উত্তরার ঘটনায় আরো এক যুবক গ্রেপ্তার
Published: 18th, February 2025 GMT
রাজধানীর উত্তরায় এক দম্পতিকে কুপিয়ে জখম করার ঘটনায় আরেক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তার হওয়া এই যুবকের নাম আলফাজ। পুলিশ বলছে এই আলফাজ ওই দম্পতিকে সরাসরি কোপ দিয়েছিলেন।
মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগে সোমবার রাতে ঘটনার পরপরই রবি রায় (২২) ও মো. মোবারক হোসেন (২৫) নামে দুজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
উত্তরা পশ্চিম থানার ওসি হাফিজুর রহমান বলেন, ‘‘এ ঘটনায় জড়িত আরো তিনজন পলাতক রয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।’’
তিনি বলেন, “ওই দম্পতিকে যে দুজন সরাসরি কোপ দিয়েছে তাদের মধ্যে আলফাজ একজন, আরেকজন পলাতক রয়েছে। গ্রেপ্তাররা প্রাথমিকভাবে ঘটনার দায় স্বীকার করেছে।”
সোমবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে উত্তরার ৭ নম্বর সেক্টরের ৯ নম্বর রোডে ‘বেপরোয়া’ চালিয়ে যাওয়া একটি মোটরসাইকেল একটি রিকশাকে ধাক্কা দেয়। সেখানে আরেকটি মোটরসাইকেলে থাকা মেহেবুল ও নাসরিন দম্পতি এর প্রতিবাদ জানান।
এরপর রিকশায় ধাক্কা দেওয়া বাইকের আরোহীরা ওই দম্পতিকে হুমকি দেয় ও একপর্যায়ে কিল-ঘুসি মারে। পরে তারা ফোন করে আরো কয়েকজনকে ডেকে আনলে তারা অস্ত্রসহ ওই দম্পতির ওপর চড়াও হয়।
ওসি হাফিজুর বলেন, ‘‘আহত দম্পতি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন, তারা শঙ্কামুক্ত। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী নাসরিন আক্তার ইপ্তি সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটি মামলা দায়ের করেছেন।’’
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ওই দম্পতি রাত ৯টার দিকে উত্তরা পশ্চিম থানাধীন আমির কমপ্লেক্স থেকে কেনাকাটা করে বাসায় ফিরছিলেন। পথিমধ্যে ৭ নম্বর সেক্টরের ৯ নম্বর রোডের ১০ নম্বর বাসার সামনে পৌঁছালে দেখতে পান, তিন ব্যক্তি দুটি মোটরসাইকেল নিয়ে বিকট শব্দ করে দ্রুত গতিতে এলোমেলোভাবে চালিয়ে যাচ্ছেন। এ সময় একটি মোটরসাইকেল সামনে থাকা একটি রিকশাকে ধাক্কা দিলে ওই রিকশার যাত্রীর সঙ্গে মোটরসাইকেল চালক গ্রেপ্তার মোবারক হোসেনের বাগবিতন্ডা শুরু হয়।
এ সময় রিকশার পেছনে থাকা মেহেবুল ও নাসরিন দম্পতি তাদের ‘ঝামেলা করতে নিষেধ’ করলে একপর্যায়ে ‘সন্ত্রাসীরা’ তাদের মারপিট করতে থাকে এবং ঘটনাস্থলে উপস্থিত সজিব মোবাইলে ফোন করে তার সহযোগিদের ঘটনাস্থলে আসতে বলে।
এর প্রায় ১০ মিনিট পর ৪/৫ জন ‘সন্ত্রাসী’ দেশীয় অস্ত্র রামদাসহ ঘটনাস্থলে এসে মেহেবুল হাসানকে এলোপাতাড়ি আঘাত করতে থাকে। এ সময় নাসরিন আক্তার ইপ্তি তার স্বামীকে বাঁচানোর জন্য চেষ্টা করলে ‘সন্ত্রাসীরা’ তাকেও রামদা দিয়ে আঘাত করে।
পরে পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে স্থানীয়দের সহায়তায় রবি ও মোবারককে গ্রেপ্তার করলেও বাকিরা পালিয়ে যায়। এরপর পুলিশ আহত দম্পতিকে উদ্ধার করে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে যায়, তারা বর্তমানে সেখানেই চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এ ঘটনার একটি ভিডিও রাতেই ফেইসবুকে ছড়িয়ে পড়লে ব্যপক সমালোচনা শুরু হয়। মাত্র ১৩ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, সড়কে একটি বাড়ির দেওয়াল ঘেঁষে ফুটপাতে পাশাপাশি থাকা এক নারী ও এক পুরুষকে আঘাত করছেন দুই যুবক। একপর্যায়ে হামলাকারী দুই যুবককে রামদা হাতে নিয়ে ফুটপাত ধরে সামনের দিকে চলে যেতে দেখা যায়।
ঢাকা/মাকসুদ/এনএইচ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর গ র প ত র কর ঘটন য়
এছাড়াও পড়ুন:
ট্রেন থেকে পড়ে ৮ দিন ধরে হাসপাতালে ছেলে, ফেসবুকে ছবি দেখে ছুটে এলেন মা
