সরকারি আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান রাশমিকার, চটেছেন কংগ্রেস বিধায়ক
Published: 5th, March 2025 GMT
অভিনেত্রী রাশমিকা মান্দানার বৃহস্পতি এখন তুঙ্গে। ২০২৩ সালে ‘অ্যানিম্যাল’, ২০২৪ সালে ‘পুষ্পা ২’ সিনেমার পর গত ভালোবাসা দিবসে মুক্তি পাওয়া ‘ছাবা’ সিনেমাও সুপারহিট। সিনেমার সাফল্যে যখন উদযাপনের মধ্যে দিয়ে দিন পার করছিলেন ঠিক সে সময়েই নতুনভাবে চর্চায় এলেন তিনি।
রাশমিকা মান্দানার জন্ম ভারতের কর্নাটকে। কন্নড় সিনেমা দিয়েই অভিনয় দুনিয়ায় হাতেখড়ি হয়েছে তাঁর। সেই কন্নড় ভাষাকেই কিনা ‘উপেক্ষা’ করছেন রাশমিকা!
সম্প্রতি ‘পুষ্পা’ অভিনেত্রীর বিরুদ্ধে এমনই বিস্ফোরক অভিযোগ এনেছেন কর্নাটকের কংগ্রেস বিধায়ক রবিকুমার গৌড়া গণিগা।
বেঙ্গালুরুতে আয়োজিত একটি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে যোগ দেওয়ার জন্য সরকারি আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করেছেন রাশমিকা। তাতেই চটেছেন কংগ্রেস বিধায়ক। রবিকুমার গৌড়া গণিগার দাবি, ‘রাশমিকাকে এজন্য শিক্ষা দেওয়া উচিত।’
এই বিধায়ক বলেন, ‘‘রাশমিকা মান্দানা কর্ণাটকে কন্নড় সিনেমা ‘কিরিক পার্টি’ দিয়ে নিজের ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন। গত বছর যখন আমরা তাঁকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম তখন তিনি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে যোগ দেওয়ার প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন।’
তাঁর দাবি, রাশমিকা নাকি আমন্ত্রণ ফিরিয়ে বলেছিলেন, ‘আমার বাড়ি হায়দরাবাদে, আমি জানি না কর্ণাটক কোথায়, আমার এত সময়ও নেই। আমি আসতে পারব না।’
রবিকুমার গৌড়া গণিগার দাবি, ‘আমাদের এক বিধায়ক বন্ধু রাশমিকাকে প্রায় ১০-১২ বার তাঁর বাড়িতে আমন্ত্রণ জানাতে গিয়েছিলেন, তবে তিনি রাজি হননি। এ ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করেই তিনি বড় হয়েছেন, আর কন্নড় ইন্ডাস্ট্রিকেই তিনি উপেক্ষা করেছেন। তাই আমাদের কি উচিত নয়, তাঁকে শিক্ষা দেওয়া?’
কংগ্রেস নেতার এই মন্তব্যে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বিজেপি নেতা রাজীব চন্দ্রশেখর। তিনি পাল্টা বলেন, ‘আপনারা কখনোই রাহুলের কংগ্রেসের থেকে গুন্ডাদের আলাদা করতে পারবেন না। রাহুল গান্ধীর দলের এই বিধায়ক একজন অভিনেত্রীকে শিক্ষা দিতে চান। আমি কংগ্রেসের বড় নেতাদের বলব সংবিধান পড়তে। যেখানে অভিনেত্রীসহ প্রতিটি নাগরিকের অধিকার ভুলে যাবেন না। আপনাদের এই গুন্ডা এমপির আইন এবং নাগরিকদের অধিকারকে সম্মান করতে বাধ্য।’
সম্প্রতি ‘ছাবা’র প্রচারের সময় হায়দরাবাদের এক হলে রাশমিকা মান্দানা বলেন, ‘আমি তো আদতে হায়দরাবাদেরই মেয়ে। কারও সাহায্য ছাড়াই এই ইন্ডাস্ট্রিতে পা রেখেছিলাম এবং আশা করি, আজ আমি আপনাদের পরিবারের একজন।’ রাশমিকার এ মন্তব্যে হায়দরাবাদবাসী খুশি হলেও চটেছিলেন কর্ণাটকের বাসিন্দারা।
এর কারণ, রাশমিকার জন্ম কর্ণাটকের কুর্গে। তিনি কন্নড় সিনেমা ‘কিরিক পার্টি’ (২০১৬) দিয়ে অভিনয় দুনিয়ায় পা রাখেন। যদিও জনপ্রিয়তা পান তেলেগু সিনেমার হাত ধরে। এ মুহূর্তে হায়দরাবাদ শহরেরই বাসিন্দা রাশমিকা।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: হ য়দর ব দ
এছাড়াও পড়ুন:
প্রার্থনার সুরে শেষ হলো ‘ফাতেমা রানীর’ তীর্থোৎসব
পাহাড়ের আঁকাবাঁকা প্রায় দুই কিলোমিটারেরও বেশি উঁচুনিচু ঢালু পথ পাড়ি দিয়ে আলোক শোভাযাত্রা করে করলেন হাজারো খৃষ্ট ভক্ত। মা মারিয়ার আশীর্বাদপ্রাপ্ত শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার গারো পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত ‘বারোমারি সাধু লিওর খ্রিষ্টধর্মপল্লি’ তে ছিলো এ বছরের আয়োজন।
বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) সকাল থেকে শুরু হয় ক্যাথলিক খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ‘ফাতেমা রানীর’ তীর্থোৎসব। দুই দিনব্যাপী এই তীর্থোৎসব শেষ হয়েছে গতকাল শুক্রবার জীবন্ত ক্রুশের পথ ও পবিত্র মহাখ্রিষ্টযাগের মধ্যে দিয়ে।
এ উৎসবে শুধু ক্যাথলিক খ্রিষ্টানই নন, অন্য ধর্মাবলম্বীরাও প্রতিবছর অংশ নেন। এ বছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। উৎসবের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভ্যাটিকান সিটির রাষ্ট্রদূত কেভিন এস র্যান্ডেল।
এসময় জেলা প্রশাসক (ডিসি) তরফদার মাহমুদুর রহমান ও পুলিশ সুপার (এসপি) আমিনুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
আয়োজক কমিটি জানায়, প্রতিবছর অক্টোবর মাসের শেষ বৃহস্পতি ও শুক্রবারে এই তীর্থযাত্রার আয়োজন করা হয়। প্রধান পৌরহিত্যকারী ন্যুনসিওকে বরণ, তীর্থের জুবিলী উদজাপন, পুর্নমিলন সংস্কার, পবিত্র খিষ্টযাগ, জপমালার প্রার্থন, আলোক শোভাযাত্রা, সাক্রান্তের আরাধনা, নিরাময় অনুষ্ঠান, ব্যক্তিগত প্রার্থনা ও নিশি জাগরণের মধ্য দিয়ে প্রথম দিনের অনুষ্ঠান শেষ হয়। শুক্রবার সকাল আটটায় জীবন্ত ক্রুশের পথ অতিক্রম এবং সকাল ১০টায় মহাখ্রিষ্টযোগের মধ্য দিয়ে শেষ হয় এবারের তীর্থোৎসব।
১৯৪২ সালে ৪২ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয় বারোমারি সাধু লিওর ধর্মপল্লি। ১৯৯৮ সালে প্রয়াত বিশপ ফ্রান্সিস এ গোমেজ স্থানটিকে ‘ফাতেমা রানীর তীর্থস্থান’ হিসেবে ঘোষণা করেন। তখন থেকেই প্রতিবছর আয়োজিত হয়ে আসছে এই ধর্মীয় উৎসব। এ বছর প্রায় ৩০-৪০ হাজার দেশি-বিদেশি রোমান ক্যাথলিক তীর্থযাত্রী অংশ নিয়েছেন উৎসবে। সার্বিকভাবে উৎসব এলাকা ছিল আলো, প্রার্থনা ও শান্তির আবহে মোড়ানো।
রংপুর থেকে আসা তীর্থযাত্রী রিপন আরেং বলেন, “সবাই যখন মোমবাতি প্রজ্বলন করে প্রার্থনা করতে করতে পাহাড়ি আকাঁবাঁকা পথ অতিক্রম করছিলেন, তখন পাহাড় আলোয় আলোকিত হয়ে উঠেছিল। তীর্থে আমরা মা মারিয়ার কাছে প্রার্থনা করতে এসেছি।”
চট্টগ্রাম থেকে আসা রীতা নকরেক বলেন, “পুত্রবধূর সন্তান হচ্ছিল না। গতবার মানত করার পর এবার নাতী পেয়েছি। তাই এবার নাতীকে নিয়ে আবার এসেছি।”
গাজীপুর থেকে পরিবারের সঙ্গে আসা শিক্ষার্থী ঝর্ণা আরেং বলেন, “মারিয়ার কাছে এলে মনে একধরনের শান্তি পাই। আমরা প্রার্থনা করি যেন জীবনের দুঃখ-কষ্ট দূর হয়। প্রতিবছর এই সময়টার অপেক্ষায় থাকি।”
শেরপুরের পুলিশ সুপার মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, “আমরা এই তীর্থযাত্রাকে নিরাপদ ও ঝুঁকি মুক্ত রাখতে তিন স্তর বিশিষ্ট নিরাপত্তা ব্যবস্থায় রেখেছি। পাঁচ শতাধিক পুলিশ পোশাকে এবং সাদা পোশাকে দ্বায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়াও র্যাব, বিজিবি, এপিবিএন ও সেচ্ছাসেবক কাজ করছেন। যে কোন ঝুঁকি মোকাবেলায় আমরা প্রস্তুত আছি।”
শেরপুর জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান বলেন, “উৎসবটি দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য উদাহরণ। সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে ব্যবস্থাপনায়। জেলা ও উপজেলা প্রশাসন দীর্ঘ ১৫ দিন ধরে সহযোগীতা করে আসছে। এবারের তীর্থযাত্রায় সারাদেশের মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে তাদের উৎসব পালন করেছে।”
ময়মনসিংহ ধর্মপ্রদেশের বিশপ পনেন পল কুবি সিএসসি বলেন, “এ উৎসবের মাধ্যমে বিশ্ব মানবতার কল্যাণে প্রার্থনা করা হয়েছে। ধর্মীয় চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে এ তীর্থে দেশ-বিদেশের হাজারো মানুষ সমবেত হয়েছেন। তাঁরা দুই দিনব্যাপী তীর্থে নানা ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছেন। মা ফাতেমা রানীর কাছে দেশ ও মানবজাতির কল্যাণে প্রার্থনা শেষে যার যার বাড়ি ফিরে যাবেন।”
ঢাকা/তারিকুল/এস