সেন্ট গ্রেগরী হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজে ১৬তম জাতীয় বিজ্ঞান উৎসব শুরু
Published: 20th, February 2025 GMT
‘আজকের উদ্ভাবন আগামীর সুরক্ষা’ প্রতিপাদ্য নিয়ে রাজধানীর লক্ষ্মীবাজারে সেন্ট গ্রেগরী হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজে শুরু হয়েছে তিন দিনব্যাপী ১৬তম জাতীয় বিজ্ঞান উৎসব। এবারের উৎসবে ৩৫টি স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীরা যোগ দিয়েছে। শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানমনস্ক করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠানটির গ্রেগরিয়ান সায়েন্স ক্লাব এ আয়োজন করেছে।
আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে সেন্ট গ্রেগরী হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজে ৬৮তম এসজিএইচএসসি বার্ষিক ও ১৬তম জাতীয় বিজ্ঞান উৎসব শুরু হয়। উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ হলিক্রস ব্রাদার্স–এর সেন্ট জোসেফ প্রভিন্সের প্রভিন্সিয়াল সুপিরিয়র ব্রাদার রিপন জেমস গমেজ। বিশেষ অতিথি ছিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের চেয়ারম্যান এ কে এম লুৎফর রহমান।
অনুষ্ঠানের সভাপতি ও সেন্ট গ্রেগরী হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ব্রাদার প্লাসিড পিটার রিবেরু বলেন, সেন্ট গ্রেগরী হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের বিজ্ঞান ক্লাব শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানমনস্ক করে গড়ে তোলার কাজ করছে। বিশ্বমানের বিজ্ঞানী, গবেষক ও উদ্ভাবক তৈরি করা এর উদ্দেশ্য।
সেন্ট গ্রেগরী স্কুল কর্তৃপক্ষ ১৯৬০ সালে প্রথম বিজ্ঞান উৎসব শুরু করে। বিজ্ঞান উৎসব, স্কাউট, বাস্কেটবলের সূতিকাগার এই বিদ্যাপীঠের বিজ্ঞান মেলা আয়োজন এক বিশাল মহোৎসব, যেন বিজ্ঞানভিত্তিক জ্ঞানচর্চার এক বিশাল দিগন্ত।
তিন দিনব্যাপী বার্ষিক বিজ্ঞান উৎসবে শিক্ষার্থীরা পাঁচটি গ্রুপে অংশ নেবে। উৎসবে রয়েছে—অলিম্পিয়াড, দুই ক্যাটাগরির সায়েন্স প্রজেক্ট, বিজ্ঞানভিত্তিক ওয়াল ম্যাগাজিন প্রতিযোগিতা, গেম ইভেন্ট: হান্ট দ্য পিরিয়ডিক টেবিল এবং মিউজিয়াম স্পেসিমেন্ট আইডেন্টিফিকেশন।
উৎসবে তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণির জন্য কিডস গ্রুপ, পঞ্চম-ষষ্ঠ শ্রেণির জন্য জুনিয়র গ্রুপ, সপ্তম-অষ্টম শ্রেণির জন্য ইন্টারমিডিয়েট গ্রুপ, নবম-দশম শ্রেণির জন্য সিনিয়র গ্রুপ এবং একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির জন্য কলেজ গ্রুপ রয়েছে।
শুক্রবার শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে উৎসব বন্ধ থাকবে। পরদিন শনিবার উৎসবের দ্বিতীয় দিন হবে বিজ্ঞান মেলার প্রজেক্ট প্রদর্শনী। প্রজেক্টগুলো মূল্যায়ন করবেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ২০ জন শিক্ষক। শেষ দিন রোববার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এই বিজ্ঞান আয়োজন।
