জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সেবা নির্বাচন কমিশনের (ইসি) হাতে রাখার দাবিতে আজ বৃহস্পতিবার প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তারা। এ সময় তাঁরা সিইসির দপ্তরের সামনে কিছু সময় অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।

পরে সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দীন বলেন, এনআইডি সেবা ইসির কাছে থাকবে, এ বিষয়ে কমিশন একমত। কমিশনের মতামত সরকারকে লিখিতভাবে জানানো হবে।

শুরু থেকেই এনআইডি সেবা দিয়ে আসছে ইসি। বিগত আওয়ামী লীগ সরকার এই সেবাটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হাতে নিতে আইন সংশোধন করেছিল। তবে তা কার্যকর হয়নি।

এখন অন্তর্বর্তী সরকার জন্ম নিবন্ধন, এনআইডি ও পাসপোর্ট সেবা নিয়ে স্বতন্ত্র একটি কমিশন করার উদ্যোগ নিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে এনআইডি সেবা নিজেদের হাতে রাখতে কর্মসূচি পালন শুরু করলেন ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তারা।

আজ দুপুরে নিজ দপ্তরের সামনে ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের আশ্বস্ত করে সিইসি নাসির উদ্দীন বলেন, এ বিষয়ে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে তাঁর জানা নেই। কীভাবে এটা করা হতে পারে, তা নিয়ে আলোচনা চলছে।

নাসির উদ্দীন বলেন, এনআইডি ইসির কাছে আছে, থাকবে—এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণ একমত। ইসির মতামত সরকারের কাছে লিখিতভাবে জানানো হবে। ১৭ বছর ধরে ইসির কর্মকর্তারা শ্রম দিয়েছেন, সারা দেশে একটি নেটওয়ার্ক উন্নয়ন করেছেন। সার্বিক বিষয়গুলো সরকার বিবেচনায় নেবে বলে আশা করেন সিইসি।

তবে সিইসি বলেন, সরকার যদি আইন করে ফেলে, তাহলে তা ইসিকে মানতে হবে। কিন্তু আইন তৈরির প্রক্রিয়ায় ইসি তার মতামত জরুরিভাবে তুলে ধরবে।

বাংলাদেশ ইলেকশন কমিশন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক মোহাম্মদ মনির হোসেন ও সদস্যসচিব মোহাম্মদ রহমানের সই করা স্মারকলিপিতে বলা হয়, এনআইডি সেবা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষের হাতে ন্যস্ত করা হলে নানা সমস্যা তৈরি হবে। এতে ভোটার তালিকার গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। নাগরিকদের তথ্যের গোপনীয়তার অধিকার ক্ষুণ্ন হবে। তথ্যভান্ডারের শুদ্ধতা নষ্ট হবে। তথ্যের নিরাপত্তায় হুমকি দেখা দেবে। প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচন কমিশনের অস্তিত্বের সংকট দেখা দেবে। নির্বাচন পরিচালনায় বিঘ্ন সৃষ্টি হবে।

মোহাম্মদ মনির হোসেন সাংবাদিকদের বলেছেন, তাঁরা আগামী বুধবারের মধ্যে দৃশ্যমান অগ্রগতি প্রত্যাশা করছেন। তা না হলে ১৩ মার্চ ইসি সচিবালয়সহ সারা দেশের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করবেন। তারপরও দাবি পূরণ না হলে কর্মবিরতিসহ কঠোর কর্মসূচি পালন করা হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র কর মকর ত সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশকে ‘অশ্বডিম্ব’ বললেন সিপিবি সভাপতি

আট মাস আলোচনার পর জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন যে সুপারিশ দিয়েছে, তাকে ‘অশ্বডিম্ব’ বলেছেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি সাজ্জাদ জহির চন্দন।

‘জগাখিচুড়ি মার্কা’ কমিশনের সুপারিশের পর পরিস্থিতি জটিলতার দিকে মোড় নেওয়ার দিকটি নিয়ে তিনি বলেছেন, ‘আট মাস আলোচনার পর একটা অশ্বডিম্বের মতো একটা অবস্থা।’

