নদী রক্ষার সম্মেলনে করতোয়া দখল-দূষণমুক্ত করার দাবি
Published: 24th, February 2025 GMT
করতোয়া নদী দখল-দূষণমুক্ত ও পানি প্রবাহ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নদী রক্ষা সম্মেলন হয়েছে। সোমবার দুপুরে বগুড়ার বনানী এলাকায় এনজিও ফোরাম মিলনায়তনে এ আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানের আয়োজক বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা), অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি) ও পানি অধিকার ফোরাম।
সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন এএলআরডি নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা। প্রধান অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো.
অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বেলার ফিল্ড অ্যান্ড গ্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর এএমএম মামুন, রাজশাহী কার্যালয়ের সমন্বয়ক কুমার সান্যাল, বগুড়ার পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমান, সাংবাদিক সৈয়দ ফজলে রাব্বি ডলার।
বক্তারা বলেন, করতোয়া নদী রক্ষায় উচ্চ আদালতের রায় রয়েছে। প্রশাসন সেই রায় বাস্তবায়ন করলে হাজার হাজার মানুষ দূষণমুক্ত পরিবেশে নিঃশ্বাস ছাড়তে পারবে। অবিলম্বে নদী দখল-দূষণমুক্ত করে পানি প্রবাহ নিশ্চিত করা হোক।
এ সময় বক্তারা করতোয়া নদী সিরাজগঞ্জ থেকে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের কাটাখালী পর্যন্ত ১২৩ কিলোমিটার দখল ও দূষণমুক্ত করার দাবি জানান। তারা করতোয়া নদী সিএস ও আরএস ম্যাপ দেখে খনন নয়, বহু বছর আগে যেদিক দিয়ে নদী বয়ে গেছে সেদিক থেকেই খননের অনুরোধ জানান। এ ছাড়া নদী দখলে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ারও দাবি জানানো হয় সম্মেলনে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম বলেন, করতোয়া নদীর খনন ও উন্নয়নে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। অনুমোদন পেলেই করতোয়ার প্রাণ ফেরানো যাবে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
গোলটেবিল মত: কৃষি, ভূসম্পত্তিতে নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় সরব হতে হবে
ক্ষমতায়নে নারীদের এখনো পিছিয়ে পড়ার দিকটি দেখিয়ে কৃষি, ভূমিসহ প্রাকৃতিক সম্পদে নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার আহ্বান এসেছে ঢাকায় এক গোলটেবিল বৈঠক থেকে। আলোচনায় বৈষম্য অবসানে আন্দোলনের কথাও এসেছে।
অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি) ও স্ট্যান্ড ফর ল্যান্ড ক্যাম্পেইন (এস ফোর এইচএল) বাংলাদেশের উদ্যোগে আজ শনিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘ভূমি, কৃষিসহ সব প্রাকৃতিক সম্পদ ও সম্পত্তিতে নারীর অধিকার: সরকার ও নাগরিক সমাজের করণীয়’ শিরোনামে এই গোলটেবিল আলোচনা হয়। আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবস-২০২৫ উপলক্ষে ছিল এই আয়োজন। এবার দিবসটি পালিত হচ্ছে ‘সকল নারী ও মেয়েদের অধিকার, সমতা ও ক্ষমতায়ন’ প্রতিপাদ্যে।
আলোচনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনা করেন এএলআরডির উপনির্বাহী পরিচালক এবং স্ট্যান্ড ফর হার ল্যান্ড (এস ফোর এইচএল) ক্যাম্পেইন, বাংলাদেশ-এর ফোকাল পারসন রওশন জাহান মনি। তিনি বাংলাদেশে কৃষি খাতে নারীর অবস্থা তুলে ধরে বৈষম্য নিরসনে রাজনৈতিক দল, সরকার ও নাগরিক সমাজের করণীয় সুপারিশ করেন।
তৃণমূল থেকে আসা দিনাজপুরের আদিবাসী নারী সাবিনা হেমব্রম খাসজমি বরাদ্দে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, আদিবাসী নারীরা কৃষির ওপর নির্ভরশীল হলেও তাঁদের নিজস্ব কৃষিভূমি নেই। অথচ তাঁর এলাকায় প্রচুর খাসজমি থাকলেও দরিদ্র কৃষকদের বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে না।
পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়ন থেকে আসা মিতা রানী হিন্দুধর্মের নারীদের পারিবারিক সম্পত্তিতে আইনি অধিকার পেতে আর কত দিন অপেক্ষা করতে হবে, সেই প্রশ্ন রাখেন রাজনৈতিক দল ও সরকারের কাছে।
