Samakal:
2025-05-01@07:53:01 GMT

সুরক্ষা নিশ্চিত করুন

Published: 25th, February 2025 GMT

সুরক্ষা নিশ্চিত করুন

বিশ্বের অন্যতম এবং দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত, বাংলাদেশের সর্বাধিক আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র কক্সবাজারের পরিবেশ-প্রতিবেশ লইয়া উদ্বেগ দীর্ঘদিন যাবৎ জনমনে বিরাজমান। একদিকে এই জেলার নদী-খাল-জলাশয়, তৎসহিত পর্বত ও বন দখল-দূষণে বিপর্যস্ত। এমনকি সমুদ্রও রক্ষা পাইতেছে না; অন্যদিকে আইনের তোয়াক্কা না করিয়া বিশেষত সমুদ্রের তীর ঘেঁষিয়া যথেচ্ছভাবে হোটেল-মোটেলসহ ক্ষুদ্র-বৃহৎ স্থাপনা গড়িয়া উঠিয়াছে। মঙ্গলবার প্রকাশিত সমকালের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের প্যাঁচার দ্বীপ সৈকতে মারমেইড বিচ রিসোর্ট এমনই এক স্থাপনা। ইহাকে ‘ইকো রিসোর্ট’ বা ‘পরিবেশবান্ধব’ দাবি করা হইলেও খাল ও সরকারি জমি দখল এবং বৃক্ষ কর্তন করিয়া ইহা নির্মিত হইতেছে। বাঁকখালী নদীতে পরিবেশ অধিদপ্তর সৃজিত বন ধ্বংস করিয়াও স্থাপনা নির্মাণ করা হইয়াছে। প্রশাসনের নাসিকার অগ্রভাগে এই প্রকার পরিবেশ-বিধ্বংসী তৎপরতা দুর্ভাগ্যজনক। 

প্রতিবেদনের সহিত প্রকাশিত আলোকচিত্রেও স্পষ্ট দৃশ্যমান, কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের প্রতিবেশগতভাবে সংকটাপন্ন এলাকায় নদী ও বালিয়াড়ি দখল করিয়া রিসোর্টটি নির্মাণ করা হইতেছে। প্যাঁচার দ্বীপ এলাকাটি লাল কাঁকড়ার বিচরণক্ষেত্র এবং কচ্ছপের ডিম পাড়িবার আবাসস্থল হইবার কারণে উচ্চ শব্দ ও আলোকায়ন তথায় নিষিদ্ধ। বাস্তবে প্রায় প্রতি রাত্রিতেই উক্ত এলাকায় অনুরূপ বিবিধ অনুষ্ঠান হইতেছে। যাহার কারণে কচ্ছপের পদক্ষেপ এখন আর তথায় দৃশ্যমান নয়। হারাইয়া গিয়াছে লাল কাঁকড়াও। যাহা বিস্ময়কর, সরকারি ভূমি দখল করিয়া নির্মিত মারমেইড বিচ রিসোর্টের স্থাপনাসমূহ এক সপ্তাহের মধ্যে অপসারণে পরিবেশ অধিদপ্তর নোটিশ দিবার পর দুই সপ্তাহের অধিক সময় অতিক্রান্ত হইলেও পরিস্থিতির কোনো ইতরবিশেষ ঘটে নাই। 

আমরা জানি, কক্সবাজারব্যাপী এই প্রকার পরিবেশ-বিধ্বংসী কর্মকাণ্ড চলমান। তথায় অবৈধভাবে বৃক্ষ নিধন এবং পাহাড় কর্তন হইতেছে। বালি উত্তোলনও থামিয়া নাই। পর্যটন নগরীর এহেন নাজুক পরিস্থিতি হতাশাজনক। অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আকর্ষণেই কক্সবাজারে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ হইতে পর্যটকরা আগমন করেন। তাহাদের আতিথেয়তার সুব্যবস্থাপনা নিঃসন্দেহে জরুরি। কিন্তু পরিবেশ উপেক্ষা করিয়া উন্নয়ন চলিতে পারে না। কক্সবাজারে কোনো প্রকল্প, শিল্পপ্রতিষ্ঠান কিংবা হোটেল-মোটেল স্থাপনের জন্য নূতন করিয়া বৃক্ষ কর্তনের অনুমতি দেওয়া যাইবে না। তথায় পর্বতের সুরক্ষাও জরুরি। কারণ ইতোমধ্যে বৃক্ষ ও পর্বত নিধন করিয়া পরিবেশের যথেষ্ট ক্ষতিসাধন করা হইয়াছে। নূতন করিয়া পরিবেশ-বিধ্বংসী কর্মকাণ্ড চলিতে দেওয়া যাইবে না।

