জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের’ পরিচয়ধারী শিক্ষার্থী আটক
Published: 6th, March 2025 GMT
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম আবাসিক হলে অবস্থানরত ‘হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের’ নকল আইডিকার্ডধারী এক শিক্ষার্থীকে আটক করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিম। গতকাল বুধবার দিবাগত রাত একটায় এ ঘটনা ঘটেছে।
আটক ব্যক্তি আবু হুরাইরা (২২)। তাঁর বাড়ি সিরাজগঞ্জের সদর উপজেলার মিরপুর গ্রামে। হলের ২১৩ নম্বর রুমে তাঁকে প্রায় প্রায় দেখা যেত। তাঁর গতিবিধি লক্ষ করে শিক্ষার্থীরা সন্দেহ করেন এবং তাঁকে জিজ্ঞাসাবাস করেন। তাঁর কথা ও কাজের কোনো মিল না থাকায় পাশের রুমে তাঁকে আটকে রেখে তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিমকে খবর দেয়। ঘটনাস্থলে প্রক্টরিয়াল টিম উপস্থিত হয়ে ওই ভুয়া শিক্ষার্থীর কাছ থেকে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি নকল আইডিকার্ডসহ আরও কয়েকটি স্কুল–কলেজের আইডিকার্ড উদ্ধার করে।
আরও পড়ুনথাইল্যান্ডে বৃত্তি, আইইএলটিএস বা টোয়েফল ছাড়াই আবেদন ৪ ঘণ্টা আগেহার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ভুয়া আইডিকার্ড তৈরি করে সবার সঙ্গে প্রতারণা করেছে, জানতে চাইলে আবু হুরাইরা বলেন, ‘আমি মজা করে এই আইডিকার্ড তৈরি করেছি। এখানে আমার কোনো খারাপ উদ্দেশ্য ছিল না। এই আইডিকার্ড দিয়ে কারও সঙ্গে প্রতারণাও করিনি আমি।’ জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে তিনি বলেন, ‘বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন এমনকি নিজ পরিবারের কাছেও তিনি নিজেকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ এবং যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসাবেই পরিচয় দিতেন।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে হলের আবাসিক ছাত্র এবং নৃবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী আদনান ফরিদ জানান, ‘এই ছেলেটিকে এর আগেও কয়েকবার এই হলে দেখেছি আমরা। পরিচয় জিজ্ঞেস করলে ঠিকমতো বলতে পারে না। একেক সময় একেক কথা বলেন। তার গতিবিধি সন্দেহজনক মনে হওয়ায় প্রক্টরিয়াল টিমকে খবর দিই। পরে স্যাররা এসে জিজ্ঞাসাবাদ করলে এর প্রতারণার বিষয়টি সামনে চলে আসলে তাঁকে আটক করে প্রক্টর অফিসে নিয়ে যায়।’
জানা গেছে, নিজেকে সিনিয়র দাবি করে হলের জুনিয়রদের একাধিকবার র্যাগও দিয়েছেন তিনি। কিন্তু তার সঠিক তথ্য না পাওয়ায় কোথাও অভিযোগ দেওয়ার সুযোগ পায়নি বলে জানান হলের জুনিয়র কিছু শিক্ষার্থী।
আরও পড়ুনবিনা মূল্যে ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ, আছে দৈনিক ২০০ টাকা ভাতা০৩ মার্চ ২০২৫এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘দিবাগত রাত ১২টার পরে আমাদের কাছে খবর আসে নজরুল হলে এক বহিরাগত অবস্থান করছেন। খবর পেয়ে আমরা দ্রুত সেখানে ছুটে যাই এবং গিয়ে ওই শিক্ষার্থীকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে তার দায় স্বীকার করে নেয়। আমরা তার কাছ থেকে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের নকল আইডিকার্ডসহ আর কয়েকটি স্কুল–কলেজের আইডিকার্ড উদ্ধার করি।’ তিনি আরও জানান, ক্যাম্পাসের পার্শ্ববর্তী এলাকায় অবস্থানরত তাঁর বোন ও বোনের জামাইকে ফোন দিয়ে ডেকে নিই এবং সে প্রতারণা করেছে এবং পরে আর কখনোই এহেন কার্য করবে না—এই মর্মে মুচলেকা নিয়ে তাঁর পরিবারের কাছে তাঁকে হস্তান্তর করি।
