শিক্ষার্থীকে মারধরের ঘটনায় সিলেট জামায়াত আমিরের দুঃখপ্রকাশ, প্রতিবাদ জানাল শিবির
Published: 24th, February 2025 GMT
সিলেটের এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে শিক্ষার্থীকে মারধরের ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করেছেন সিলেট মহানগর জামায়াতে ইসলামীর আমির মুহাম্মদ ফখরুল ইসলাম। রোববার রাতে নগরের সোবহানীঘাট এলাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে দুঃখ প্রকাশ করে বক্তব্য দেন তিনি।
তবে রোববার রাতেই তার বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছেন শিবিরের কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদ সদস্য ও মহানগর সভাপতি। এতে সংগঠনটি জামায়াতের আমিরের বক্তব্য প্রত্যাহারের জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে।
এর আগে গত বুধবার রাত ১২টার দিকে এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে শিক্ষার্থী মিজানুর রহমান মারধরের শিকার হন। তিনি সিলেটের আঞ্চলিক ইসলামী সংগঠন বাংলাদেশ আনজুমানে আল ইসলাহের ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশ আনজুমানে তালামীযে ইসলামিয়ার এমসি কলেজ শাখার সহতথ্যপ্রযুক্তি-বিষয়ক সম্পাদক। মিজানুর রহমানের অভিযোগ, তাকে এমসি কলেজ ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীরা রড দিয়ে মারধর করেছেন।
রোববার রাতে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এ বিষয়ে ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘গত বুধবার রাতে এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে শিক্ষার্থী মিজানুর রহমান রিয়াদকে মারধরের সঙ্গে শিবিরের কিছু সংখ্যক কর্মী জড়িত ছিল। সেজন্য আমরা দুঃখিত। ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ঘটনা না ঘটে সেজন্য সবাইকে খেয়াল রাখতে হবে।’ এসময় তিনি আহত রিয়াদের চিকিৎসার ব্যবস্থারও কথা জানান এবং জুলাই বিপ্লবে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আহতদের সুস্থতা কামনা করেন।
এ সময় জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা হাবিবুর রহমান ও দক্ষিণ সুরমা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান লোকমান আহমদ এবং নেজামে ইসলাম পার্টির সভাপতি অ্যাডভোকেট আব্দুর রকিব, আঞ্জুমানে আল ইসলাহের সিনিয়র নেতা অধ্যক্ষ রফিকুল ইসলাম খান, সংগঠনের ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রেদওয়ান আহমদ চৌধুরী, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক নাজমুল হুদা খান উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকের আগে উভয় দলের নেতৃবৃন্দ চিকিৎসাধীন আহত রিয়াদকে দেখতে যান।
বৈঠক বিষয়ে রেদওয়ান আহমদ চৌধুরী সমকালকে রাতে বলেন, উভয় সংগঠনের সিনিয়র নেতাদের সমঝোতা বৈঠকে বিষয়টি শান্তিপূর্ণ সমাধান হয়েছে। জামায়াত নেতৃবৃন্দ ঘটনার জন্য দুঃখপ্রকাশ করেছেন।
এদিকে রাত সাড়ে ১১টার দিকে মহানগর জামায়াতে ইসলামীর আমিরের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানান শিবিরের কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদ সদস্য ও সিলেট মহানগর সভাপতি শাহীন আহমদ ও মহানগর সেক্রেটারি শহিদুল ইসলাম সাজু।
বিবৃতি দিয়ে তারা বলেন, ‘সিলেটের এমসি কলেজে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি রাতে শিক্ষার্থীদের পারস্পরিক বিরোধে হাতাহাতির ঘটনায় কয়েকজন আহত হন। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে কিছু স্থানীয় রাজনৈতিক মহল ফায়দা হাসিল করতে ছাত্রশিবিরের ওপর দায় চাপিয়ে আসছে। রোববার মহানগর জামায়াতের আমির ফখরুল ইসলামের একটি বক্তব্য আমাদের নজরে আসে। আমরা তার এই বক্তব্যের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। শিক্ষার্থীদের পারস্পরিক দ্বন্দ্বকে সংঘবদ্ধ অপপ্রচারের মাধ্যমে ছাত্রশিবিরের ওপর দায় দিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা ইতোমধ্যে দেশবাসীর দৃষ্টিগোচর হয়েছে। মহানগর জামায়াতের আমিরও এই অপপ্রচার দ্বারা বিভ্রান্ত হয়েছেন বলে আমরা মনে করছি। অবিলম্বে এই বক্তব্য প্রত্যাহারের আহ্বান জানাচ্ছি।’
ছাত্রশিবিরের বিবৃতির সত্যতা নিশ্চিত করেন মহানগর মহানগরের প্রচার ও মিডিয়ার দায়িত্বশীল নাঈম আহমদ।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: জ ম য় ত ইসল ম ম রধর ত র আম র ল ইসল ম র রহম ন ম রধর র ন আহমদ স গঠন র ঘটন
এছাড়াও পড়ুন:
নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতা খর্ব হলে রাষ্ট্র পরিচালনায় ভারসাম্য নষ্ট হবে: সালাহউদ্দিন
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপ থেকে কিছু সময়ের জন্য ওয়াকআউট করার পর আবারও আলোচনায় যোগ দিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতা খর্ব করা হলে রাষ্ট্র পরিচালনায় ভারসাম্য নষ্ট হবে বলে তিনি সতর্ক করেছেন।
আজ সোমবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনার ২০তম দিনে সালাহউদ্দিন আহমদ এ কথা বলেন।
বিএনপির এই নেতা বলেন, দেশে যেন আর কখনো স্বৈরাচার বা ফ্যাসিবাদ জন্ম নিতে না পারে, সে লক্ষ্যে সংবিধান সংশোধনের উদ্যোগে বিএনপি সর্বোচ্চ সহযোগিতা করে যাচ্ছে।
সালাহউদ্দিন আহমদ আরও বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকেই প্রস্তাব ছিল, কেউ যেন ১০ বছরের বেশি প্রধানমন্ত্রী থাকতে না পারেন, সেটি গৃহীত হয়েছে। আমরা আরও প্রস্তাব দিয়েছি, নির্বাচন কমিশন গঠনে একটি স্বাধীন সার্চ কমিটি গঠন করা হোক, যেখানে সরকারি দল, বিরোধী দল ও বিচার বিভাগের প্রতিনিধি থাকবে, সেটিও গ্রহণযোগ্য হয়েছে।’
সালাহউদ্দিন আরও বলেন, ‘আমরাই প্রস্তাব করেছি যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হলে পরবর্তী সময়ে সংসদ কোনো সংশোধনী আনলে, তা রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের আগে গণভোটে যেতে হবে। এটি গৃহীত হওয়া মানে, দেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য একটি বড় পদক্ষেপ।’
তবে এসব অগ্রগতির মধ্যেও নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন বিএনপির এই নেতা। বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘নির্বাহী বিভাগের জবাবদিহি যেমন সংসদের কাছে, তেমনি জনগণের কাছেও রয়েছে। কিন্তু যদি কর্তৃত্ব না থাকে, কেবল দায়িত্ব আর জবাবদিহি থাকে, তাহলে তা কার্যকর রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য যথেষ্ট নয়।’
সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়োগে নির্বাহী বিভাগের হাত–পা বাঁধা হলে তা ভবিষ্যতের জন্য বাধা সৃষ্টি করতে পারে বলেও মন্তব্য করেন সালাহউদ্দিন। তিনি বলেন, ‘জনগণের প্রত্যাশা পূরণে নির্বাহী বিভাগকে শক্তিশালী হতে হবে, দুর্বল নয়।’
বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়, তারা গঠনমূলক লক্ষ্য নিয়ে সংলাপে অংশ নিচ্ছে। তবে যেখানে মৌলিক দ্বিমত রয়েছে, সেখানে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকা বা মতপার্থক্য প্রকাশ করাও গণতন্ত্রের ভাষা।
সালাহউদ্দিন আহমদ আরও বলেন, ‘সব বিষয়ে ঐকমত্য হবে, এমন দাবি কেউ করেননি। দ্বিমত থাকবে, ভিন্নমত থাকবে, আর সেগুলোর মধ্য দিয়েই তো গণতন্ত্রের সংগ্রাম এগিয়ে যায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা মনে করি না যে নোট অব ডিসেন্ট দিয়ে কাউকে ঐকমত্যে বাধ্য করা উচিত। ঐকমত্যের অর্থই হচ্ছে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে পথচলা। বিএনপি অংশ না নিলে কীভাবে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হবে, সেটি নিয়েও প্রশ্ন থেকে যায়।’
বক্তব্য শেষে সালাহউদ্দিন আহমদ জানান, সংলাপের পরবর্তী পর্যায়ে বিএনপি অংশ নেবে এবং ইতিবাচক আলোচনার জন্য প্রস্তুত থাকবে।
আরও পড়ুনঐকমত্য কমিশনের বৈঠক: ফায়ার অ্যালার্ম বেজে ওঠায় হুড়োহুড়ি করে বের হলেন সবাই৫৪ মিনিট আগেবিএনপির ওয়াকআউটকমিশনের প্রস্তাবিত সরকারি কর্ম কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক এবং ন্যায়পাল নিয়োগের বিধান আলোচনায় অংশ নেয়নি বিএনপি। বেলা সাড়ে ১১টার পর বিষয়টি আলোচনার জন্য উপস্থাপন করেন কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ জানান, তাঁরা আলোচনায় অংশ নেবেন না।
পরে আলী রীয়াজ বলেন, বিএনপির পক্ষে বলা হয়েছে, তারা আলোচনায় থাকবে না। একটি রাজনৈতিক দল আলোচনায় অংশ না নিলে আলোচনা করা যাবে না, তা নিয়ে সিদ্ধান্ত দিতে পারি না।
আজ আলোচনায় অংশ নিয়েছে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), গণসংহতি আন্দোলনসহ ৩০টি রাজনৈতিক দল।
আলোচনায় সভাপতিত্ব করছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় আরও উপস্থিত আছেন কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার, এমদাদুল হক, সফর রাজ হোসেন, ইফতেখারুজ্জামান ও আইয়ুব মিয়া।
আরও পড়ুনজাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক থেকে বিএনপির ওয়াক আউট, পরে যোগদান২ ঘণ্টা আগে