রাওয়ালপিন্ডিতে গতকাল বাংলাদেশ দলের অনুশীলন ছিল ফ্ল্যাডলাইটের আলোতে। নাজমুল হোসেন শান্তরা যখন ভেন্যুতে পৌঁছান, তখন আবহাওয়া বেশ ঠান্ডা। বিসিবির মিডিয়া ম্যানেজার রাবীদ ইমাম ফোনে জানান, এখনও গরম কাপড় লাগে। ঘাসের ওপর হালকা শিশির বিন্দুও তাঁর চোখে পড়েছে। পিন্ডির এই শীত শীত হাওয়াতেও কোচ ফিল সিমন্সের একটি উত্তর লু হাওয়া ছড়ালো সংবাদ সম্মেলন কক্ষে।
মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের চোটের আপডেট নেওয়া হয়নি তাঁর। ম্যাচের আগের দিন সন্ধ্যায় কোচের এ রকম কথার অর্থ করা যেতে পারে ‘ডালমে কুচ কালাহে’। মাহমুদউল্লাহর ম্যাচ খেলা নিয়ে দুটি প্রশ্নের উত্তর পরোক্ষে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন কোচ। এ থেকে বোঝা যায়, ব্যাটিং অর্ডারে অভিজ্ঞ এ ক্রিকেটারকে ফিট করতে পারছেন না তিনি। তাওহিদ হৃদয় বা জাকের আলীর যে কোনো একজন ভারতের বিপক্ষে ব্যর্থ হলে সাত নম্বরে মাহমুদউল্লাহকে খেলানো সহজ হতো। তাই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মিডল অর্ডার এ ব্যাটারের প্রশ্নে অনেক যদি কিন্তুর হিসাব মেলাতে হচ্ছে টিম ম্যানেজমেন্টকে।
মাহমুদউল্লাহ ৩৯ বছরেও দলের অন্যতম সেরা একজন ব্যাটার। গত বছর ডিসেম্বরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তিন ম্যাচে রান করেছেন ৫০, ৬২ ও ৮৪। প্রথম ও শেষ ম্যাচে অপরাজিত ছিলেন। সে হিসেবে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে তাঁর খেলার দাবি জোরালো। হালকা চোট না থাকলে ভারতের বিপক্ষে অটো খেলতেন। সমস্যা হয়ে গেছে হৃদয়-জাকেরের রান করা। তাই বলে একাদশে পরিবর্তন আনা যাবে না, তাও না।
মাহমুদউল্লাহকে খেলানোর প্রশ্নের উত্তরে সিমন্স বলেন, ‘তার আজ একটা ফিটনেস টেস্ট আছে। অনুশীলন আছে। তার পর জানতে পারব, একাদশে থাকার জন্য সে ফিট কিনা।’ পাকিস্তানে পৌঁছানোর পরের দিন ইসলামাবাদ ক্লাবে অনুশীলন করেছেন মাহমুদউল্লাহ। ফিটনেস ট্রেনিং ছাড়াও নেটে ব্যাটিং সেশন করেছেন ভালো মতোই। এর পরও ফিটনেস টেস্টকে ঢাল করার পেছনে অন্য কোনো কারণ নেই তো?
কোচ অবশ্য পরের দিকে কিছুটা ইঙ্গিত দিয়েছেন, ‘আমরা অনেক ভিন্ন ভিন্ন বিষয়ই চিন্তা করছি। আমরা আগে দেখব, রিয়াদ ফিট কিনা; এর পর দলের ভারসাম্য করার চেষ্টা করব। আজকের (গতকাল) অনুশীলন শেষ হলে তার সম্পর্কে ধারণা পাব। উইকেট দেখার পর সন্ধ্যায় সিদ্ধান্ত নেব কেমন একাদশ হবে।’
রাওয়ালপিন্ডি ব্যাটিংস্বর্গে হাইস্কোরিং ম্যাচ হবে বলে মনে করেন কোচ। লাহোরে ইংল্যান্ডের সাড়ে তিনশ রান অস্ট্রেলিয়ার তাড়া করে ম্যাচ জয়ের ঘটনা সামনে এনে সিমন্স জানান, বাংলাদেশকেও তিনশ প্লাস রান করতে হবে। স্বাভাবিকভাবে এ রকম ব্যাটিং কন্ডিশনে মুস্তাফিজের জায়গা নাও হতে পারে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: কর ছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে
বান্দরবানের থানচি উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার মানুষের একমাত্র ভরসার জায়গা ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সংকটে এই হাসপাতাল কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে পুরো হাসপাতাল চালাচ্ছেন মাত্র একজন চিকিৎসক। গত পাঁচবছরে চিকিৎসাধীন ও রেফার্ড করা ২৪ জন রোগী মারা গেছেন।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১৯৯৫ সালে ৩১ শয্যার থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যাত্রা শুরু করে। পরে এটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১২ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র দুইজন। তাদের মধ্যে একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন। এ কারণে রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ১৮ জন নার্স পদে রয়েছেন মাত্র চারজন। চারজন মিডওয়াইফ থাকার কথা, নেই একজনও।
আরো পড়ুন:
ফরিদপুরে পাগলা ঘোড়ার কামড়ে আহত ২০
বক্তব্য দেওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়লেন কাদের সিদ্দিকী
