ইসরায়েলের সেনা হেফাজতে রিমান্ড চলাকালে দেশটির সেনারা তাঁর শরীরে অ্যাসিডসহ অন্যান্য দাহ্য রাসায়নিক পদার্থ ছুড়ে নির্যাতন করেছেন বলে জানিয়েছেন মুক্তি পাওয়া এক ফিলিস্তিনি বন্দী।

ইসরায়েলি সেনাদের এমন নৃশংসতার বর্ণনা দেওয়া এই ফিলিস্তিনি হলেন মোহাম্মদ আবু তাবিলা। ২০২৩ সালের অক্টোবরে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের আগ্রাসন শুরুর পর আবু তাবিলাকে অপহরণ করা হয়েছিল।

আবু তাবিলা বলেন, তাঁকে ভীষণভাবে মারধরও করা হয়েছে। তা থেকে বাদ যায়নি তাঁর চোখও। ইসরায়েলি সেনা হেফাজতে নিজের নির্মম অভিজ্ঞতার কথা স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে তুলে ধরার সময় এসব কথা বলেন তিনি।

আবু তাবিলা আরও বলেন, গাজা সিটির সিভিল অ্যাফেয়ার্স অফিসের কাছের একটি এলাকা থেকে ইসরায়েলি সৈন্যরা তাঁকে অপহরণ করে আল-ইয়াজ্জি পরিবারের একটি বাড়িতে নিয়ে যান।

অ্যাসিড ও অন্যান্য রাসায়নিকের প্রভাবে তাঁর আঘাত পাওয়া চোখ আরও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কাপড় দিয়ে তাঁর চোখ শক্ত করে বাঁধতেন একজন সেনা। এতে রাসায়নিকের প্রভাবে আক্রান্ত স্থানে জ্বালা-যন্ত্রণা চলতেই থাকত।

এ বাড়িতে অ্যাসিড, ক্লোরিন, থালাবাটি পরিষ্কার করার কাজে ব্যবহৃত তরল পদার্থ, কাপড় ধোলাইয়ে ব্যবহার করা রাসায়নিক দ্রব্য, সাবান ও এয়ার ফ্রেশনার রাখা ছিল। সেনারা এসব দাহ্য রাসায়নিকে তাঁর শরীর ঝলসে দেন বলে জানান আবু তাবিলা।

আবু তাবিলা বলেন, শরীর ঝলসে দেওয়ার পর সেনারা তাঁর অবস্থা দেখে অধিকৃত পশ্চিম তীরে পাঠিয়ে দেন তাঁকে। নিষ্ঠুর নির্যাতনে পিঠ, হাত, মুখসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে তৈরি হওয়া ক্ষতচিহ্ন সাংবাদিকদের দেখান তিনি।

‘আমার চোখও বাদ যায়নি (নির্যাতন থেকে)। সেনাদের একজন শক্ত কিছু দিয়ে মোড়ানো দস্তানা হাতে আমার চোখে ঘুষি মারতেন। মারধরের এক পর্যায়ে পড়ে যেতাম মাটিতে’, বলেন এই ফিলিস্তিনি।

আবু তাবিলা বলেন, অ্যাসিড ও অন্যান্য রাসায়নিকের প্রভাবে তাঁর আঘাত পাওয়া চোখ আরও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তিনি আরও বলেন, কাপড় দিয়ে তাঁর চোখ শক্ত করে বাঁধতেন একজন সেনা। এতে রাসায়নিকের প্রভাবে আক্রান্ত স্থানে জ্বালা-যন্ত্রণা চলতেই থাকত।

আরও পড়ুনইসরায়েলের কারাগার: কেউ বেরোচ্ছেন নির্যাতনের ক্ষত নিয়ে, কেউ ধর্ষণের শিকার বা মানসিক রোগী হয়ে০১ জানুয়ারি ২০২৫

ওই বাড়িতে ছাড়াও অধিকৃত পশ্চিম তীরের বিভিন্ন স্থানে তাঁর ওপর নির্যাতন চালানো হতো বলে জানান আবু তাবিলা। নির্যাতনের ধরনগুলোর মধ্যে ছিল—মারধর থেকে শুরু করে অপমান ও ঠাট্টা-বিদ্রূপ। ক্ষুধা ও কনকনে ঠান্ডায় বসে থাকার সাজা তো ছিলই, জানান তাবিলা।

