জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান বলেছেন, তাঁর দল নেতা নয়, নীতিকে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। ক্ষমতা নয়, দুনিয়াতে আল্লাহর বিধান প্রতিষ্ঠা করতে বদ্ধপরিকর। এ ব্যাপারে জামায়াত জোরালোভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। জামায়াত নিজেরা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য নয়, আল্লাহর কোরআনকে বিজয়ী করতে চায়।

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর শ্যামলীর বাদশাহ ফয়সল ইনস্টিটিউটে এক ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নিয়ে জামায়াতের আমির এ কথা বলেন। চিকিৎসকদের সম্মানে দলের ঢাকা মহানগর উত্তরের মেডিকেল থানা কমিটি এই ইফতারের আয়োজন করে।

অনুষ্ঠানে জামায়াত আমির শফিকুর রহমান বলেন, মাহে রমজান আত্মশুদ্ধি, তাকওয়া ও তাজকিয়া অর্জনের মাস। তাই এ মাসে বেশি বেশি ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে নিজেকে পরিশুদ্ধ করার কাজে আত্মনিয়োগ করতে হবে। এই মোবারক মাসে যথাযথভাবে সিয়াম ও কিয়াম পালনের মাধ্যমে ইহকালীন কল্যাণ ও পরকালীন মুক্তি অর্জন করতে হবে। মাহে রমজানের শিক্ষার প্রতিফলন বাস্তব জীবনে ঘটাতে সবার প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

জামায়াতে ইসলামী নেতা নয়, নীতিকে প্রতিষ্ঠিত করতে চায় উল্লেখ করে দলের আমির বলেন, ‘ক্ষমতা নয়, দুনিয়াতে আল্লাহর বিধান প্রতিষ্ঠা করতে জামায়াত বদ্ধপরিকর। এ ব্যাপারে জামায়াত জোরালোভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। জামায়াতে ইসলামী নেতাকে প্রতিষ্ঠিত করতে চায় না, আল্লাহর দ্বীনকে প্রতিষ্ঠা করতে চায়। জামায়াত নিজেরা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য নয়, আল্লাহর কোরআনকে বিজয়ী করতে চায়।’ দ্বীনের বিজয়ের লক্ষ্যে সব শ্রেণি–পেশার মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।

জাকাতভিত্তিক সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার গুরুত্ব তুলে ধরে জামায়াতের আমির বলেন, শাড়ি, লুঙ্গি বা খাদ্যদ্রব্য নয়, বরং এমনভাবে জাকাত দেওয়া উচিত, যাতে একজন ব্যক্তি স্বাবলম্বী ও প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।

এ প্রসঙ্গে শফিকুর রহমান আরও বলেন, ইসলামী রাষ্ট্র না হওয়ায় সরকারি জাকাত ব্যবস্থাপনায় জনগণের আস্থা নেই। তাই মানুষ সরকারকে জাকাত দিতে চায় না।

জামায়াতের মেডিকেল থানার আমির স ম খালিদুজ্জামানের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি আবদুল্লাহ আল মাহমুদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে দলের ঢাকা মহানগর উত্তরের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মোবারক হোসাইন, ন্যাশনাল ডক্টর’স ফেডারেশনের (এনডিএফ) সেক্রেটারি জেনারেল মাহমুদ হোসেন প্রমুখ বক্তব্য দেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র আম র ক ষমত ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

‘মুক্তবুদ্ধি ও যুক্তির সাধক ছিলেন লেখক মোতাহের হোসেন চৌধুরী’

লেখক, প্রাবন্ধিক ও চিন্তাবিদ মোতাহের হোসেন চৌধুরী সারা জীবন মুক্তবুদ্ধি ও মুক্তচিন্তার চর্চা করে গেছেন। প্রকৃত মানবতাবাদী দার্শনিক ছিলেন তিনি। এ কারণে তাঁর লেখা, সৃষ্টিকর্ম ও চিন্তা এখনকার মানুষের জন্যও সমান প্রাসঙ্গিক।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে লেখক মোতাহের হোসেন চৌধুরীর ৬৯তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক স্মরণসভায় বক্তারা এ কথা বলেন। লেখকের নিজ জেলা লক্ষ্মীপুরে তাঁকে নিয়ে প্রথম স্মরণসভা ছিল এটি।

রামগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন আয়োজিত এ স্মরণসভায় সভাপতিত্ব করেন রামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম রবিন শীষ। প্রধান অতিথি ছিলেন লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক রাজীব কুমার সরকার। বক্তব্য দেন প্রবন্ধিক, গবেষক ও শিক্ষক ড. কুদরত-ই-হুদা, যুগান্তরের সাহিত্য সম্পাদক কবি জুননু রাইন, লেখকপুত্র ক্যাপ্টেন সৈয়দ জাহিদ হোসাইন, লক্ষ্মীপুর সাহিত্য সংসদের সাধারণ সম্পাদক গাজী গিয়াস উদ্দিন।

জেলা প্রশাসক রাজীব কুমার সরকার তাঁর বক্তব্যে বলেন, মোতাহের হোসেন চৌধুরী ছিলেন বাংলার একজন উজ্জ্বল প্রাবন্ধিক, মুক্তচিন্তার আলোকবর্তিকা। তাঁর লেখায় যেমন মানবতার বোধ রয়েছে, তেমনি যুক্তি ও প্রগতিশীল চিন্তার শক্ত ভিত্তি রয়েছে। তরুণ প্রজন্মকে তাঁর জীবন ও কর্ম থেকে শিক্ষা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।

বাবার স্মৃতি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে ক্যাপ্টেন সৈয়দ জাহিদ হোসাইন বলেন, ‘আমরা লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা। অথচ দুঃখজনক হলো, এত দিন বাবাকে নিয়ে এ জেলায় আলোচনা বা স্মরণসভা হয়নি। তাঁর মতো মহান প্রাবন্ধিকের জীবন ও দর্শন নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরা জরুরি।’

জাতীয় শিক্ষাক্রম পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের গবেষক ড. কুদরত-ই-হুদা বলেন, মোতাহের হোসেন চৌধুরী ছিলেন চিন্তার দিক থেকে ব্যতিক্রমধর্মী এক ব্যক্তিত্ব। তিনি ছিলেন মুক্তবুদ্ধির সাধক, মানবতাবাদী দার্শনিক ও সাহিত্যপ্রেমী। তাঁর প্রবন্ধ আজও পাঠককে সত্য, সুন্দর ও ন্যায়ের পথে চলার প্রেরণা দেয়।

সাহিত্য, দর্শন ও সমাজচিন্তায় মোতাহের হোসেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন বলে জানান কবি জুননু রাইন। তিনি বলেন, মোতাহের হোসেন চৌধুরীর লেখনী আজও প্রজন্মকে চিন্তার খোরাক জোগান।

মোতাহের হোসেন চৌধুরী ১ এপ্রিল ১৯০৩ সালে তৎকালীন নোয়াখালী জেলা এবং বর্তমানে লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ থানার কাঞ্চনপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। কাজী আবদুল ওদুদ, আবুল হুসেন, কাজী মোতাহার হোসেন, আবুল ফজল, আবদুল কাদিরের সঙ্গে যৌথভাবে বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন গড়ে তোলেন তিনি। বের করেন ‘শিখা’ নামের পত্রিকা। তাঁর রচিত প্রবন্ধ সংকলন ‘সংস্কৃতি কথা’ পাঠকমহলে সমাদৃত হয়েছে। ১৯৫৬ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