Samakal:
2025-11-03@08:22:09 GMT

সুরক্ষা নিশ্চিত করুন

Published: 25th, February 2025 GMT

সুরক্ষা নিশ্চিত করুন

বিশ্বের অন্যতম এবং দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত, বাংলাদেশের সর্বাধিক আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র কক্সবাজারের পরিবেশ-প্রতিবেশ লইয়া উদ্বেগ দীর্ঘদিন যাবৎ জনমনে বিরাজমান। একদিকে এই জেলার নদী-খাল-জলাশয়, তৎসহিত পর্বত ও বন দখল-দূষণে বিপর্যস্ত। এমনকি সমুদ্রও রক্ষা পাইতেছে না; অন্যদিকে আইনের তোয়াক্কা না করিয়া বিশেষত সমুদ্রের তীর ঘেঁষিয়া যথেচ্ছভাবে হোটেল-মোটেলসহ ক্ষুদ্র-বৃহৎ স্থাপনা গড়িয়া উঠিয়াছে। মঙ্গলবার প্রকাশিত সমকালের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের প্যাঁচার দ্বীপ সৈকতে মারমেইড বিচ রিসোর্ট এমনই এক স্থাপনা। ইহাকে ‘ইকো রিসোর্ট’ বা ‘পরিবেশবান্ধব’ দাবি করা হইলেও খাল ও সরকারি জমি দখল এবং বৃক্ষ কর্তন করিয়া ইহা নির্মিত হইতেছে। বাঁকখালী নদীতে পরিবেশ অধিদপ্তর সৃজিত বন ধ্বংস করিয়াও স্থাপনা নির্মাণ করা হইয়াছে। প্রশাসনের নাসিকার অগ্রভাগে এই প্রকার পরিবেশ-বিধ্বংসী তৎপরতা দুর্ভাগ্যজনক। 

প্রতিবেদনের সহিত প্রকাশিত আলোকচিত্রেও স্পষ্ট দৃশ্যমান, কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের প্রতিবেশগতভাবে সংকটাপন্ন এলাকায় নদী ও বালিয়াড়ি দখল করিয়া রিসোর্টটি নির্মাণ করা হইতেছে। প্যাঁচার দ্বীপ এলাকাটি লাল কাঁকড়ার বিচরণক্ষেত্র এবং কচ্ছপের ডিম পাড়িবার আবাসস্থল হইবার কারণে উচ্চ শব্দ ও আলোকায়ন তথায় নিষিদ্ধ। বাস্তবে প্রায় প্রতি রাত্রিতেই উক্ত এলাকায় অনুরূপ বিবিধ অনুষ্ঠান হইতেছে। যাহার কারণে কচ্ছপের পদক্ষেপ এখন আর তথায় দৃশ্যমান নয়। হারাইয়া গিয়াছে লাল কাঁকড়াও। যাহা বিস্ময়কর, সরকারি ভূমি দখল করিয়া নির্মিত মারমেইড বিচ রিসোর্টের স্থাপনাসমূহ এক সপ্তাহের মধ্যে অপসারণে পরিবেশ অধিদপ্তর নোটিশ দিবার পর দুই সপ্তাহের অধিক সময় অতিক্রান্ত হইলেও পরিস্থিতির কোনো ইতরবিশেষ ঘটে নাই। 

আমরা জানি, কক্সবাজারব্যাপী এই প্রকার পরিবেশ-বিধ্বংসী কর্মকাণ্ড চলমান। তথায় অবৈধভাবে বৃক্ষ নিধন এবং পাহাড় কর্তন হইতেছে। বালি উত্তোলনও থামিয়া নাই। পর্যটন নগরীর এহেন নাজুক পরিস্থিতি হতাশাজনক। অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আকর্ষণেই কক্সবাজারে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ হইতে পর্যটকরা আগমন করেন। তাহাদের আতিথেয়তার সুব্যবস্থাপনা নিঃসন্দেহে জরুরি। কিন্তু পরিবেশ উপেক্ষা করিয়া উন্নয়ন চলিতে পারে না। কক্সবাজারে কোনো প্রকল্প, শিল্পপ্রতিষ্ঠান কিংবা হোটেল-মোটেল স্থাপনের জন্য নূতন করিয়া বৃক্ষ কর্তনের অনুমতি দেওয়া যাইবে না। তথায় পর্বতের সুরক্ষাও জরুরি। কারণ ইতোমধ্যে বৃক্ষ ও পর্বত নিধন করিয়া পরিবেশের যথেষ্ট ক্ষতিসাধন করা হইয়াছে। নূতন করিয়া পরিবেশ-বিধ্বংসী কর্মকাণ্ড চলিতে দেওয়া যাইবে না।