আজ শনিবার সকালে রাজধানীর একটি হোটেলে এক সংলাপে ‘পলিটিকস ল্যাব: পাবলিক ডায়ালগ’ শীর্ষক সংলাপে এ কথা বলেন সাজ্জাদ জহির। এ সংলাপের আয়োজন করে সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস)।

তরুণ রাজনীতিকদের মধ্যে মতাদর্শভিত্তিক সংলাপ ও গণতান্ত্রিক চর্চা অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে জার্মান ফাউন্ডেশন ফ্রেডরিখ এবার্ট স্টিফটুং (এফইএস)-এর সহযোগিতায় ‘পলিটিকস ল্যাব’ শিরোনামে চারটি ধারাবাহিক কর্মশালা করেছে সিজিএস। তার সমাপনী অনুষ্ঠান হিসেবে আজকের সংলাপ হয়।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গত মঙ্গলবার জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে হস্তান্তরের পর রাজনৈতিক অঙ্গনে তা নিয়ে মতভেদ দেখা দেয়। নানা প্রশ্নে বিভিন্ন দলের আপত্তির বিষয়গুলো সনদ বাস্তবায়ন আদেশের খসড়ার তফসিলে না থাকা নিয়ে যেমন সমালোচনা হচ্ছে, আবার গণভোটের সময় নিয়েও দলগুলোর মধ্যে বিরোধ দেখা দিয়েছে।

এই সংকট তৈরির জন্য ঐকমত্য কমিশনকে দায়ী করে সাজ্জাদ জহির বলেন, ‘এটার সমাধানটা কী? এই গণভোটের সমাধানটা কী? জুলাই সনদ কীভাবে বাস্তবায়ন হবে? সে বিষয়ে কোনো দিকনির্দেশনা কিন্তু নেই। মানে একধরনের হাওয়ার ওপরে সবকিছু চলছে। এখানে ৮৪টা পয়েন্ট নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ২০টাতে একমত হয়েছে, বাকিগুলোতে একমত হয়নি। তাহলে কোন বিষয়ে ভোটটা হবে।’

জুলাই সনদে স্বাক্ষর না করা সিপিবি সভাপতি বলেন, ‘আমরা দেখলাম জুলাই সনদে স্বাক্ষর হলো। এরপর সর্বশেষ সংস্কার কমিশন তারা আবার আরেকটা খেলা খেলল এখানে। দেখেন কী অবস্থা! তারা বলছে যে নোট অব ডিসেন্ট কিছুই থাকবে না। ভিন্ন মত থাকবে না। আমার তো ভিন্নমত আছে, কেন থাকবে না?’

গণভোট নিয়ে তিনি বলেন, ‘সংবিধানে কোথাও গণভোটের কোনো বিধান নেই। একটা আছে যেটা ১৪২ ধারা। যেটা নির্বাচিত সংসদে যদি কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে মতভেদ তীব্রতর হয়, তাহলে সেই বিষয়ের ওপরে নির্বাচিত সংসদ জনগণের আহ্বান করতে পারে। কিন্তু এই মুহূর্তে গণভোট সংবিধানসম্মত নয়।’

সিপিবির সভাপতি বলেন, এসব জটিলতা এড়াতে প্রয়োজনীয় কিছু সংস্কার করে দ্রুত নির্বাচনের ব্যবস্থা নিতে গত বছরের অক্টোবর মাসে তাঁরা প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছিলেন। তবে ‘দুর্ভাগ্যজনকভাবে’ সরকার সেটি শোনেনি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দেশের মানুষ ১৭ বছর ধরে নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করছে: সাইফুল হক
  • জুলাই সনদে সই না করা অংশের দায় নেব না: মির্জা ফখরুল
  • ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশকে ‘অশ্বডিম্ব’ বললেন সিপিবি সভাপতি