প্রতিদিনের মতো কাজ শেষে গতকাল সোমবার বাসায় ফিরছিলেন নাজমা বেগম। ঢাকার টঙ্গী এলাকায় থাকেন তিনি। পরিচিত এক ব্যক্তি তাঁকে হঠাৎ ফোন করে জানান, তাঁর নিখোঁজ ছেলের সন্ধান পাওয়া গেছে। দ্রুত ওই ব্যক্তির সঙ্গে দেখা করেন নাজমা। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করা একটি ভিডিও দেখান নাজমাকে। সে ভিডিওতে দেখতে পান, তাঁর ১০ দিন ধরে নিখোঁজ ছেলে আবদুল্লাহ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি।
ছেলের খোঁজ পেয়ে আজ মঙ্গলবার সকালে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে ছুটে আসেন তিনি। রেলস্টেশন থেকে সরাসরি চলে আসেন চমেক হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগে। এখানেই ৮ দিন ধরে ভর্তি আবদুল্লাহ।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ৮ সেপ্টেম্বর আহত অবস্থায় আবদুল্লাহকে হাসপাতালে আনা হয়। সে সময় তার নাম-ঠিকানা কিছুই জানা যায়নি। অজ্ঞাতপরিচয় হিসেবেই হাসপাতালের নিউরোসার্জারি ওয়ার্ডে নেওয়া হয় তাকে। পরদিন তার অস্ত্রোপচার হয়। গত শনিবার আবদুল্লাহর জ্ঞান ফেরে। এরপর নিজের ও বাবা-মায়ের নাম আর বাসার ঠিকানা জানায় সে।
চিকিৎসকেরা সেই সূত্রে ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ নানাভাবে খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করেন। ফেসবুকে আবদুল্লাহর ছবি দিয়ে খোঁজ চাওয়া হয় বাবা-মায়ের। সেই ছবি পরিচিতদের মাধ্যমে দেখেন নাজমা বেগম। এরপর ছুটে আসেন চট্টগ্রামে। হাসপাতালে এসেই নার্সদের সহায়তায় যান নিউরোসার্জারি বিভাগে। সেখানে হাই ডিপেন্ডেন্সি ইউনিটে (এইচডিইউ)চিকিৎসাধীন আবদুল্লাহকে দেখেন।
আজ বিকেলে হাসপাতালের নিউরোসার্জারি ওয়ার্ডের সামনে কথা হয় আবদুল্লাহর মা নাজমা বেগমের সঙ্গে। সকালেই চট্টগ্রাম পৌঁছেছেন তিনি। জানালেন, তিন ছেলেমেয়ের মধ্যে ১০ বছর বয়সী আবদুল্লাহ সবার বড়। ছোট মেয়ের বয়স পাঁচ ও আরেক ছেলের বয়স দুই। আবদুল্লাহ সুস্থ আছে জেনে স্বস্তি পেলেও দুশ্চিন্তায় আছেন তিনি। কারণ, এটিই প্রথমবার নয়, এর আগেও কয়েকবার ঘর থেকে কিছু না বলে বেরিয়ে যায় সে।
নাজমা বেগম বলেন, প্রায়ই আবদুল্লাহ ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। এদিক–সেদিক চলে যায়। পরে আবার ফিরে আসে। এর আগেও ঢাকার আশপাশে এদিক-সেদিক চলে গিয়েছিল সে। ৬ সেপ্টেম্বর সে ভাত খাওয়া থেকে উঠে হঠাৎ চলে যায়। সে ফিরে আসবে এই আশায় থানায় যাননি। কিন্তু ১০ দিন হয়ে যাওয়ায় এদিক–সেদিক খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। ঢাকায় বিভিন্ন স্টেশনে ছেলের খোঁজে গেছেন বলে জানান নাজমা।
চমেক হাসপাতালে চিকিৎসকেরা আবদুল্লাহর বরাত দিয়ে জানান, বাসা থেকে বেরিয়ে সে কক্সবাজার যাচ্ছিল। পথে চট্টগ্রামে ট্রেন থামলে সে ট্রেন থেকে পড়ে যায়। চিকিৎসার পর এখন সুস্থ হয়ে উঠছে সে।
চিকিৎসকেরা জানান, আবদুল্লাহকে যখন আনা হয় তার মাথায় গুরুতর আঘাত ছিল। তার মাথার এক পাশের হাড় ভেঙে গিয়েছিল। ট্রেন থেকে পড়ার কারণে মাথায় আঘাত লাগে। হাড়ের কিছু অংশ মস্তিষ্কের ভেতরে গেঁথে যায়। অস্ত্রোপচারও সফল হয়েছে। তবে জ্ঞান না ফেরায় তার পরিচয় জানা যায়নি। জ্ঞান ফেরার পর তার তথ্য নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করা হয়।
শুরু থেকে আবদুল্লাহর অস্ত্রোপচার ও চিকিৎসা করেছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিউরোসার্জারি বিভাগে সহকারী অধ্যাপক মু. ইসমাইল হোসেন। তিনি বলেন, ‘তার হাড় ভেঙে মস্তিষ্কের ভেতরে চলে গিয়েছিল। অস্ত্রোপচারের পর স্বাভাবিকভাবে সেটি জোড়া দেওয়া হয়েছে। এখন সে পুরোপুরি সুস্থ। তাকে আমরা আজ-কালের মধ্যে ডিসচার্জ করে দেব। শিশুকে পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দিতে পেরে আমরাও আনন্দিত।’