আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ চায় দেশের ৮০ শতাংশ মানুষ
Published: 21st, February 2025 GMT
সানবিডি২৪ এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন
বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টির চেয়ারম্যান অ্যাড. একেএম আনোয়ারুল ইসলাম চান বলেছেন, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার জন্য বাংলাদেশের ৮০ শতাংশ মানুষ সায় দিচ্ছে। অথচ অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ না করে কালক্ষেপণ করছে। আমরা সরকারের কাছে অতিদ্রুত আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানাচ্ছি।
বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও শহীদ দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। সভায় প্রধান বক্তা হিসেবে আলোচনা করেন দলটির জেনারেল সেক্রেটারি মোহা.
আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর পূর্ব পাকিস্তানে যে ইনসাফ সাম্য ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিলো তার কোনটাই হয়নি উল্টো আমাদের ভাষাকেও কেড়ে নিতে চেয়েছিল পাকিস্তানি গোষ্ঠী। তাদের এ অপতৎপরতার বিরুদ্ধে আমাদের ছাত্রসমাজ বুকের রক্ত ঢেলে দিয়ে মায়ের ভাষা রক্ষা করেছে। আজকের আলোচনা সভা থেকে আমরা তাদেরকে বিনম্র শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি।
চেয়ারম্যান বলেন, নির্যাতন নিপীড়ন অত্যাচার মানুষের অধিকার হরণ এবং অন্য দেশের কাছে একটা স্বাধীন দেশকে কিভাবে বিলিয়ে দেওয়া যায় তার মডেল হলো গত ১৬ বছরের শাসন। আমাদের প্রযুক্তি-সংস্কৃতি-রাজনীতি-ভোটাধিকারসহ মৌলিক মানবিক সকল অধিকার একটি ডামি সরকার দিয়ে প্রতিবেশি দেশ হরণ করেছে। আমরা তাদের কাছে পরাধীন ছিলাম। অবশেষে ২৪ এর জুলাইয়ে ছাত্র-যুবক এবং আপামর জনসাধারণের আন্দোলনে আমাদের মুক্তি মিলেছে।
তিনি বলেন, ২ হাজার ছাত্র জনতা জীবন দিয়ে আমাদের যে শিক্ষা দিয়ে গেছে প্রচলিত কিছু রাজনৈতিক দলের চোখে সে শিক্ষাটা পরেনি। তারা ক্ষমতা পাওয়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে ২৪ আগের মনমানসিকতা নিয়ে রাজনীতি করতে চাচ্ছেন। তাদের উচিত ২৪ এর চেতনা ধারণ করে রাজনীতি করা।
জেনারেল সেক্রেটারি নিজামুল হক নাঈম বলেন, বাংলাদেশের একটি দুর্ভাগ্য হচ্ছে কোন অধিকারই আন্দোলন সংগ্রাম জীবন দেওয়া ছাড়া অর্জন করা সম্ভব হয়নি। প্রতিটি অধিকার আমাদেরকে অর্জন করতে হয়েছে অনেক জীবনের বিনিময়ে। এ অধিকারকে কেন্দ্র করে যতগুলো আন্দোলন সংগ্রাম হয়েছে তাতে পুরো জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। এটি বাংলাদেশের জন্য একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। কিন্তু এ ঐক্যবদ্ধতা বেশিদিন টেকেনি। যার জন্য বাংলাদেশের আজকে এ দুর্গতি। ঐক্য স্থায়ী না হওয়ার ফলে বাংলাদেশ তলাবিহীন ঝুড়ির বাউন্ডারির মধ্যেই আমরা অবস্থান করছি।
তিনি বলেন, সর্বশেষ ১৭ বছরের ফ্যাসিবাদের বিদায়ের জন্য ছাত্রদের নেতৃত্বে সারা বাংলাদেশ যেভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে আমরা আশা করেছিলাম একটি টেকসই ঐক্য হবে ২০২৪ সালের এ ঐক্যটি। কিন্তু মাত্র ছয় মাস না যেতেই আমরা দেখলাম সে ঐক্যেও ফাটল ধরেছে। ইতোমধ্যে অস্ত্রের ঝনঝনানি, দলীয় গ্রুপিং নিজ দলের ব্যক্তি এবং গ্রুপের স্বার্থে দেশকে ব্যবহার করার যে দীর্ঘদিনের চরিত্র তা আবার মাথাচারা দিয়ে উঠেছে। এসব থেকে আমাদেরকে বেরিয়ে আসতে হবে।
সভায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, স্থায়ী কমিটির সদস্য আবুল হাসান, ইঞ্জিনিয়ার শহিদুল আলম, ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি আনোয়ার হোসেন এবং দক্ষিণের সভাপতি মনির উদ্দিন মণি।
এএ
উৎস: SunBD 24
কীওয়ার্ড: আম দ র র জন ত র জন য আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
২২ ক্যাডার নিয়ে চলতেন স্বেচ্ছাসেবক দলের জিতু
বগুড়ায় মেয়েকে উত্ত্যক্ত ও বাবাকে খুনে অভিযুক্ত জিতু ইসলাম দলীয় প্রভাবে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। কথায় কথায় যাকে-তাকে অহেতুক মারধর করতেন। চলতেন ২২ জনের ক্যাডার বাহিনী নিয়ে। তারা সবাই নানা অপকর্মে জড়িত এবং একাধিক মামলার আসামি। তাঁর আয় চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসা থেকে। গতকাল রোববার এলাকায় গিয়ে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
