Samakal:
2025-08-01@20:11:26 GMT

চালচিত্রের অপূর্ব ও অন্যান্য

Published: 27th, February 2025 GMT

চালচিত্রের অপূর্ব ও অন্যান্য

‘অভিনয়ের সময় অপূর্ব ভাইয়ের চোখ কথা বলে। অভিনয়ের সময় তাঁর চোখে তাকিয়ে অভিনয় করা আমার জন্য খুব কঠিন হয়ে যায়।’ এক সাক্ষাৎকারে অভিনেতা অপূর্বর চোখ নিয়ে এমন মন্তব্য করেছিলেন তাসনিয়া ফারিণ। অপূর্বর চোখ ও তাঁর স্টাইল নিয়ে মন্তব্য নিলে এমন শ-খানেক মন্তব্য মিলবে তাঁর সহকর্মীদের থেকেই। তাঁর ব্যক্তিত্ব, মধ্যবিত্ত পরিবারের স্ট্রাগল করা ছেলের চরিত্রে তাঁর রূপদান, কথা বলার স্টাইল– সবই মুগ্ধকর সবার জন্য। 

বলিউডে আমির খানকে বলা হয় ‘মিস্টার পারফেকশনিস্ট’। তাঁর নাম এলেই অবধারিতভাবে জুড়ে দেওয়া হয় এ তকমা। অনেকের মতে, তিনি সবকিছুতেই পারফেক্ট, সবকিছু বেশ নিখুঁতভাবে করে থাকেন। ঢাকাই শোবিজের অপূর্বর বেলায়ও মধ্যবিত্ত পরিবারের চিরচেনা গল্পে, জীবনসংগ্রামের বিভিন্ন পোড় খাওয়া চরিত্রে ‘মিস্টার পারফেকশনিস্ট’ হিসেবে অপূর্বকে বিশেষভাবে বিশেষায়িত করাই যায়; এবং করছেনও অনেকে। 

শোবিজে ১৮ বছরের যাত্রা অপূর্বর। মানে ১৮ বসন্ত! এ ১৮ বছরের কত রকম চরিত্রে নিজেকে রূপায়ণ করেছেন, তার হিসাব অভিনেতারও নেই। তবে সর্বশেষ মুক্তি পাওয়া তাঁর ‘চালচিত্র’ সিনেমাটির চরিত্র নিয়ে অকপটেই বলতে পারলেন। এ ছবিটির মাধ্যমেই দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশের সিনেমায় দেখা গেল তাঁকে। ছবি মুক্তির আগে এক সাক্ষাৎকারে অপূর্বর মধ্যে বলিউড তারকা শাহরুখ খানের চার্ম খুঁজে পাওয়ার কথা জানিয়েছিলেন চালচিত্র সিনেমার নির্মাতা ডি গুপ্ত। 

ভারতীয় গণমাধ্যম ‘অন্য সময় প্রাইম’ নির্মাতা বলেন, ‘অপূর্বর মধ্যে শাহরুখের একটা চার্ম আছে। আর তাই অতি নাটকীয়ভাবে তাঁকে ব্যবহার করতে চেয়েছি। আগে ওর অনেক নাটক আমি দেখেছি। সেগুলো দেখেই মনে হয়েছে ওর মধ্যে শাহরুখের যে চার্মটা আছে, সেটাই ধরতে হবে।’

এই অ্যাকশন ধারার চালচিত্র সিনেমায় অপূর্ব ছাড়া ছিলেন টোটা রায়চৌধুরী, অনির্বাণ চক্রবর্তী, শান্তনু মাহেশ্বরী, ইন্দ্রজিৎ বসু ও রাইমা সেনের মতো বাঘা বাঘা তারকারা। এই তারকারাও অপূর্বর প্রশংসা করতে ছাড়েননি। অভিনেতা টোটা রায়চৌধুরী তো অকপটে বলেই দিলেন, ‘সে (অপূর্ব) এত বড় তারকা শুটিংয়ে সেটা বুঝতে দেয়নি। কলকাতায় তাঁর ভক্ত দেখে বিস্মিত আমরা।’