শ্রীমঙ্গল থেকে আসা তামান্না সিং বারাইক চা-শ্রমিকদের দুর্দশা লাঘবের বিষয়গুলো রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী ইশতেহারে আসবে কি না, তা জানতে চেয়ে বলেন, চা-বাগানের শ্রমিকেরা অমানবিক মজুরিতে (১৭৮ টাকা) কাজ করেন। তোলা পাতার ওজন কম দেখিয়ে নারীদের আরও কম মজুরি দেওয়া হয়। এ ছাড়া ২০০ বছরের বেশি সময় ধরে তাঁরা ভূমিহীন।
সাতক্ষীরা থেকে আসা জয়ন্তী রানী মণ্ডল বলেন, দলিতরা সবচেয়ে পিছিয়ে আছে। দলিত নারীদের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে দলিত সম্প্রদায়ের মানুষের প্রতিনিধিত্ব প্রত্যাশা করেন তিনি।
গোলটেবিল বৈঠকে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সদস্য ফেরদৌসী সুলতানা বলেন, একজন চা-শ্রমিকের জন্য দৈনিক ৫৭০ টাকা বরাদ্দ রয়েছে। এখানে ১৭০ টাকা প্রদান করে ৪০০ টাকা আবাসন ও চিকিৎসাসেবার নামে কেটে রাখা হচ্ছে। এখন ৪০০ টাকার সমপরিমাণ সেবা প্রদান করা হচ্ছে কি না, সেই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলতে হবে।
কবি ও সাংবাদিক সোহরাব হাসান বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তীকালে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন করেছে। সেই কমিশন একটি প্রতিবেদন সরকারকে দিয়েছে। কিন্তু কিছু রাজনৈতিক দলের সক্রিয় বিরোধিতা এবং অন্তর্বর্তী সরকারের নির্লিপ্ততা এই কমিশনের কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করেছে। আগামী রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী ইশতেহারে আদিবাসীদের স্বীকৃতি, নারীদের প্রতি বৈষম্য হ্রাস, ভূমিতে নারী অধিকারের বিষয়গুলো যুক্ত করতে হবে।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম বলেন, বাংলাদেশে গ্রামীণ নারীর বড় একটি অংশ কৃষির সঙ্গে জড়িত। পারিবারিক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি কৃষিক্ষেত্রে শ্রম প্রদান করেও তাঁরা শিক্ষা, চিকিৎসা, খাদ্য কিংবা মর্যাদার জায়গায় সম-অধিকার পাচ্ছেন না। সহিংসাসহ নানা ধরনের ঝুঁকির মধ্যে নারীরা নিমজ্জিত হয়ে আছেন।
নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন নিয়ে ফওজিয়া মোসলেম বলেন, যেখানে রাষ্ট্রের ইতিবাচক ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন ছিল, সে ক্ষেত্রে রাষ্ট্র তার দৃঢ়তা দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে।
মানবাধিকারকর্মী খুশী কবির বলেন, ‘প্রাকৃতিক সম্পদ যেখানেই রয়েছে, সেখানে নারী-পুরুষ উভয়ের ভূমিকাই রয়েছে। নারীদের বিচ্ছিন্নভাবে চিন্তা করার কোনো সুযোগ নেই। বিভিন্ন উন্নয়নে নারীর বিষয় অনুপস্থিত থেকেছে। আমাদের নারী সংস্কারবিষয়ক কমিশন যে রিপোর্ট প্রণয়ন করেছে, সেগুলো বর্তমান সরকার গ্রহণ না করলেও আমরা এই সুপারিশগুলোর কথা বলব।’
নারীদের অধিকার আদায়ে আন্দোলনে জোর দিয়ে খুশী কবির বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীদের পক্ষে কেউ কথা বললে তাঁদের কোণঠাসা করে দেওয়া হচ্ছে। পার্বত্য আদিবাসীদের মধ্যে আদিবাসী নারীরা আরও প্রান্তিক অবস্থানে রয়েছেন। কোনো সরকার আমাদের কথা শুনছে না, কিন্তু আমাদের কথা আমাদের জোর গলায় বলে যেতে হবে।’
এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা বলেন, ‘আসন্ন নির্বাচনে যাঁরা অংশ নেবেন, তাঁদের ইশতেহারে আমাদের উল্লেখিত দাবিসমূহ তাঁরা অন্তর্ভুক্ত করবেন—এটা আমাদের দাবি। এর পাশাপাশি যাঁরা বর্তমানে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে আছেন, তাঁদেরও দায়িত্বগুলো ভুলে গেলে চলবে না।’
‘আমরা দেখেছি সরকার ঐকমত্য কমিশন গঠন করেছে, তবে সেই কমিশনে নারী প্রতিনিধি নেই, আদিবাসীদের প্রতিনিধি নেই। গত জুলাইয়ের আন্দোলনের অন্যতম প্রেরণা ছিল সব ধরনের বৈষম্যের অবসান। এখন কি তবে এই সরকার গণ-অভ্যুত্থানের বৈষম্যবিরোধী অবস্থান ভুলতে বসেছে?’ প্রশ্ন রাখেন শামসুল হুদা।
ছবি: সিস্টেমে