এনআইডি সেবা ইসির কাছে রাখার বিষয়ে কমিশন একমত: সিইসি
Published: 6th, March 2025 GMT
জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সেবা নির্বাচন কমিশনের (ইসি) হাতে রাখার দাবিতে আজ বৃহস্পতিবার প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তারা। এ সময় তাঁরা সিইসির দপ্তরের সামনে কিছু সময় অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।
পরে সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দীন বলেন, এনআইডি সেবা ইসির কাছে থাকবে, এ বিষয়ে কমিশন একমত। কমিশনের মতামত সরকারকে লিখিতভাবে জানানো হবে।
শুরু থেকেই এনআইডি সেবা দিয়ে আসছে ইসি। বিগত আওয়ামী লীগ সরকার এই সেবাটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হাতে নিতে আইন সংশোধন করেছিল। তবে তা কার্যকর হয়নি।
এখন অন্তর্বর্তী সরকার জন্ম নিবন্ধন, এনআইডি ও পাসপোর্ট সেবা নিয়ে স্বতন্ত্র একটি কমিশন করার উদ্যোগ নিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে এনআইডি সেবা নিজেদের হাতে রাখতে কর্মসূচি পালন শুরু করলেন ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তারা।
আজ দুপুরে নিজ দপ্তরের সামনে ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের আশ্বস্ত করে সিইসি নাসির উদ্দীন বলেন, এ বিষয়ে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে তাঁর জানা নেই। কীভাবে এটা করা হতে পারে, তা নিয়ে আলোচনা চলছে।
নাসির উদ্দীন বলেন, এনআইডি ইসির কাছে আছে, থাকবে—এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণ একমত। ইসির মতামত সরকারের কাছে লিখিতভাবে জানানো হবে। ১৭ বছর ধরে ইসির কর্মকর্তারা শ্রম দিয়েছেন, সারা দেশে একটি নেটওয়ার্ক উন্নয়ন করেছেন। সার্বিক বিষয়গুলো সরকার বিবেচনায় নেবে বলে আশা করেন সিইসি।
তবে সিইসি বলেন, সরকার যদি আইন করে ফেলে, তাহলে তা ইসিকে মানতে হবে। কিন্তু আইন তৈরির প্রক্রিয়ায় ইসি তার মতামত জরুরিভাবে তুলে ধরবে।
বাংলাদেশ ইলেকশন কমিশন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক মোহাম্মদ মনির হোসেন ও সদস্যসচিব মোহাম্মদ রহমানের সই করা স্মারকলিপিতে বলা হয়, এনআইডি সেবা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষের হাতে ন্যস্ত করা হলে নানা সমস্যা তৈরি হবে। এতে ভোটার তালিকার গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। নাগরিকদের তথ্যের গোপনীয়তার অধিকার ক্ষুণ্ন হবে। তথ্যভান্ডারের শুদ্ধতা নষ্ট হবে। তথ্যের নিরাপত্তায় হুমকি দেখা দেবে। প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচন কমিশনের অস্তিত্বের সংকট দেখা দেবে। নির্বাচন পরিচালনায় বিঘ্ন সৃষ্টি হবে।
মোহাম্মদ মনির হোসেন সাংবাদিকদের বলেছেন, তাঁরা আগামী বুধবারের মধ্যে দৃশ্যমান অগ্রগতি প্রত্যাশা করছেন। তা না হলে ১৩ মার্চ ইসি সচিবালয়সহ সারা দেশের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করবেন। তারপরও দাবি পূরণ না হলে কর্মবিরতিসহ কঠোর কর্মসূচি পালন করা হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র কর মকর ত সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
তত্ত্বাবধায়ক নিয়ে একমত হলেও প্রধান উপদেষ্টা মনোনয়নের প্রক্রিয়ায় মূল বিরোধ: আলী রীয়াজ
নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হলেও এই সরকারের রূপরেখা নিয়ে ঐকমত্য হয়নি। আজকের আলোচনায় ঐকমত্য কমিশন রূপরেখা নিয়ে একটি সংশোধিত প্রস্তাব দেয়। তবে সেটি নিয়ে ঐকমত্য হয়নি। প্রস্তাবে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগের জন্য কয়েকটি ধাপে বিকল্পের কথা আছে।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় ধাপের ২১তম দিনের আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ এসব কথা বলেন ।
