বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে শেরপুরের ঐতিহ্যবাহী গজনী অবকাশ পর্যটন বিনোদন কেন্দ্রে ঘুরতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন এক মাদ্রাসাছাত্রী। প্রথমদিকে লোক লজ্জার ভয়ে ধর্ষণের কথা গোপন করলেও পরে ওই শিক্ষার্থী এক নারী পুলিশের কাছে ধর্ষণের কথা স্বীকার করলে পুলিশ ধর্ষণ মামলা গ্রহণ করে। 

এ ঘটনায় লোক-লজ্জায় বিষপান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন ধর্ষণের শিকার ওই মাদ্রাসা শিক্ষার্থীর মা। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার বিকেলে জেলার ঝিনাইগাতীর গজনী অবকাশকেন্দ্রের পাশের জঙ্গলে ধর্ষণের ঘটনাটি ঘটে। 

এদিকে গতকাল মঙ্গলবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় উপজেলার কাংশা ইউনিয়নে মেয়েটির মা বিষপান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। বর্তমানে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় ওই নারী ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। 

ধর্ষণের শিকার ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী (১৪) উপজেলার কাংশা ইউনিয়নের একটি গ্রামের এক দরিদ্র কামারের মেয়ে। সে স্থানীয় একটি মাদ্রাসার অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। এ ঘটনায় ১৯ ফেব্রুয়ারি বুধবার অভিযুক্ত মো.

ইলিয়াছকে (২৫) প্রধান আসামি করে মোট চার জনের নামে একটি ধর্ষণ মামলা দায়ের হয়েছে। 

বাকি আসামিরা হলো- মো. আবু সাঈদ, রাশেদুল ইসলাম ও মতিন মিয়া। গতকাল বুধবার ওই শিক্ষার্থীর ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঝিনাইগাতী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মো. আল আমিন।

পুলিশ ও ওই নারীর স্বামীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত শুক্রবার দুপুরে কিশোরীটি তার ৩-৪ জন বান্ধবীর সঙ্গে ঝিনাইগাতীর গজনী অবকাশকেন্দ্রে বেড়াতে যায়। সেখানে ওই কিশোরীর সঙ্গে পূর্বপরিচিত মো. ইলিয়াছের (২৫) দেখা হয়। একপর্যায়ে ইলিয়াছ তার তিন সহযোগীর সহায়তায় কিশোরীটিকে অবকাশকেন্দ্রের জঙ্গলের ভেতরে নিয়ে ধর্ষণ করে। তার ডাকচিৎকারে আশপাশের লোকজন এসে কিশোরীটিকে উদ্ধার করেন এবং বাড়িতে পৌঁছে দেন।

ওই ঘটনার পর গতকাল দুপুরে মেয়ের ধর্ষণের ঘটনা জানতে পারেন তার মা। এছাড়াও এলাকায় বিষয়টি ছড়িয়ে পড়ে মানুষের মুখে মুখে। এতে লজ্জা থেকে বাঁচতে ময়েটির মা আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। পরে বিকেলে সবার অগোচরে বাড়ির অদূরে গারো পাহাড়ে যান এবং সেখানে বিষপান করেন। 

পরবর্তীতে পরিবারের সদস্যরা তাকে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। এক পর্যায়ে অচেতন অবস্থায় তাকে গারো পাহাড়ে পড়ে থাকতে দেখেন। প্রথমে তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে ঝিনাইগাতী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরে রাতে শেরপুর জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরবর্তীতে অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী তাকে আজ ভোরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে আত্মহত্যার চেষ্টাকারী ওই নারীর স্বামীর সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, “আমার স্ত্রীর শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে। তবে আরও কয়েকদিন হাসপাতালে থাকতে হবে। আমি ময়মনসিংহ থাকায় মামলার ব্যাপারে তেমন খোঁজখবর নিতে পারছি না। তবে আমি প্রশাসনের কাছে এই ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।” 

ডাক্তারি পরীক্ষার ব্যাপারে তথ্য নিশ্চিতের জন্য শেরপুর জেলা সদর হাসপাতালে আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. তাসলিম আরিফ ও ডা. তাহেরাতুল আশরাফিকে একাধিকবার মোবাইলে ফোন দিলেও ফোন রিসিভ করেননি।

এ ব্যাপারে ঝিনাইগাতী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আল আমিন বলেন, “কিশোরীকে ধর্ষণের ঘটনায় থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা হয়েছে। স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য ওই কিশোরীকে গতকাল জেলা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। প্রতিবেদন পেলে বিস্তারিত জানা যাবে। তবে এ ঘটনায় ইলিয়াছ ও তার তিন সহযোগীদের আটকের চেষ্টা চলছে।”

ঢাকা/তারিকুল/এস

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর অবস থ গতক ল অবক শ

এছাড়াও পড়ুন:

