মিরপুরে মৃত নারীকে জীবিত দেখিয়ে জমি দখলের অপচেষ্টার অভিযোগ
Published: 4th, March 2025 GMT
রাজধানীর মিরপুর ইস্টার্ন হাউজিং ২য় পর্ব এলাকায় জমি প্রতারণার মাধ্যমে দখলের অপচেষ্টার অভিযোগ করেছেন মোহাম্মাদ বাইজিদ হোসাইন নামের একজন ভুক্তভোগী। তার অভিযোগ, পল্লবীর বাসিন্দা জাহাঙ্গীর হোসেন এলাকার এক মৃত নারীকে জীবিত দেখিয়ে জমিটি কেনার দাবি করছেন। তার নামে জাল-জালিয়াতির দলিল সম্পাদনার মাধ্যমে জমিটি দখলের পাঁয়তারা করছেন।
মঙ্গলবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনী মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে বাইজিদ হোসাইন এই অভিযোগ করেন। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, তিনি ও তার ব্যবসায়িক অংশিদাররা ইস্টার্ন হাউজিংয়ের কাছ থেকে জমিটি কিনে ও সীমানা প্রাচীর দিয়ে ভোগদখল করে আসছেন। কিন্তু গত ১৯ ফেব্রুয়ারি জাহাঙ্গীর হোসেন ও সাইফুল ইসলাম নিজাম সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে জমিটি দখলের পাঁয়তারা করেন। খবর পেয়ে পল্লবী থানা পুলিশ ও সেনাবাহিনীর টহল টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। জমিটি নিয়ে মামলা চলমান থাকায় আদালত থেকে আদেশ না আসা পর্যন্ত সেখানে কেউ যেন ঝামেলা না করেন তার নির্দেশনা দেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
বাইজিদ হোসাইন বলেন, গত রোববার জাহাঙ্গীর হোসেন সংবাদ সম্মেলন করে উল্টো আমাদের বিরুদ্ধেই জমি দখলের মিথ্যা অভিযোগ করেন। প্রকৃতপক্ষে জাহাঙ্গীর কখনোই জমিটিতে দখলে ছিলেন না। তিনি নূরজাহান বেগম নামের এক নারীর কাছ থেকে ২০১৮ সালে জমি ক্রয়ের দাবি করলেও বাস্তবতা হচ্ছে, জমির খতিয়ানে যে নূরজাহান বেগমের নাম আছে তিনি ২০০৫ সালে মারা গেছেন। আর নূরজাহান যতটুকু জমি পেতেন, তা ১৯৯৮ সালে ইস্টার্ন হাউজিংয়ের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন। পরে নূরজাহান বেগমের নামে ভুলক্রমে যে সিটি খতিয়ানে রেকর্ড হয়েছে, তা ইস্টার্ন হাউজিংয়ের ক্রয়কৃত জমি। আর এজন্যই ইস্টার্ন হাউজিং প্রতিকার চেয়ে মিরপুর ভূমি অফিসে দ্বারস্থ হয়েছে।
তিনি বলেন, জাহাঙ্গীর হোসেন যে নূরজাহান বেগমের কাছ থেকে জমি কিনেছেন বলে দাবি করেছেন, তার এনআইডির তথ্যের সঙ্গেও প্রকৃত নূরজাহান বেগমের কোনো মিল নেই। সিআইডির রিপোর্টেও তা প্রমাণ হয়েছে। নামজারি বহাল পেতে জাহাঙ্গীর হোসেনকে মিরপুর ভূমি অফিসের কানোনগো আব্দুল বাতেনকে নাকি ৩০ লাখ টাকা দিতে হয়েছে।
জাহাঙ্গীর হোসেনের সঙ্গে তার ব্যক্তিগত কোনো শত্রুতা নেই দাবি করে বাইজিদ হোসাইন আরও বলেন, আমি জমি ক্রয় করেছি ইস্টার্ন হাউজিংয়ের নিকট থেকে। তার (জাহাঙ্গীর) চাওয়া-পাওয়া থাকলে ইস্টার্ন হাউজিংয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। আবার তার জমির কগজপত্র সঠিক হলে আমি নিজে তার জন্য ইস্টার্ন হাউজিং কর্তৃপক্ষকে সুপারিশ করব বলেও প্রস্তাব দিয়েছিলাম। প্রয়োজনে কোম্পানি আমার প্লট চেঞ্জ করে দেবে, এতে আমার সমস্যা নেই।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
এই সরকারও আমলাতন্ত্রের চাপে!
চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান নতুন যে জন-আকাঙ্ক্ষা তৈরি করেছে, সেখানে নিশ্চিত করেই জনপ্রশাসন সংস্কারের প্রশ্নটি নাগরিকদের কেন্দ্রীয় একটি চাহিদা। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার যেভাবে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মতোই পদ ছাড়া পদোন্নতি দিচ্ছে, তাতে উদ্বিগ্ন না হওয়ার কোনো কারণ নেই। কেননা, আগের সরকার কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছিল যে কয়টা স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে, তার অন্যতম আমলাতন্ত্র।
জনপ্রশাসনকে রাজনীতিকরণের বৃত্ত ভেঙে জনবান্ধব করার একটা বড় সুযোগ এনে দিয়েছিল অভ্যুত্থান। কিন্তু শুরু থেকেই অন্তর্বর্তী সরকার আমলাতন্ত্রের ওপর অতিনির্ভরশীল হয়ে ওঠায় সেই সুযোগ অনেকটাই হাতছাড়া হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের বিরোধিতার কারণে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের বড় কোনো সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকার। অন্যদিকে বেতন বাড়াতে গঠন করা হয়েছে বেতন কমিশন। কিছু মুখকে সরিয়ে দেওয়া ছাড়া জনপ্রশাসনে সেই পুরোনো চর্চা অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে পদ ছাড়া পদায়নের ক্ষেত্রে জনপ্রশাসনে যেভাবে আগের সরকারের চর্চার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়েছে, সেটা যারপরনাই দুঃখজনক।
প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, উপসচিব স্তরে যেখানে আগে থেকেই পদের চেয়ে ৬০০ কর্মকর্তা বেশি রয়েছেন, সেখানে আগস্ট মাসে নতুন করে ২৬৮ জনকে এই পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব পদেও পদোন্নতির আলোচনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক সরকারের আমলে জনপ্রশাসনে হরেদরে পদোন্নতি দেওয়ার অনেক নজির আছে। এর কারণ একটাই, আমলাতন্ত্রকে তুষ্ট রাখা। অন্তর্বর্তী সরকার এই চর্চায় ছেদ ঘটাতে পারবে, সেটাই সবাই প্রত্যাশা করেছিল।
পরিহাসের বিষয় হচ্ছে, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়ার পর বেশির ভাগ কর্মকর্তাকে আগের জায়গাতেই রেখে দেওয়া হয়। এর মানে হচ্ছে তাঁরা আগের দায়িত্বই পালন করেন, কিন্তু মাঝখান থেকে বেতন-ভাতা বাড়ে। উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা তিন বছর চাকরি পাওয়ার পর বিনা সুদে গাড়ি কেনার জন্য ঋণসুবিধা পান। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তাদের যেভাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, তার দৃষ্টান্তও খুব বেশি নেই। অবসরে যাওয়া প্রশাসন ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে ও অন্য ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৮ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়েছে।
জনপ্রশাসনের মেধাবী ও যোগ্য কর্মকর্তারা পদোন্নতি পেয়ে পরের ধাপে যাবেন, সেটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু পদ না থাকার পরও কেন পদায়ন করা হবে? এ ক্ষেত্রে সরকারকে পর্যালোচনা করে দেখা প্রয়োজন, জনপ্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে পদ বাড়ানো যায় কি না। আবার যেখানে এমনিতেই পদের বিপরীতে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সংখ্যা বেশি, সেখানে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া কতটা যৌক্তিক?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও জনপ্রশাসনবিশেষজ্ঞ সালাউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান বলেছেন, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়া যায় না। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে মেধাবীদের পদোন্নতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এরপরও কেন এমন পদোন্নতি—সেই ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, সরকার সম্ভবত আমলাতন্ত্রের চাপে রয়েছে। এই ধারণা শুধু তাঁর একার নয়, নাগরিক পরিসরের
বিস্তৃত একটি ধারণাও। অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই এর পরিষ্কার ব্যাখ্যা হাজির করা উচিত।
মাথাভারী আমলাতন্ত্র সরকারি সেবা নাগরিকের কাছে ঠিকভাবে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বড় একটা বাধা। অন্যদিকে সরকারকে এখানে বিশাল ব্যয়ের বোঝা বহন করতে হয়। ফলে মাঠ প্রশাসন থেকে শুরু করে সিনিয়র সচিব পর্যন্ত একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ ও গতিশীল জনপ্রশাসনই সবাই প্রত্যাশা করে। জনপ্রশাসনের সব স্তরে পদোন্নতি রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, মেধার ভিত্তিতেই হতে হবে।