সারা দেশে ধর্ষণ, ছিনতাই, ডাকাতির প্রতিবাদে মধ্যরাতে বিক্ষোভ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থীরা। এ সময় অপরাধ নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর পদত্যাগের দাবি করেন তারা।

রবিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) রাতে বনশ্রী ও মোহাম্মদপুরে দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনার পর রাত ১টায় রাজু ভাস্কর্যের সামনে বিক্ষোভ শুরু করেন ঢাবি শিক্ষার্থীরা।

এ সময় তারা ‘জুলাইয়ের রক্তের দাম চাই, নিরাপদ দেশ চাই’, ‘সারা দেশে অপরাধ কেন, প্রশাসন জবাব চাই’, ‘এক দুই তিন চার, জাহাঙ্গীর গদি ছাড়’, ‘দফা এক দাবি এক, জাহাঙ্গীরের পদত্যাগ’, ‘মা বোনদের নিরাপত্তা দে, নইলে গদি ছাইড়া দে’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।

শিক্ষার্থীরা বলেন, গত কয়েকদিন ধরে বেশ কয়েকটি বড় অপরাধের ঘটনা সামজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এগুলো প্রতিরোধে কোন উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ আমরা দেখিনি। আজো মোহাম্মদপুর, বনশ্রী, ধানমন্ডিতে ছিনতাইকারী ও ডাকাতদের উপদ্রব ছিল। কেউ বাসা থেকে বের হতে নিরাপদবোধ করছে না, মানুষ আতঙ্কবোধ করছে। এ পরিস্থিতিতে ব্যর্থ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ করতে হবে।

মিছিলে থাকা একজন শিক্ষার্থী বলেন, “সারা দেশে ছিনতাই, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার ব্যর্থতার জন্য আমরা তার পদত্যাগ দাবি করছি।”

বিক্ষোভের পরপরই রাত ৩টায় বারিধারা ডিওএইচএসের নিজ বাসায় জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডাকেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। সেখানে তিনি বলেন, “আগামীকাল থেকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর টহল বাড়বে। যেখানেই ঘটনা ঘটবে সেখানেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কারো গাফিলতি পাওয়া গেলে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ দেশ থেকে পাচার হওয়া টাকা দিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করার সব ধরনের চেষ্টা করছে। এ ক্ষেত্রে তারা প্রচুর টাকা ব্যবহার করছে। তবে আমরা শক্ত হাতে তাদের প্রতিহত করব। আওয়ামী লীগের যারা এসব কাজ করছে, তাদের ঘুম হারাম করে দেব।”

এর আগে, বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ১০টার দিকে রাজধানীর বনশ্রীতে ব্যবসায়ীকে গুলি করে ২০০ ভরি স্বর্ণ ও নগদ ১ লাখ টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটে। ‘শান্ত এলাকা’ নামে পরিচিত বনশ্রীতে হঠাৎ করে এমন ঘটনায় ফেসবুকে সমালোচনার ঝড় বইছে। আতঙ্ক বিরাজ করছে রামপুরা, আফতাবনগরসহ পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলোতে।

ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র পদত য গ বনশ র

এছাড়াও পড়ুন:

‘ভোল পাল্টে’ সক্রিয় কিশোর গ্যাং, অতিষ্ঠ বাসিন্দারা

লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার চর আবাবিল ইউনিয়নের উদমারা এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাতে অতিষ্ঠ বাসিন্দারা। এলাকায় নারীদের উত্ত্যক্ত করা, মাদক সেবন, মারামারি, খুনসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে কিশোর গ্যাংয়ের এসব সদস্যদের বিরুদ্ধে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, গত বছরের ৫ আগস্টের আগে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার ছত্রচ্ছায়ায় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করত। তবে এখন ভোল পাল্টে স্থানীয় বিএনপি নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ভিড়েছে তারা।