স্মর্তব্য, ২০২৩ সালের ১৮ মে সমকালের তরফ হইতে ‘বিপর্যস্ত কক্সবাজারের পরিবেশ ও প্রতিবেশ: করণীয় নির্ধারণ’ শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করা হইয়াছিল। তথায় বক্তারা কক্সবাজারের পরিবেশের জন্য জরুরি কিছু পরামর্শ দিয়াছিলেন। উক্ত সুপারিশমালা আমলে লইলেও পরিস্থিতির উন্নতি হইত বলিয়া আমাদের বিশ্বাস। কিন্তু তৎকালীন সরকার উহাতে কর্ণপাত করে নাই। অবশ্য উহার কারণও অজ্ঞাত নহে। বিশেষত অতীতের সকল সরকারের সময় দেখা গিয়াছে, পরিবেশ ধ্বংসের হোতারা সাধারণত ক্ষমতাসীনদের আশীর্বাদপুষ্ট। বিগত সরকারও এই ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ছিল না। তবে বর্তমানে যেহেতু শিক্ষার্থী-জনতার আন্দোলনের ফলস্বরূপ নির্দলীয় অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতাসীন, সেহেতু পরিবেশ ধ্বংসকারীদের সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পাইবার অবকাশ নাই। তাই পরিবেশ অধিদপ্তর স্বীয় দায়িত্ব পালনে দ্রুত তৎপর হইবে– এই প্রত্যাশা করাই যায়। আমরা মনে করি, কেবল প্যাঁচার দ্বীপ সৈকতের অবৈধ মারমেইড বিচ রিসোর্ট নহে, কক্সবাজারের পরিবেশ-বিধ্বংসী সকল অপতৎপরতার বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। নামকাওয়াস্তে নহে, এহেন বেআইনি স্থাপনার বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চালাইতে হইবে। নচেৎ জাতীয় অর্থনীতির জন্যও গুরুত্বপূর্ণ শহরটিকে রক্ষা করা কঠিন হইবে। এই লক্ষ্যে প্রশাসনের পক্ষ হইতে কোনো হটলাইন চালু করা যায় কিনা, যথায় পর্বত কর্তন, নদী দখল কিংবা অবৈধভাবে বালি উত্তোলন করিলে দ্রুততার সহিত তথ্য দেওয়া যাইবে। আইনের যথাযথ প্রয়োগও জরুরি। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: পর ব শ ব ধ ব স ন কর য় হইত ছ সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

কালিদাসের হাত ধরে যে জামুর্কীর সন্দেশের যাত্রা, তার জিআই স্বীকৃতিতে খুশি সবাই

দশম শ্রেণিতে পড়ার সময় বিয়ে করেছিলেন টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার জামুর্কী গ্রামের প্রয়াত কালিদাস চন্দ্র সাহা। এ জন্য তাঁর বাবা মিষ্টি ব্যবসায়ী প্রয়াত মদনমোহন সাহা তাঁকে সংসার থেকে আলাদা করে দেন। এরপর মিষ্টির দোকানের আশপাশে বসে থাকতে থাকতে একসময় তিনি সন্দেশ বানাতে শুরু করেন। সেটা ১৯৪০ সালের কথা।

একসময় কালিদাসের বানানো এই সন্দেশ জামুর্কীর সন্দেশ হিসেবে লোকের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে। সেই সন্দেশ এবার ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের স্বীকৃতি পেয়েছে। গতকাল বুধবার টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক শরীফা হকের হাতে জামুর্কীর সন্দেশের জিআই নিবন্ধন সনদ তুলে দেন শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান ও সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।

আজ বৃহস্পতিবার সকালে জামুর্কীতে গিয়ে দেখা গেল, ‘কালিদাস মিষ্টান্ন ভান্ডার’ নামের চৌচালা টিনের ঘর। পুরোনো দোকান। বাড়তি কোনো চাকচিক্য নেই। সাদামাটা কাচঘেরা তাকে সাজিয়ে রাখা হয়েছে সন্দেশ। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেচাকেনা বাড়ছে।