সিনেমাটি মুক্তির পর পশ্চিমবঙ্গে অপূর্বর প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিলেন সবাই। সেই প্রশংসার রেশ কাটতে না কাটতেই ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশে মুক্তি পায় এক ঘণ্টা ৩০ মিনিটের বিশেষ নাটক ‘মন দুয়ারী’। অপূর্বকে মুখ্য ভূমিকায় নিয়ে নাটকটি নির্মাণ করেছেন জাকারিয়া সৌখিন। মুক্তির চার দিনের মাথায় ১০ মিলিয়ন ভিউর ঘর অতিক্রম করেছে। এককথায়, নাটকটি দেখতে যেন হুমড়ি খেয়ে পড়েছিলেন দর্শক। 

মন্তব্যের ঘরে লিখেছেন, এটি ইউটিউবে না দিয়ে সিনেমা হলে মুক্তি দিলে কী ক্ষতি হতো! বেশির ভাগ দর্শকই নাটকটিকে বড় ক্যানভাসের সিনেমা বলতে চাইছেন। যেটি দর্শকদের বাংলা সিনেমার স্বর্ণালি সময়ে নিয়ে গেছে ‘মন দুয়ারী’র পারিবারিক ক্লাইম্যাক্সে ভরা চিত্রনাট্য আর চোখ ধাঁধানো অপরূপ সিনেমাটোগ্রাফির সুবাদে।

গল্পে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী অপূর্ব হঠাৎ গ্রামে ফেরেন দাদিকে ‘বেটার লাইফ’ দেওয়ার জন্য নিয়ে যেতে। কিন্তু পারিবারিক বন্ধন ছেড়ে দাদি দিলারা জামান যেতে চান না। বাধা হয়ে দাঁড়ায় কাজিন নাজনীন নিহাসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা। এমন ফ্যামিলি সেন্টিমেন্ট, রোমান্টিক আমেজের সঙ্গে বাংলার অপরূপ দৃশ্য আর বিশেষ দুই গান এবং আবহসংগীতের মেলবন্ধনে ‘মন দুয়ারী’ যেন অবিশ্বাস্য এক পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমা হয়ে ধরা দিয়েছে ইউটিউব দর্শকদের মাঝে। দর্শকদের এমন ভালোবাসা দেশ থেকে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে উপভোগ করছেন অপূর্ব। সেখান থেকেই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছেন তাঁর দর্শকদের কাছে। জানিয়েছেন, দর্শকদের এ ভালোবাসাই ১৮ বছরের ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। 

অপূর্ব বলেন, ‘দর্শকরাই আমাদের সব। তাদের কথা মাথায় রেখেই কাজ করি। তাই দর্শকদের কাছাকাছি থাকতে পারছি। কাজ দিয়ে আমি আমার দর্শকদের কাছে অনেক বেশি কৃতজ্ঞ।’
আগামী ঈদে অপূর্ব অভিনীত ওয়েব ফিল্ম ‘হাউ সুইট’ মুক্তি পাবে। কাজল আরেফিন অমি পরিচালিত এতে অপূর্বর সঙ্গে আছেন তাসনিয়া ফারিণ। এ কাজটি নিয়েও দর্শকদের মাঝে প্রত্যাশা জেগেছে। অপূর্ব জুটির নতুন রসায়ন মন দুয়ারী কিংবা চালচিত্রের রেশ ছাড়িয়ে যায় কিনা সেটাই এখন দেখার অপেক্ষা। 


 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: মন দ য় র

এছাড়াও পড়ুন:

অধ্যাপক ইউনূসের সংস্কারের অঙ্গীকারের এক বছর পরেও কারাগারে সাংবাদিকেরা: সিপিজে

সাংবাদিক ফারজানা রুপা চলতি বছরের ৫ মার্চ ঢাকার একটি জনাকীর্ণ আদালতে আইনজীবী ছাড়াই দাঁড়িয়েছিলেন। বিচারক তাঁর বিরুদ্ধে আরেকটি হত্যা মামলা নথিভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করছিলেন। ইতিমধ্যে অন্য মামলায় কারাগারে থাকা এই সাংবাদিক শান্তভাবে জামিনের আবেদন জানান। ফারজানা বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমার বিরুদ্ধে এক ডজন মামলা দেওয়া হয়েছে। আমি একজন সাংবাদিক। আমাকে ফাঁসানোর জন্য একটি মামলাই যথেষ্ট।’

বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টসের (সিপিজে) এক নিবন্ধে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, বেসরকারি একাত্তর টেলিভিশনের সাবেক প্রধান প্রতিবেদক ফারজানা রুপার বিরুদ্ধে ৯টি হত্যা মামলা রয়েছে। আর তাঁর স্বামী চ্যানেলটির সাবেক বার্তাপ্রধান শাকিল আহমেদের নামে রয়েছে আটটি হত্যা মামলা।

এক বছর আগে ছাত্রদের নেতৃত্বে কয়েক সপ্তাহের বিক্ষোভের পর পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই বিক্ষোভ চলাকালে দুজন সাংবাদিক নিহত হন। শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেন নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

অধ্যাপক ইউনূস গণমাধ্যম সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা সরকারের অধীন সাংবাদিকদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু ২০২৪ সালের নভেম্বরে ডেইলি স্টার পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ইউনূস বলেছিলেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে তাড়াহুড়ো করে হত্যার অভিযোগ আনা হচ্ছে। তিনি আরও বলেছিলেন, সরকার তখন থেকে এ ধরনের পদক্ষেপ বন্ধ করে দিয়েছে। মামলাগুলো পর্যালোচনা করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

কিন্তু প্রায় এক বছর পর এখনো সাংবাদিক ফারজানা রুপা, শাকিল আহমেদ, শ্যামল দত্ত ও মোজাম্মেল হক বাবু কারাগারে আছেন। হত্যায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে পৃথক মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। বিগত সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীল হিসেবে ব্যাপকভাবে পরিচিত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগের বারবার ব্যবহারকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সেন্সরশিপ বলেই মনে হচ্ছে।

এ ধরনের আইনি অভিযোগ ছাড়াও সিপিজে সাংবাদিকদের ওপর শারীরিক হামলা, রাজনৈতিক কর্মীদের কাছ থেকে হুমকি এবং নির্বাসনের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কমপক্ষে ২৫ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে তদন্ত করছে। এই অভিযোগ সাবেক শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

সিপিজের আঞ্চলিক পরিচালক বেহ লিহ ই বলেন, ‘চারজন সাংবাদিককে বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ ছাড়াই এক বছর ধরে কারাগারে আটকে রাখা অন্তর্বর্তী সরকারের সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষার ঘোষিত প্রতিশ্রুতিকে দুর্বল করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রকৃত সংস্কার মানে অতীত থেকে বেরিয়ে আসা, এর অপব্যবহারের পুনরাবৃত্তি নয়। যেহেতু আগামী মাসগুলোতে দেশে নির্বাচন হতে চলেছে, তাই সব রাজনৈতিক দলকে সাংবাদিকদের খবর প্রকাশের অধিকারকে অবশ্যই সম্মান জানাতে হবে।’

আইনি নথি ও প্রতিবেদন নিয়ে সিপিজের এক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এফআইআর নথিভুক্ত হওয়ার অনেক পর সাংবাদিকদের নাম প্রায়ই এতে যুক্ত করা হয়। মে মাসে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, গত বছরের বিক্ষোভের পর ১৪০ জনের বেশি সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।

শ্যামল দত্তের মেয়ে শশী সিপিজেকে বলেন, তাঁর বাবার বিরুদ্ধে এখন কতগুলো মামলা চলছে, পরিবার তার হিসাব রাখতে পারেনি। তাঁরা অন্তত ছয়টি হত্যা মামলার কথা জানেন, যেখানে শ্যামল দত্তের নাম আছে। মোজাম্মেল বাবুর পরিবার ১০টি মামলার কথা জানে। ফারজানা রুপা ও শাকিল আহমেদের পরিবার সিপিজেকে জানিয়েছে, তারা পাঁচটি মামলার এফআইআর পাননি, যেখানে একজন বা অন্য সাংবাদিকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এর মানে হলো তাঁদের কেউই জামিনের আবেদন করতে পারছেন না।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম ও পুলিশের মুখপাত্র এনামুল হক সাগরকে ই–মেইল করে সিপিজে। তবে তাঁরা সাড়া দেননি বলে সিপিজের নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