পরিবারের সচ্ছলতা ফেরাতে ভিটেমাটি বিক্রি করে প্রবাসে পাড়ি জমান ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার তরুণ মো. রাসেল মিয়া (২৫)। অবৈধপথে দালালের মাধ্যমে লিবিয়া হয়ে তাঁর ইতালি যাওয়ার কথা ছিল। তবে তার আগেই দালাল চক্রের নির্যাতনে লিবিয়ায় গতকাল শুক্রবার তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে স্বজনেরা অভিযোগ করেছেন।

আজ শনিবার দুপুরে এক প্রবাসীর মাধ্যমে রাসেলের মৃত্যুর খবর জানতে পারে পরিবার। নিহত রাসেল নাসিরনগর উপজেলার ধরমণ্ডল ইউনিয়নের ধরমণ্ডল গ্রামের লাউস মিয়া ও আউলিয়া বেগমের বড় ছেলে।

রাসেলের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পাঁচ ভাই–বোনের মধ্যে রাসেল ছিল সবার বড়। ২০২৪ সালের শুরুর দিকে ইতালি যাওয়ার জন্য লিবিয়ায় পাড়ি জমান তিনি। পরিবারের শেষ সম্বল পৈতৃক ভিটা বিক্রি করে ও স্বজনদের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে মোট ১৫ লাখ টাকা দিয়ে একই গ্রামের দালাল লিলু মিয়ার মাধ্যমে তিনি লিবিয়ায় যান। কথা ছিল লিবিয়া থেকে তাঁকে ইতালিতে পাঠানো হবে। কিন্তু লিবিয়ায় পৌঁছানোর পর তাঁকে স্থানীয় দালাল চক্রের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়। এরপর শুরু হয় নির্যাতন। দালাল চক্র রাসেলকে নির্যাতন করে ভিডিও বাংলাদেশে পাঠিয়ে পরিবারের কাছ থেকে বিভিন্ন দফায় আরও ৩০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। সর্বশেষ কয়েক দিন আগে আরও ১০ লাখ টাকা দাবি করে চক্রটি; কিন্তু টাকা দিতে না পারায় দালাল চক্রের সদস্যরা তাঁকে নির্যাতন করা শুরু করেন। এতে গতকাল শুক্রবার তাঁর মৃত্যু হয়। আজ দুপুরে এক প্রবাসীর মাধ্যমে স্বজনেরা তাঁর মৃত্যুর সংবাদ জানতে পারেন।

রাসেলের বাবা আউয়াল মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার জীবনের শেষ সম্বল বসতভিটা ও ফসলি জমি বিক্রি কইরা কয়েক ধাপে ৫০ লাখ টাকা দিছি। আরও টাকা চাইত। দিতে না পারায় আমার ছেলেরে হত্যা করছে দালাল লিলু মিয়া ও মাফিয়া চক্র।’ তিনি বলেন, ‘লিবিয়ায় যাওয়ার পর ছেলের কপালে জোটে ভয়ংকর অভিজ্ঞতা। মাফিয়া চক্র রাসেলকে নির্যাতন করে একাধিকবার ভিডিও পাঠিয়ে তাঁদের কাছ থেকে ৩০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। আরও ১০ লাখ টাকা চেয়েছিল। টাকা না দেওয়ায় বিষাক্ত ইনজেকশন দিয়ে ছেলেকে হত্যা করেছে।’

রাসেলের মৃত্যুর বিষয়টি জানাজানির পর গণমাধ্যমকর্মীরা ধরমণ্ডল গ্রামের দালাল লিলু মিয়ার বাড়িতে গেলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। ঘটনার পর থেকে পরিবার নিয়ে তিনি পলাতক। একাধিকবার চেষ্টা করেও মুঠোফোন না ধরায় লিলু মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

ধরমণ্ডল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো.