স্থানীয় কয়েকজন বলেন, কালিদাস ১৯৮২ সালে মারা যান। তারপর তাঁর বড় ছেলে সমর চন্দ্র সাহা ব্যবসার হাল ধরেন। আরেক ছেলে গৌতম সাহা লন্ডনপ্রবাসী।

টাঙ্গাইলের ঘাটাইল সদরের একটি উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. আসাদুজ্জামান আত্মীয় বাড়ি যাচ্ছিলেন। পথে বিরতি দিয়ে সন্দেশ কিনতে ওই দোকানে আসেন। তিনি বলেন, ‘আগেও এই দোকানের সন্দেশ খেয়েছি। আজও নিচ্ছি। এর গুণগত মান সব সময় ভালো।’

জিআই পণ্যের স্বীকৃতিতে স্থানীয় লোকজনও খুশি। জামুর্কী গ্রামের ফিরোজ আলম মোক্তার বলেন, এই সন্দেশের স্বীকৃতি আরও আগেই পাওয়া উচিত ছিল। এই সন্দেশের মান যাতে বজায় থাকে, এ জন্য মালিকদের ইচ্ছা থাকতে হবে।

বর্তমান মালিক সমর চন্দ্র সাহাকে পাওয়া গেল জামুর্কী কাঁচাবাজারে। এ সময় বাজারের ব্যবসায়ীরা তাঁকে অভিনন্দন জানাচ্ছিলেন। বাজারের মাতৃভান্ডারের মালিক প্রকাশ বাকালী বলেন, ‘বাবার মুখে যেমন শুনেছি, সন্দেশ এখনো তেমনই আছে। এটা আমাদের গর্ব। আমার বুক ভরে গেছে।’

সমর চন্দ্র সাহা বলেন, বাবার মৃত্যুর পর ছাত্রাবস্থায় তিনি দোকানে বসতে শুরু করেন। সেই থেকে এখনো আছেন। সন্দেশ খেয়ে মানুষ প্রশংসা করেন। ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জামুর্কী বাসস্ট্যান্ডে এক অনুষ্ঠানে এসে দোকানটিতে এসেছিলেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এসেছেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদ এসেছেন। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মাঝেমধ্যে আসেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এক মাস আগেও এসেছিলেন। ২০১৩ সালে ভারতের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি মির্জাপুরের কুমুদিনী হাসপাতাল পরিদর্শনে এলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁকে এই সন্দেশ দিয়ে আপ্যায়ন করে। তাঁর কথা, ‘ট্যাকাপয়সা কিছু না। এই স্বীকৃতি বিশাল ব্যাপার। আমরা মান ভালো করি। কাস্টমাররা আমাদের পছন্দ করেন। সন্দেশ কিনতে এসে দোকানে বসে গল্প করেন। আমার খুবই ভালো লাগে। খুশির এই সময় আমার বাবা-দাদাকে খুব মনে পড়ছে। আমি তাঁদের স্মরণ করি।’

দোকান দেখভালের দায়িত্বে থাকা প্রেমা সাহা বলেন, ‘আমি ৪০ বছর ধরে দোকানে আছি। কাস্টমারকে আমরা আপন মনে কইরা সেবাটা দেই। আমরা জিনিস ভালা বানাই। এ জন্য সরকারও স্বীকৃতি দিছে।’

মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ বি এম আরিফুল ইসলাম বলেন, সন্দেশের জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পেতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নানাভাবে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। এ স্বীকৃতি মির্জাপুরবাসীর।

দোকানটিতে প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত সন্দেশ বিক্রি হয়। চিনি ও গুড়ের তৈরি দুই ধরনের সন্দেশের বর্তমান বাজারমূল্য প্রতি কেজি ৮০০ টাকা। দুধ থেকে ছানা তৈরির পর এলাচি, চিনি অথবা গুড় দিয়ে মিশ্রণ তৈরি করে সন্দেশ বানানো হয়। প্রায় প্রতি ঘণ্টায় চুলা থেকে একটি করে বড় কড়াই নামানো হয়। একটি কড়াই থেকে প্রায় ৩০ কেজি সন্দেশ বানানো যায়। দোকানটিতে সন্দেশ ছাড়াও চমচম, রসগোল্লা, রসমালাই, দই ও ঘি বিক্রি করা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