ফরিদপুরে অভিনব উৎসবে মেতেছিল সিঙ্গেলরা
Published: 15th, February 2025 GMT
ভালোবাসা দিবসের রঙিন আবহে যখন কাপলরা রোজ, চকোলেট আর গিফ্ট বক্সে মাতোয়ারা, ঠিক তখনই সিঙ্গেলদের কণ্ঠে ধ্বনিত হলো প্রতিবাদের স্লোগান।
ফরিদপুরে সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের মাঠে ১৪ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে এক সমাবেশের আয়োজন করা হয়। এবারের সমাবেশে স্লোগান ছিল অভিনব- ‘সিঙ্গেলরা কাঁদে না, সিঙ্গেলরা বাঁধে না, ভালোবাসা দিবসেও হাসে!’
সমাবেশে উপস্থিত সিঙ্গেলরা তাদের একাকীত্বকে উৎসবে রূপ দিতে মাঠজুড়ে নাচ, গান, আর হাসির মিছিল বের করে। কেউ কেউ মুখে লাগিয়েছে ‘সিঙ্গেল প্রাইড’ স্টিকার, কেউ আবার হাতে তুলে নিয়েছে প্ল্যাকার্ড, যেখানে লেখা- ‘ভালোবাসা দিবস? না, ধন্যবাদ, আমি আমার পিজ্জা আর নেটফ্লিক্সকে ভালোবাসি!’
সমাবেশের এক সিঙ্গেল ছাত্রী বলেন, “ভালোবাসা দিবসে কাপলদের দেখে আমাদের কোনো হিংসে হয় না। আমরা তো নিজেদের মতো করে খুশি। আজকে আমরা সবাই মিলে পিজ্জা পার্টি করেছি, গান গেয়েছি, আর সিঙ্গেল হওয়ার আনন্দ উদযাপন করেছি।”
অন্যদিকে, সমাবেশের আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, এই আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য হলো সিঙ্গেলদের একাকীত্বকে নয় বরং তাদের স্বাধীনতা ও আনন্দকে উদযাপন করা। ভালোবাসা দিবসে কাপলদের পাশাপাশি সিঙ্গেলরাও যে সমান গুরুত্বপূর্ণ, সেটাই আমরা এই সমাবেশের মাধ্যমে তুলে ধরতে চেয়েছি।
সমাবেশ শেষে সিঙ্গেলদের পক্ষ থেকে একটি হাসির মিছিল বের করা হয়, যেখানে অংশগ্রহণকারীরা নেচে গেয়ে ক্যাম্পাসের মাঠকে মাতিয়ে তোলে। এই সমাবেশ দেখে কলেজের অন্যান্য শিক্ষার্থীরাও বেশ উৎসাহিত হয়েছেন। অনেক কাপলও এই আয়োজনে যোগ দিয়ে সিঙ্গেলদের সঙ্গে ভালোবাসা দিবসের আনন্দ ভাগ করে নিয়েছেন।
এবারের ভালোবাসা দিবসে সিঙ্গেলদের এই আয়োজন সত্যিই ক্যাম্পাসকে কাঁপিয়ে দিয়েছে। ভালোবাসা দিবসের এই বিশেষ দিনে সিঙ্গেলরা প্রমাণ করেছে, ভালোবাসা শুধু কাপলদের জন্য নয়, সিঙ্গেলদের জন্যও সমান গুরুত্বপূর্ণ।
ঢাকা/তামিম/টিপু
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৬০ দিন পর শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীরা, উৎসবের আমেজ
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) দীর্ঘ ১৬০ দিন পর একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে টানা বৃষ্টি উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে এসেছেন। সকাল থেকেই ক্যাম্পাসে বইছে উৎসবের আমেজ।
সকালে কুয়েট ক্যাম্পাসে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস। ছাতা মাথায় দল বেঁধে ছুটছেন ক্লাসরুমের দিকে। কখনো এক ছাতার নিচে দু-তিনজন। কারও সঙ্গে অভিভাবকও এসেছেন। সকাল নয়টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি শিক্ষাবর্ষের প্রায় দুই হাজার শিক্ষার্থী ক্লাসে যোগ দেন। নতুন উপাচার্য অধ্যাপক মাকসুদ হেলালী বিভিন্ন বিভাগ ঘুরে শ্রেণি কর্মসূচি পর্যবেক্ষণ করেন।
ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং (ইসিই) বিভাগের ২২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী দীপ্ত বলেন, ‘আমাদের প্রায় এক সেমিস্টার নষ্ট হয়ে গেছে। এই সময়টা খুব অস্বস্তিতে কেটেছে। ক্ষতি যা হওয়ার হয়েছে, তবে এখন আবার ক্লাস শুরু হওয়াটা ইতিবাচক দিক। আমরা আশাবাদী।’ একই ব্যাচের শিক্ষার্থী আম্মান বলেন, ‘অনেক দিন জীবনটা থেমে ছিল। আজকের দিনটা বিশেষ মনে হচ্ছে। ঠিক যেন স্কুলজীবনের প্রথম দিনের মতো। সব হতাশা কাটিয়ে আমরা অনেকটা নতুন করে শুরু করছি।’
হুমায়ুন কবির নামের এক অভিভাবক বলেন, ‘আমার ছেলে বিল্ডিং ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে পড়ে। পাঁচ মাস ধরে ক্লাস বন্ধ থাকায় ও মানসিকভাবে খুব চাপের মধ্যে ছিল। একসময় অসুস্থও হয়ে পড়ে। কুয়েটে এমন পরিস্থিতি আগে দেখিনি। কর্তৃপক্ষ দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করলে হয়তো আগেই খুলে যেত। তারপরও এখন অন্তত খুলেছে, এটা বড় স্বস্তি।’
কুয়েটের ছাত্র পরিচালক আবদুল্লাহ ইলিয়াস আক্তার বলেন, আজ থেকে কুয়েটে ক্লাস শুরু হয়েছে। তবে এখনো সব শিক্ষার্থী আসেননি। যাঁদের কেবল ক্লাস রয়েছে, তাঁরা অংশ নিচ্ছেন। যাঁদের পরীক্ষা ছিল, তাঁরা প্রস্তুতির জন্য কিছুটা সময় চেয়েছে। প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ওরিয়েন্টেশন হবে ১৪ আগস্ট, ক্লাস শুরু ১৭ আগস্ট।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে শতাধিক ব্যক্তি আহত হন। ওই রাতেই তৎকালীন উপাচার্য ও কয়েকজন শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ ওঠে। এরপর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২৬ এপ্রিল শিক্ষা মন্ত্রণালয় উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ মাছুদ ও সহ-উপাচার্য অধ্যাপক শরিফুল আলমকে অব্যাহতি দেয়। ১ মে চুয়েটের অধ্যাপক হজরত আলীকে অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনার বিচার দাবিতে ৪ মে থেকে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম বর্জনের ঘোষণা দেয় শিক্ষক সমিতি। এরপর কোনো শিক্ষকই ক্লাসে ফেরেননি। শিক্ষক সমিতির বিরোধিতার মুখে হজরত আলী দায়িত্ব পালন করতে না পেরে ২২ মে পদত্যাগ করেন।
এরপর ১০ জুন নতুন উপাচার্য নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেয় সরকার। সেই ধারাবাহিকতায় গত বৃহস্পতিবার কুয়েটের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান বুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মাকসুদ হেলালী। পরদিন শুক্রবার তিনি খুলনায় এসে দায়িত্ব নেন। দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেন। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভায় আন্দোলন কর্মসূচি তিন সপ্তাহের জন্য স্থগিত করে ক্লাসে ফেরার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে গতকাল সোমবার ক্লাস শুরুর নোটিশ জারি করা হয়।