সম্প্রতি এলাকাটিতে কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় আহত হয়ে চিকিৎসাধীন জাহাঙ্গীর আলম (৫২) নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। জাহাঙ্গীর আলম স্থানীয় মসজিদ কমিটির সভাপতি ছিলেন। মসজিদের পাশে জুয়ার আসর বসানো ও মাদক সেবনে বাধা দেওয়াকে কেন্দ্র করে তাঁর ওপর হামলার অভিযোগ রয়েছে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের বিরুদ্ধে। গত ৩ এপ্রিল তাঁর ওপর হামলা করা হয়। এরপর গত শনিবার তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

স্থানীয় বাসিন্দা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কিশোর গ্যাংয়ের নেতৃত্বে রয়েছেন কয়েকজন স্থানীয় তরুণ। ওই তরুণেরা রাজনীতিতে যুক্ত থাকায় মিছিল-সমাবেশে কিশোরদের ব্যবহার করে আসছেন। ফলে স্থানীয় কিছু রাজনৈতিক নেতাও এসব কিশোরকে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে প্রশ্রয় দেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, আগে এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের নিয়ন্ত্রণ ছিল চর আবাবিল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম ও ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিদ্দিক সর্দারের হাতে। তাঁরা এসব কিশোরকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিতেন। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ওই কিশোরেরা ভোল পাল্টে বিএনপির কর্মসূচিতে সক্রিয় হচ্ছে। আবদুর রহিম নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি এসব তরুণকে নতুন করে আশ্রয়–প্রশ্রয় দিচ্ছেন। রহিম ইউনিয়ন বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় হলেও তাঁর পদপদবি নেই।

জাহাঙ্গীর আলম খুনের ঘটনায় আবদুর রহিমকেও আসামি করা হয়। মামলার পর তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন। মুঠোফোনে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের আমি প্রশ্রয় দিচ্ছি—এমন অভিযোগ প্রায় করা হচ্ছে। তবে এসব অভিযোগ সত্য নয়। আমাকে হয়রানির উদ্দেশ্যে মামলায় জড়ানো হয়েছে।’

ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিদ্দিক সর্দার বলেন, ‘কিশোর গ্যাংকে আমি কখনো প্রশ্রয় দিইনি। তারা (কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা) আমার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করত।’ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম আত্মগোপনে থাকায় তাঁর বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

জানতে চাইলে রায়পুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক জেড এম নাজমুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপির দলীয় কোনো নেতা-কর্মী কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের প্রশ্রয় দিলে তাঁদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনো নেতা-কর্মীর অপকর্মের দায় দল নেবে না।

জাহাঙ্গীর আলমের ওপর হামলার ঘটনায় গত ৭ এপ্রিল লক্ষ্মীপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৯ জনের নাম উল্লেখ ও ২০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলার আবেদন করেন তাঁর স্ত্রী রাজিয়া বেগম। আদালত রায়পুর থানাকে মামলাটি গ্রহণের নির্দেশ দেন। মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়, মসজিদের আশপাশে জুয়ার আসর ও মাদক সেবন করত কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। এসব বিষয়ের প্রতিবাদ করাকে কেন্দ্র করে সাব্বির হোসেন, জুবায়ের হোসেনসহ কয়েকজনের নেতৃত্বে ৮–১০ জন কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য জাহাঙ্গীর আলমের ওপর হামলা করেছেন। নিহত জাহাঙ্গীর আলমের মেয়ে শারমিন আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, মামলার পর আতঙ্কে দিন কাটছে তাঁর পরিবারের সদস্যদের। স্থানীয় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা মামলা প্রত্যাহারের জন্য হুমকি দিয়ে আসছে।

জানতে চাইলে রায়পুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. নিজাম উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, কিশোর অপরাধীদের বিরুদ্ধে পুলিশের ধারাবাহিক অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

লক্ষ্মীপুর সরকারি ডিগ্রি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মাঈন উদ্দিন পাঠান বলেন, কিশোর-তরুণদের খেলাধুলা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড থেকে ফিরিয়ে আনতে হবে। তাদের ফেরাতে না পারলে অপরাধ আরও বেড়ে যাবে। কেউ যাতে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে কিশোরদের ব্যবহার করতে না পারে, সে বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সবাইকে তৎপর থাকতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