তিনি হিমালয়ে উঠেছেন সাইকেল নিয়ে

বরফের ওপর সাইকেল নিয়ে সন্তর্পণে এগোচ্ছেন। একটু হড়কে গেলেই অবধারিত মৃত্যু, গিরিখাত বেয়ে একেবারে নিচে। কখনো সাইকেল চালিয়ে, কখনো কাঁধে নিয়ে হাঁটতে হচ্ছিল। এভারেস্ট অঞ্চলের কংমা লা পাস অতিক্রম করার সময় একটু ভয় ভয় লাগছিল। কারণ, এখানটায় এসে মৃত্যুর অনেক ঘটনা আছে। ট্রেইলটা বেশ কঠিন। ১০ কেজি ওজনের সাইকেল কাঁধে, আর ছয়–সাত কেজির ব্যাগ নিয়ে ওপরে উঠতে হচ্ছিল।

‘ভয়ের সঙ্গে আবার সুন্দর মুহূর্তও আছে। পাসগুলো থেকে নামার সময় ভালো লাগত। অপূর্ব সুন্দর সব দৃশ্য,’ বলছিলেন আরিফুর রহমান উজ্জল (৪১)। কুমিল্লার মানুষ, উজ্জল নামেই পরিচিত। গত ৭ সেপ্টেম্বর থেকে সাইকেল নিয়ে চষে বেড়িয়েছেন এভারেস্ট অঞ্চলসহ হিমালয়ের নানা ট্রেক। এসব ট্রেকে সাধারণত পর্বতারোহীরা পায়ে হেঁটে যান। উজ্জল গেছেন দ্বিচক্রযানে চেপে। গতকাল রোববার সন্ধ্যায় সর্বশেষ কথা হয় তাঁর সঙ্গে। তিনি প্রায় দুই মাসের অভিযান শেষ করে কাঠমান্ডুতে এসেছেন।

চ্যালেঞ্জিং এই অভিযানে ছিল কাদামাখা পাথুরে পথ, অতি উচ্চতা, অক্সিজেন স্বল্পতা, ভূমিধস, বরফে ঢাকা পথ, গ্লেসিয়ার ও একদম খাড়া টানা একেকবার ৩–৪ কিলোমিটার রাস্তা। অক্সিজেন স্বল্পতার কারণে রাতে না ঘুমিয়ে পরদিন ট্রেক করতে হয়েছে। বরফ ও রৌদের তাপ, জ্বর, হাতে ফ্রস্টবাইট, পায়ে মাসাল ক্র্যাম্প, বৃষ্টি মাথায় নিয়ে, বাতাসের সঙ্গে যুদ্ধ করে তাঁকে একেকটা পাস অতিক্রম করতে হয়েছে। অনেক পর্বতারোহীর কাছে এটি স্রেফ পাগলামি। এই অভিযানে উজ্জলকে কখনো সাইকেল চালাতে হয়েছে, কখনো কাঁধে বইতে হয়েছে, কখনোবা ঠেলে উপরে তুলতে হয়েছে।

মানাসলু সার্কিট ট্রেইল

পর্বতারোহণ এমনিতেই কষ্টসাধ্য কাজ। নিজের শরীরটা ওপরে টেনে তোলাই যেখানে বিরাট চ্যালেঞ্জ, সেখানে উজ্জল সাইকেল নিয়ে এক অভিযানেই ঘুরেছেন এভারেস্টসহ হিমালয়ের তিনটি ট্রেইলে। তিনি ঘুরেছেন নেপালের মানাসলু ও অন্নপূর্ণা সার্কিট ট্রেইল। নেপালের পশ্চিমের এই দুটি ট্রেইলে ঘোরা শেষ করে পাড়ি দিয়েছেন ৭০০ কিলোমিটার পূর্বে এভারেস্টের তিন পাসে। পাস তিনটি হচ্ছে কংমা লা পাস, চো লা পাস এবং রেঞ্জো লা পাস।

৭ সেপ্টেম্বর থেকে অভিযান শুরু করেন এই সাইক্লিস্ট। তার আগে ঢাকা থেকে বিমানে করে গেছেন কাঠমান্ডু। শুরুতেই মানাসলু সার্কিট ট্রেইল। এটা গিরিপথ, রাস্তা। মানাসলু পর্বতকে ঘিরে যে রাস্তা সেটাকে সার্কিট বলে। এই মানাসলুর সর্বোচ্চ বিন্দু, যার উচ্চতা ১৭ হাজার ৩৯০ ফুট। সেখানে নিজের প্রিয় দ্বিচক্রযানটির চাকার ছাপ রেখে এসেছেন। ১৭৪ কিলোমিটার দীর্ঘ সার্কিট ট্রেইলটি শেষ করতে তাঁর ১১ দিন লেগেছে।

রেঞ্জো লা পাস

সম্পর্কিত নিবন্ধ