প্রাথমিক থেকে শুরু করে জরুরি চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালে ছুটে যান পাহাড়ি ও বাঙালিরা। তাদের অভিযোগ, হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা যোগ হয়নি। প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক না থাকায় গর্ভবতী নারী, শিশু ও বৃদ্ধ রোগীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন।
দুর্গম এলাকার রোগীরা অনেক সময় নদীপথ কিংবা পাহাড়ি রাস্তা পাড়ি দিয়ে হাসপাতালে এলেও কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা পান না। বরং তাদের বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। অনেক সময় বান্দরবানে যাওয়ার পথে রোগীরা মারা যান। এ কারণে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন তারা।
হাসপাতালের পরিসংখ্যানবীদ পঙ্কজ বড়ুয়া জানান, ২০২০ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এখানে ভর্তি হয়েছেন ৫ হাজার ১৯৮ জন রোগী। এর মধ্যে ৪৫৬ জনকে রেফার্ড করা হয় বান্দরবান সদর হাসপাতালে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ১৭ জন রোগী।
থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালক মংক্যসিং মারমা বলেন, “২০১৯ সালে চাকরিতে যোগদান করার পর থেকে অন্তত সাতজন রেফার্ড করা রোগী মাঝপথে আমার গাড়িতেই মারা গেছেন।”
শৈসাই মং মারমা তিন বছর আগে বিনা চিকিৎসায় তার মাকে মারা যেতে দেখেছেন। তিনি জানান, তার মা শৈমেপ্রু মারমা (৩৪) অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর হঠাৎ তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। রেমাক্রী বাজার থেকে নদীপথে থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান মাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাকে জেলা সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। ভাড়া গাড়িতে জেলা হাসপাতালে যাওয়ার সময় চিম্বুক বারো মাইল এলাকায় তার মা মারা যান।
লেংরু ম্রো নামে চার সন্তানের মা হারিয়েছেন স্বামীকে। তিনি জানান, তার স্বামী রেং য়ুং ম্রো (৪৫) কিডনি জটিলতা নিয়ে থানচি হাসপাতালে যান। সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে তাকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। থানচি থেকে বান্দরবান যাওয়ার মাঝপথে মারা যান তার স্বামী।
স্থানীয় বাসিন্দা মংমে মারমা বলেন, “হাসপাতালে চিকিৎসক, ওষুধ ও যন্ত্রপাতির সংকট দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বদলি হলেও অনেকেই থানচিতে যোগ দেন না, ডিপুটেশনে থেকে যান সদর হাসপাতালে। ফলে এ অঞ্চলের পাহাড়ি ও বাঙালি প্রায় ৩০ হাজার মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।”
রিয়েং ম্রো নামে অপর বাসিন্দা বলেন, “পাহাড়ে বসবাসকারীদের অধিকাংশ গরিব। জেলা সদর হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাওয়া ব্যয়বহুল ও কষ্টকর। রেমাক্রি, বড় মোদক, তিন্দু থেকে থানচি সদরে রোগী আনতেই অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। এরপর আবার বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করলে সাধারণ মানুষ কীভাবে চিকিৎসা করাবে?”
থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মো. ওয়াহিদুজ্জামান মুরাদ বলেন, “বর্তমানে হাসপাতালে আমিসহ দুইজন চিকিৎসক রয়েছেন। একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাধীন। তিন রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ফলে পুরো হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্ব আমাকে একাই সামলাতে হচ্ছে।”
তিনি আরো বলেন, “জনবল ও সরঞ্জাম সংকটের কারণে গুরুতর রোগীদের রেফার্ড করা ছাড়া উপায় থাকে না। দীর্ঘ পথের কারণে অনেকেই জীবিত অবস্থায় সদর হাসপাতালে পৌঁছাতে পারেন না।”
বান্দরবান জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ শাহীন হোসাইন চৌধুরী বলেন, “শুধু বান্দরবান নয়, পুরো তিন পার্বত্য জেলাতেই চিকিৎসক সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। নতুন করে ৪৮তম বিসিএসের ডাক্তার পদায়ন না হওয়া পর্যন্ত এই সংকট পুরোপুরি সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও বিভাগীয় প্রধানকে বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের আট-দশজন চিকিৎসককে বান্দরবানে বদলি করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”
ঢাকা/মাসুদ