সহকর্মীর বাহুতে হাত রেখে সমালোচনার মুখে নিউজিল্যান্ডের মন্ত্রীর পদত্যাগ
Published: 24th, February 2025 GMT
সহকর্মীর বাহুর ওপরের অংশে ‘হাত রাখার’ পর সমালোচনার মুখে পদত্যাগ করেছেন নিউজিল্যান্ডের বাণিজ্যমন্ত্রী অ্যান্ড্রু বেইলি। গত সপ্তাহে তিনি ওই সহকর্মীর বাহুতে হাত রাখেন। অনেকে এটাকে বেইলির ‘কর্তৃত্বমূলক’ আচরণ বলে ব্যাখ্যা করেছেন।
সহকর্মীর বাহুতে হাত রাখার ঘটনার জন্য ‘গভীর দুঃখ’ প্রকাশ করেছেন অ্যান্ড্রু বেইলি। মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করলেও নিউজিল্যান্ডের পার্লামেন্টে তাঁর সদস্যপদ বহাল রয়েছে। নিজের পদত্যাগের বিবৃতিতে বেইলি বলেছেন, ‘আপনারা জানেন, মন্ত্রণালয়ে আমার দপ্তরে পরিবর্তন আনার জন্য অধৈর্য হয়ে পড়েছি।’
বিবৃতিতে বেইলি আরও লেখেন, ‘গত সপ্তাহে কাজ নিয়ে এক সহকর্মীর সঙ্গে আমার প্রাণবন্ত আলোচনা হয়। আলোচনা বেশ দীর্ঘ সময় গড়ায়। আলোচনার একপর্যায়ে আমি তাঁর বাহুর ওপরের অংশে হাত রেখেছিলাম, যা ঠিক হয়নি।’ এই ঘটনায় তাঁর বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ আনা হয়েছে বলে বেইলি নিজেই জানিয়েছেন।
বেইলি পদত্যাগ করেন গত শুক্রবার। পরে দেশটির প্রধানমন্ত্রী ক্রিস্টোফার লুক্সন এক সংবাদ সম্মেলনে এই খবর জানান। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, এক সহকর্মীর বাহুতে বেইলির হাত রাখার ঘটনা ঘটেছিল এরও তিন দিন আগে, ১৮ ফেব্রুয়ারি।
সোমবার লুক্সন বলেন, এক সপ্তাহের মধ্যে সরকার ‘বেশ দ্রুত’ এবং ‘যথেষ্ট ভালো’ পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে ৬৩ বছর বয়সী বেইলিকে মন্ত্রিসভায় অন্য কোনো দায়িত্ব দেওয়া হবে কি না, এমন এক প্রশ্নের জবাবে নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কক্ষনো না’।
এর আগে গত অক্টোবর মাসে মদ প্রস্তুতকারী এক কর্মীকে ‘হতভাগা’ মন্তব্য করে সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন বেইলি। তুচ্ছতাচ্ছিল্য করার পাশাপাশি বেইলি ওই কর্মীর কপালে ইংরেজি অক্ষর ‘এল’–এর মতো আকৃতি করে নিজের আঙুল রেখেছিলেন। ওই ঘটনায় তিনি পরে জনসমক্ষে ক্ষমা চেয়েছেন।
নিউজিল্যান্ডের ক্ষমতাসীন দল ন্যাশনাল পার্টির পার্লামেন্ট সদস্য হিসেবে ২০১৪ সালে প্রথম নির্বাচিত হয়েছিলেন অ্যান্ড্রু বেইলি। ২০২৩ সালের শেষে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে লুক্সন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর বেইলিকে বাণিজ্য ও ভোক্তাবিষয়ক মন্ত্রী, ক্ষুদ্র ব্যবসা ও উৎপাদনবিষয়ক মন্ত্রী এবং পরিসংখ্যানমন্ত্রী নিয়োগ দেওয়া হয়।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সহকর ম র ব হ ত পদত য গ নমন ত র মন ত র
এছাড়াও পড়ুন:
দুই বন্ধু ও দুটি স্বপ্নের বিদায়
উত্তরার ১৭ নম্বর সেক্টরের ৬ নম্বর অ্যাভিনিউতে বিজিএমইএ ভবন। রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকশিল্প প্রতিষ্ঠান টিম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল্লাহ হিল রাকিবের জানাজায় শোকাবহ পরিবেশ। প্রিয় মানুষকে চিরবিদায় জানাতে এসেছেন দীর্ঘদিনের সহকর্মী, বন্ধু, পরিবারের সদস্য ও পরিচিতজন। শোক ও অশ্রুতে তারা রাকিবকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করছিলেন। রাকিবের অসমাপ্ত কাজ ও স্বপ্ন এগিয়ে নেওয়ার অঙ্গীকার করেন সহকর্মীরা।
৯ জুন কানাডায় একটি লেকে ভ্রমণের সময় নৌকাডুবে মারা যান আবদুল্লাহ হিল রাকিব ও তাঁর বন্ধু বাংলাদেশ বিমানের ক্যাপ্টেন মো. সাইফুজ্জামান। কানাডায় বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া মেয়ের সঙ্গে সাইফুজ্জামান ঈদের ছুটি কাটাতে স্ত্রী ও আরেক মেয়েকে নিয়ে গিয়েছিলেন। সেখানে বন্ধু ব্যবসায়ী রাকিব ও তাঁর ছেলের সঙ্গে একটি লেকে ঘুরতে গিয়েছিলেন। অন্টারিও প্রদেশের স্টারজিয়ন লেকে ক্যানুতে (সরু লম্বা ছোট্ট নৌকা) চড়ে ভ্রমণে বের হন। নৌকাটি উল্টে গেলে পানিতে ডুবে প্রাণ হারান দু’জন। বিদেশের মাটিতে একসঙ্গে দুই বন্ধুর মৃত্যু, একই ফ্লাইটে ফেরা, দেশে ফিরে একই কবরস্থানে শেষ শয্যা!