আরও পড়ুনবিদায় বেলায় বেসরকারি শিক্ষকদের জন্য সুখবর জানিয়ে গেলেন উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ২০ ঘণ্টা আগে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আইড ক র ড
এছাড়াও পড়ুন:
জুলাই ডকুমেন্টরিতে ‘ফুটেজ’ না থাকায় জাবি ছাত্রদল নেতার হট্টগোল
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্মরণে নির্মিত দেশের প্রথম স্মৃতিস্তম্ভ ‘অদম্য ২৪’ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রচারিত ডকুমেন্টরিতে ফুটেজ না থাকায় এক ছাত্রদল নেতার বিরুদ্ধে হট্টগোল করা অভিযোগ পাওয়া গেছে।
তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের ৩৯তম ব্যাচের (২০০৯-১০ সেশন) সাবেক শিক্ষার্থী এবং শাখা ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি।
বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) বিকেল ৬টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন ফজিলাতুন্নেসা হলের সামনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ডকুমেন্টরি প্রদর্শন শেষে এ হট্টগোল করেন তিনি।
আরো পড়ুন:
জুলাই শহীদ পরিবারদের সংবর্ধনা দিল জাবি
জুলাই শহীদদের স্মরণে জাবি ছাত্রদলের বৃক্ষরোপণ
এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অন্তবর্তীকালীন সরকারের শিল্প, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান।
ডকুমেন্টরি প্রদর্শন শেষে ওই ছাত্রদল নেতা উত্তেজিত কণ্ঠে বলতে থাকেন, “এই ডকুমেন্টরিতে ইতিহাস বিকৃতি করা হয়েছে। ডকুমেন্টরিতে ছাত্রদলের অবদানকে অস্বীকার করা হয়েছে। আমরাও আন্দোলন মাঠে ছিলাম, জেল-জুলুম, মামলা আমরাও খেয়েছি।”
এ সময় তার সঙ্গে শাখা ছাত্রদলের বর্তমান কমিটির যুগ্ম-আহ্বায়ক রোমান রাশিদুল ও হাসান শাহরিয়ার রমিমকেও হট্টগোল করতে দেখা যায়।
অনুষ্ঠানের আয়োজকরা জানান, ডকুমেন্টরি নির্মাণের জন্য তাদের দুইদিন সময় দেওয়া হয়েছিল। এই সময়ের মধ্যে একটি মাত্র ক্যামেরা দিয়ে ২৫ থেকে ৩০ জনের ইন্টারভিউ নেওয়া খুবই কষ্টসাধ্য কাজ ছিল। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে পর্যাপ্ত ইকুইপমেন্ট ও সময় না পাওয়ায় তাদের পূর্ণাঙ্গ ডকুমেন্টরি নির্মাণ কাজ বাধাগ্রস্ত হয়েছে।
তবে এ ঘটনার পেছনে বিশ্ববিদ্যালয়ের গাণিতিক ও পদার্থবিষয়ক অনুষদের এক প্রভাবশালী শিক্ষকের হাত রয়েছে বলে জানিয়েছেন একাধিক শিক্ষক।
তারা জানান, ডকুমেন্টরি নির্মাণের পূর্বে তারা জুলাই আন্দোলনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব ছবি ও ভিডিও ফুটেজ চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট সব পাবলিক ফেসবুক গ্রুপে পোস্ট করেছিলেন। তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীদের পাঠানো ও সাংবাদিকদের থেকে সংগৃহীত ছবি ও ফুটেজ দিয়ে ডকুমেন্টরি নির্মাণ করা হয়েছে। যে ব্যক্তি দাবি করেছেন তার ছবি বা ফুটেজ দেয়া হয়নি, তার ছবি বা ফুটেজ তাদের কাছে কেউ দেয়নি। এজন্য তারা ডকুমেন্টরিতে অন্তর্ভুক্ত করতে পারেননি?
এ নিয়ে জাবি উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান বলেন, “আজ যে একটা বিশেষ পরিস্থিতি দেখেছি, এটাও জাহাঙ্গীরনগরের বৈশিষ্ট্য, এটাও ২৪ এর অর্জন। খারাপভাবে দেখার প্রয়োজন নেই। প্রত্যেকটি কাজের মধ্যে ভুল থাকতে পারে, এখানে শিক্ষার বিষয় রয়েছে। ঠিক একইসঙ্গে প্রতিবাদের যে ভাষা, সেখানেও শিক্ষিত হবার প্রয়োজন রয়েছে।”
তিনি বলেন, “আমি বিশ্বাস করি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে সমালোচনা ও কুৎসার পার্থক্য শিখবে। একইসঙ্গে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশংসা ও পূজার পার্থক্য শিখবে ও বুঝবে।”
ঢাকা/আহসান/মেহেদী