আলী রীয়াজ বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়ে কমিশনের প্রস্তাবে অংশগ্রহণকারী তিন-চতুর্থাংশ দল একমত হয়েছে। মূল বিরোধ এখন প্রধান উপদেষ্টা মনোনয়নের প্রক্রিয়া নিয়ে।
আজকের আলোচনায়—তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও ন্যায়পাল নিয়োগের সাংবিধানিক বিধান এবং জাতীয় সংসদে নারী প্রতিনিধিত্বের কাঠামো নিয়ে আলোচনা হয়।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান নিয়ে ঐকমত্য কমিশন আজ নতুন করে প্রস্তাব উপস্থাপন করে। কমিশনের সংশোধিত প্রস্তাবে বলা হয়েছে, প্রধান উপদেষ্টা মনোনয়নে একটি পাঁচ সদস্যের বাছাই কমিটি গঠিত হবে। কমিটিতে থাকবে প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার (বিরোধী দলের) ও দ্বিতীয় বৃহত্তম বিরোধী দলের একজন প্রতিনিধি। যদি এই কমিটি ঐকমত্যে পৌঁছাতে না পারে, তবে প্রধান বিচারপতির মনোনীত দুই বিচারপতিকে যুক্ত করে সাত সদস্যের কমিটি গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এই কমিটি ‘র্যাঙ্ক-চয়েস’ভোটিংয়ের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেবে।
এই র্যাঙ্ক-চয়েস প্রক্রিয়া নিয়ে বিএনপি আপত্তি জানিয়েছে। দলটির দাবি, এর পরের ধাপ কী হবে, সেটা ঠিক করার বিষয়টি আগামী সংসদের ওপর ছেড়ে দেওয়া উচিত। অন্যদিকে জামায়াত ও এনসিপি বিচারপতিদের অন্তর্ভুক্তি ও ভোটিং প্রক্রিয়াকেই নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করার সর্বোত্তম উপায় হিসেবে দেখছে।
নারী প্রতিনিধিত্ব নিয়ে আলোচনা ছিল দিনটির উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি। সংসদে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন ৫০ থেকে বাড়িয়ে ১০০টি করা এবং সরাসরি ভোটের বিধান করার প্রস্তাব দিয়েছিল সংস্কার কমিশন। কিন্তু তাতে ঐকমত্য না হওয়ায় কমিশন নতুন প্রস্তাব দেয়। তাতে বলা হয়, ৩০০ সাধারণ আসনের মধ্যে দলগুলো এক-চতুর্থাংশ বা এক-পঞ্চমাংশ আসনে নারী প্রার্থী মনোনয়ন দেবে। তবে আজকেও এ বিষয়ে ঐকমত্য হয়নি।
অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘আমরা প্রায় ঐকমত্যের কাছাকাছি এসেছি। আগামীকাল কমিশনের পক্ষ থেকে লিখিত প্রস্তাব দেওয়া হবে। আশা করছি তা অধিকাংশ দলের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে।’
মহাহিসাব নিরীক্ষক ও ন্যায়পাল নিয়োগের ক্ষেত্রে সংবিধানে কমিটি গঠনের বিধান সংযুক্তির প্রস্তাবে এখনো ঐকমত্য হয়নি। তবে অধিকাংশ দল কমিশনের প্রস্তাবের পক্ষে মত দিয়েছে। ন্যায়পালের নিয়োগ কার্যকর করার বিষয়ে দলগুলো একমত হলেও বিএনপি ও তার কয়েকটি মিত্র দল সংবিধানে নতুন বিধান না এনে বিদ্যমান আইনকে শক্তিশালী করার প্রস্তাব দিয়েছে।
অধ্যাপক আলী রীয়াজ আরও জানান, দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনার পাশাপাশি প্রথম পর্যায়ে যেসব বিষয়ের ওপর ঐকমত্য হয়েছিল, তার একটি তালিকা আগামীকাল রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানো হবে। এ ছাড়া জাতীয় সনদের খসড়ার একটি কপি ইতিমধ্যে দলগুলোকে দেওয়া হয়েছে। সংশোধনের পর আগামীকালই এ অংশটির নিষ্পত্তি করার আশা করা হচ্ছে।
জুলাই সনদের বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করে আলী রীয়াজ বলেন, ‘আমরা এখনো আশাবাদী যে ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে জাতীয় ঐকমত্য সনদের পূর্ণাঙ্গ রূপ দাঁড় করাতে পারব। সব দলই কোনো না কোনোভাবে সমঝোতার দিকে এগোচ্ছে, এটি ইতিবাচক দিক।’
আজকের আলোচনায় অংশ নিয়েছিল বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), গণসংহতি আন্দোলনসহ ৩০টি রাজনৈতিক দল।
আলোচনায় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় আরও উপস্থিত ছিলেন সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি এমদাদুল হক, বদিউল আলম মজুমদার, ইফতেখারুজ্জামান ও আইয়ুব মিয়া।