চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ‘এ’ গ্রুপের পয়েন্ট টেবিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করে হাসিঠাট্টা করছিলেন অনেকেই। শোভন ভাষায় মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও মুশফিকুর রহিমদের নিয়ে টিপ্পনী কাটতেও দেখা গেছে। সমর্থকদের এভাবে হতাশা প্রকাশ করার কারণ হতে পারে প্রিয় দলের ব্যর্থতা মেনে নিতে না পারা। তাই পরোক্ষে নাজমুল হোসেন শান্তদের সমালোচনায় লিপ্ত হন তারা। ভারত ও নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ক্রিকেট খেলতে না পারা দেশের মানুষের কাছে হতাশার। রাওয়ালপিন্ডির ব্যাটিংস্বর্গে কিউইদের বিপক্ষে লড়াই করার পুঁজি সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। দুবাইয়ে ভারতের বিপক্ষে ২২৮ রান আর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ২৩৬ রান করতে পেরেছে বাংলাদেশ। টানা দুই হারে গ্রুপ পর্বেই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি শেষ। রাওয়ালপিন্ডিতে গতকাল ছিল আনুষ্ঠানিকতার ম্যাচ। সেটি বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হওয়ায় পয়েন্ট ভাগাভাগি হয়েছে। ১ পয়েন্টের ভাগ পেলেও রান রেটে এগিয়ে থাকায় ‘এ’ গ্রুপের পয়েন্ট টেবিলে তিন নম্বরে থেকে টুর্নামেন্ট শেষ করে আজ মধ্যরাতে দেশে ফিরছে বাংলাদেশ দল।

আইসিসির এই ওয়ানডে টুর্নামেন্ট খেলার সুযোগ পেতে ২০২৩ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কাকে হারাতে সব কৌশল অবলম্বন করেছিল বাংলাদেশ। তারাই কিনা আট জাতির টুর্নামেন্টে হতাশ করেছে বাজে খেলে। গত আসরের সেমিফাইনালিস্টদের ব্যাটিং ছিল ব্যর্থতার প্রদর্শনী! ভারতের বিপক্ষে ৩৫ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে পরাজয় নিশ্চিত করে শুরুতে। তাওহিদ হৃদয় ও জাকের আলী ১৫৪ রানের জুটি গড়তে না পারলে বড় পরাজয় হতো। ওই ম্যাচে প্রাপ্তি বলতে হৃদয়ের সেঞ্চুরি। বাঁচা-মরার দ্বিতীয় ম্যাচে ব্যাটিং ছিল খুবই বাজে। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে সুযোগ দিতে গিয়ে ব্যাটিং অর্ডারে পরিবর্তন করায় ফোকাস নড়ে গেছে বলে মনে করা হয়। যার প্রভাব পড়েছে ব্যাটারদের পারফরম্যান্সে। শান্ত ছাড়া টপঅর্ডারে কেউই রান করতে পারেননি। শেষের লড়াই ছিল জাকের আলীর। ব্যাটিংয়ে ধারাবাহিক বলতে একমাত্র জাকেরের দুই ম্যাচে রান করা। বোলিং বিভাগে নজরকাড়া পারফরম্যান্স বলতে লেগস্পিনার রিশাদ হোসেন ও পেসার নাহিদ রানার বোলিং। রিশাদ ওয়ানডেতে প্রথম বৈশ্বিক টুর্নামেন্ট খেলেছেন অভিজ্ঞদের মতো। ভারতের বিপক্ষে না খেলেও আলোচনায় ছিলেন ফাস্ট বোলার রানা। জোরে বোলিং করার জন্য প্রশংসিত হয়েছেন টাইগার ফাস্ট বোলার। তাঁকে দেখা হচ্ছে ভবিষ্যৎ বৈশ্বিক তারকা হিসেবে।