অশ্রুসজল চোখে রাকিবের কানাডাপ্রবাসী মেয়ে লামিয়া তাবাসসুম বলেন, ‘বাবা স্বপ্ন দেখতেন, দেখাতেন। তিনি যেসব স্বপ্ন আমাদের দেখিয়েছেন, যেসব কাজ রেখে গেছেন, আমরা যেন সুন্দরভাবে তা বাস্তবায়ন করতে পারি। পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে কানাডায় গিয়েছিলেন বাবা।’
রাকিব ও সাইফুজ্জামান ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। তাদের মরদেহ বিমানের একই ফ্লাইটে শুক্রবার রাতে ঢাকায় আনা হয়। জানাজা শেষে ঢাকায় বিমানবাহিনীর কবরস্থানে দু’জনকে সমাহিত করা হয়। তাদের সহকর্মী ও বন্ধুরা বলছেন, এর মধ্য দিয়ে অকালে দুটি স্বপ্ন বিদায় নিল।
রাকিবের সহকর্মীরা বলেন, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক পণ্য রপ্তানিকে ১০০ বিলিয়ন বা ১০ হাজার কোটি ডলারে উন্নীত করার স্বপ্ন দেখতেন রাকিব। তারা সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে সর্বাত্মক সহায়তা করবেন বলে জানান।
উত্তরায় জানাজার আগে বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ‘আবদুল্লাহ হিল রাকিবের সঙ্গে বেশ কয়েক বছর কাজ করেছি। সব সময়ই দেখেছি, তিনি নিজের পরিবার, বন্ধু, ব্যবসা ও বিজিএমইএকে সমান অগ্রাধিকার দিয়েছেন। তৈরি পোশাকশিল্প খাতের যে কোনো সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তিনি সামনে চলে যেতেন। রাকিবের দর্শন ছিল– সফলতার মাত্রা নেই। তবে একজন ব্যক্তি কতটা সফল, সেটি তাঁর কর্মযজ্ঞ দেখলে বোঝা যায়।’
বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি এস এম ফজলুল হক বলেন, রাকিব উজ্জ্বল প্রদীপ। স্বপ্ন ছিল অনেক। ঝোড়ো হাওয়ায় সেই প্রদীপ নিভে গেছে। সবাই তাঁর জন্য দোয়া করবেন।
রাকিবের জন্য সবার কাছে দোয়া চান বিজিএমইএর সর্বশেষ নির্বাচনে বিজয়ী রাইজিং ফ্যাশনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহমুদ হাসান খান। স্মৃতিচারণা করে বক্তব্য দেন রাকিবের বড় ভাই আবদুল্লাহ হিল নকীব।
ক্যাপ্টেন সাইফুজ্জামানের সহকর্মীরা জানান, শুক্রবার তাঁর মরদেহ কানাডা থেকে ঢাকায় আনার সময় তাঁর সঙ্গে স্ত্রী, দুই মেয়ে, বোন এবং ভগ্নিপতি ছিলেন। মরদেহ পৌঁছার পর উপস্থিত পাইলটরা সহকর্মীর মরদেহে স্যালুট দেন। এর পর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও পাইলটস অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। পরে মরদেহ ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) মর্গে রাখা হয়। সেখান থেকে মরদেহ নেওয়া হয় তাঁর বনানীর ডিওএইচএসের বাসায়। বেলা ১১টার দিকে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর ঘাঁটি বাশারের কেন্দ্রীয় মসজিদে জানাজা হয়। সাবেক বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার মার্শাল মোহাম্মদ ইনামুল বারীসহ পাইলট, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা এতে অংশ নেন। পরে জোহরের নামাজ শেষে ডিওএইচএস মাঠে একসঙ্গে ক্যাপ্টেন সাইফুজ্জামান ও রাকিবের জানাজা হয়। সাইফুজ্জামানকে বাবা-মায়ের কবরের পাশে দাফন করা হয়। একই কবরস্থানে দাফন করা হয় রাকিবকে। তাঁর বাবা বিমানবাহিনীর সদস্য ছিলেন।