সফিকুল ইসলাম বলেন, রাসেলকে বাঁচাতে তাঁর পরিবার প্রায় ৫০ লাখ টাকা দিয়েছে। কিন্তু টাকা দিয়েও ছেলেকে বাঁচাতে পারেনি। যারা মানব পাচারের সঙ্গে জড়িত, তাদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি। যাতে রাসেলের মতো আর কোনো তরুণের অকালে মরতে না হয়।

নাসিরনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. খায়রুল আলম বলেন, স্থানীয় বিভিন্ন মাধ্যমে ওই তরুণের মৃত্যুর বিষয়টি জানতে পেরেছেন। ভুক্তভোগীর পরিবারের কাছ থেকে লিখিত অভিযোগ পেলে এ ব্যাপারে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পর ব র র

এছাড়াও পড়ুন:

এবারের বাজেট ট্রাম্প ও আইএমএফএ’র দুই পায়ে দাঁড়ানো: আনু মুহাম্মদ

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেছেন, এবারের বাজেট ট্রাম্প ও আইএমএফএ’র দুই পায়ে দাঁড়ানো। আইএমএফের প্রভাবে বাজেটে স্থানীয় শিল্পে ভ্যাট অব্যাহতি হ্রাস পেয়েছে। ট্রাম্প সাহেবকে খুশি করার চেষ্টা ছিলো এই বাজেটে। 

আজ শনিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের মাওলানা আকরাম খাঁ হলে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি আয়োজিত ‘বাজেট: দেড় দশকের অভিজ্ঞতা ও অর্থনীতির গতিপথ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। 

আনু মুহাম্মদ বলেন, বাজেটে আয়ের জন্য ভ্যাট ট্যাক্স বাড়ানোর কথা বলা হয়। কিন্তু মার্কিন কোম্পানির কাছে আমাদের যে ক্ষতিপূরণ তা আদায় করতে হবে। মাগুরছড়া ও টেংরাটিলায় গ্যাস বিস্ফোরণে সম্পদ ও প্রাণ প্রকৃতি ধ্বংসে যে ক্ষতি হয়েছে, তার ক্ষতিপূরণ আদায়ের কোন সরকারই চেষ্টা করেনি। এই ক্ষতিপূরণ আদায় অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব।

তিনি আরও বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর ডিপি ওয়ার্লডের কাছে ছেড়ে দেওয়া তো শেখ হাসিনার প্রকল্প ছিল। ড. ইউনুস কেন তার ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে চাইছেন? 

গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য আনু মুহাম্মদ বলেন, গণঅভ্যুত্থানে পরিবর্তনের যে আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করা হয়েছে, বর্তমান সরকারের বাজেটে সেই পরিবর্তনের সূচনা ঘটানোর কথা নেই। সম্পদ সংখ্যাগরিষ্ট জনগণের কাছ থেকে গিয়ে কিছু মানুষের কাছে পুঞ্জীভূত হয়। এবারের বাজেটেও সেই প্রবণতা দেখা গেছে।

তিনি আরও বলেন, এবারের বাজেটে প্রতারণা ও অস্বচ্ছতার যে চিত্র ফুটে উঠেছে, সেটা অব্যাহত থাকুক আমরা চাই না। আগামী ২২ জুন বাজেট অনুমোদনের আগে এর ত্রুটিগুলো দূর করতে হবে। বাজেটে জাতীয় সক্ষমতা সৃষ্টির ন্যূনতম উদ্যোগ নিতে হবে।

সভায় আইইউবিএটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও চেয়ার ড. গোলাম রসুল বলেন, সত্যিকার অর্থে কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য এই বাজেটে তেমন কিছু নেই। কৃষিক্ষেত্রে বৈষম্য দিন দিন বাড়ছে। কৃষিকে আমরা নানাভাবে আন্ডার ভ্যালু করে দিচ্ছি। স্বাস্থ্যখাতে এবার জনপ্রতি বাজেট বেড়েছে ২২ টাকা।

ট্রাম্পের পালটা শুল্ক বিষয়ে আনু মুহাম্মদ বলেন, সরকার বুঝেও না বুঝার ভান করছে। এটা আমাদের বিশাল বিপদে ফেলবে। 
সভায় আরও বক্তব্য দেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহা মির্জা,  চিকিৎসক ডা. হারুণ অর রশীদ, লেখক-গবেষক প্রকৌশলী কল্লোল মোস্তফা ও মাহতাব উদ্দীন আহমেদ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ৫ আসামিকে বাদ দিতে হলফনামা, বাদী কৃষক দল নেতাকে শোকজ
  • এবারের বাজেট ট্রাম্প ও আইএমএফএ’র দুই পায়ে দাঁড়ানো: আনু মুহাম্মদ