বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) সাংবাদিকদের ওভাল অফিস ও এয়ার ফোর্স ওয়ানে প্রবেশাধিকার সীমাবদ্ধ করবে বলে জানিয়েছে হোয়াইট হাউস। চলতি সপ্তাহে ট্রাম্প প্রশাসন ও এপি’র মধ্যে চলমান উত্তেজনার পর এ পদক্ষেপ নিচ্ছেন হোয়াইট হাউস।

শুক্রবার সামাজিক প্ল্যাটফর্ম এক্স-এ একটি পোস্টে হোয়াইট হাউসের ডেপুটি প্রধান কর্মকর্তা টেইলর বাডোউইচ জানিয়েছেন, অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস যুক্তরাষ্ট্রের ‘গালফ অফ আমেরিকা’ নামের বৈধ ভৌগোলিক নাম পরিবর্তন উপেক্ষা করে চলেছে। এই সিদ্ধান্ত কেবল বিভাজনমূলক নয় বরং এটি ভুল তথ্য প্রচারের প্রতি তাদের মনোভাবকে উন্মোচন করেছে। 

বাডোউইচ বলেন, ভবিষ্যতে ওভাল অফিস ও এয়ার ফোর্স ওয়ান এখন সেই হাজার হাজার সাংবাদিকের জন্য উন্মুক্ত করা হবে, যারা প্রশাসনের এই ঘনিষ্ঠ এলাকা কাভার করতে নিষিদ্ধ ছিলেন। মুখপাত্র আরও বলেন, এপি সাংবাদিক ও ফটোগ্রাফাররা হোয়াইট হাউস কমপ্লেক্সে তাদের ক্রেডেনশিয়াল (পরিচয়পত্র) বজায় রাখবেন। 

গতকাল শুক্রবারও হোয়াইট হাউসে প্রবেশ করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন এপির একজন সাংবাদিক। মোদি-ট্রাম্পের সংবাদ সম্মেলনে যোগ দিতে গিয়ে অপ্রীতিকর পরিস্থিতির মুখে পড়েন ওই সাংবাদিক। এ নিয়ে টানা তৃতীয় দিনের মতো একই ধরনের ঘটনা ঘটল।

সম্প্রতি নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে গালফ অব মেক্সিকোর নাম বদলে গালফ অব আমেরিকা রেখেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তবে এই নির্দেশনা মানতে রাজি নয় এপি। এ ঘটনার সূত্রেই হোয়াইট হাউসের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়েছে এই স্বনামধন্য বার্তা সংস্থার। 

শুক্রবার এপি জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তাদের সাংবাদিককে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। এপির এডিটর ইন-চিফ জুলি পেইস ট্রাম্প প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তকে ‘অত্যন্ত উদ্বেগজনক’ বলে অভিহিত করেন। তিনি দাবি করেন, এই উদ্যোগ এপির মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ‘স্পষ্ট লঙ্ঘন’ যা সংবাদ মাধ্যমটির সাংবিধানিক অধিকার।

এএফপিকে দেওয়া বিবৃতিতে জুলি বলেন, ‘টানা তিন দিন ধরে এপির সাংবাদিকদের প্রেসিডেন্টের ওপর তথ্য সংগ্রহ করতে দেওয়া হচ্ছে না। এপির পক্ষপাতহীন সংবাদের ওপর ভরসা করেন এমন লাখো মানুষের প্রতি এটা অবিশ্বাস্য পর্যায়ের অন্যায়।’

২০ জানুয়ারি মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি শপথ নেওয়ার আগেই গালফ অব মেক্সিকোর নাম বদলানোর কথা জানান। ইতোমধ্যে তিনি এ বিষয়ে একটি নির্বাহী আদেশে সই করেছেন। মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ও অন্যান্যরা বিষয়টি হালকা দৃষ্টিতেই দেখছেন।
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স ব দ কত

এছাড়াও পড়ুন:

বছরে ৬ লাখ অপরিণত শিশুর জন্ম

দেশে বছরে গড়ে জন্ম নিচ্ছে প্রায় ৬ লাখ অপরিণত (প্রিম্যাচিওর) শিশু। জন্মের সময় গর্ভকাল পূর্ণ না হওয়ায় এসব নবজাতকের ঝুঁকি থাকে নানা জটিলতায় পড়ার, এমনকি মৃত্যুর আশঙ্কাও থাকে বেশি। তাই নবজাতকদের মৃত্যু হ্রাসে অপরিণত নবজাতক জন্ম প্রতিরোধে সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। 

