ক্ষমতা অপব্যবহারের দায় সরকার এড়াতে পারে না: টিআইবি
Published: 1st, March 2025 GMT
নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের জন্য ঢাকার বাইরে অন্তত একটি জেলা থেকে জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিদের জন্য কর্তৃত্ববাদের অনুকরণে সরকারিভাবে হুকুম-দখল করে পরিবহন বাস অধিযাচনের (রিকুইজেশন) ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সংস্থাটি বলছে, এনসিপির জন্মলগ্নেই এরূপ ক্ষমতার অপব্যবহার ও অনৈতিকতার দায় অন্তর্বর্তী সরকার এড়াতে পারে না।
আজ শনিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এই উদ্বেগ জানান টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড.
তিনি বলেন, এনসিপির জন্মলগ্নেই এরূপ ক্ষমতার অপব্যবহার ও অনৈতিকতার দায় অন্তর্বর্তী সরকার এড়াতে পারে না। অন্যদিকে ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ ও ‘নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তে’র ব্যানারে এ ধরনের কর্তৃত্ববাদী পুরোনো চর্চা পরিহার করার জন্য এনসিপি ও তার সব পর্যায়ের নেতাকর্মী ও সমর্থকদেরকে অঙ্গীকারবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘ছাত্র-জনতার অভূতপূর্ব আত্মত্যাগের বিনিময়ে সূচিত ‘নতুন বাংলাদেশে’র অভীষ্ট অর্জনের আন্দোলনে নেতৃত্ব প্রদানকারী শিক্ষার্থীদের হাত ধরে নতুন রাজনৈতিক দলের আবির্ভাব কর্তৃত্ববাদ পতন-পরবর্তী বাংলাদেশে গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বৈষম্যবিরোধী চেতনায় উদ্বুদ্ধ তরুণ নেতৃত্বের হাতে গঠিত নতুন রাজনীতির প্রতি মানুষের প্রত্যাশাও অপরিসীম। এই প্রত্যাশা পূরণের পূর্বশর্ত হিসেবে দলটিকে একেবারে শুরুতেই বাস অধিযাচনের এই নজির ও তার নেতিবাচক প্রভাবকে ‘রেড এলার্ট’ হিসেবে গ্রহণ করার পাশাপাশি ভবিষ্যতে এ জাতীয় গতানুগতিক আত্মঘাতী কর্মকাণ্ড ও আচরণ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাই।’
ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের গড়া এই নতুন রাজনৈতিক দল জিরো-সাম রাজনীতিনির্ভর ক্ষমতার অপব্যবহারের হাতে জাতীয় জিম্মিদশা থেকে এ দেশের উত্তরণের সম্ভাবনা ও ইতিবাচক গণতান্ত্রিকচর্চা বিকাশে সহায়ক হতে পারে। স্বাভাবিকভাবেই নতুন নেতৃত্বের চর্চা ও আচরণে পতিত কতৃত্ববাদী বা কোনো প্রকার ক্ষমতার অপব্যবহারের পুনরাবৃত্তি তাদের প্রতি জনমনে বিরূপ ধারণার জন্ম দিবে এবং নতুন বাংলাদেশের জবাবদিহিমূলক গণতান্ত্রিক বোধ ও চেতনা বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করবে।’
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক মনে করেন, ‘রাজনৈতিক, জনপ্রতিনিধিত্ব ও সরকার পরিচালনায় একচ্ছত্র আধিপত্যের মাধ্যমে কতৃত্ববাদী আচরণের সংস্কৃতির পরিবর্তনে নতুন রাজনৈতিক দল মূল অনুঘটকের ভূমিকা রাখবে, দেশবাসী এমন আশা করবে। তবে, সবকিছুই নির্ভর করবে, নতুন দল এদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন লালিত ক্ষমতার অপব্যবহারের চর্চা থেকে কতটুকু দূরে থাকতে পারবে, তার ওপর।’
তিনি আরও বলেন, ‘অর্ন্তবর্তী সরকারের দায়িত্ব সব পর্যায়ে যে কোনো রাজনৈতিক মহলকে সব ধরনের পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া থেকে বিরত থাকা।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: জ ত য় ন গর ক প র ট ট আইব ক ষমত র অপব যবহ র অপব যবহ র র এনস প সরক র ট আইব
এছাড়াও পড়ুন:
ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যু : পুলিশের দাবি, বাড়ির ছাদ থেকে পড়েছেন, হত্যার অভিযোগ পরিবারের
ভোলা সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সাইফুল্লাহ আরিফকে (৩০) হত্যা করা হয়েছে বলে তাঁর পরিবার অভিযোগ করেছে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে ভোলা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে তাঁর বাবা বশির উদ্দিন (মাস্টার) এই অভিযোগ করেন।
