কয়েক দিন ধরে জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলা ও পৌর বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলনকে কেন্দ্র করে দলটির স্থানীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা ও বিভক্তি দেখা দিয়েছিল। সম্মেলন ঘিরে দিনভর উত্তেজনা থাকলেও কোনো অঘটন ছাড়াই সম্মেলন শেষ হয়েছে। তবে নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়নি।

মঙ্গলবার বিকেলে বকশীগঞ্জ খয়ের উদ্দিন মাদ্রাসা মাঠের ১৬ বছর পর বকশীগঞ্জ উপজেলা ও পৌর বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে কেন্দ্রীয় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খানের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা ছিল। কিন্তু তিনি না থাকায় প্রধান অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় বিএনপির কোষাধ্যক্ষ ও জামালপুর-১ (বকশীগঞ্জ-দেওয়ানগঞ্জ) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এম রশিদুজ্জামান (মিল্লাত)।

দুপুরে সম্মেলনের প্রথম অধিবেশন শুরু হয়। প্রথম অধিবেশনে কেন্দ্রীয় ও জেলা বিএনপির নেতা এবং স্থানীয় নেতারা বিকেল পর্যন্ত বক্তব্য দেন। সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মানিক সওদাগার।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সম্মেলন ঘিরে দলের নেতা-কর্মীরা বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। কয়েক দিন থেকে সম্মেলন সফল ও প্রতিহত করতে পাল্টাপাল্টি মিছিল হচ্ছিল। সম্মেলন সফল করতে সোমবার সন্ধ্যার দিকে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মানিক সওদাগরের নেতৃত্বে মিছিল বের হয়। অন্যদিকে সম্মেলন বন্ধের দাবিতে বিকেল চারটার দিকে উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুর রউফ তালুকদারের নেতৃত্বে একটি মিছিল বের করা হয়। সম্মেলন ঘিরে দলটির স্থানীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা ও বিভক্তি দেখা দেয়।

অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ও সম্মেলনের স্থানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। তবে দিনভর নানা উত্তেজনা থাকলেও অবশেষে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই সম্মেলন শেষ হয়েছে। দ্বিতীয় অধিবেশনে আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্তি করে নতুন কমিটি ঘোষণা করার কথা ছিল। কিন্তু আহ্বায়ক কমিটিও বিলুপ্তি করা হয়নি এবং নতুন কমিটিও ঘোষণা করা হয়নি।

বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহসাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শাহ মো.

ওয়ারেছ আলী মামুন সম্মেলনে দলীয় নেতা–কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে নতুন কমিটি ঘোষণা করা হবে। সেই পর্যন্ত কমিটির আহ্বায়ক ও সদস্যসচিব দলের দায়িত্ব পালন করবেন।

স্থানীয় কয়েকজন বিএনপি নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দুই পক্ষের বিভক্তি দূর করতে এম রশিদুজ্জামানের ঢাকার বাসায় একাধিক বৈঠক হয়। কিন্তু উভয় পক্ষই কেউ কাউকে ছাড় দিতে রাজি হয়নি। পরে এলাকায় উভয় পক্ষ কয়েক দিন ধরে পাল্টাপাল্টি নানা কর্মসূচি পালন করছিল। এই নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছিল।

সম্মেলন শুরুর আগে এম রশিদুজ্জামান বলেন, সম্মেলন ঘিরে এই মুহূর্তে কোনো ধরনের উত্তেজনা নেই। যে পক্ষটি দলে ঢোকার জন্য মিছিল করছিল, তাদের মধ্য থেকে দলের দুর্দিনে পাশে থাকা ও ত্যাগী নেতা-কর্মীদের কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটিগুলো কর্মী সম্মেলনের মাধ্যমে আগেই করা হয়েছিল বলে তিনি জানান।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কর ম দ র ব এনপ র উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ চলবে: হামাস

স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়ার প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া এক ঘোষণাপত্রের অস্ত্র ত্যাগের আহ্বানের জবাবে সংগঠনটি এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।

বৃহস্পতিবার হামাসের সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দখলদারির অবসান এবং জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সম্পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ থামবে না তারা।

মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে (এই উপত্যকায়) তার শাসনের অবশ্যই অবসান ঘটাতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের সঙ্গে এটি সংগতিপূর্ণ।’

সৌদি আরব, কাতার, ফ্রান্স ও মিসরসহ ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ ঘোষণাপত্রটি সমর্থন করেছে। এটি ‘দ্য নিউইয়র্ক’ ঘোষণাপত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

বৃহস্পতিবার আলাদা এক বিবৃতিতে প্রতি শুক্রবার, শনিবার ও রোববার বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও তাদের মিত্র দেশগুলোর দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা।

অনাহারে মৃত্যু ১৫৪

গাজায় কর্মরত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, উপত্যকাটিতে অনাহারে আরও দুই শিশু এবং এক তরুণ মারা গেছে। এ নিয়ে সেখানে অনাহারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫৪ জনে। তাদের মধ্যে শিশু ৮৯টি।

গাজায় প্রায় ২১ লাখ মানুষের বসবাস। উপত্যকাটিতে গত মার্চ থেকে নতুন করে অবরোধ শুরু করে ইসরায়েল। ফলে সেখানে ত্রাণবাহী কোনো ট্রাক প্রবেশ করতে পারছিল না। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সম্প্রতি কিছুদিন ধরে গাজায় সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইসরায়েল। এই ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য।

ত্রাণ নিতে প্রাণহানি ১৩৭৩

জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, গাজায় গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ আনতে গিয়ে মোট ১ হাজার ৩৭৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৮৫৯ জন মারা গেছেন বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে। গত মে মাসের শেষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাটি ইসরায়েলি সেনাদের সহায়তায় গাজার কয়েকটি স্থানে ত্রাণ দিচ্ছে।

বাকি ৫১৪ জন মারা গেছেন ত্রাণবাহী ট্রাকের আশপাশে। তাঁরা ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অধিকাংশই ইসরায়েলের সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।

আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকালে গাজায় অন্তত আরও ৪২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ত্রাণ আনতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। এই নিয়ে প্রায় ২২ মাসের সংঘাতে গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের হামলা নিহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার ৩৩২ জন।

গাজায় স্টিভ উইটকফ

শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গাজা সফর করেছেন। তিনি উপত্যকাটির রাফা এলাকায় জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রও ঘুরে দেখেন। এ সময় ইসরায়েলে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হুকাবি তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাজায় ছিলেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে উইটকফ নিজেই এই কথা জানিয়েছেন। আগের দিন তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উইটকফ বলেছেন, ‘মাঠের পরিস্থিতি বুঝতে ও তথ্য সংগ্রহ করতে আমরা গাজায় গিয়েছিলাম। গাজার মানবিক পরিস্থিতির একটি স্পষ্ট ধারণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পৌঁছে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য, যাতে করে গাজাবাসীর জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছাতে পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করা যায়।’

গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশেষ দূত ও আবাসন খাতের সাবেক আইনজীবী উইটকফের আন্তর্জাতিক নীতি ও মানবিক সহায়তা-সংক্রান্ত কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তা সত্ত্বেও তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সংকট সমাধানের চেষ্টার পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধেও কূটনীতি চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