আমার চোখও বাদ যায়নি (নির্যাতন থেকে)। সেনাদের একজন শক্ত কিছু দিয়ে মোড়ানো দস্তানা হাতে আমার চোখে ঘুষি মারতেন। মারধরের এক পর্যায়ে পড়ে যেতাম মাটিতে।মোহাম্মদ আবু তাবিলা, সাবেক ফিলিস্তিনি বন্দী

এই ফিলিস্তিনি বলেন, সেনা হেফাজতে থাকার সময় তাঁকে কোনো জামাকাপড় দেওয়া হয়নি। ঠান্ডা থেকে বাঁচতে দেওয়া হয়নি কোনো কম্বলও। এভাবে দেড় মাস বন্দী রেখে আহত অবস্থায় আল-রামলা হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয় তাঁকে।

দু-তিন সপ্তাহ হাসপাতালে রেখে সেখান থেকে কুখ্যাত ওফার সামরিক কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয় আবু তাবিলাকে।

আরও পড়ুনইসরায়েলের কারাগারে নির্যাতনের কথা বললেন মুক্তি পাওয়া ফিলিস্তিনিরা০২ ডিসেম্বর ২০২৩ইসরায়েলি কারাগারে ব্যাপক নির্যাতন

ইসরায়েলের কারাগারে আটক থাকা ফিলিস্তিনি ও মুক্তিপ্রাপ্ত বন্দীদের সাক্ষ্যে দেশটির কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ইতিপূর্বেও ব্যাপক বন্দী নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে।

নির্যাতনের কিছু ধরনের মধ্যে রয়েছে দিনে ২৪ ঘণ্টা ও সপ্তাহের ৭ দিনই হাতকড়া পরিয়ে ও শিকলবন্দি করে রাখা। এমনকি ঘুম, খাওয়া ও শৌচাগারে যাওয়ার সময়ও বাঁধন খুলে না দেওয়া।

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে ইসরায়েলের কট্টর-ডান রাজনীতিবিদ ইতামার বেন গেভির একটি ভিডিও পোস্ট করেন। এতে নেগেভ মরু এলাকায় অবস্থিত কেজিয়ত কারাগারে ফিলিস্তিনি বন্দীদের ওপর নির্যাতন চালাতে ও অপমানজনক আচরণ করতে দেখা যায়।

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে ইসরায়েলের কট্টর-ডান রাজনীতিবিদ ইতামার বেন গেভির একটি ভিডিও পোস্ট করেন। এতে নেগেভ মরু এলাকায় অবস্থিত কেজিয়ত কারাগারে ফিলিস্তিনি বন্দীদের ওপর নির্যাতন চালাতে ও অপমানজনক আচরণ করতে দেখা যায়।

ভিডিওর একটি দৃশ্যে এক বন্দীকে হাঁটু গেঁড়ে বসে কারাগারের দেয়ালে রং করতে দেখা যায়। এ সময় তাঁর দিকে অস্ত্র তাক করে ছিলেন একজন ইসরায়েলি সেনা।

বেন গেভির এ দৃশ্য নিয়ে এক্সে লেখেন, ‘কারাগারের দেয়ালটিতে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধের স্লোগান লেখা ছিল। সেই লেখা এভাবে রং করে ঢাকতে বাধ্য করা হয় ওই বন্দীকে।’

আরও পড়ুননিউইয়র্ক টাইমসের তদন্তে ফিলিস্তিনি বন্দী নির্যাতনের যে রোমহর্ষ চিত্র উঠে এল১০ জুন ২০২৪.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল র ক আম র চ খ র একট অবস থ

এছাড়াও পড়ুন:

সংগীতশিল্পী দীপ মারা গেছেন

র‍াস্টফ ব্যান্ডের ভোকাল আহরার মাসুদ মারা গেছেন। সেমাবার (১৫ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। ভক্তদের কাছে দীপ নামে পরিচিত ছিলেন আহরার মাসুদ। 

মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সকাল ৮টায় ব্যান্ডের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে এ তথ্য জানানো হয়। তবে এ শিল্পীর মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে কিছু জানা যায়নি। 

আরো পড়ুন:

৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে

সিজেএফবি পারফরম্যান্স অ্যাওয়ার্ড ঘোষণা

রাস্টফ ব্যান্ডের ফেসবুক পেজে দীপের মৃত্যুর খবর জানিয়ে লেখা হয়, “এমন এক বেদনাদায়ক মুহূর্তে সঠিক শব্দ খুঁজে পাওয়া বা কোনো শব্দ খুঁজে পাওয়া—প্রায় অসম্ভব। প্রিয় ভোকালিস্ট, বন্ধু ও সহযাত্রী আহারার ‘দীপ’ মাসুদের মৃত্যুসংবাদ আমাদের স্তম্ভিত করেছে। আমরা শোকে ভেঙে পড়েছি, এখনো অবিশ্বাসের ভেতর ডুবে আছি। গত রাতেই তিনি আমাদের ছেড়ে চিরবিদায় নিয়েছেন।” 

দীপের শূন্যতা ব্যাখ্যা করে লেখা হয়, “তার পরিবার, বন্ধু ও প্রিয়জনদের প্রতি আমাদের অন্তরের সমবেদনা ও প্রার্থনা। আপনাদের মতো আমরাও এই অপূরণীয় ক্ষতি বোঝার চেষ্টা করছি, চেষ্টা করছি দীপের অসাধারণ প্রতিভাকে সম্মান জানাতে এবং তার চেয়েও বড় কথা—মানুষ হিসেবে তিনি আমাদের কাছে যে অমূল্য ছিলেন, তাকে স্মরণ করতে। এই কঠিন সময়ে সবার কাছে অনুরোধ, দয়া করে পরিবার ও কাছের মানুষদের ব্যক্তিগত পরিসরকে সম্মান করুন এবং তার আত্মার শান্তির জন্য প্রার্থনা করুন। শান্তিতে ঘুমাও, দীপ। তোমার শূন্যতা চিরকাল বেদনাময় হয়ে থাকবে।” 

তরুণদের কাছে জনপ্রিয় আরেকটি ব্যান্ড পাওয়ারসার্চও দীপের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে। ব্যান্ডের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে লেখা হয়েছে, “স্মরণ করছি আহরার মাসুদ দীপকে। কিছুক্ষণ আগে আমরা হারিয়েছি আমাদের প্রিয় ভাই, ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং এক সত্যিকারের শিল্পীকে। এক্লিপস, কার্ল, ক্যালিপসো ও সবশেষ রাস্টফ ব্যান্ডের অবিস্মরণীয় কণ্ঠ আহরার মাসুদ দীপ আমাদের মাঝে আর নেই। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।” 

পাওয়ারসার্চ আরো লেখেন, “আহরার মাসুদ দীপ শুধু একজন ভোকালিস্টই ছিলেন না, তিনি ছিলেন শক্তি, সৃজনশীলতা আর আবেগের প্রতীক, যিনি তার চারপাশের সবাইকে অনুপ্রাণিত করেছেন; একই সাথে তার অত্যন্ত নমনীয় ব্যবহার, যা সবাইকে তাঁর শুভাকাঙ্ক্ষীই করে ফেলত! শান্তিতে থাকো ভাই, তুমি সব সময় আমাদের গল্পের অংশ হয়ে থাকবে।”

ঢাকা/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভোররাতে রণক্ষেত্র: নরসিংদীতে নিহত ১, গুলিবিদ্ধ ৫
  • গাজায় ২৬ হাজার শিশু তীব্র অপুষ্টির শিকার: জাতিসংঘ
  • গ্রাহকের কাছে পেয়ারা খেতে চায় জনতা ব্যাংকের কর্মকর্তা
  • গল্পটা এই ক্লাসরুম থেকেই শুরু: ইরফান সাজ্জাদ
  • রাশিয়ায় এক বাঙালি বিপ্লবীর খোঁজে
  • আপনার এত সাহস হয় কী করে, সাংবাদিককে নায়িকা
  • দুবাইয়ে বিকৃত যৌন ব্যবসা চক্রের প্রধানকে চিহ্নিত করল বিবিসির এক অনুসন্ধান
  • মহানবী (সা.)–এর ইন্তেকালের পরে শাসন নিয়ে যা ঘটেছে
  • কুবিতে নতুন ১৮ বিভাগ ও ৪ ইনস্টিটিউট চালুর সুপারিশ
  • সংগীতশিল্পী দীপ মারা গেছেন