এ সময় বশির উদ্দিন বলেন, পুলিশ দাবি করছে, ছাদ থেকে পড়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু ছাদ থেকে পড়ার কোনো সুযোগ নেই; সেখানে বাঁশের বেড়া ও প্রতিটি তলায় ব্যালকনি ছিল। পুলিশের আচরণ শুরু থেকেই সন্দেহজনক।
এর আগে গত শনিবার পুলিশ সুপার শরীফুল হক তাঁর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলেন, প্রাথমিক তদন্তের তথ্য অনুযায়ী অসতর্কতাবশত নিজ বাড়ির ছাদ থেকে পড়ে সাইফুল্লাহ আরিফ মারা গেছেন।
সাইফুল্লাহ আরিফ ভোলা পৌরসভার কালীবাড়ি রোডে নবী মসজিদ গলি এলাকার বশির উদ্দিনের ছেলে। গত ৩১ আগস্ট ভোরে নিজ বাড়ির সামনে থেকে সাইফুল্লাহ আরিফের লাশ উদ্ধার করা হয়।
আজ দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে বশির উদ্দিন বলেন, ‘আমার ছেলে দুর্ঘটনায় নয়, তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। এর কিছু প্রমাণ আছে। আরিফের শরীরে একাধিক কাটা ও ভাঙা জখম ছিল, এমনকি হাতের রগ কাটা ছিল। পুলিশের দাবি করছে, ছাদ থেকে পড়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু ছাদ থেকে পড়ে মৃত্যুর সুযোগ নেই, কারণ, ছাদে বাঁশের বেড়া ও প্রতিটি তলায় ব্যালকনি ছিল। পুলিশ সুপার আমার ছেলেকে নেশাগ্রস্ত আখ্যা দিলেও তাঁর কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেননি। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন ছাড়া পুলিশ কীভাবে এমন কথা বলতে পারে। পুলিশের আচরণ শুরু থেকেই সন্দেহজনক। এ ঘটনায় সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
বশির উদ্দিন আরও বলেন, সাইফুল্লাহ আরিফ কোনো ধরনের মাদকের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। সে ছাত্রলীগের সহসভাপতি হলেও কখনো ক্ষমতার অপব্যবহার করেনি। হত্যাকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় পুলিশ সত্য গোপন করছে। সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিত করতে মামলাটি সিআইডি বা পিবিআইয়ের কাছে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়ার দাবি জানান তিনি।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বশির উদ্দিন বলেন, তাঁর ছেলের সঙ্গে অনেকের বিরোধ ছিল। তবে জমিজমার বিরোধ ও মাদক ব্যবসার বিরোধ নিয়ে তাঁর ছেলে খুন হয়নি। এগুলোর সঙ্গে সে জড়িত ছিল না।
শনিবার পুলিশ শরীফুল হক তাঁর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সাইফুল্লাহ আরিফের মৃত্যুর রহস্য উদ্ঘাটনে প্রাথমিক তদন্ত শেষে জানা যায়, তিনি অসতর্কতাবশত নিজ বাড়ির ছাদ থেকে পড়ে গিয়ে মারা গেছেন। ৩০ আগস্ট দিবাগত রাত অনুমান ১২টা ১৫ মিনিটে রাতের খাবার শেষে সাইফুল্লাহসহ পরিবারের সবাই নিজ নিজ ঘরে ঘুমাতে যান। ভোর ৫টা ১০ মিনিটে ফজরের নামাজের জন্য বের হওয়ার সময় তাঁর বাবা বশির উদ্দীন (৭০) বাড়ির সামনে গেটের পাশে রক্তাক্ত অবস্থায় ছেলের মরদেহ দেখতে পান। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ভোলা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। সুরতহালে দেখা যায়, আরিফের মাথা ও হাতে গুরুতর আঘাত ছিল। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, আরিফ দীর্ঘদিন ধরে নেশায় আসক্ত ছিলেন এবং হতাশাগ্রস্ত অবস্থায় প্রায়ই ছাদে যেতেন। ঘটনার দিন রাতেও তিনি ছাদে ওঠেন এবং অসতর্কতাবশত রেলিংবিহীন অংশ থেকে পড়ে গিয়ে গুরুতর জখমপ্রাপ্ত হয়ে মারা যান।
পরিবারের অভিযোগ সম্পর্কে আজ দুপুরে পুলিশ সুপার শরীফুল হক মুঠোফোনে বলেন, ‘ওই ঘটনায় তদন্ত চলমান। সংবাদ সম্মেলনে প্রাথমিক তদন্তের কথা জানানো হয়েছে। তদন্তে তথ্য সংযোগ-বিয়োগের সুযোগ রয়েছে।’