগের আয়োজনে দ্বিতীয়বারের মতো অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ‘কমিউনিটি ডিজিটাল স্টোরিটেলিং ফেস্টিভ্যাল (সিডিএসটিএফ)’।
১৭ ও ১৮ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স হলে অনুষ্ঠিত হবে দুই দিনব্যাপী মূল আয়োজন। এবারের ফেস্টিভ্যালের থিম ‘কোস্টাল লাইফ’ (উপকূলীয় জীবন), যেখানে বাংলাদেশের উপকূলীয় সম্প্রদায়ের মানুষের প্রতিকূলতা, সংস্কৃতি, সহনশীলতা ও জীবিকা নিয়ে আলোকপাত করা হবে। ১৯ ফেব্রুয়ারি আয়োজনের বিশেষ পর্ব হিসেবে মিরপুরের সনি স্কয়ারের স্টার সিনেপ্লেক্সে থাকবে নির্বাচিত কনটেন্টের বিশেষ প্রদর্শনী। সম্প্রতি আয়োজিত ‘মিট দ্য প্রেস’–এ এসব তথ্য জানানো হয়।
এবারের উৎসবে ১৮টি দেশ থেকে সর্বমোট ১৫৩টি চলচ্চিত্র জমা পড়েছে। এই আয়োজনের মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে উপকূলীয় মানুষের গল্পগুলোকে একটি বৈশ্বিক প্ল্যাটফর্মে উপস্থাপন করা হবে, পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তন ও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো উঠে আসবে।
‘সিডিএসটিএফ’–এর প্রধান উপদেষ্টা এবং ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সাংবাদিকতা, মিডিয়া এবং যোগাযোগ বিভাগের প্রধান সহকারী অধ্যাপক আফতাব হোসেন বলেন, ‘সিডিএসটিএফের উদ্দেশ্য ছিল সমাজের জন্য কাজ করা। ধীরে ধীরে আমরা এটি বাস্তবায়ন করছি। বর্তমানে আমাদের এই প্রকল্প সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। আমরা আশাবাদী, ভবিষ্যতে এটি পৃথিবীজুড়ে ছড়িয়ে পড়বে।’
গতবারের মতো এবারেও উৎসবে অংশগ্রহণের জন্য ছিল চারটি ক্যাটাগরি—ইনডিপেনডেন্ট, ডিআইইউ বেস্ট কমিউনিটি ডিজিটাল স্টোরি, ওয়ান-মিনিট এবং সাংবাদিকতা। বিজয়ীদের জন্য রয়েছে মোট ৪০ হাজার টাকা।
সিডিএসটিএফের আহ্বায়ক এবং সাংবাদিকতা, মিডিয়া ও যোগাযোগ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আবদুল কাবিল খান বলেন, ‘সিডিএসটিএফ বাংলাদেশের প্রথম ক্রাউডফান্ডিং ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল, যেটিকে এ পর্যায়ে নিয়ে আসতে এক বছরের বেশি সময় ধরে কাজ করতে হয়েছে। শিক্ষার্থীদের অক্লান্ত পরিশ্রম এবং শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর সহযোগিতায় এই সিজন ইতিমধ্যেই প্রথম সিজনকে ছাড়িয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে।’
এবারের উৎসবের বিচারক প্যানেলে রয়েছেন চ্যানেল–২৪-এর সাংবাদিক এবং জনপ্রিয় কনটেন্ট নির্মাতা আশ্বাস এম এ চৌধুরী, স্টুডিও ইয়েলো সামথিং লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা এবং চলচ্চিত্র পরিচালক রাকা নওশিন নওয়ার এবং অস্ট্রেলিয়ার সুইনবার্ন ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির সহযোগী অধ্যাপক ম্যাক্স শ্লেসার।
উৎসবের সমন্বয়ক নাঈম হাসান বলেন, ‘সিডিএসটিএফ সিজন দুইয়ের এই সাফল্য প্রমাণ করছে যে আবেগ এবং দলবদ্ধ প্রচেষ্টার মাধ্যমে কী অর্জন করা সম্ভব।’
উৎসবের পরিচালক ইকবাল হোসেন জানান, ‘এটি জেএমসি বিভাগের শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে পরিচালিত একটি ফেস্টিভ্যাল। বাংলাদেশের প্রথম ক্রাউডফান্ডিং ফেস্টিভ্যাল হিসেবে আমরা এটিকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সকল জনগোষ্ঠীর গল্প বলার একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই।’
এবারের চলচ্চিত্র উৎসবের কৌশলগত অংশীদার প্রথম আলো ডটকম এবং ইউএনডিপি।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: চলচ চ ত র র উৎসব র ব দ কত প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
তুলশীগঙ্গার তীরে সন্ন্যাসতলীর শতবর্ষী ঘুড়ির মেলা
জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার মামুদপুর ইউনিয়নের মহব্বতপুর গ্রাম ঘেঁষে তুলশীগঙ্গা নদীর অদূরে সন্ন্যাসতলীর বটতলা। জায়গাটিতে প্রায় একশ বছর আগে থেকে বাংলা জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষ শুক্রবার আয়োজন হয় ঘুড়ির মেলা। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। অন্তত ৫০ গ্রামের হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে শুক্রবার সন্ন্যাসতলী ঘুড়ি উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মেলার দিনক্ষণ মনে রেখে সময়মতো দোকানিদের পাশাপাশি দর্শনার্থীরা ভিড় জমান নিভৃত পল্লীতে। আগে মেলার দিন বৃষ্টি হওয়া যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু এবার ব্যতিক্রম ঘটনা ঘটেছে। প্রচণ্ড গরম ও তাপপ্রবাহের মধ্যেই চলে এ আয়োজন। বৈরী পরিবেশের কারণে উৎসবের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
স্থানীয় প্রবীণ বাসিন্দারা বলছেন, সন্ন্যাসতলীর এ ঘুড়ি উৎসব শুরুর দিন বিকেলে বটতলায় স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায় সন্ন্যাস পূজা পালন করেন। তাদের এ পূজা-অর্চনা ঘিরেই মূলত এ মেলার উৎপত্তি। তবে শুরুর কথা কেউ বলতে পারেননি। প্রবীণরা শুধু জানেন, একশ বছরের বেশি সময় ধরে তারা এ মেলার আয়োজন দেখে আসছেন।
মেলার নিজস্ব জায়গা না থাকলেও এর ব্যাপ্তি প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে। প্রচণ্ড গরমের মধ্যেই এক দিনের এ মেলা ঘিরেই জেলার জামালগঞ্জ চারমাথা থেকে ঐতিহাসিক আছরাঙ্গাদীঘি পর্যন্ত রকমারি পণ্যের দোকান বসে। এখান থেকে সংসারের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন আসবাব থেকে শুরু করে ছোট মাছ ধরার বাঁশের তৈরি পণ্য খলসানি, টোপা, ডালা, চালুন কিনে নেন অনেকে।
সুতার তৈরি তৌরা জাল, গৃহস্থালি কাজে ব্যবহৃত দ্রব্যাদি, বিভিন্ন ধরনের খেলনা, মিষ্টান্ন, প্রসাধনী, মাটির তৈজসপত্রসহ বিভিন্ন সামগ্রী বিক্রি হয়। শিশুদের বিনোদনের জন্য ছিল নাগরদোলার ব্যবস্থাও। আর মেলার বড় আকর্ষণ ঘুড়ি ওড়ানো ও বিক্রি। পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা এসেছিলেন ঘুড়ি বিক্রি করতে।
প্রচণ্ড গরমের পাশাপাশি তেমন হাওয়া-বাতাস না থাকায় এবার ঘুড়ি ওড়ানোর প্রতিযোগিতা সেভাবে জমে ওঠেনি। তবে ঘুড়ি বেচাকেনা ও শিশু-কিশোরদের উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো। এ উপলক্ষে আসা হাজার হাজার দর্শনার্থীর নিরাপত্তার জন্য মেলায় সার্বক্ষণিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের টহল ছিল।
আদমদীঘির শিববাটি গ্রামের ঘুড়ি ব্যবসায়ী সালাম হোসেনের ভাষ্য, সন্ন্যাসতলীর মেলা বড় হওয়ায় তিনি এসেছেন ঘুড়ি বিক্রির জন্য। মেলায় প্রত্যাশা অনুযায়ী ঘুড়ি বিক্রি করতে পেরে তিনি খুশি। জয়পুরহাটের পার্বতীপুর এলাকার ঘুড়ি ব্যবসায়ী মফিজ উদ্দিন ও মজনু সরদার বলেন, পূর্বপুরুষের আমল থেকে এ মেলার কথা শুনে আসছেন তারা।
মেলা উদযাপন ও পূজা কমিটির সদস্য মহব্বতপুর গ্রামের মন্টু মণ্ডল বলেন, মেলাটি হিন্দু সম্প্রদায়ের হলেও এটি আসলে সব ধর্মালম্বীর মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে।
মামুদপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মিলন হোসেনের ভাষ্য, এক দিনের আয়োজনে যে এত লোকের সমাগম হতে পারে, তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। মেলায় যেন অনৈতিক কর্মকাণ্ড না হয়, সে ব্যাপারে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
ক্ষেতলাল থানার ওসি মোহাম্মদ ফরিদ হোসেন বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং মেলায় আসা দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ প্রশাসন সতর্ক আছে। মেলায় অনৈতিক আচরণ লক্ষ্য করা গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।