বৃষ্টির কারণে গতকাল রাওয়ালপিন্ডির শেষ ম্যাচটি পরিত্যক্ত না হলে আরেকটি পরীক্ষা হয়ে যেত বাংলাদেশ পাকিস্তানের চেয়ে শক্তিশালী কিনা। প্রকৃতি সে সুযোগ না দেওয়ায় আক্ষেপ বাংলাদেশ অধিনায়কের, ‘আমি খুবই হতাশ। খুব করে চেয়েছি এই ম্যাচটি খেলতে। আবহাওয়ার ওপর তো কারও হাত নেই।’ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ভালো করতে না পারার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে টাইগার দলপতি বলেন, ‘এই সংস্করণে আমরা দীর্ঘ সময় ধরে যেভাবে খেলছিলাম, শেষ দুই ম্যাচে পারিনি। আমরা ভুল থেকে শিক্ষা নিতে পারি। আমাদের কার্যকর একটি পরিকল্পনা করে তা বাস্তবায়ন করতে হবে।’ তবে ফাস্ট বোলিং নিয়ে গর্ব ছিল শান্তর, ‘আমরা ফাস্ট বোলিংয়ে সব সময় সংগ্রাম করতাম, গত কয়েক বছরে অনেক ফাস্ট বোলার এসেছে। কয়েকজন ফাস্ট বোলার দেশে আছে, যারা ভালো করছে। তাসকিন, রানা ও ফিজ এখানে এসেছে। আমাদের খুবই ভালো একটি বোলিং ইউনিট আছে। আশা করি, তারা নিজেদের নিয়ে কাজ করবে এবং দলের জন্য সেরাটা দেবে।’ ব্যাটিং বিভাগের উন্নতি করার প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘নেটে আমাদের ভালোভাবে প্র্যাকটিস করতে হবে। স্ট্রাইক রোটেশন নিয়ে ভাবতে হবে। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমি আশা করব, ছেলেরা বুঝতে পারছে আমাদের কী করতে হবে।’

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের নতুন আসরে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ কারা, খেলা কবে-কোথায়

অভাগাদের বছরে ‘কুফা’ কাটানোর তালিকায় সর্বশেষ নাম দক্ষিণ আফ্রিকা। লর্ডসে গতকাল অস্ট্রেলিয়াকে ৫ উইকেটে হারিয়ে টেস্টের রাজদণ্ড হাতে পেয়েছে টেম্বা বাভুমার দল। প্রোটিয়াদের শ্রেষ্ঠত্বের মধ্য দিয়ে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের তৃতীয় আসর শেষ হয়েছে।

তবে এর রেশ থাকতেই চলে এসেছে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের চতুর্থ আসর বা চক্র। ২০২৫-২৭ চক্রের শুরুটা হচ্ছে বাংলাদেশকে দিয়েই। আগামী ১৭ জুন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গল টেস্ট খেলতে নামছে নাজমুল হোসেন দল। ২৫ জুন কলম্বোয় শুরু দুই দলের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট। এবারের টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ চক্রে এটিই প্রথম সিরিজ।

ক্রিকেটের অভিজাত এই সংস্করণে বাংলাদেশ প্রায় ২৫ বছর পার দিলেও রেকর্ড ভালো নয়। তবে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ আসার পর থেকে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স ক্রমশ উন্নতির দিকে।

প্রথম চক্রে (২০১৯-২১) কোনো ম্যাচই জিততে পারেনি লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। দ্বিতীয় চক্রে (২০২১-২৩) মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টে ঐতিহাসিক জয় বাদ দিলে বলার মতো কিছু নেই। প্রথম দুই চক্র শেষ করতে হয়েছে পয়েন্ট তালিকার তলানিতে থেকে।

তবে তৃতীয় চক্রে (২০২৩-২৫) বাংলাদেশের পারফরম্যান্স বেশ আশাব্যঞ্জক। ১২ টেস্ট খেলে জিতেছে চারটিতে। এর মধ্যে গত বছর পাকিস্তানকে তাদের মাটিতে ধবলধোলাইয়ের সুখস্মৃতিও আছে। পয়েন্ট তালিকায় অবস্থান ছিল সাত নম্বরে; পাকিস্তান এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের ওপরে। তিন চক্র মিলিয়ে বাংলাদেশ খেলেছে ৩১ টেস্ট। জিতেছে পাঁচটি, ড্র করে দুটি আর হেরেছে ২৪টি।