জানা যায়, জিতু ফুলবাড়ী কারিগরপাড়ার মৃত সেকেন্দার আলীর ছেলে। ২০০৩ সালে এলাকায় বালু ব্যবসা নিয়ে প্রতিপক্ষ রবিউল ইসলামকে খুন করেন। সেই মামলায় তাঁর ১৪ বছর সাজা হয়। সাজা খেটে তিন বছর আগে বের হন। এর পর এলাকায় গড়ে তোলেন সন্ত্রাসী বাহিনী। তাঁর বাহিনীতে যে ২২ জন সদস্য, তারা কেউ রাজনৈতিক দলের পদ-পদবিতে নেই। হত্যা মামলা ছাড়াও জিতুর বিরুদ্ধে একটি মাদক ও একটি ডাকাতির মামলা রয়েছে।
ফুলবাড়ীর এক মুদি দোকানি বলেন, জিতু মাঝেমধ্যে তাঁর দোকান থেকে বাকি নিতেন। দু’বছরে বাকির পরিমাণ প্রায় ৪৮ হাজার টাকা হয়। তখন একদিন টাকা চান। এ কারণে জিতু তাঁকে মারধর করে নাকে খত নেন।
বৃন্দাবন এলাকার আরেক ব্যবসায়ী বলেন, মাঝেমধ্যে জিতু তাঁর বাহিনী নিয়ে হাজির হতেন। মোটা অঙ্কের চাঁদা চাইতেন। চাঁদার কমপক্ষে অর্ধেক দিয়ে তবে নিস্তার পাওয়া যেত। এ ছাড়া ঈদে সেলামির নামে মোটা অঙ্কের চাঁদা দিতে হতো তাঁকে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী জানান, তাঁর কাছে মোটা অঙ্কের চাঁদা চান জিতু। না দেওয়ায় দোকানে ককটেল হামলা করেন। বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকায় আগস্টের পর জিতু বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। এলাকার একাধিক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর কাছ থেকে মোটা অঙ্কের চাঁদা নিয়ে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ আছে তাঁর বিরুদ্ধে। ছোট ভাই মিতুলও তাঁর বাহিনীর সদস্য।
জিতু গত ১৯ ফেব্রুয়ারি জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের ১০১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির সহসাধারণ সম্পাদকের পদ পান। সন্ত্রাসী হয়ে দলের পদ পাওয়ায় এলাকায় তাঁকে নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পদ পেয়ে তিনি আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন।
এলাকার এক ভুক্তভোগী বলেন, ‘জিতুর কারণে আমরা মুখ খুলতে পারি না। সে চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসার মাধ্যমে এলাকা অতিষ্ঠ করে তুলেছে। বিশেষ করে রাজনৈতিক দলের পদ-পদবি পেয়ে ভয়ংকর হয়ে ওঠে। তার নির্যাতনের শিকার অর্ধশতের কম হবে না। তার বখাটেপনার কারণে কেউ মেয়ে বিয়ে দিতে রাজি হতো না।’
এক বছর আগে থেকে ফুলবাড়ির পাশেই শহরের শিববাটি এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করতে থাকেন জিতু। সেই এলাকার বাসিন্দা রিকশাচালক শাকিল হোসেন। শাকিলের মেয়ে স্থানীয় ভান্ডারী সিটি বালিকা বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। এক মাস আগে ৫২ বছর বয়সী জিতু বিয়ের প্রস্তাব দেন শাকিলের মেয়েকে। বিষয়টি শাকিল জেনে রাগ করেন। জিতুর ওপর চড়াও হন। কিছুতে রাজি না হলে নানাভাবে নির্যাতন করতে থাকেন জিতু। তাঁর মেয়েকেও উত্ত্যক্ত করতেন। এরই এক পর্যায়ে শনিবার বিকেলে শাকিলকে পিটিয়ে খুন করেন জিতু ও তাঁর বাহিনী।
এ হত্যার ঘটনায় জিতুকে এক নম্বর আসামি করে ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে গতকাল রোববার বগুড়া সদর থানায় হত্যা মামলা করেছেন শাকিলের স্ত্রী মালেকা খাতুন। পুলিশ শনিবার রাতেই জিতু ও তাঁর সহযোগী মতি এবং বিপ্লবকে আটক করে।
সন্ত্রাসীকে দলের পদ দেওয়ার বিষয়ে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি সরকার মুকুল বলেন, ‘আমি জানতাম না, সে দলের নাম ভাঙিয়ে এসব অপকর্ম করছে। আমরা তাকে দল থেকে বহিষ্কার করেছি।’ শনিবার রাতে স্বেচ্ছাসেবক দল কেন্দ্রীয় সভাপতি এস এম জিলানী ও সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসানের সই করা বিবৃতিতে জিতু ইসলামকে বহিষ্কার করা হয়। সেই সঙ্গে তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অনুরোধ জানানো হয়।
বগুড়া সদর থানার ওসি হাসান বাসির বলেন, ‘এ মামলার অন্য আসামিদেরও গ্রেপ্তার করা হবে।’
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও ফুলবাড়ী পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক জোবায়ের খান জানান, গতকাল জিতুসহ তিন আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। সাত দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়। সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মেহেদী হাসান পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এদিকে হত্যার প্রতিবাদ ও দোষীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম জেলা শাখা। গতকাল বিকেলে শহরের সাতমাথায় সংগঠনের সভাপতি অ্যাডভোকেট দিলরুবা নূরী এতে সভাপতিত্ব করেন।