শেরপুরে মেয়ের ধর্ষণচেষ্টার ঘটনা জেনে মায়ের আত্মহত্যার চেষ্টা
Published: 19th, February 2025 GMT
শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলায় কিশোরী মেয়েকে ধর্ষণচেষ্টার ঘটনা জানতে পেরে তার মা বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় উপজেলার কাংশা ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটে। গুরুতর অসুস্থ ওই নারীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ধর্ষণচেষ্টার শিকার ভুক্তভোগী কিশোরী (১৪) উপজেলার কাংশা ইউনিয়নের একটি গ্রামের এক দরিদ্র কামারের মেয়ে। সে স্থানীয় একটি মাদ্রাসার অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার বিকেলে ঝিনাইগাতীর গজনী অবকাশকেন্দ্রের জঙ্গলে মো.
পুলিশ ও ওই নারীর স্বামীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত শুক্রবার দুপুরে কিশোরীটি তার ৩-৪ জন বান্ধবীর সঙ্গে ঝিনাইগাতীর গজনী অবকাশকেন্দ্রে বেড়াতে যায়। সেখানে ওই কিশোরীর সঙ্গে পূর্বপরিচিত মো. ইলিয়াছের (২৫) দেখা হয়। একপর্যায়ে ইলিয়াছ তাঁর দুই সহযোগীর সহায়তায় কিশোরীটিকে অবকাশকেন্দ্রের জঙ্গলের ভেতরে নিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। তার ডাকচিৎকারে আশপাশের লোকজন এসে কিশোরীটিকে উদ্ধার করেন এবং বাড়িতে পৌঁছে দেন।
ওই ঘটনার পর গতকাল দুপুরে মেয়ের ধর্ষণচেষ্টার ঘটনা জানতে পারেন তার মা। বিকেলে সবার অগোচরে তিনি বাড়ির অদূরে গারো পাহাড়ে যান এবং সেখানে বিষপান করেন। তাঁকে পরিবারের সদস্যরা খোঁজাখুঁজি শুরু করেন এবং অচেতন অবস্থায় তাঁকে গারো পাহাড়ে পড়ে থাকতে দেখেন। পরে তাঁকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে ঝিনাইগাতী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরে জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
শেরপুর সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের এক চিকিৎসা কর্মকর্তা গতকাল রাত ১২টায় প্রথম আলোকে বলেন, বিষপান করায় ওই নারীর অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
ওই নারীর স্বামী আজ বুধবার সকালে বলেন, বিষপান করে তাঁর স্ত্রী গুরুতর অসুস্থ। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী তাঁকে আজ ভোরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ঝিনাইগাতী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আল আমিন বলেন, কিশোরীকে ধর্ষণচেষ্টার ঘটনায় থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলার প্রক্রিয়া চলছে। ভুক্তভোগী কিশোরী জানিয়েছে, ইলিয়াছ নামের স্থানীয় এক যুবক ধর্ষণের চেষ্টা করেন। স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য আজ কিশোরীকে জেলা সদর হাসপাতালে পাঠানো হবে। ইলিয়াছ ও তাঁর সহযোগীদের আটকের চেষ্টা করছে পুলিশ।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ওই ন র
এছাড়াও পড়ুন:
৮% জনগোষ্ঠীকে বাদ দিয়ে কীভাবে ঐক্য হয়, প্রশ্ন সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলনের
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনসহ কোনো সংস্কার কমিশনে দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি দেখা যায়নি বলে মন্তব্য করেছে সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলন। তাদের প্রশ্ন, ঐকমত্য কমিশনে কোনো রাজনৈতিক দলকেও প্রশ্ন করতে দেখা গেল না যে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ৮ শতাংশ জনগোষ্ঠীর কোনো প্রতিনিধি না থাকলে বা তাদের বাদ দিয়ে কীভাবে ঐক্য গঠন হয়।
‘অভ্যুত্থান পরবর্তী এক বছরে ৮% জনগোষ্ঠীর অবস্থা’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এমন প্রশ্ন তোলা হয়েছে সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলনের লিখিত বক্তব্যে। আজ শুক্রবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে সংগঠনটি।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) তরুণ রায়। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, গণ-অভ্যুত্থানের আগে হোক বা পরে, রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে এখনো ৮ শতাংশ শুধু রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করার জায়গা। তাদের অধিকার নিয়ে সচেষ্ট হতে দেখা যাচ্ছে না কোনো রাজনৈতিক দলকে। সে ক্ষেত্রে এমন অবস্থা চলমান থাকলে ৮ শতাংশ জনগোষ্ঠীকে নিজেদের অস্তিত্বের জানান দিতে ভবিষ্যতে নির্বাচনের সময় ভোটকেন্দ্র বয়কটের সিদ্ধান্তও নিতে হতে পারে।
সংবাদ সম্মেলন থেকে বলা হয়, গণ-অভ্যুত্থানের পর দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষেরা আক্রান্ত হতে থাকেন। তাৎক্ষণিকভাবে গত বছরের ৯ আগস্ট থেকে সংখ্যালঘুরা জোরালো আন্দোলন গড়ে তোলেন। সেই আন্দোলন থেকে সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় গঠনসহ ৮ দফা দাবি তোলা হয়। সেসব দাবি বাস্তবায়নে তখন অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিল। কিন্তু গত ১ বছরে ৮ দফা দাবি বাস্তবায়নে অন্তর্বর্তী সরকারের আশানুরূপ কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ পরিলক্ষিত হয়নি।
সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলন লিখিত বক্তব্যে আরও উল্লেখ করেছে, বিগত ৫৩ বছরে কোনো সরকারই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেনি। আগামী দিনের নিরাপত্তা ও অধিকার রক্ষায় ৮ দফার বাস্তবায়ন করতে হবে। ৮ দফা যে দেশের ৮ শতাংশ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রত্যেকের মনের কথা জানান দিতে ২২ আগস্ট ‘জাতীয় সংখ্যালঘু সম্মেলন-২০২৫’ আয়োজন করা হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলনের আহ্বায়ক সুস্মিতা কর বলেন, সরকারের ঐকমত্য কমিশনে সংখ্যালঘু প্রতিনিধি নেই। দেশের একটি নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীকে নিয়ে তো ঐকমত্য গঠন হতে পারে না। গত বছরের ৯ আগস্ট থেকে দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় নিজেদের অধিকার নিয়ে সচেষ্ট আছে। সংখ্যালঘুদের সব সংগঠন আট দফা দাবিতে একাত্ম। যদি নির্বাচন–পূর্ববর্তী সময়ে সরকার কিংবা রাজনৈতিক দলগুলো থেকে এসব দাবি বাস্তবায়নে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করতে না দেখা যায়, তাহলে হয়তো সংখ্যালঘুরা ভোট বয়কট লড়তে পারে।
এই সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলনের প্রচার সম্পাদক সুব্রত বল্লভ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির আদিবাসী সংগঠক সুমন ত্রিপুরা।