স্মর্তব্য, ২০২৩ সালের ১৮ মে সমকালের তরফ হইতে ‘বিপর্যস্ত কক্সবাজারের পরিবেশ ও প্রতিবেশ: করণীয় নির্ধারণ’ শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করা হইয়াছিল। তথায় বক্তারা কক্সবাজারের পরিবেশের জন্য জরুরি কিছু পরামর্শ দিয়াছিলেন। উক্ত সুপারিশমালা আমলে লইলেও পরিস্থিতির উন্নতি হইত বলিয়া আমাদের বিশ্বাস। কিন্তু তৎকালীন সরকার উহাতে কর্ণপাত করে নাই। অবশ্য উহার কারণও অজ্ঞাত নহে। বিশেষত অতীতের সকল সরকারের সময় দেখা গিয়াছে, পরিবেশ ধ্বংসের হোতারা সাধারণত ক্ষমতাসীনদের আশীর্বাদপুষ্ট। বিগত সরকারও এই ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ছিল না। তবে বর্তমানে যেহেতু শিক্ষার্থী-জনতার আন্দোলনের ফলস্বরূপ নির্দলীয় অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতাসীন, সেহেতু পরিবেশ ধ্বংসকারীদের সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পাইবার অবকাশ নাই। তাই পরিবেশ অধিদপ্তর স্বীয় দায়িত্ব পালনে দ্রুত তৎপর হইবে– এই প্রত্যাশা করাই যায়। আমরা মনে করি, কেবল প্যাঁচার দ্বীপ সৈকতের অবৈধ মারমেইড বিচ রিসোর্ট নহে, কক্সবাজারের পরিবেশ-বিধ্বংসী সকল অপতৎপরতার বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। নামকাওয়াস্তে নহে, এহেন বেআইনি স্থাপনার বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চালাইতে হইবে। নচেৎ জাতীয় অর্থনীতির জন্যও গুরুত্বপূর্ণ শহরটিকে রক্ষা করা কঠিন হইবে। এই লক্ষ্যে প্রশাসনের পক্ষ হইতে কোনো হটলাইন চালু করা যায় কিনা, যথায় পর্বত কর্তন, নদী দখল কিংবা অবৈধভাবে বালি উত্তোলন করিলে দ্রুততার সহিত তথ্য দেওয়া যাইবে। আইনের যথাযথ প্রয়োগও জরুরি। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: পর ব শ ব ধ ব স ন কর য় হইত ছ সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

বগুড়ায় বাড়িতে হাতবোমা তৈরির সময় বিস্ফোরণ, আহত একজন গ্রেপ্তার

বগুড়ার গাবতলী উপজেলার একটি বাড়িতে হাতবোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল রোববার দুপুরে উপজেলার মশিপুর ইউনিয়নের ছোট ইতালি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

বিস্ফোরণে আতাউর রহমান (৩৫) নামের একজন গুরুতর আহত হন। তাঁকে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আতাউর কুমিল্লার মেঘনা উপজেলার রামপ্রসাদের চর গ্রামের বাসিন্দা। পরে তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।।

গতকালের ওই ঘটনার পরপরই ছোট ইতালি গ্রামের বিস্ফোরণস্থল ঘিরে ফেলেন সেনাবাহিনী, পুলিশ, র‍্যাব ও ডিবি সদস্যরা। উদ্ধার করা হয় বেশ কয়েকটি তাজা হাতবোমা। বোম ডিসপোজাল ইউনিটের সদস্যরা এসে উদ্ধার হওয়া হাতবোমাগুলো নিষ্ক্রিয় করেন। পরে বাড়িটি সিলগালা করা হয়।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, কয়েক দিন আগে আতাউর রহমানসহ কুমিল্লা থেকে আসা চার ব্যক্তি ছোট ইতালি গ্রামের মাদক ব্যবসায়ী মুক্তার হোসেনের বাড়িতে ওঠেন। মুক্তারের স্ত্রী নাছিমা আক্তার (৪৫) মাদকের মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে বর্তমানে কারাগারে আছেন। গতকাল দুপুর ১২টার দিকে মুক্তারের বাড়ির ভেতরে একটি শক্তিশালী বিস্ফোরণ ঘটে। এতে আশপাশের লোকজন আতঙ্কিত হন। পরে বাড়ির ভেতর প্রবেশ করে রক্তাক্ত অবস্থায় আতাউর রহমানকে উদ্ধার করা হয়। পুলিশকে খবর দেওয়ার পর মুক্তার হোসেনের তিন সহযোগী দ্রুত পালিয়ে যান। স্থানীয় লোকজন আহত আতাউরকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান।

গাবতলী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সেরাজুল হক বলেন, ঘটনাস্থল থেকে অবিস্ফোরিত হাতবোমা ও কিছু বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়েছে। বাগবাড়ি তদন্তকেন্দ্রের উপপরিদর্শক আবদুল্লাহ আল সাদিক বাদী হয়ে বিস্ফোরক ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করেছেন। মামলায় একজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্যদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারে প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। এ ঘটনার সঙ্গে আগামী নির্বাচনে নাশকতার পরিকল্পনার যোগসূত্র আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