শিক্ষক-জনবল সংকটে ব্যাহত প্রাথমিক শিক্ষা
Published: 27th, February 2025 GMT
হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থায় ভাটা চলছে। পর্যাপ্ত শিক্ষক না থাকায় উপজেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে ব্যাহত হচ্ছে পাঠদান। এ ছাড়া জনবল সংকটের এসব প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক কার্যক্রমেও সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে।
শুধু প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে নয়, জনবল সংকটের প্রভাব দৃশ্যমান উপজেলা শিক্ষা অফিসেও। যার কারণে প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম তদারকি ও পর্যবেক্ষণে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
আজমিরীগঞ্জের পাঁচটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনায় রয়েছে ৬৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এসব বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় ১৭ হাজার। বিদ্যালয়গুলোতে সহকারী শিক্ষকের ৩৩৬টি এবং প্রধান শিক্ষকের পদ ৬৫টি। এর মাঝে কর্মরত আছেন ৩১৩ জন সহকারী শিক্ষক এবং ৪৬ জন প্রধান শিক্ষক। দুটি পদ মিলিয়ে ঘাটতি ৪৫ জন শিক্ষকের।
এদিকে উপজেলা শিক্ষা অফিসে চারজন সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তার পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন মাত্র একজন। এ ছাড়া হিসাব সহকারী, কম্পিউটার অপারেটর, উচ্চমান সহকারী ও অফিস সহায়কের পদগুলোও দীর্ঘদিন ধরে শূন্য। উপজেলার একাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয় ঘুরে দেখা যায়, পাঠদানের নির্ধারিত সময়ে শিক্ষার্থীরা হৈহুল্লোড় করছে। শ্রেণিকক্ষে নেই তাদের অনেকেই। এমন পরিস্থিতি নিয়ে নাখোশ অভিভাবকরা।
অভিভাবক আব্দুল কাইয়ুম জানান, শিক্ষা অফিসে জনবল সংকটের কারণে বিদ্যালয়ে পড়াশোনার তদারকি হচ্ছে না। আর শিক্ষক সংকটের কারণে বিদ্যালয়ে হচ্ছে না সঠিকভাবে পাঠদান। একে তো এই অফিসের সব কাজ চলে ধীরগতিতে, তার ওপর শিশুদের পাঠদানে এমন অবস্থা নিয়ে সবাই উদ্বিগ্ন। এ জন্য অনেকেই বেসরকারি কিন্ডারগার্টেনে নিয়ে যান সন্তানদের।
রাহিমুল ও মনিরুল মিয়া জানান, শিক্ষক কম থাকার কারণে পর্যাপ্ত ক্লাস হচ্ছে না। যে কারণে শিক্ষার্থীরা পাঠদান থেকে বঞ্চিত। অবসর পেয়ে তারা হইচই করে সময় কাটায়। শিক্ষার্থীরা শ্রেণিশিক্ষক না পেলে এমন করাটা স্বাভাবিক।
সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা (এটিও) হাসিবুল ইসলাম বলেন, প্রতিটি পদে জনবল থাকলে প্রতি মাসে ৪০টিরও বেশি বিদ্যালয় পরিদর্শন করা যায়। জনবল সংকটের কারণে এখন ১৫টি বিদ্যালয়ের বেশি পরিদর্শন করা যাচ্ছে না।
এ বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শেখ মো.
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুনজর কখন পড়বে
চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার নোয়াপাড়া ইউনিয়নে দ্বিতল ভবনবিশিষ্ট একটি মা ও শিশু কল্যাণকেন্দ্রে ওষুধ নেই, চিকিৎসক নেই, বিদ্যুৎ–সংযোগ নেই। ফলে তেমন একটা রোগীও নেই। এই ‘নাই নাই’ হাসপাতালটির নাম মাস্টারদা সূর্য সেন মা ও শিশু কল্যাণকেন্দ্র। এভাবে কি একটা হাসপাতাল চলতে পারে? প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে যাওয়ার এমন নমুনা আমাদের হতাশ করে। দেশজুড়ে এ রকম আরও চিত্র আমরা দেখতে পাই, যা আমাদের স্বাস্থ্য খাত নিয়ে ইতিবাচক কোনো বার্তা দেয় না।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, ১৯৭৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এবং ২০০৩ সালে চালু হওয়া এই ১০ শয্যার হাসপাতালটির মূল সমস্যা জনবলসংকট। ১৬টি পদের ১টিতেও স্থায়ী জনবল পদায়ন করা হয়নি। অন্য হাসপাতাল থেকে প্রেষণে এসে মাত্র তিনজন কর্মচারী (একজন উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার, একজন মিডওয়াইফ ও একজন আয়া) সপ্তাহে কয়েক দিন করে দায়িত্ব পালন করেন। এটি একটি জরুরি প্রসূতিসেবাকেন্দ্র, যা ২৪ ঘণ্টা চালু থাকার কথা। কিন্তু বিদ্যুৎ নেই, ডাক্তার নেই এবং প্রয়োজনীয় জনবলের অভাবে এর কার্যক্রম এখন প্রায় স্থবির।
হাসপাতালের বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকায় প্রায় তিন মাস ধরে বিদ্যুৎ–সংযোগ বিচ্ছিন্ন। ফলে পানীয় জলের ব্যবস্থাও নেই। বিনা মূল্যের ওষুধ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে প্রায় ছয় মাস ধরে। এ পরিস্থিতিতে একজন রোগী কীভাবে এখানে স্বাস্থ্যসেবা নিতে আসবেন? যেখানে হাসপাতালের বাইরের সাইনবোর্ডে জরুরি প্রসূতিসেবার জন্য ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকার কথা লেখা, সেখানে মূল ফটকে তালা ঝোলানো। এটি জনগণের সঙ্গে একধরনের প্রতারণা। হাসপাতালটি চালু না থাকায় মা ও শিশুদের স্বাস্থ্যসেবার জন্য স্থানীয় বেসরকারি হাসপাতাল বা চট্টগ্রাম শহরে দৌড়াদৌড়ি করতে হয়। এতে সময় ও অর্থ—দুটোরই অপচয় তো বটেই, চরম ভোগান্তিরও শিকার হতে হয় মানুষকে।
যে মিডওয়াইফরা এখানে কাজ করছেন, তাঁরা জানান, এখন মাসে মাত্র চার-পাঁচজন প্রসূতি সেবা নিতে আসেন, যেখানে আগে শতাধিক প্রসূতি সেবা পেতেন। নিরাপত্তা প্রহরীরা দুই বছর ধরে বেতন পাচ্ছেন না। তবু নিয়মিত বেতন পাওয়ার আশায় তাঁরা এখনো কাজ করে যাচ্ছেন। এ অসহনীয় দুর্ভোগের কারণ হলো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের চরম উদাসীনতা। উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা জানান, তাঁরা বারবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জনবলসংকটের কথা জানিয়েছেন, কিন্তু কোনো সুরাহা হয়নি।
একটি মা ও শিশু কল্যাণকেন্দ্রের স্বাভাবিক কার্যক্রম চালু রাখতে কেন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বারবার ধরনা দিতে হবে? জনবল নিয়োগ, কর্মচারীদের বকেয়া বেতন পরিশোধ, বিদ্যুতের ব্যবস্থা কার্যকর করা—সব ধরনের সংকট দূর করতে হাসপাতালটির দিকে আন্তরিক মনোযোগ দেওয়া হবে, সেটিই আমাদের প্রত্যাশা।