এবার কী হবে? শ্রীলঙ্কায় যাওয়ার আগে মিরপুরের শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে সংবাদ সম্মেলনে আশার বাণীই শুনিয়েছেন অধিনায়ক নাজমুল। তিনি বলেছেন, ‘গত চক্রে আমরা চারটা ম্যাচ জিতেছি। আমাদের একটু উন্নতি হয়েছে। লক্ষ্য থাকবে এই চক্রে কীভাবে আরও একটা-দুইটা ম্যাচ বেশি জিততে পারি।’ সেটা কতটুকু সম্ভব, সময়ই বলে দেবে।

বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের আগের তিন চক্রের মতো এবারও অংশ নিচ্ছে ৯ দল। প্রত্যেক দল খেলবে ছয়টি করে সিরিজ—তিনটি নিজেদের মাঠে, তিনটি প্রতিপক্ষের মাঠে। পয়েন্ট সিস্টেমেও কোনো পরিবর্তন আসেনি (জিতলে ১২, ড্র করলে ৪, টাই করলে ৬ পয়েন্ট)।

তবে এবার ম্যাচের সংখ্যা গত দুবারের চেয়ে একটি বেড়েছে। ফাইনালসহ মোট ম্যাচ হবে ৭১টি, সিরিজ ২৭টি। প্রত্যেক সিরিজেই সর্বনিম্ন দুই ও সর্বোচ্চ পাঁচটি ম্যাচ হবে।

চতুর্থ চক্রের ফাইনালও লর্ডসে আয়োজনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এই ম্যাচ হবে ২০২৭ সালের জুনে। ফাইনালের আগে শেষ সিরিজ হবে সেই বছরের মার্চে; পাকিস্তানে দুটি টেস্ট খেলতে যাবে নিউজিল্যান্ড।

এবার সবচেয়ে বেশি ২২ ম্যাচ খেলবে অস্ট্রেলিয়া, দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২১ ম্যাচ খেলবে ইংল্যান্ড। সবচেয়ে কম ১২টি করে ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা, যাদের সিরিজ দিয়েই শুরু হচ্ছে এবারের চক্র। ২০২৫ সালে বাংলাদেশ দলের টেস্ট সিরিজ এই একটিই। নাজমুল-মুশফিক-তাইজুলদের বাকি পাঁচ সিরিজই ২০২৬ ও ২০২৭ সালে। সব সিরিজেই দুটি করে ম্যাচ।

২০২৬ সালে বাংলাদেশের প্রথম সিরিজ মার্চে, ঘরের মাঠে পাকিস্তানের বিপক্ষে। সেই বছরের আগস্টে দল যাবে অস্ট্রেলিয়ায়। ২০০৩ সালের পর অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে সেটিই হবে লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের প্রথম টেস্ট সিরিজ।

এই চক্রে বাংলাদেশের ঘরের মাঠে দ্বিতীয় সিরিজ খেলবে ২০২৬ সালের অক্টোবরে; খেলতে আসবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। পরের মাসে যাবে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে। বাংলাদেশের শেষ সিরিজ দেশের মাটিতেই; ২০২৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে আসবে ইংল্যান্ড। ২০১৬ সালের পর এটিই হবে ইংলিশদের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট সিরিজ।

অনুপ্রেরণা জোগানোর মতো খবর হলো ২০২৫-২৭ চক্রে বাংলাদেশ যে ছয় দলের বিপক্ষে খেলবে, এর চারটির বিপক্ষে সর্বশেষ সিরিজে তারা হারেনি। অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজ ড্র করেছে আর পাকিস্তানকে করেছে ধবলধোলাই (দুই ম্যাচের সিরিজে ২-০ ব্যবধানে জয়)। সিরিজ হেরেছে শ্রীলঙ্কা আর বর্তমান চ্যাম্পিয়ন দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে।  

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • তিন অধিনায়ক কাঠামো নিয়ে প্রশ্ন তামিমের
  • টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের নতুন আসরে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ কারা, খেলা কবে-কোথায়
  • ব্রাজিলে আলোকাড়া রিবেইরোয় চোখ আর্সেনাল-নাপোলির
  • ব্রাজিলে আলো কাড়া রিবেইরোয় চোখ আর্সেনাল-নাপোলির
  • রিবেইরোয় চোখ আর্সেনাল-নাপোলির 
  • কোচ কাবরেরার পদত্যাগ দাবি, অনিশ্চয়তায় ভবিষ্যৎ