সোমবার শহীদ ডা. মিল্টন হলে বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের নিওন্যাটোলজি বিভাগ ও সেভ দ্যা চিলড্রেন আয়োজিত সভায় এই তথ্য জানানো হয়। 

স্বাগত বক্তব্য রাখেন সহযোগী অধ্যাপক ডা. সাদেকা চৌধুরী মনি। সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সহযোগী অধ্যাপক ডা. ইসমত জাহান। তিনি বলেন, মা ও অপরিণত নবজাতকদের জীবন রক্ষাকারী প্রকল্প সেভিং উইমেন এন্ড প্রিমেচিউর বেবিজ বা সোয়াপের মাধ্যমে দেশের পাচঁটি হাসপাতাল  মা ও নবজাতক সেবা দেওয়া হচ্ছে। এই প্রকল্পের আওতায় ১ লাখ ৬৫ হাজার গর্ভবতী মা ও ৮৭ হাজার নবজাতককে সেবা পেয়েছে। দেড় হাজার স্বাস্থ্যকর্মীকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এই প্রকল্পের উল্লেখযোগ্য অর্জন হলো ভায়ু বাবল সিপ্যাপ, ফ্যামিলি সেন্টার কেয়ার, ক্যাঙ্গারু মাদার কেয়ার, নিওনেটালি লাইভ ইত্যাদিকে সফলভাবে প্রয়োগ করে নবজাতকদের জীবন রক্ষায় ইতিবাচক ফলাফল পাওয়া গেছে।

বিএমইউর নিওনাটোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. আব্দুল মান্নান বলেন, বাংলাদেশে বছরে ৩০ লাখ নবজাতকের জন্ম হয়। যার মধ্যে শতকরা ২০ শতাংশই অপরিণত নবজাতক এবং বিশ্বের মধ্যে এই হার সর্বোচ্চ। সেই হিসেবে বছরে অপরিণত ৬ লাখ শিশু জন্মায়। নবজাতকের মৃত্যুহার হ্রাস পেলেও লক্ষ্যমাত্রা পূরণ অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং। বিশেষ করে ২০৩০ সালের মধ্যে প্রতি হাজার জীবিত জন্মে বর্তমানে নবজাতকের মৃত্যুহার ২০ জন থেকে ১২ জনে কমিয়ে আনা। যদিও এই প্রকল্পের কার্যক্রমসহ সামগ্রিক প্রচেষ্টায় নবজাতকের মৃত্যুহার ২০ জনে কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে।

বিএমইউর ফিটোম্যাটার্নাল মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. তাবাসসুম বলেন, নবজাতকের মৃত্যুর অন্যতম কারণ হলো অপরিণত নবজাতকের জন্ম দান। বাংলাদেশে প্রতি বছর ৩০ লাখ নবজাতকের জন্ম হয়। যার মধ্যে শতকরা ২০ শতাংশই অপরিণত নবজাতক এবং বিশ্বের মধ্যে এই হার সর্বোচ্চ। গত ১০ বছর ধরে এমন পরিস্থিতি দেখা যায়। এটি প্রতিরোধে আমাদের উদ্যোগ নেই। কেনো কমানো যাচ্ছে না এবিষয়েও কোনো গবেষণা হয় না। তবে সচেতনতা, প্রসূতি সেবা এবং মাতৃস্বাস্থ্য কার্যক্রম জোরদার করলে এ সমস্যা অনেকাংশে কমানো সম্ভব। অপরিণত শিশুর জন্মের পেছনে রয়েছে মাতৃস্বাস্থ্যের অবনতি, অপুষ্টি, সময়মতো প্রসবপরিচর্যার অভাব, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও প্রসবকালীন জটিলতা। এ ছাড়া ধূমপান, অনিয়ন্ত্রিত ওষুধ সেবন এবং অল্প বয়সে গর্ভধারণও অন্যতম কারণ।

সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএমইউ) এর ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলম বলেন, সোয়াপের মাধ্যমে নবজাতকদের পরিবার কেন্দ্রিক চিকিৎসা (ফ্যামিলি সেন্টারড কেয়ার-এফসিসি) মা ও শিশুর জীবন রক্ষায় বিরাট অবদান রাখছে। এই পদ্ধতিকে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে বৃহৎ আকারে কাজে লাগাতে পারলে সমগ্র স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থায় ইতিবাচক পরিবর্তনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর  অধ্যাপক ডা. মো. আবুল কালাম আজাদ, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর গবেষণা ও উন্নয়ন অধ্যাপক ডা. মো. মুজিবুর রহমান হাওলাদার, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নাহরীন আখতার, শিশু অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মো. আতিয়ার রহমান।

সম্পর্কিত নিবন্ধ