এবারের উৎসবের প্রধান পৃষ্ঠপোষক মালটিফ্যাবস লিমিটেড, সহযোগী পৃষ্ঠপোষক লেকচার পাবলিকেশন্স লিমিটেড এবং মিডিয়া পার্টনার যমুনা টেলিভিশন ও বিজ্ঞানচিন্তা।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব জ ঞ ন উৎসব শ র ণ র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
২০০ বছরের ঐতিহ্য নিয়ে ভোলার বৈষা দধি
ভোলার ভ্যাপসা গরম, দুপুর গড়াতে না গড়াতেই সদর রোডজুড়ে তীব্র যানজট নাগরিক জীবনকে ব্যস্ত করে ফেলে। গরমে হাঁসফাঁস করা মানুষ একটু স্বস্তি খোঁজে। আর সেই স্বস্তি এনে দিতে পারে ভোলার বিখ্যাত বৈষা দধি।
দুপুরের আগেই সব দোকানের হাঁড়ি ফাঁকা হয়ে যায়। মহিষের কাঁচা দুধে পাতানো এই দই ভোলার স্বাদ, ইতিহাস ও গর্বের এক অনন্য বহিঃপ্রকাশ।
ভোলার দোকানগুলোতে প্রতিদিন মণকে মণ বৈষা দধি তৈরি হয়। এই দইয়ের বিশেষত্ব হলো, মহিষের কাঁচা দুধ দিয়ে এটি পাতা হয়। বাজারে সচরাচর যে দই পাওয়া যায়, সেসব তৈরি হয় গরুর দুধ দিয়ে এবং দুধ জ্বালিয়ে গাঢ় করে। কিন্তু ভোলার বৈষা দধি হয় মহিষের কাঁচা দুধ দিয়ে।
জলবেষ্টিত দ্বীপ জেলা ভোলার এক অমূল্য সম্পদ মহিষ। পূর্বে মেঘনা, পশ্চিমে তেঁতুলিয়া, উত্তরে ইলিশা আর দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর—এই চার নদী ও সমুদ্রবেষ্টিত চরাঞ্চলে ঘুরে বেড়ায় হাজার হাজার মহিষ। সরকারি হিসাবে এই সংখ্যা দেড় লাখের কাছাকাছি, তবে স্থানীয় লোকজনের মতে তা দুই লাখ ছাড়িয়েছে। এই মহিষের দুধই বৈষা দধির প্রাণ।
প্রায় দুই শতাব্দী ধরে এ অঞ্চলের মানুষের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় থাকে এই দই। এ ছাড়া অতিথি আপ্যায়নের অন্যতম প্রধান উপাদান এটি। উৎসব-পার্বণ, বিয়েশাদি কিংবা যেকোনো সামাজিক আয়োজনে বৈষা দধি ছাড়া যেন ভোলার কোনো উৎসব পরিপূর্ণতা পায় না।
মুহাম্মদ শওকাত হোসেনের ‘ভোলা জেলার ইতিহাস’ বই থেকে জানা যায়, দুই শ বছর আগে থেকে ভোলায় চর জাগতে শুরু করে। বসতি হয়, মহিষ পালন শুরু হয়। দুধ সংরক্ষণের উপায় ছিল না বলে স্থানীয় বাসিন্দারা দই বানাতেন। সেখান থেকেই বৈষা দধির যাত্রা শুরু, যা পরে ছড়িয়ে পড়ে পুরো অঞ্চলে।
ভোলার মানুষের খাদ্যসংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে এই দই। এটি ভাতের সঙ্গে খাওয়া হয়, চিড়া-মুড়ির সঙ্গে মিশিয়ে তৈরি হয় মুখরোচক খাবার, আবার গরমের দিনে দই, পানি ও চিনি মিশিয়ে তৈরি করা হয় ঘোল—যা শরীরকে শীতল রাখে। শীতকালে হাঁসের মাংসের সঙ্গে টক দই ও খেজুরের গুড়—ভোলার ভোজনরসিকদের কাছে এক অনন্য স্বাদ। পান্তাভাতের সঙ্গে দই ও খেজুরের গুড় এই অঞ্চলের জনপ্রিয় একটি খাবার।
বর্তমানে প্রতি কেজি বৈষা দই বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকায়। তবে ঈদে দাম বেড়ে যায়। ঈদের আগেই বিক্রেতারা দুধ জমাতে শুরু করেন এবং এ সময়ে প্রতিদিন ৮০০–৯০০ কেজি পর্যন্ত দই বিক্রি হয়।
ভোলার দোকানগুলোতে প্রতিদিন মণকে মণ বৈষা দধি তৈরি হয়